সকাল রয়

এটা কোন প্রেমের গল্প নয়

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

এক

-বাবা পালিয়েছে!
-বলিস কি? তোর বাবা পালিয়েছে?
-ধীমানের মুখ থেকে কথাটা শোনামাত্র , অন্তু, রঞ্জন হতভম্ব হয়ে গেল! ‘ এখন ভর দুপুর, বঙ্কুবাবুর চায়ের দোকনে ওরা আড্ডা দিচ্ছিল রোজ শুক্রবার এমনটাই হয়।
বাইরে তখন বৃষ্টির তান্ডব পুরোদমে চলছে। আধভেজা হয়ে মাথায় ছাতা নিয়ে ধীমান দোকানে ঢুকেই ছাতাটা একপাশে ছুড়ে ফেললো। অন্তু পাশ ফিরে জিজ্ঞেস করলো -গুরু আজ তোমার দেরি হলো যে, তারপরই মুখে বিষণ্নতার ঢেউ তুলে বললো কাল থেকে বাবাকে খুজে পাচ্ছিলাম না আজ সকালে ড্রয়ার থেকে ডাইরি বের করে দেখি তাতে লেখা যে, আমি তোমাদের ছেড়ে পালিয়ে গেলাম কোন এক অনামিকার সাথে তোমরা ভালো থেকে?

রঞ্জন উঠে দাড়িয়ে বললো- শালা এ্যাদ্দিন শুনেছি অমুকের মেয়ে পালিয়েছে, তমুকের বউ ভেগেছে; আর আজ এই প্রথম শুনলাম কারো বাপ ভাগম-ভাগ’ কি-কেস্ রে বাবা ! ‘ দেশটাতে কি হচ্ছেরে অন্তু? সব শালা- ওই মহাব্বতকা খেল!
কথার মাঝখানে বঙ্কু দা বললো চা-দেবো না-জায়গা দখল করেই দিন কাটাবে?
-চা বলছো কি বঙ্কু দা’ আজ সব হবে, ধীমানের বাবা এভারেষ্ট জয় করতে গ্যাছে তাই গুরু আজ পার্টি দেবে, কথা শেষ না করেই অন্তু চানা আনতে গেল।

ধীমান চেয়ার টেনে দিয়ে ধপাস্ করে বসে পড়লো হাওয়া কমে গেছে ততক্ষণে তবে বৃষ্টি কমছে না। বাইরে বেরুনোর চেয়ে এখানটায় বসে থাকাই ভালো। ধীমান ম্যাচ-কাঠি মুখে নিয়ে বললো, -কি করি বলতো এখন? রঞ্জন সিগারেট ফুঁকছিলো, ফিল্টারটি অ্যাসট্রেতে ফেলে দিয়েই বললো, তোর মা-কি ভিলেন টাইপের আচরন করতো নাকি?
-ধূর কি,যে বলিস? মা, ও-রকম মহিলাই না;
-রোজ সকালে ঝাড়–পেটা করতো না-তো আবার? যদি সেরকম কিছু হয় তো দ্যাখ গিয়ে বেচারা কষ্ট পেয়ে আরেকটা প্রেম করে ভেগেছে আর কি?
-এই বয়সে প্রেম!!
-গুরু কোথায় আছো? প্রেমটা কি শুধু পনের থেকে ত্রিশের জন্য, ওটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকে!
-বুঝলাম! কিন্তু? তাই বলে বেয়াল্লিশে কেউ এমন কাজ করে? অসহ্য !
-তোর মা’র কি অবস্থা?
-কিছু বোঝা যাচ্ছে না এখনও। মা’র তো ওই এক সংলাপ ‘মিনসে লুকিয়ে প্রেম করতো? পুরুষজাত সব এক-সবক’টা হাড়ে বজ্জাত মেয়ে দেখলেই ফষ্টি-নষ্টি’
-মেয়েরা বুঝি আমের আঁটি? মেয়েরা হলো আরো বড়-রকমের বজ্জাত! তা- না হলে তোর বাবার মতো আধবুড়োর সাথে কেউ ভাগে? তাছাড়া তোর বাবা যে আদতে সত্যিই ভেগেছে কিনা সেটা নিশ্চিত হলি কি করে?
-বাবা তো দু-দিন ধরে বাড়ি নেই, মা ভেবেছে এমন তো আগেও হয়েছে রাগ করে গেছে আবার ফিরেও এসেছে। আমরাও সেটাই ভেবে বসে থাকতাম আজ সকালে বাবা ঘরে গিয়েছি বই আনতে, দেখি টেবিলের নিচে একটা চিঠি,খুলে দেখি বাবার লেখা
– কি লেখা তাতে?
-কি-আর ‘ আমি তোমাদের ছেড়ে চললুম, তোমরা থাকো তোমাদের নিয়ে; তবে একা যাচ্ছি নে আর কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, যাকে নিয়ে যাচ্ছি সেই নারী আমাকে অনেক ভালোবাসে; তার সাথেই বাকী জীবন কাটাবো
-হুম, তোর বাবা অনেক কষ্ট পেয়ে নতুন কাকিমা’কে নিয়ে পালিয়েছে, ব্যাপারটা দারুন
চা-পর্ব শেষ করে রঞ্জন ওদের নিয়ে ধীমানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াল, বৃষ্টি ততক্ষণে বিশ্রামে গেছে; রাস্তা ভর্তি পানি এই সময়টাতে চারপাশটায় বর্ষাক্রান্ত রোমান্স-রোমান্স একটা ভাব আছে। ঠিক টাইমেই ওর বাবা পালিয়েছে অবশ্য এটা তো মেয়ে ভেগেছে কেস্ না তাই অত ভাববার কিছু নেই
এই বয়সে এইরকম কেস দেখতে ভারি মজা লাগে, ক্যামন যেন সিনেমাটিক সিনেমাটিক একটা ভাব। মেয়ে পালিয়েছে, মা কাঁদছে, বাবা রাগে ফুঁসছে; পাড়া-পড়শি কেচ্ছা গাইবার ইস্যু পেয়েছে; আরো কত রকমের সংলাপ থাকে- মেয়ে বাড়ির দরজায় পা রাখতে পারবেনা কোনদিন; এই মেয়ের মুখ কোনদিন দেখবেন না ইত্যাদি।
রঞ্জন ভাবছে ওর বাবার উপর কি এই রকমের এ্যাকশন হবে নাকি?
ভেতর ঘরে বসলো ওরা। ডাইরি নিয়ে ধীমান এলো মেয়েটার নাম দীপা পুরোনাম দীপানতিকা দত্ত। রিভারষ্ট্রিট থাকে। ওর বাবার অফিসেই কাজ করে বয়স ত্রিশের কোটা পেরিয়েছে বিয়ে’ থা করেন নি। খুব জটিল কেস্।

ধীমানের মা এলো; দ্যাখো দেখি কি লজ্জার বিষয়? মেয়েটা ভেগে গেলেও কষ্ট পেতাম না। আর যাই হোক দিন-দশেক বাদে বাইরে বেরুতে পারতাম। লোকে আজকাল ওগুলো তেমন একটা পাত্তা দেয় না। কিন্তু দ্যাখো মিনসে ভেগেছে ! আমি মানুষকে কি জবাব দেবো? যদি ছড়াছড়ি হয়ে যেত তাহলে কিছু বলা যায়; কিন্তু যে সম্পর্ক চলছিল কাল সকাল পর্যন্তও সেটা কেউ না বলে-কয়ে দ্যুম করে বন্ধ করে দিতে পারে।

অন্তু-রা যে পাশটায় বসেছে তার অপর পাশটায় সেলফে অনেক বই আছে। বেশির ভাগই রোমান্টিক ধাচের এই যে, এরিখ সেগালের লাভ ষ্টোরি সুনীলের জলের নীচে প্রথম প্রেম, সমরেশ এর ভালো থেকো ভালোবাসা আরো অনেক বোঝাই যাচ্ছে ভদ্রলোক রোমাঞ্চ প্রিয় মানুষ ছিলেন। কে জানে প্রেমটা হয়তো অনেক আগে থেকেই ছিলো তখন তো ওনার অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা বলেই শোনা যায়। এদ্দিন পড়ে ছোটবেলার প্রেম পেয়ে পালিয়েছেন মনে হয়। অন্তু অবশ্য অনেকটা সাপোর্টে আছে ওর বাবাটা একটা ম্যাদা মার্কা ; মায়ের হাজার বকুনি শুনবে তবুও শালা কিছু বলবে না এই জাতীয় বাপ গুলোর জন্য পুরুষ জাতকে মাঝে মাঝে মাঘের রাতে পানিতে ডুবাতে ইচ্ছে করে।

আধ ঘন্টায় একটা রফা হলো। মেয়েটার বাড়ি গিয়ে আগে খাবর নেয়া হবে তারপর দেখি ওর ফ্যামিলির লোকজন কি বলে? দুই গ্রুপের লোক মিলে খুঁজলে কাজটা সহজ হবে। চিন্তা আরেকটা যদি তদ্দিনে ওরা বিয়েটা সেরে ফেলে তাহলে?
-তাহলে মিনস্ কে দিয়ে ভাস্কর্য বানাবো।
-আ: কি বলছো মা! ধীমান চেঁচিয়ে উঠলো। রঞ্জন, অন্তু ধীমান কে নিয়ে ভরদুপুরে বেড়িয়ে এলো।

(দুই)

-এই বাড়িতে দীপানতিকা দত্ত থাকেন?
-হ্যা আপনারা কোত্থেকে আসছেন?
-কলেজ ট্রিট
-কি জন্য?
-উনি কি বাড়ি আছেন?
-না- উনি তো অফিসের কাজে বাইরে গেছেন।
মেয়েটি ভেতরে ডাকবার কোনরকম আগ্রহ দেখালো না- আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? অন্তু বললো,
-না দিদিমনি বাইরের লোক এ্যালাও করেনা
-দিদিমনিটা কে?
-দীপা দি
-ও ! প্রশ্ন করতে করতে রঞ্জনের মুখ লাল হয়ে উঠছিলো। অন্তু মুখ ফসকে বলে দিলো আমরা বাইরের লোক নই দিদিমনির শ্বশুরবাড়ির লোক। এই কথা শোনা মাত্রই দরজায় দাড়ানো মেয়েটি চোখ কপালে তুলে বললো ‘দিদিমনির বিয়েই হয়নি শ্বশুরবাড়ি আসবে কোত্থেকে? আপনি ভুল বলছেন?
-ধীমান বলে উঠলো ভুল বলছি না। বাড়িতে আর কে আছে? তাকে ডাকো?
-ছোড়দি আছে
-তাকেই ডাকো?

স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে এলোচুলে যিনি এলেন তিনিই মনে হয় ছোড়দি। বয়সে ওদের সমান; -আসুন ভেতরে আসুন। -বলুন তো কি হয়েছে দরজায় যেন কথার খই ফুটছে! সবাই ভেতরের ঘরে ঢুকল। অন্তুই শুরু করলো আপনার দিদি কাল থেকে বাড়ি নেই? কোথায় গেছেন জানেন?
-অফিসের কাজে সাউথ হিলস গেছে বলেই তো জানি কেন আপনাদের তাতে কোন অসুবিধে?
আমাদের অসুবিধে না সুবিধে সেটা বললেই বুঝবেন। আমার বাবা অজিত স্যানাল, আপনার দিদি যে অফিসে কাজ করেন সে অফিসে তিনিও কাজ করেন তো কাল থেকে আমার বাবাও বাড়ি নেই- ধারনা করছি ওনারা দু’জন পালিয়েছেন।
-এমন ধারণা কি করে হলো?
-ডায়রিতে লিখে গেছেন
-দিদির নাম আছে তাতে?
-না
-তাহলে কি করে শিউর হচ্ছেন? তাছাড়া দিদি এমন কাজ করতে পারেনা?
-আপনার দিদিই বাবার একমাত্র বন্ধু
-কি যে বলেন না; আপনাদের মাথার হেডলাইট গ্যাছে
-আমাদের না মনে হচ্ছে আপনার গ্যাছে
-দিদি যে আপনার বাবাকে নিয়ে ভেগেছে কিংবা আমরা দিদির সাথে যে আপনার বাবার কোন সম্পর্ক ছিলো তার কোন প্রমাণ আছে?
পকেট থেকে ছবি বের করে দিলো। কিন্তু মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলোনা যে কোন ভাবান্তর হয়েছে। আজকাল এই রকম ছবি এডিট করা যায় এটা সে রকম কেস্ আপনারা হলেন মহা ধাপ্পাবাজ? আপনারা আসতে পারেন’
-বে; তুই কাকে কি বোঝাচ্ছিস? চলতো রঞ্জন আমাদের নিয়ে বেড়িয়ে এলো। ওরা গেট পেরুতে পারেনি পেছনে মেয়েটির ডাক শোনা গেল, ফোন নাম্বারটি লিখে যান পরে ভেবে আপনাদের জানাবো। গেট পেরিয়েই অন্তু বললো শালার মেয়ে গুলান একেকটা তারকাটা।
রোদ মরে আসছে। অন্তু ধীমান চলে গেলো। রঞ্জন কেস্টা নিয়ে আরেকটু ভাবল কাল অফিসে গেলে বোঝা যাবে।
অফিস থেকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া গেল না। দুজ’নারই সপ্তাহ খানেক করে ছুটি নেয়া আছে। কোথায় গ্যাছে তারও কোন তথ্য নেই।
ধীমান বাড়ি ফিরে ডায়রি নিয়ে টেবিলে বসলো। অনেক দিন আগের কেনা দেখেই বোঝা যায়! বাড়ির পরিবেশ পাল্টে গেছে ওর মা এখন একটু চেঞ্জ হয়ে গেছে।
ধীমানের বোন স্বরূপা ব্যালকনির পাশে দাড়িয়ে ছিলো এসে বললো দাদা মা তোকে ডাকছে? মা’র পাশে গিয়ে বললো -তুমি তো বাবার সাথে কোনদিন ভালো করে কথাও বলতে না
-বলবো কি করে?
-সারাক্ষণ তো বই পড়তো! আমার সাথেই বা কবে ভালো করে কথা বলেছে।

(তিন)

রিসিপশনে চাবি জমা দিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলেন অজিত বাবু। সাদা শঙ্খখোলের শাড়ি পড়ে কপালে কালো টিপ আর সামান্য প্রসাধনী দিয়ে অনেকদিন পর সেজে বেরুলেন দীপানতিকা চাবিটা রাখলেন রিসেপশনে।
-তো চলো এবার যাওয়া যাক! হোটেলের গেট পেরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠলেন দু’জন।
ছেলেমেয়েরা কি ভাববে বলতো? -ভাববার জন্যই তো লম্বা সময় দিয়েছি গিয়ে হয়তো দেখবো খাতা ভরে ফেলেছে।
-তোমার বউটা তো ভালো
-ভালো না ছাই, জোক একটা!
-এভাবে বলোনা; এতটা দিন একসাথে রয়েছো। বাকী জীবনটাও তো কাটাতে হবে তাইনা।
-এর চেয়ে একা থাকা ভালো ছিলো। এই যে তুমি একা আছো?
-অজিত একা থাকার যন্ত্রনা আছে। এই ক’টা দিন তোমার সাথে ঘুড়লাম, প্রকৃতির সাথে কিছুটা সময় পার হলো। দিনগুলো ছবির মতো কেটে গেলো। এই যে, আর ক’ঘন্টা ; তারপরেই তো একা হয়ে যাবো। একা হবার যন্ত্রনা অনেক।
-হয়তো। তোমার কথাই ঠিক তবুও ভালো কানের কাছে সারাক্ষণ বিরক্তি ধরাবার কেউ নেই।
-তাও ভালো অন্তত দিন শেষে কথা বলার মতো কেউ আছে তোমার।
-হুম; তবে সত্যি বলতে কি জানো মনের মতো করে সবকিছু পাওয়া যায় না আর তাই মাঝে মাঝে মনে হয় মনটা না থাকলেই ভালো হতো।
-আমার যে দিনগুলো গেছে ভালোই গেছে এখন মাঝে মাঝে সাধ হয় সংসার করি কিন্তু মনে হলেই আবার সেই পুরোনো ভাবনা; তোমাদের তো দেখে আসছি কি থেকে কি হয়ে গেলে’ তোমাদের সজলের কথাই বলো কি ভালো গিটার বাজাতো অঞ্জন দার ভক্ত আমাদের সময়কার ওই তো ছিলো নিদডাঙ্গার গিটারিস্ট অথচ একটা প্রেমের জন্য সব উচ্ছন্নে গেল; সুরমিতার কি কম কষ্ট হলো শেষ পর্যন্ত প্রাণ বিসর্জন; নাহ্ এসব মনে হলে আর ভালো লাগে না।
-যাই বলো জীবনের পূর্ণতা কিন্তু প্রেমেই
-আমার কাছে তা মনে হয়না
-কেন?
-থাক এসব কথা; তার’চে তুমি কেন বাড়ি ছেড়েছিলে সেটা বলো এই চারদিন তো এসব কিছু বলো নি। অজিত বাবু চোখ দুটো আকাশে ঠায় দিয়ে বললেন -এতদিন পর জানতে পারলাম যে আসলে যাকে বিয়ে করেছি আমি তার মনে নেই একটা বাহ্যিক অভিনয় চলেছে এতকাল। ওর একটা প্রেম ছিলো আমাকে বিয়ে করেছে স্রেফ বাবার অনুরোধে কিন্তু এটা কি ঠিক? যার মনটাই পেলাম না তার পাশে থেকে নিজেকে আর কতো মিথ্যে অভিনয়ে জড়াবো।
কোথায় যেন কি একটা তীব্র তীরের আঘাত লাগলো দিপার’ তথাপি বলে গেল সরল ভাবে -কিন্তু এতে কি তাকে দোষ দেয়া ঠিক? তার ক্ষেত্রে তুমি হলে তাই করতে; প্রেম কি ভুলা যায় সেটা যদি সত্যিকারের প্রেম হয়ে থাকে তো স্বামীর বুকে মাথা রেখে প্রেমিকের কথা কল্পনা করা যায়।
-তাই নাকি তোমার তো দেখি অনেক অভিজ্ঞতা; তো এদ্দিনেও একটা প্রেম করোনি কেন?
-করেছিলাম তো; সেটা নিজের স্বস্তা দিয়ে কিনে নিয়েছিলাম। যত্নে রেখেছিলাম কোন এক শ্রাবণে দেখি ভেসে গেছে ঝড়ো বর্ষণে

ট্যাক্সি মাঝ পথে দু’বার থেমেছিলো অজিত বাবু একবারও নামেননি বারবার ই মনে হতে লাগলো প্রেম এমনই সব কিছু মানিয়ে নেয়া যায়না ঠিকই, তবে মেনে নিতে নিতে হয়ে যেতে পারে আর সেটাই না করা যাক এবার। ছিমছাং নদীর পারে ওরা কিছুক্ষণ বসেছিলো কেননা সন্ধ্যের আগে ফিরে গেলে সবার মুখো-মুখি হয়ে কথার খই ফুটবে। সেদিনের সেই সন্ধ্যেটা দু’বন্ধুতে ভাগ করে নিলো নিজেদের ভুল করে ফেলে দেয়া দিনগুলোকে

(চার)

মা, বাবা আসছে এ কথা বলেই স্বরূপা ভেতরে গেল। কি নাটক ঘটতে পারে সেটা ভেবে অজিত বাবুর একটুও খারাপ লাগছে না আজ। দিপাকে বলেছিল এসো বাসায় চা খেয়ে যাও। দিপা শুধু বলেছিল নতুন কোন দৃশ্যের অবতারণা করে কাউকে কষ্ট দেবার ইচ্ছে নেই।
ধীমানের মা এগিয়ে এসে বললেন তুমি এসেছে! অজিত বাবুর সেই এক উত্তর -তাই তো মনে হচ্ছে; তবে এবার আর ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু’ -থেমে গেলেন তিনি পরে বলবো…
ধীমান বাড়ি ফিরে আসার আগেই খবরটা চাউর হয়ে গিয়েছিল তাই অন্তুকে বলেছিল এবার তোর বাবার দিকে খেয়াল রাখিস; দেখিস ভেগে না যায়।

সেই রাতে ‍দ্বিতীয় বারের মতো সেই বাসর রাতের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনাতে জানালা ধারে। অজিত বাবু আর তার স্ত্রী কথা বললেন -একটা সত্যি কথা বলবে? তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে?
-হ্যা
-তো এদ্দিন বল নি কেন?
-ভয় পেতাম যদি তুমি আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করো
-সবাই কি ওরকম হয়
-আজ থেকে আর অভিনয় নয় এখন থেকে সত্যিকারের বেঁচে থাকা হোক
পিনপতন নিরবতায় ঘরটা মেতে উঠছে কিন্তু অজিত বাবুর মনে পড়ছে দিপার কথা প্রেম বোধহয় এমনই হয় আর সেই সময় তার স্ত্রী যে পুরোনো প্রেমিক কে মনে করছে না তার ই বা কি গ্যারান্টি আছে?

ভাবছে অজিত বাবু প্রেম রঙ লাগাচ্ছে লাগাক না সেটা মনের গহীনে ক্ষণিক সময়ের জন্য। শুধু শুধু স্বামী-স্ত্রী’র মধুর সম্পর্কে এই বিষয় নিয়ে ব্যাবধান রাখার কি প্রয়োজন এটা তো দেয়াল তৈরি করছে না । তখনি করবে যখন ইচ্ছে করেই একে অপরকে দুর ভুবনের মানুষ ভাববে।
এই ভাবনার কোন এক সময়ে তার স্ত্রী তার হাতটি উঠিয়ে নিল নিজের হাতে ততক্ষণে উত্তরের জানালায় বৃষ্টির ঝাঁঝ লাগতে শুরু করে দিয়েছে।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


9 Responses to এটা কোন প্রেমের গল্প নয়

You must be logged in to post a comment Login