অ নু গ ল্প – শো কে র ব স ন
অনুগল্প-শোকের বসন
গ্রামের নাম লক্ষণতলা।
গ্রামটা অনেক বড়। অনেকটা পুকুরের মত, উত্তরপাড়া উত্তর দিকে।
দক্ষিণ পাড়া দক্ষিন দিক। পূর্বপাড়া পুর্বদিকে,আর পশ্চিম পাড়া পশ্চিম দিক।
মাঝ খানে দিঘীর মত, বর্ষা এলে পানিতে থৈ থৈ করে, নৌকায় এপাড়া ওপাড়া।
আর শীত শেষ হতে হতে, পানি নামতে শুরু করে। তখন গ্রামের চারিদিক হেঁটে হেঁটে
ওপাড়া এপাড়া ঘুরা যায়। আর উত্তর পাড়ার বুকে, প্রাইমারী স্কুল।
সেই বিটিশ আমলের স্কুল। লেখাপড়া অনেক ভাল,
প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পায় ছেলে মেয়েরা।
দেশ ভাগের আগে অনেক হিন্দু ছিল, ৪৭, ৭১ পর হিন্দুরা নাই বললেই চলে।
গ্রামের দক্ষিণ পাড়া ঘিঁসে, বয়ে গেছে একটি খাল আর সেই খালেই খেয়া পারা পারের নৌকা,
আর একটা বটের ঝুড়িওয়ালা বটগাছ।
আর খাল পার হয়েই গন্জের হাট, নাগর নদীর পারে।
এই তো সে দিনের কথা,
এমনি শীতে বেড়াতে গেলাম নানা বাড়ি, লক্ষণতলা।
গরম কাপড় পড়ে, গায়ে একটা লাল সবুজ ডোরাকাটা চাদর গায়ে।
বয়স তখন ১২ ১৩ হবে, চঞ্চল কিশোর। আমি আবার অতটা চঞ্চল ছিলাম না।
একটু চুপচাপ, তাই বলে আবার হাবাগুমা চুপচাপ না।
হাসার বেপারে ছিলাম আবার এক নম্বর।
সবাই বলতোঃ আমি নাকি দাঁত বেড় করে হাসি।
ঐ যাকে বলে স্মাইল ফেস, এই আর কি।
আমার সম বয়সি মামারা ছিল, খালাতো ভাইবোন, বাড়ি জুড়ে হইহুল্লুর আনান্দ,
সে এক বর্ণনাতীত সুখের দিন। মাঘের ঠান্ডা বিকেল,
সুয়েটার চাদর পরে পারায় পারায় বেড়াতে যাওয়া। উত্তর পাড়ার খালা’তো, নাই খেয়ে
আসতেই দিল না। শীতের পিঠা, রসের ক্ষির, দই চিড়া, আরও কত কি!
বিকেলই যানান দিল,
আগামীকাল শহীদ দিবস। গ্রামে যেন সাজ সাজ রব।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, শহীদ দিবস শুনেছিলাম, এত সাজ সাজ রব,
আগে কোন দিন পালন বা অনুভব করি নাই।
গ্রামের কিশোর, যুবা ছোটরা, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই জড় হল, স্কুল মাঠে।
আগামীকালের শহীদ দিবস পালন, সবাই কালো ফিতার ব্যাস পড়বে,
খালি পায়ে প্রভাত ফেরির গান গিয়ে, স্কুল থেকে মিছিল করে উত্তর পাড়া হয়ে,
পশ্চিম পাড়ার উপর দিয়ে দক্ষিন পাড়া হয়ে,
পুর্বপাড়ার উপর দিয়ে, স্কুলের মাঠে ইট দিয়ে বানানো শহীদ মিনারের বেদীতে,
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।
রাতে মামারা আমরা সবাই একই ঘড়ে, রাত আর যেন যায় না,
কখন হবে ভোর? খালি পায়ে মিছিল তার পর শহীদ মিনারে ফুল দিব?
কাক ডাকা ভোরে সবাই উঠলাম,
মাঘের ভোর তবু সবাই খালি পা’ চাদরের উপর সেপ্টিপিন লাগানো
কালো ফিতার টুকরা বড় মামা লাগিয়ে দিল। শোকের বসন, এখন বুঝি স্পষ্ট এর মানে।
গ্রামের সবাই লাইনে দ্বারানো, গ্রামের এক বিঙ্গ’জন-এর ছোট ভাষনের পর, মিছল শুরু হল,
গ্রাম প্রদক্ষিন শেষে শহীদ বেদিতে ফুল অর্পণ শেষে যার যার বাড়ী ফিরছিলো সবাই।
আমরা কয়েকজন মাঠের কোণে কৃঞ্চচূড়াটির নিচে দ্বারিয়ে।
এ দিকে খানিক সূর্য উঠেছে,
আলো ঝলমল চিক চিক কুয়াশার আবিরে, আর একটু আলো বাড়তেই,
কৃঞ্চচূড়ার লাল দল যেন গাছে আগুন জ্বালালো।
শোকের বসন হটাত যেন কৃঞ্চচূড়ার লালে রাঙ্গিয়ে দিল।
______________________________________
১৪১৭@২১ মাঘ,শীতকাল!
2 Responses to অ নু গ ল্প – শো কে র ব স ন
You must be logged in to post a comment Login