অবিবেচক দেবনাথ

আসুন কিছু মানবিক আবেদনে সাড়া দিই।

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

ছোট্ট ছেলে। বয়স আট কি নয় হবে। মায়ের কাছ থেকে খাওয়ার জন্য দশ টাকা পেয়ে খেতে বেরিয়ে আসল দোকানে। এসে দেখে দোকানের পাশে একটা লোক মুরগির বাচ্চা বিক্রি করছে। খাঁচার মধ্যে কতগুলো মুরগির বাচ্চা খেলছে দেখে কোমল মন আনন্দে নেচে উঠল। মুরগির বিক্রেতার কাছে তাই তার জিঞ্জাসা মুরগির বাচ্চার দাম কত? লোকটি জানাল প্রতি বাচ্চার দাম পনের টাকা। ছেলেটি বলল-দশ টাকা দেবেন? আমার কাছে দশ টাকা আছে। লোকটি তাতেই তাকে একটা মুরগির বাচ্চা দিল। মুরগির বাচ্চাটি হাতে পেতেই আনন্দ-উৎচ্ছ্বাসে উধ্বেলিত মনে নিজের বাসার দিকে দিল ছুট। ছোট বোনকে দেখাতেই সে আনন্দে নেচে উঠল। দুই ভাই-বোনের আনন্দ-উল্লাস শুনে মা ছুটে এল। মুরগির বাচ্চাটি দেখতেই মায়ের জিঞ্জাসা করল-কোথেকে পেয়েছে মুরগির বাচ্চাটি। ছেলেটি মাকে সত্য জবাব দিল। মা বলল-তোকে টাকা দিয়েছি কিছু এনে বোনকে নিয়ে খাবার জন্য আর তুই মুরগির বাচ্চা নিয়ে এসেছিস? একথা শুনেই ছোটবোন খাবাবের জন্য কান্না শুরু করল।  মা বলতে লাগল- তুই এটাকে কই রাখবি? আর এটা ঘর নোংরা করবে। যা এটা ফিরিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে আয়। মায়ের কথায় ছেলেটির মধ্যে বিরূপ ভাব তৈরী হল। কিছুক্ষন আগেকার সেই সুখানুভব তার মধ্যে থেকে উদাও হয়ে গেল। তাই সে ছুটল মুরগির বাচ্চা ফিরিয়ে দিতে। দোকানদার মুরগির বাচ্চার খাঁচাটা নিয়ে চলে যাচ্ছিল, ছেলেটি তাকে বলল- দাঁড়ান, দাঁড়ান। লোকটি ছেলেটিকে জিঞ্জাসা করল- কি হয়েছে? ছেলেটি জানাল-সে মুরগির বাচ্চাটি নেবেনা, এটা ফেরত নিতে। লোকটি ফেরত না নিয়ে চলে যেতে লাগল, আর যেতে-যেতে বলতে লাগল-বেটা! মুরগির বাচ্চা ঘাইটা-ঘুইটা আইনা দিলেই নিয়ে যামু? ছেলেটির পাশেই সমবয়েসি আরোকটি ছেলে। যে একটু আগে মুরগির বাচ্চা বিক্রেতার মুরগির বাচ্চার খাঁচাটার পাশে বসে-বসে মজা করে খেলেছিল। ওর দিকে তাকিয়ে ছেলেটি বলল- রুস্তম তুই মুরগির বাচ্ছা ফেরত নিতে বল না। যদিও রুস্তমের সে ক্ষমতা নেই লোকটিকে কিছু অনুরোধ করার, তবুও ছোট জ্ঞানের পরিধিতে ছেলেটির ভাবনা, যেন রুস্তমই কিছু করতে পারে। রুস্তম বোকা বনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। মুরগির বাচ্চা বিক্রেতা চলে গেলে ছেলেটি রুস্তমকে বলল- তুই এটা কিনে নিয়ে যা, একথা শুনেই রুস্তম দিল দৌড়। আর ছেলেটি মুরগির বাচ্চাটি হাতে নিয়ে বলতে-বলতে কান্না শুরু করে দিল- আমার দশ টাকা, মুরগির বাচ্চা নিয়ে যান, আমার দশ টাকা দিয়ে দেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেটির মজার কান্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। কান্না শুরু করতেই আমি ছেলেটিকে ধরলাম, বললাম কাঁদছ কেন? ছেলেটির কান্নার সুরেই বলতে লাগল, মুরগির বাচ্চা নিয়ে গেলে মা মারবে। একথা বলেই কান্না থামিয়ে সে আমাকে বলতে লাগল- মুরগির বাচ্চাটি ধরেন। ওর কথা শুনে আমি বোকা বনে গেলাম। কারণ, আমি একজনের কাছে গেছি একটা কাজে।  তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি লোকটির জন্য। আমি ভাবতে লাগলাম ছেলেটিকে দশটাকা দিয়ে দিতে পারি আমি, কিন্তু মুরগির বাচ্চা নিয়ে আমি কি করব?  ঢাকা শহরে আমি যে খাঁচায় থাকি, সে খাঁচায় আমার নিজেরই দম বন্ধ হয়ে আসে, তাহলে এই মুরগির বাচ্চা নিয়ে তাকে রাখব কোথায় আর কিভাবে যত্ন করব? ভাবতে-ভাবতে আমি ছেলেটির দিকে হাত বাড়িয়ে মুরগির বাচ্চাটি ধরলাম। কিন্তু নিজে কি করব তা বুঝতে পারছিলাম না। আমার হাতে মুরগির বাচ্চাটা ধরিয়ে দিতেই ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে উঠল, বুঝলাম ছেলেটির মাথা থেকে কোন এক অজানা ভয়ের ভীতি কেটে গেছে। হয়তো সে অজানা ভীতি মায়ের মাইর বা বকাঝকা। কিন্তু ব্যাপার তো সেটা না, আমি এখন মুরগির বাচ্চা নিয়ে কি করব তাই ভাবছি, যে লোকটি আসছে তাকে দিয়ে দেব? আবার ভাবলাম সে কিভাবে নেবে? সেও তো আমার মতো পাখির খাঁচায় থাকে। ভাবতে-ভাবতেই একটা মহিলা আর দশ কি এগার বছরের দুটো মেয়ে ছুটে এসে আমাকে জিঞ্জাসা করল-এখানে একটু আগে যে মুরগির বাচ্চা বিক্রেতা ছিল তিনি কই? আমি বললাম-তিনি চলে গেছেন। মহিলার দিকে তাকিয়ে তাকে জিঞ্জাসা করলাম আপনারা কি মুরগির বাচ্চা কিনতে এসেছেন? মহিলা হ্যাঁ জবাব দিতেই- আমি তাকে বললাম ছেলেটা এই বাচ্চাটি কিনেছে, এখন বিক্রি করে দেবে। আপনি চাইলে বাচ্চাটা নিতে পারেন। মহিলা জবাব দিল-দাম কত? আমি বললাম দশ টাকা। মহিলা বাচ্চাটি হাতে নিল, আর বাচ্চা মেয়ে দুটির একটাকে বলল- ছেলেটিকে দশটাকা দিতে।

আমার এ গল্পটি লেখার একটা উদ্দেশ্য আছে, তা হল এমনকিছু লোক আছে যাদের প্রাণ অন্যের দুঃখ-যন্ত্রণার সঙ্গী হতে চায়। চায় অন্যকে সাহায্য- সহযোগিতা করতে। কিন্তু নিজের সেরকম ক্ষমতা না থাকায় তারা তাদের মনের সে আশা পুরণে ব্যর্থ হন। তাদের জন্য বলছি- আপনারা যদি এই ছোটখাটো মানবিক সাহায্যগুলোতে এগিয়ে আসেন তাহলে কিছু নিষ্কোমল মনে হাসি ফুটে উঠবে। এরকম আরো কিছু মানবিক কার্য্যঃ

# কোন শিশু দোকান থেকে কিছু কিনতে গেল, কিন্তু দোকানদার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, যে পন্যটি শিশুটি কিনতে চায় তা কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তার না থাকাতে। এতে শিশুটির মন খারাপ করে এগিয়ে চলল। এমত অবস্থায় আপনার সামান্য অর্থ তার মুখে সুখের হাসি ফুটাতে পারে। আপনাকে দিতে পারে নীরব শান্তি।

# একটা লোক জরূরী কাজে মোবাইলে লোড করার জন্য ১০ টাকা দিয়েছে। কিন্তু দোকানদার এগার টাকার নিতে কিছুতেই লোড দেবে না। এদিকে লোকটির কাছে আর টাকাও নেই যে সে দোকানদারকে দেবে। তাই সে দোকানদারকে কাকুতি-মিনতি করছে লোড দেবার জন্য। দয়া করে দোকানদার কে একটা টাকা দিয়ে লোকটার মনে একটু প্রশান্তির পরশ দিন। দেখবেন আপনি নিজেই দারূণ সুখবোধ করছেন।

# একজন ভুলক্রমে নিজের কাছে খাবার জন্য যে অর্থ ছিল, তারচেয়ে বেশি খেয়ে পেলেছে। তাই তার কপালে অপমান অপদস্ততা আছে। দয়া করে তাকে এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচান। এতে লোকটির যেমন মান বাঁচবে, তেমনী আপনার প্রাণেও শান্তি সঞ্চিত হবে।

# বৃদ্ধ একটা লোক। হাঁটতে পারছেন না, একটু দুর গিয়ে একটা রিক্সাওয়ালাকে গিয়ে জিঞ্জাসা করছে দাদা, আমারে একটু এখানে (তাঁর গন্তব্যে বলে) নিয়ে যাবা। রিক্সাওয়ালা জবাব দিল বিশটাকা লাগবে, বৃদ্ধ জানাল তাঁর কাছে দশটাকা আছে। কিন্তু রিক্সাওয়ালা তাতে তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই বিষয়টি যদি আপনার চোখে পড়ে, তবে আপনার কাছে বিশেষ অনুরোধ তার দোয়া নিতে ভুলবেন না।

দেখুন আবারো বলছি- আপনার ক্ষমতা নেই কোটি টাকা খরচ করে আপনার আপনজনদের খুশী করতে। কিন্তু এই ছোটখাটো সাহায্যগুলো এত সহজে আপনার মনে এমন এক পরিপূর্ণ তৃপ্তী জোগাবে যা আপনি আজীবন চেষ্টা করেও কোথাও থেকে পাবেন না।

আমি বার-বার অনুরোধ করছি, আসুন আমরা সকলে মিলে এই মানবিক সাহার্য্যগুলোতে এগিয়ে আসি আর নিজেদের মানবিকবোধ জাগ্রত করি। নিজেদের মনুষ্যত্বের অস্তিত্ব উপলব্ধি করে মানুষ হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণের এই সুযোগ কি আপনারা হেলায় হারাতে চান!!!!!!!

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


20 Responses to আসুন কিছু মানবিক আবেদনে সাড়া দিই।

You must be logged in to post a comment Login