নীল নক্ষত্র

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব], পর্ব-১

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিশাতের মনটা কেন যেন বেশ একটা চক চকে ঝরঝরে ফুরফুরে ভাব, খুশি খুশি। কিন্তু, কি যে সে কারণ তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। বাইরে যাবে, নিজের খেয়াল মত ঘুরবে, বেড়াবে এই জন্য না কি বিশেষ কারো কথা মনে পরেছে! যাই হোক, সে কারণ খোঁজার কি এমন প্রয়োজন? মন ভালো আছে, ভালো লাগছে এইতো বেশ! আর কি আছে এই বিদেশে? মরুভূমির দেশে সাগরে ভেসে থেকে এর চেয়ে আর কি চাইতে পারে? এই যথেষ্ট। সকালের টুকিটাকি কিছু কাজ ছিল, সেগুলি সেরে চিফ অফিসারকে বলে জাহাজ থেকে নেমে গেল। আজ তার শোর লিভ। মানে, আজ তার ছুটি। সাগর ছেড়ে মাটিতে চলার অনুমতি। নোনা জলের সাগর ছেড়ে সে আজ সারা দিন মাটির উপর ঘুরে বেড়াবে। এরাবিয়ান গালফের ছোট্ট দ্বীপ বাহরাইনের মানামা শহর। এখানে তার ব্রিটিশ পতাকাবাহী ‘প্যাসিফিক মেরিনার’ তেল বাহি ট্যাংকার জাহাজ রুটিন মেইনটেন্যান্স এর জন্য এসেছে।
তিন দিন থাকবে, তারপর আবার চলে যাবে এশিয়া কিংবা ইউরোপের এ বন্দর ছেড়ে ও বন্দরে । ওরা কোন বন্দরে লোড বা আনলোড করার জন্য দুই তিন দিনের বেশি সময় পায় না। কোথাও আবার সাগর পাড় থেকে পাঁচ দশ মাইল দূর থেকেই লোড আনলোড করে চলে যেতে হয়। তখন দূরের শহরের বাতি নয়তো প্রায় আকাশের কাছে পৌঁছে যাওয়া দালান গুলি দেখে স্বপ্নের কোন দেশের মত মনে হয়। আজ নিশাতের মনে খুবই আনন্দ। সাগরের বুকে ছোট্ট দ্বীপ শহরে সারা দিন একা একা ঘুরে বেড়াবে। কখনো বাসে চেপে, কখনো ট্যাক্সিতে কিংবা পায়ে হেঁটে।

সাগরের বুকে গাং চিলেদের নিঃশব্দে নীলাকাশে ওড়া, মাঝে মাঝে ডলফিনের ঝাঁকের জলকেলি, খোলা নীল আকাশ, নীল আকাশের নিচে নীল সাগরের নীল ঢেউ, ঢেউ এর চূড়ায় সাদা ফেনার লুকোচুরি নিশাতের মনকে উদ্ভ্রান্ত করে কোথায় যেন নিয়ে যায়। কোথায় যে সে হারিয়ে যায় সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আজ একটু ভিন্ন রকম। আজ সাগর ছেড়ে সে নেমে এসেছে মাটির পৃথিবীতে। মাটির গন্ধ নেয়ার জন্য, মাটির ছোঁয়া পাবার জন্য।
জাহাজ থেকে নেমে হেঁটে ডকের বাইরে এসে পাশের স্টোর থেকে এক ক্যান ঠাণ্ডা জিঞ্জার এল কিনে মুখটা খুলে এক চুমুক দিয়ে ক্যান হাতে পাশের বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াল।
হঠাৎ মন পরিবর্তন করল। না, আজ কোন বাস ট্যাক্সি নয়, আজ শুধু হাঁটবে। হাটতে হাটতে চলে এলো মানামা শহরে। এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত এলো চেনা পাকিস্তানি সিঙ্গারার দোকানে। এখানে ১০০ ফিলসে কাগজের প্লেটে চারটা সিঙ্গারা আর তার সাথে চাটনি। সাধারণ আলুর সিঙ্গারা কিন্তু কি ভাবে বানায় কে জানে, ভীষণ মজা। আর তার সাথের চাটনি টা আরও বেশি মজার। বিশেষ করে এই চাটনির লোভটাই বেশি। বাহরাইনে এলেই এই সিঙ্গারা তার চাই। নিজে যেতে না পারলেও যেই যাক তাকেই বলে দেয় আমার জন্য সিঙ্গারা এনো। আরও একটু চাটনি চেয়ে নিলো। দোকানে কোন বসার জায়গা নেই, রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে খেতে হয়, কোন পানিও নেই। আলাদা করে পানি বা সফট ড্রিঙ্ক যার যা পছন্দ তা কিনে নেয়, এ জন্য আলাদা ৫০ ফিলস। তার হাতে এখনো সেই জিঞ্জার এলের ক্যান রয়েছে। ক্যানটা দোকানের কাউন্টার টেবিলের উপর রেখে এক হাতে প্লেট ধরে আর এক হাতে খাচ্ছিল। সিঙ্গারা শেষ হলে হাতের খালি প্লেট বিনে ফেলে দিয়ে শেষ চুমুক দিয়ে ক্যানটাও বিনে ফেলে দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো।
উদ্দেশ্য হীন ভাবে। কোন গন্তব্য নেই। মার্কেটে মানুষ গিজ গিজ করছে। প্রায় সবাই যার যার গাড়ি রেখে এসেছে শহরে ঢোকার আগে ওই সাগর পাড়ের পার্কিং এলাকায়। কেউ জোড়ায় জোড়ায়, কেউ তার মত একা। শিশু, কিশোর, তরুণ তরুণী, যুবক বৃদ্ধ, কালো, ককেশিয়ান, সাদা নানা রকমের নানা রঙের মানুষের ভিড়। আমাদের দেশের ছোট ছোট চায়ের দোকানের মত বাইরে সামিয়ানা টানান রয়েছে তার নিচে বয়স্ক লোকেরা টেবিলের চার পাশে বসে বিশাল কলকির হুক্কা টানছে আর গাওয়া (এক ধরনের কাল কফির মত) খাচ্ছে, হুক্কার নল এর হাত থেকে ওর হাতে বদল হচ্ছে। কেউ দোকানির সাথে দামাদামি করছে, কেউ কিনছে, আবার তার মত কেউ শুধু দেখছে।
সাজানো দোকান পাট তো রয়েছেই তার পাশে আমাদের দেশের ফুটপাতের মত ক্যানভাসের চাদর বিছিয়ে খোলা দোকানও আছে। বাচ্চাদের খেলনা, তৈরি পোশাক, ঘর সাজাবার নানা রকমের সৌখিন জিনিসপত্র, পারফিউম, আতর, মশলা রাখার সুন্দর রেকাবি, মোম দানি, নানা রকম কারু কাজ করা ছবি বাধানোর ফ্রেম, আরও কত কি। হঠাৎ তার চোখে পরল এই রকম এক খোলা দোকানের এক দোকানি মিসরিয় কারুকাজ করা ধুপ দানির মত একটা পাত্রে ছোট ছোট কাঠের টুকরোর মত কি যেন জ্বলন্ত কয়লার আগুনে ছেড়ে দিতেই ধোয়ার সাথে ভুর ভুর করে একটা মন মাতানো সুগন্ধ ভেসে এলো ওর নাকে। জাহাজ থেকে নামার সময় স্যেনেল ফাইভ স্প্রে করে এসেছে এ গন্ধ সে গন্ধকেও হার মানানো গন্ধ। মনে কৌতূহল হলো, এটা কী? জিজ্ঞেস করবে কিন্তু নিশাত আরবি তেমন জানে না। তার ছোট বেলা কেটেছে করাচী শহরে তাই উর্দু ভালোই জানে। তারপর আবার জাহাজে চাকরী করতে এসে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরতে গিয়ে ইংরেজিটাও ভালোই রপ্ত করে নিয়েছে। কাজেই, কোথাও তেমন অসুবিধা হয় না। তবুও এগিয়ে গিয়ে আরবি যা জানে তাই আর উর্দু হিন্দি ইংরেজি মিশিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো।
ইয়েমেনি দোকানিও সেই ভাবে জবাব দিল।
কেন, আগে দেখনি? এগুলির নাম হলো আগর, বাংলাদেশ থেকে আসে। বিশাল একটা গাছ থেকে মাত্র চার বা পাঁচশ গ্রাম আগর বের হয় বলে খুব দামী জিনিষ।
কত দাম?
পাঁচ গ্রামের এই প্যাকেটের দাম দশ দিনার।
নিশাত ভেবে দেখল যাদের পকেটে এতো দিনার বা ডলার আছে, যাদের পকেটের দিনার বা ডলার দিয়ে ব্যাঙ্ক গুলি চলছে তারা ছাড়া এগুলি আর কে ব্যবহার করবে! তাদের ঘরের স্বপ্নিল আবেশ তৈরির জন্য কিংবা রাতের মোহময়তা বাড়াবার জন্য তারাই এগুলি জ্বালাতে পারে। আমার দেশেও এমন জিনিষ আছে যা আমার জানা ছিল না অথচ এই পেট্রো ডলারের দেশের ধনী লোকেরা তা ব্যবহার করছে! কি বিচিত্র এই পৃথিবী!
আগরের খবর জেনে খুশি মনে আবার চলল উইন্ডো শপিং করতে। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা আজকালের ব্যস্ত মানুষের জীবন সহজ করার জন্য কি কি আবিষ্কার করেছে! বাজারে কি কি নতুন জিনিষ এসেছে তাই দেখার জন্য। ইলেকট্রনিক্সের দোকান, নানা ধরনের যন্ত্রপাতির দোকান, তৈজস পত্রের দোকান দেখে বের হয়ে কাপড়ের দোকানে ঢোকার পথেই মনিরের সাথে দেখা। মনির নিশাতের সাথে নিশাতের ২য় ভয়েজে এক জাহাজে ছিল সেই থেকেই বন্ধুত্ব। এখন ও অন্য আর এক জাহাজে আছে, সেও শোর লিভ নিয়ে কেনা কাটা করার জন্য এসেছে।
কিরে নিশাত, কেমন আছিস?
ভালো, তোর কি খবর, ইস তোকে দেখে হিংসা হচ্ছে রে!
কেন, হিংসা কেন?
ভয়েজ শেষ করে দেশে যাচ্ছিস হিংসা হবে না?
তুইও তো আর কদিন পর যাচ্ছিস।
না, আমার দেরি হবে কারণ আমার রিলিভার না এলে আমাকে ছাড়বে না বলেছে, আবার ওদিকে চিটাগাংয়ের এজেন্ট রিলিভার পাচ্ছে না।
যাক আর কিছু দিন থাক, অসুবিধা কি তোর জন্যে কি আর কেউ পথ চেয়ে বসে আছে?
যাক বাদ দে ওসব, এখন বল কি করবি?
কিছু কেনা কাটার জন্য এসেছি।
তোরা না কাল দুবাই যাচ্ছিস তাহলে এখান থেকে কিনবি কেন, এখানে তো দাম বেশি।
না, দুবাই পৌঁছবো রাতে আর আমার ফ্লাইট সকালে, টিকেট করে ফেলেছে শুনেছি, তাই ওখানে সময় পাবো না। বেশি কিছু কেনার নেই শুধু ভাবীর জন্য একটা শাড়ি।
ও তাহলে চল।
না তোর সাথে এতো দিন পর দেখা হলো চল আগে কিছু খেয়ে নিই।
কি খাবি, আমি এই মাত্র সিঙ্গারা খেয়ে এসেছি।
হ্যাঁ আমিও ভেবেছি তুই বাহরাইন এসেছিস আর এখনো সিঙ্গারা খাসনি এ হয় কি করে?
চল তুই খেয়ে নে।
না থাক, ভাবীর শাড়িটা আগে কিনে নেই তার পর দেখবো।
বা হাতে এক দোকান দেখে, এই দোকানই তো।
দুজনে দোকানে ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজে যেখানে শাড়ি রয়েছে সেখানে গেল। অনেক শাড়ি দেখল কিন্তু কোনটাই মনিরের পছন্দ হচ্ছে না।
দেখ নিশাত এই সব মেয়েলি কেনা কাটা আমার কাজ না, তুই একটা দেখে দে।
বারে, এ আবার কি ধরনের কথা বলছিস, আমি কি তোর ভাবীকে দেখেছি? যাকে দেখিনি তার জন্য কি পোশাক বাছাই করা যায়?
শেষ পর্যন্ত নিশাতকেই একটা বাছাই করে দিতে হলো।
লাল পাড় নীল শাড়ি।
পছন্দ হয়েছে তোর?
হ্যাঁ খুব!
তাহলে দেখ দাম কত। দোকানির সাথে দামাদামি ঠিক হলো। মনির পকেটে হাত দিয়েছে দিনার বের করবে। হঠাৎ পকেট থেকে হাত বেড় করে বলল,
নারে নিশাত ভাবীর এই শাড়ি পছন্দ হবে না, এটা নেয়া যাবে না।
কি হলো, আবার এ সিদ্ধান্ত কেন?
ভাবির নীল রঙ পছন্দ না।
তাহলে এ কথা আগে মনে করিসনি কেন, এখন দোকানি বলবে কি? আমি বলছি তুই এটা নিয়ে নে, পছন্দ না হলে দেশ থেকেই না হয় আর একটা কিনে দিবি আর এটা অন্য কাউকে দিবি। তাছাড়া বিদেশ থেকে মনে করে নিচ্ছিস এটা কি কম? আমার তো মনে হয় ভাবী এতো অবিবেচক না, উনি খুশিই হবেন। নিয়ে নে, নাহয় আর একটা দেখ।
না চল অন্য দোকানে যাই।
মনির তো বলেই হাঁটা শুরু করে দিল। নিশাত তা পারলো না। নিশাত পরে গেল এক সমস্যায়। এখন কি করে! তার শাড়ি পরার মত এক মা ছাড়া আর কেউ নেই। মার জন্য এই শাড়ি চলে না। বোন আছে এক জন কিন্তু, সে এখনো ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পরার মত হয়ে উঠেনি। এদিকে দোকান থেকে বেড় হয়েও আসতে পারছে না। দোকানে দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতে যার কথা মনে হলো তাকে কি এই শাড়ি দেয়া যায়? কি ভাবে দিবে? কি বলে দিবে? যার সাথে আলাপ মাত্র শুরু হয়েছে এই তাকে কি করে এই শাড়ি দিবে? সে কি এই শাড়ি নিবে ওতো কিছুই নিতে চায় না!

গ্রামে যখন যেত তখন তাদের বাড়িতে ছিল নিশাতের বেশি যাতায়াত। ওর বড় চাচাত ভাই শিহাব আর বোন যুঁই ছিল নিশাতের সহপাঠী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই সুবাদে না কি যেন কোন সুবাদে ওই বাড়িতেই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটত। ও বাড়িতে গেলেই যুঁই ছোট বোনকে ডেকে বলতো দেখ কে এসেছে! তোর হবু বর এসেছে যা বরন কর গিয়ে! ছোট বোনের সাথে এভাবে কথা বলতে যুঁই এর মুখে একটুও আটকাত না। যা মনে আসে তাই বলে ফেলে। নিশাতও তার প্রতিটি পা ফেলার শব্দ বুঝতে পারতো, আসে পাশেই আছে। নীরবে নিভৃতেই তা অনুভব করতো। কাউকে কখনো সে কথা বলতে পারেনি। ওর সাথে কথা যা হয়েছে তা শুধু চোখে চোখে। তবে নিশাত এখনো নারী চোখের ভাষা বোঝার মত জ্ঞানী হয়ে উঠে নি। বরাবরই সে একটু উদাসীন, ভাবুক প্রকৃতির। এক দিন সকাল থেকে ফিজিক্সের কি একটা কঠিন চ্যাপ্টার নিয়ে ওরা তিন জন মাথা ঘামাচ্ছিল, এর মধ্যে দুপুরের খাবার সময় বয়ে যাচ্ছে তাই যুঁই বলল এখন আর বাড়ি যাবি কেন চল এখানে খেয়ে নে। নিশাত রাজী হয়ে ওদের সাথেই খেতে বসে গেল। আর যেন কি কি ছিল মনে নেই তবে বাতাসি মাছ আর বেগুনের চচ্চড়ি মুখে দিয়েই বলল বাঃ চমৎকার হয়েছে। আর যায় কোথায়?
সঙ্গে সঙ্গে যুঁই বলে উঠলো, হবে না, রেঁধেছে কে জানিস? তোর বৌ রেঁধেছে! নে খা, খেয়ে অভ্যাস কর বলেই আর এক চামচ উঠিয়ে নিশাতের পাতে দিয়ে দিল।
লজ্জায় নিশাতের নাক কান যেন গরম হয়ে উঠলো। কেন বোকার মত এ কথা বলতে গেল ভেবে নিজেকে মনে মনে বকল। সেদিন আর কোন কথা না বলে চুপ চাপ খেয়ে বাড়ি চলে এসেছিলো।
কয়েকদিন পরেই নিশাত তাদের বাড়ির পাশেই পথের পাড়ে বিরাট এক লেবু গাছের নিচে বসে সমবয়সী মইন চাচার সাথে গল্প করছিলো এমন সময় ওরা কয়েক জন এক সাথে ওই পথেই স্কুলে যাচ্ছিল। হঠাৎ চোখে চোখ পরে গেল। কি কথা হলো কি না হলো কে জানে! ওর পথ চলা থেমে গেল। ইতিমধ্যে সাথের সঙ্গীরা সবাই কিছুটা এগিয়ে গেছে, চট করে প্রায় দৌড়ের মতই এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে মিশে গেল। জাহাজে চাকরিতে আসার আগে সামান্য কথা হয়েছে তারপরে প্রথম ভয়েজ করে দেশে ফেরার পর সে আলাপ কিছুটা গাড় হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার সময় থেকে শুরু করে যতদিন দেশে ছিল ততদিন প্রতিদিন একবার হলেও দেখা হয়েছে দুইজনে একসাথে বেড়িয়েছে ছবি তুলেছে। সে ছবি নিশাতের কেবিনে সাজিয়ে রেখেছে এই এর জন্যই তাহলে নিয়ে নিই, নাকি? নিজেকেই প্রশ্ন করল! গায়ের রঙ ফর্সা, গোল ধরনের চেহারা, গালের ডানপাশের তিল আর থুতনির নিচের আঁচিলটা চোখে পরার মত, দীর্ঘ এক হারা গড়ন, চোখে পরার মত সুন্দরী বলা চলে। নীল জমিনে লাল পাড় শাড়ি মানাবে ভালো। কিন্তু!! না, কোন কিন্তু নয়! যে করেই হোক এ শাড়ি তাকে দিতেই হবে। যে যা বলে বলুক। গতবার কত কি কিনে দিতে চেয়েছে কিন্তু আপার ভয়ে লোকলজ্জার ভয়ে কিছুই নিতে চায়নি। প্রথম ভয়েজেও যা নিয়েছিল তার কিছুই নেয়নি। সেগুলি নিশাতের আলমারিতেই তোলা রয়েছে। যাক, যদি নাই নেয় তাহলে এটাও আলমারিতে তুলে রাখবে।
শেষ পর্যন্ত নিশাতই কিনে নিয়ে দোকান থেকে বেড় হয়ে দেখে মনির তখন বাইরে দাঁড়ানো।
কিরে, তোর হাতে এটা কি, কী কিনলি?
না, কিছু না।
চল, ওই দোকানে দেখি।
না রে মনির, আমার ভালো লাগছে না, আমি জাহাজে চলে যাব, তুই যা।
বলেই বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা শুরু করলো। পিছন থেকে মনির ডাকল কিন্তু সে ডাক নিশাতকে ফেরাতে পারলো না।
[চলবে। এতক্ষণ নিশাতের সাথে নিরুর চায়ের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ।]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login