প্রধান মালীর গল্প
(আন্তন চেখভ এর THE HEAD-GARDENER’S STORY অবলম্বনে)
নুরু ব্যাপারীর বাগানে ফুলের নীলাম উপলক্ষ্যে আমরা কতিপয় সেখানে উপস্থিত ছিলাম। যেখানে আমি সহ জমির মালিক আমার এক প্রতিবেশী ছিলেন, ছিলেন এক তরুণ কাঠ ব্যবসায়ি। কাজের লোকেরা আমাদের কেনা অসাধারণ জিনিসগুলো বাঁধাছাঁদা করে ট্রলিতে উঠাতে থাকলে আমরা বাগানে ঢোকার মুখেই বসে বসে একটি বিষয়ে আলাপ করছিলাম। এপ্রিলের সকালে বাগানে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে পাখির কলকাকলিতে কান পেতে খোলা বাতাসে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যাপারটা সত্যি সত্যিই ছিলো সুখদায়ক।
প্রধান মালী মইনুদ্দিন শ্রদ্ধা জাগানোর মত পুরোপুরি কামানো মুখের একজন বয়স্ক মানুষ, কোট ছাড়া একটি পশমের ওয়েস্ট কোট পরে গাছ-গাছড়ার বাঁধা-ছাঁদা প্যাকেট করা নিজেই তদারক করছিলেন। কিন্তু একই সময় নতুন কিছু শুনবার প্রত্যাশায় সে আমাদের আলাপচারিতার দিকেও সজাগ কান রেখেছিলো। সহৃদয় বিচক্ষণ লোকটি সবার সম্মানের পাত্র ছিল। একজন জার্মান হিসাবে কয়েকটি কারণে সবার কাছে নিন্দিত ছিলেন। যদিও পিতৃকুলের দিক থেকে সে ছিলো সুইডিশ, মায়ের দিক থেকে রুশ, এবং অর্থোডক্স চার্চেও যেতো। জার্মান রুশ আর সুইডিশ ভাষা জানা ছিলো তার। সেই ভাষা সমূহে ইবসেন সম্পর্কে সে বেশ কিছু পড়াশুনা করেছিলো। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই উদাহরণ হিসাবে তাকে নতুন কিছু বই ধার দেওয়া কিংবা তার সঙ্গে আলাপ করার মত আনন্দ দিতে পারেনি।
তার একটাই দুর্বলতা ছিল যে, নিজেকে প্রধান মালী বলে পরিচয় দিতেন, যদিও তার অধস্তন কোনো মালী ছিল না, তার মুখ অভিব্যক্তি ছিল অসাধারণভাবে সম্মানিত এবং উদ্ধত; অসঙ্গতিটা ধরতে না পারলেও শ্রদ্ধা- মনোযোগ সহকারে শুনতে পছন্দ করতেন।
“আপনাকে বলে দিচ্ছি, ওই তরুণ সহকর্মীটি খুবই বদমাশ প্রকৃতির।” কৃষ্ণকায় জিপসিদের মতো দেখতে একটি লোকের প্রতি আঙুল উঁচিয়ে বললেন বলেন আমার প্রতিবেশী। যে একটি পানির পিপার সঙ্গে ঘুরছিল “গেল সপ্তাহে শহরে একটি চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েও বেঁচে গেছে। তাল পাতার সেপাইয়ের মতো দেখতে এবং মাথা খারাপ বলে ছেড়ে দিয়েছে। দেশটায় আজকাল এই সমস্ত পাজি আর দুই নাম্বার লোকগুলাকে অস্বাভাবিকতার ধুয়া তুলে বাঁচিয়ে দেওয়াটাও এক ধরণের অপরাধ প্রবণতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ, যা ভালো নেতৃত্ব নয় । তারা জনগণকে নীতি ভ্রষ্টতা শেখাচ্ছে, ভোঁতা করে দিচ্ছে বিচারবোধ, অভ্যস্ত করে তুলছে শাস্তি মুক্ত কলঙ্ক দেখায়, এবং তুমি জানো আমাদের সময়ে কেউ একজন নির্ভয়ে বলতে পারতো শেক্সপিয়রের সেই কথাটা যে, আমাদের দূষিত বয়সের পাপের জন্য পুণ্যার্থে ক্ষমা চাইতে হবে।
“এটা খুব সত্য,” ব্যাপারী বললো, বাকি মুক্তি-পাওয়া লোকগুলা, হত্যা এবং অগ্নিসংযোগ থেকে অনেক বেশী ভয়াবহ. কৃষকদের ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পার.”
মইনুদ্দিন আমাদের দিকে ফিরে বললো,
“ভদ্র মহোদয়গণ, আমার মন যতটা সায় দেয়, আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত লোকগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দই পাই। নৈতিকতা আর ন্যায়বিচারের জন্য আমার ভয় নাই, যখন তারা বলেন ‘অপরাধী নয়।‘ অন্যদিকে আমি এ দেশটাতেই সন্তুষ্টি বোধ করি। আমার বিবেক যখন বলে জুরি অপরাধী খালাস করে কোনো ভুল করেছে, তবু আমি বিজয়ী বোধ করি। তারা আপনার নিজের জন্যই। মানুষের ওপর যদি বিচারক আর জুরিদের বিশ্বাস বোধ থাকে, তাহলে লক্ষণ, প্রমাণের উপাদান, আদালতে কথাবার্তা চালিয়ে যা হয় মানুষের সেই বিশ্বাস কি সাধারণ কোনো বিবেচনা বোধের চেয়ে উন্নততর নয়? সেই বিশ্বস্ততা কেবল তাদের গুটি কয়েকেরই প্রাপ্য যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী।“
“একটি চমৎকার ভাবনা,” আমি বললাম.
“কিন্তু এটা নতুন কিছু নয়। মনে পড়ে, অনেক কাল আগে এ ব্যাপারে একটি কিংবদন্তি শুনেছিলাম। খুবই মজার কিংবদন্তি!’ বলে, হাসলো মালী। “আমি এটা আমার দাদি আম্মা অর্থাৎ আমার বাবার মায়ের কাছে শুনেছিলাম, যিনি চমৎকার বয়স্ক একজন মহিলা ছিলেন। তিনি সুইডিশ ভাষায় এটা বলেছিলেন, যেটা মার্জিত বা সুন্দর ছিলো না, ক্লাসিক্যাল রুশ ভাষা।“
কিন্তু আমরা তা সাদামাটা রুশ ভাষায় বলতে তাকে অনুরোধ করলাম। সে খুশি মনে তার পাইপ ধরাল এবং খানিকটা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে কাজে ব্যস্ত লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করলো,
“একটি নির্দিষ্ট ছোট্ট নির্জন শহরে, থমসন বা উইলসন নামের এক সজ্জন বৃদ্ধ থাকতেন। কিন্তু সেটা কোনো ব্যাপার নয়, তার নামটা তত জরুরি নয়। তার পেশাটা ছিলো সম্মানজনক, ডাক্তার। তিনি খানিকটা রূঢ় প্রকৃতির আর অসামাজিক ছিলেন। তার পেশার প্রয়োজনেই কেবল কথা বলতেন। তিনি কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন না। জানাশোনা কারো উদ্দেশ্যে নীরবে মাথা ঝোঁকানোর বাইরে যেতেন না। থাকতেন বিনম্র সাধকের মতই। আসলে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষিত মানুষ। সে কালের শিক্ষিত লোকেরা অন্যান্যদের পছন্দ করতেন না। দিনরাত ব্যয় করতেন, পড়াশুনা, গভীর চিন্তা-ভাবনা আর রোগ নিরাময়ের পেছনে। বাকি সব ছিলো তুচ্ছ। একটা বাড়তি শব্দও অপচয়ের সময় ছিলো না। শহরবাসীরা তা বুঝতেন এবং তাদের দেখা-সাক্ষাৎ আর অসার বক-বকানীতে তাকে বিরক্ত করতে চাইতেন না। তারা খুশি ছিলেন, ঈশ্বর তাদের জন্য অবশেষে এমন একজন মানুষকে পাঠিয়েছেন যিনি রোগ নিরাময় করতে পারেন। তাদের অহংকার ছিলো যে, এমন একজন অসাধারণ মানুষ তাদের শহরেই আছেন। তার সম্পর্কে তারা বলতো, তিনি সবই জানেন।
“কিন্তু তারা অবশ্য যা বলতেন তাই যথেষ্ট ছিলো না। তিনি সবাইকেই ভালো বাসতেন। তার বুকের ভেতর ফেরেশতার মতই একটি বিস্ময়কর হৃদয় স্পন্দিত হতো। যদিও শহরের মানুষগুলো ছিলো অচেনা, তার আপন কেউ না, তবু তিনি তাদের ভালোবাসতেন সন্তানের মতই, তাদের থেকে নিজেকে বিযুক্ত করতেন না কখনোই। ক্ষয় কাশ তাকে শেষ করে ফেলছিল, তবু কারো অসুখের খবর পেলে ভুলে যেতেন নিজের অসুখের কথা। তাদের থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে পারতেন না। হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি পাহাড়ে উঠে যেতেন, তা যতটা উঁচুই হোক না কেন। শীত-গ্রীষ্ম, ক্ষুধা-তৃষ্ণা কোনোটাকেই পাত্তা দিতেন না। কারো কাছে টাকা-পয়সা প্রত্যাশা করতেন না। অদ্ভুত রকম ভাবে বলতেন, তার কোনো রোগী যখন মারা যাবে, সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনিও কাঁদতে কাঁদতে তার কফিনের সঙ্গে যাবেন।
“এবং শীঘ্রই তিনি তার বাসিন্দাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠলেন। তারা বিস্মিত হয়ে ভাবলো যে, এই মানুষটিকে ছাড়া আগে তারা কিভাবে ছিলো? তাদের কৃতজ্ঞতা ছিলো সীমাহীন। বয়স্ক থেকে আরম্ভ করে শিশু, ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ সবাই তাকে একই রকম মান্যগণ্য করতো। বুঝতো তার কদর। ছোট্ট শহরটির আশপাশের যত লোক ছিলো, তাদের মাঝে এমন কেউ ছিলো না যে তার সঙ্গে বিসদৃশ কিছু করবে। এমনটা নিয়ে তারা স্বপ্নেও কখনো ভাবতো না। তিনি যখন বাড়ির বাইরে যেতেন, দরজা-জানালা কখনোই লাগাতেন না। তার পুরোপুরি বিশ্বাস ছিলো যে, তার কিছু চুরি হবে না, এমন ভুল তার সঙ্গে কেউ করবে না। তিনি প্রায়ই তার চিকিৎসক দায়িত্ব পালনের বাইরেও রাস্তায় বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানর সময় কিছু ক্ষুধার্ত আর উদ্বাস্তুদের দেখতেন। কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে প্রকৃত নিরাপত্তা বোধ করতেন।
“এক রাতে তিনি একটি রোগী দেখে যখন ফিরছিলেন, তখন ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। কিন্তু ডাকাতরা তাকে চিনতে পেরে সম্মান দেখাতে নিজেদের টুপি খুলে ফেলে তাদের সঙ্গে কিছু খেতে আমন্ত্রণ জানালো। তিনি ক্ষুধার্ত নন জানালে, তারা তাকে একটি গরম চাদর দিয়েছিলো। সেই সদাশয় মানুষটির প্রতি অদৃষ্টের কৃপায় খানিকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে শহরের দিকে বেশ কিছুটা পথ এগিয়েও দিয়েছিলো। ওহ ভালো কথা, এটা নিশ্চিত দাদি আম্মা বলেছেন যে, এমন কি গরু ঘোড়া কুকুরগুলোও তাকে চিনতো সেই সঙ্গে দেখা হলে আনন্দও প্রকাশ করতো।
“এবং এই মানুষ তার ধার্মিকতা দ্বারা যাবতীয় মন্দ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত, এমনকি ডাকাত এবং প্রমত্ত পুরুষরাও যার জন্যে শুধু ভাল ছাড়া মন্দ কামনা করতো না, এক সুন্দর সকালে তাকে মৃত পাওয়া গেল। রক্তে মাখামাখি, মাথা ফাটানো অবস্থায় ম্লান মুখে একটি গভীর বিস্ময়ের অভিব্যক্তি আঁকা ছিল। হ্যাঁ, ভয়াবহ না হলেও বিস্ময়ের ব্যাপারটা হলো আবেগটা তার চেহারায় স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলো খুন হওয়ার আগে যখন খুনিকে দেখতে পেয়েছিলেন। আপনারা ভাবতে পারবেন যে, সেই শোক শহরের আর জেলার আশপাশের মানুষজনকে কতটা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। লোকজন এতটাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলো যে, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না। তারা ভেবে পাচ্ছিলো না যে এমন মানুষটিকে কে খুন করতে পারে। যে বিচারক ডাক্তারের দেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন তিনি বললেন, এখানে আমরা খুনের সব লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি মানুষ নাই যে আমাদের ডাক্তারকে খুন করার সামর্থ্য রাখে। সাক্ষ্য-প্রমাণ সহযোগে একটি সহজ সুযোগ থাকলেও অবস্থা দৃষ্টে বলা যায় এটা খুনের মতো কোনো ঘটনা নয়। আমরা অবশ্যই ধরে নিতে পারি যে, তিনি অন্ধকারে ভয়ঙ্কর গিরিখাতে পড়ে গিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিলেন।
“পুরো শহর এই মতের সঙ্গে ঐকমত্য ছিলো। ডাক্তারকে কবর দেওয়া হলে, কথিত একটি ভয়ানক মৃত্যুর বেশি কিছুই রইলো না। কোনো মানুষের দুর্মতি থেকে একজন ডাক্তারকে খুন করাটা অবিশ্বাস্য। দুর্মতিরও একটা সীমা আছে, তাই না?”
“আপনারা কি বিশ্বাস করবেন, হঠাৎ তাদের নেতৃত্বে খুনিকে ধরার একটি সুযোগ এলো। এক ভবঘুরে, যে তার পঙ্কিল জীবনের জন্য কুখ্যাত আর বহুবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো। তাকে দেখা দেখা গেল একটি নস্যির কৌটা বিক্রি করতে চাচ্ছে মদ খাওয়ার জন্য, যেটা ছিলো ডাক্তারের। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন সে ঘাবড়ে গেল, আর যে উত্তরটা দিলো তা ছিলো পরিষ্কার মিথ্যা। তল্লাশি করে তার বিছানায় একটি সার্ট পাওয়া গেল যেটার হাতায় রক্তের ছোপ ছিলো এবং ডাক্তারের অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত সোনার ছুরিগুলো। এর বেশি প্রমাণ আর কী চাই? তারা ক্রিমিনালটিকে জেলে ঢুকালো। লোকজন গরম হয়ে উঠলো এবং তখনই বলে উঠলো, “এটা অবিশ্বাস্য! এমনটা হতেই পারে না! খেয়াল রেখো ভুল যেন না হয়, আপনারা জানেন এমনটা হয়েছে, যে সাক্ষ্য-প্রমাণ একটি মিথ্যা গল্প বলছে!”
“বিচারের সময় একরোখা খুনি তার নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় দোষ অস্বীকার করলো। সব কিছুই ছিলো তার বিরুদ্ধে। যুক্তি-প্রমাণে পৃথিবীটা কালো বলে বিশ্বাস করানোর মতোই সহজ ছিলো তাকে দোষী সাব্যস্ত করা; কিন্তু মনে হচ্ছিলো বিচারকরা যেন মাথা খারাপ হয়ে গেছেন। প্রতিটা প্রমাণ দশবার করে যাচাই করলেন, সাক্ষীদের দেখলেন অবিশ্বাসের চোখ দিয়ে। রাঙা চোখ মেলে পানিতে চুমুক দিলেন… বিচার কাজ সকালের দিকে শুরু হয়ে বিকেলেই শেষ হয়ে গেল।“
‘“বিচারপতি খুনিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, অভিযুক্ত! আদালত ডাক্তার অমুককে খুন করার অপরাধে তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এবং তোমাকে দণ্ডিত করা হলো…’
“বিচারপতি বলতে চাইলেন, ‘সে সব মৃত্যুদণ্ড থেকে’ কিন্তু যে কাগজে কথাগুলো লেখা ছিলো তা তিনি আছড়ে ফেলে দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিয়ে চিৎকার করে উঠলেন: না! আমি যদি ভুল বিচার করে থাকি তাহলে ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দিবেন। কিন্তু আমি কসম খেয়ে বলতে পারি যে, লোকটি নির্দোষ। এমন চিন্তাকে আমি প্রশ্রয় দিতে পারি না যে, এখানে উপস্থিত কেউ আমাদের বন্ধু ডাক্তারকে খুন করার সাহস রাখে! একটি মানুষ হাঁটু পানিতে ডুব দিতে পারে না।
“’এমনটা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়! অন্যান্য বিচারকরাও সহমত প্রকাশ করলেন।
“’না। ভিড় থেকে গুঞ্জরিত হলো, তাকে ছেড়ে দাও!’
“খুনি মুক্ত হয়ে যেখানে খুশি চলে যেতে পারে এবং আদালতের রায় ন্যায্য নয় তা কোনো প্রাণীই বলতে পারবে না। সেই সঙ্গে আমার দাদি আম্মা বলতেন, সেই মানবিক বিশ্বাস বোধের জন্য ঈশ্বর শহরবাসীর যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি খুশি হন, মানুষ যখন বিশ্বাস করে যে, তারা তার আনন্দের প্রতিচ্ছবি এবং কষ্ট পেলে, মানুষের মর্যাদা ভুলে যায়, সেই বিচারে মানুষ কুকুরেরও অধম হয়ে পড়ে। প্রকৃত কথাগুলো শহরবাসীর জন্যে বেদনা-দায়ক হলেও অন্যদিকে মানুষের বিশ্বাসে ভাবনার উপকারী প্রভাব- আপনারা জানেন, যে বিশ্বাসের মৃত্যু নেই। এমন মহৎ অনুভূতি আমাদের মাঝে গড়ে উঠেছে, এবং তা সব সময়ই আমাদের আনুপ্রাণিত করবে প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসা আর সম্মান দিতে। সকল মানুষ! এবং তাই গুরুত্বপূর্ণ।
মইনুদ্দিন কথা শেষ করলো। আমার প্রতিবেশী খানিকটা আপত্তি জানালেও প্রধান মালী ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো যে, আপত্তিটা সে পছন্দ করছে না। তারপর একটি মর্যাদাপূর্ণ ভাব নিয়ে ট্রলির দিকে এগিয়ে গিয়ে বাঁধা-ছাঁদার কাজ তদারক করতে লাগলো সে।
২২/৮/২০১১
(লেখাটি প্রথম আলোব্লগে প্রকাশিত)
2 Responses to প্রধান মালীর গল্প
You must be logged in to post a comment Login