একটি মৃত্যুর ব্যবচ্ছেদ!
একটি মৃত্যুর ব্যবচ্ছেদ!
একটি মৃত্যুর ব্যবচ্ছেদ, থানার একদল পুলিশ, মোড়লের বাড়ির উঠানে।
মোড়লের পুকুরের মধ্যখানে নীল স্বচ্ছ পানিতে ভাসছে একটি মেয়ের লাশ।
দিঘল মাথার চুল ভাসছে,পরনে সালোয়ার কামিজ। তাই সকলের ধারনা, এইটা একজন মেয়ের লাশ।
যেন সদ্য চাঁদ ডুবেছে পুকুর জলে। উৎসুক জনতার ভির। সবাই দেখছে, পুকুরের চার পার থেকে।
কিন্তু কেউ চিনতে পারছে না কার লাশ হতে পারে। এখন পুলিশ এসেছে, একটু পর সবই জানা যাবে।
ঐ অপয়েয়া ধাঁড়ি মেয়েটি, যে কিনা সারা গ্রামের মান-ইজ্জত সব ধুলায় মিশালো,
যৌবন আসছে তো কি হইছে? তাই বলে সবার সাথে ঢোলাঢুলি করতে হইবো?
মরন হয় না ক্যা মাগিটার? এমনি কানাঘুসা চলছিল পুকুর ঘাটের মেয়েলি জটলায়।
শালিশ বসেছে কয়েকদিন যাবত। কয়েক গ্রাম জুড়ে মেয়েলি আসনাই।
আমের বোলের মত সুঘ্রাণ না হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অবিবাহিত মেয়ের পেটে বাব্ছা বলে কথা।
রহমত মোড়লের বাড়ীর উঠানে, গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মেয়েটার একটা আসু সমাধান,
করার তৎপরতায়, সবাই কানাঘুসা করছে। কে এমন ঘটনা ঘটালো, তার হদিস কেউ করতে
পারছে না। কেউ বলে উমুক, উমুক হতে পারে। কেউ মুখ খুলছে না। আবার কেউ সাহস করে বলছে না।
বড় লোক বলে কথা, মান সম্মান আছে না। টাকা থাকলেই ইজ্জত থাকে, আর না থাকলে লোভি স্বার্থপর।
এমনি টানাপোড়নে দিঘলবাড়ি গ্রামের মানুষেরা আজ দ্বিধা বিভক্ত। কিছু লোক অনাথ মেয়েটির পক্ষে।
আর বেশীর ভাগই মোড়রেল দলে।
অনাথ মেয়েটি, জরিনা, উত্তর পাড়ার করিম মাঝির ছোট মেয়ে। পাঁচ মেয়ে, ছেলের জন্য করিম মাঝির
আজ এই হাল। এই তো সেদিন, তাও প্রায় তিন বছর হল, হটাত জ্বরে মারা গেল করিম মাঝি।
অথই জলে হাবুডুবু খেতে খেতে, জরিনার মা’র জীবন যুদ্ধ। নানা গুন্জনে ভরা।
সেখানেও দিঘলবাডি গ্রামের মোড়লের দাস দাসির খেলা। এমনি জীবন যু্দ্ধে উতরে যায়, জরিনার মা।
চার মেয়ের বিয়ে হয়, তারা সবাই খায়ে না খেয়ে সংসার করছে। কিন্ত বাদ সাধে এই ছোট জরিনা।
সে এখন ষোড়ষি বালিকা, চাঁদ বিভায় অঙ্গজুড়ে। ছোট বেলা থেকেই মায়ের সাথে, মোড়ল বাড়িতে,
যাতাযাত মোড় বাড়ীর ফাইফরমাজ খাটে।
জরিনার চাঁদ ডুবা অঙ্গে, কার না নজর পরে।
মোড়লের চোখ যে টাটায় না তা নয়, নেহাত ছোট মানুষ বলে,
আর জরিনার মা’র দিকে চেয়ে কিছু বলে না। তাতে কি, মোড়লের ছেলে বাবু মেট্রিক ফেল,
একমাত্র মোড়েল বংশধর। যার রক্তে মিশে আছে হিংস্র লোলুপ ক্ষুধার থাবা। তাই হয়তো জরিনার মত
মেয়েরা বাঁচার জন্য জীবন পায় না। পায়না বিচার, কলঙ্ক মাথায় নিয়ে, জীবন দিতে হয়।
এমনি কত কাল? গ্রহন লাগা চাঁদের মৃত্যু দেখবো।
১৪১৭@১১ ফাল্গুন, বসন্তকাল।
8 Responses to একটি মৃত্যুর ব্যবচ্ছেদ!
You must be logged in to post a comment Login