শাহেন শাহ

কানাডায় ইমিগ্রেশন ও নতুন জীবন সূচনার চ্যালেঞ্জ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে প্রিয় জন্মভূমি ফেলে মানুষ পরবাসী হয় স্বাপ্নিক ও কাব্যিক জীবন গড়ার বাসনা নিয়ে। এ জীবন যে সত্যিই অজানা ও অনিশ্চিত গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে মহাসমুদ্রে এক নতুন যাত্রা তা অনেকেই বেমালুম ভুলে যান। এ যাত্রায় অনেকে সফল হন, বিফল হন বহু। ব্রিলিয়ান্ট ক্যারিয়ার, সামাজিক উচচ পদমর্যাদা ও আয়েশী জীবন ছেড়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা জীবনের সমস্ত অর্জন ও পুঁজি সাথে করে এনে ক্ষনিকের বাকী জীবনটাকে যে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তা বলতে গেলে অন্ততপক্ষে শুরুতে কেউ ভাবেন না। কি ঝানু রাজনীতিবিদ, দক্ষ কূটনীতিক, অভিজ্ঞ আমলা ও অধ্যাপক, বিত্তবান প্রকৌশলী, ডাক্তার ও আইটি প্রফেশনাল‌ সবারই চাই নতুন সন্ধান, নতুন জীবন। তা কিভাবে? পাসপোর্টের রঙ পরিবর্তনের মাধ্যমে, সবুজের বদলে লাল! এ যেন ‘দীনতার’ অপবাদ ঘুঁচিয়ে ‘বিত্তদের’ তালিকায় নাম অন্তর্ভূ ক্তির অশুভ প্রতিযোগীতা!
প্রায় ১ কোটি ব.কি.মি’র বিশাল দেশ কানাডা। জনসংখ্যা সাড়ে তিন কোটিরও নীচে, বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম (০.৯%), পাশে আবার আমেরিকার বিশাল বাজার। সব মিলিয়ে দেশটিতে মানুষজনের সংকট সব সময় লেগেই থাকে। সুন্দর ও সহজ ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন জাত, ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের মানুষদের এদেশটি যেন এক মিলনমেলা! হাইওয়ের দু’পাশে হাজার হাজার মাইল খোদার বিস্তীর্ণ অনাবাদী ও উদার জমিন দেখে মনে হয় দেশটি যেন চায়না, ভারত ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী জনবহুল দেশ সমূহের মানুষদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে পৃথিবীর জনসংখ্যার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্যে। সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সরকারের সদয় আচরণ ও সহযোগিতা অভিবাসী হওয়ার জন্য দেশটি তাই বাড়তি মনোযোগ কাড়তেও সক্ষম হয়েছে।

কানাডায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা
বাংলাদেশ থেকে বেশীর ভাগ মানুষই এদেশে আসে দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবি (skilled workers and professionals) শ্রেণীভুক্ত হয়ে। স্বামী, স্ত্রী উভয়েই শিক্ষিত পরিবারের জন্য আলাদা কিছু সুবিধা রয়েছে। আবেদন
করার জন্য আবেদনকারী নিজেই যথেষ্ট। কোন কন্সালটেন্টকে জিজ্ঞেস করার চেয়ে প্রয়োজনীয় যে কোন তথ্যাদির জন্য
সরকার নিয়ন্ত্রিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (http://www.cic.gc.ca/english/index.asp) এ ব্রাউজ করা ও বুঝাই বেশী নিরাপদ। কারণ, সরকার আবেদনের শর্তাবলী মাঝে মধ্যেই পরিবর্তন করে এবং সেসব ওয়েবসাইটে আপডেট করতে এক মূহুর্তও বিলম্ব করেনা। অবশ্য বৈধ রিপ্রেজেন্টেটিভের মাধ্যমে আবেদন করার ব্যবস্থাও বিদ্যমান।

বর্তমানে প্রার্থীকে যোগ্য হওয়ার জন্য সর্বমোট ন্যূনতম ৬৭ নম্বর পেতে হবে। এই নম্বর নিরুপণের জন্য আবেনকারীকে নিজের এসেস্‌মেন্ট করা অত্যন্ত জরুরী। সংক্ষেপে নম্বরগুলো মোটামুটি এরকম, শিক্ষায় সর্বোচচ ২৫ (মাস্টার্সসহ মোট ১৭ বছরের লেখাপড়া থাকলে ২৫, ১৬ বছরের শিক্ষাসহ মাস্টার্স থাকলে ২২), প্রথম রক্তের সম্পর্কীয় কোন আত্মীয় কানাডায় থাকলে অতিরিক্ত ৫, আবেদনকারী স্বামী বা স্ত্রীর শিক্ষায় সর্বোচচ ৫ (মাস্টার্সসহ মোট ১৭ বছরের লেখাপড়া থাকলে ৫, শুধুমাত্র অনার্স বা স্নাতক থাকলে ৪, এবং ১৩ বছরের শিক্ষার জন্য ৩), আইএলটিএস (ILTS) এর ৪টি ব্যান্ড (স্পিকিং, লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং) এর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা করে নম্বর (একটি ব্যান্ডে ৭ থেকে ৯ এর মধ্যে পেলে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট ৪, ৫ থেকে ৬.৯ এর মধ্যে পেলে ২ এবং ৪ থেকে ৪.৯ এর মধ্যে পেলে ১), বয়সের জন্য সর্বোচচ ১০ (২১-৪৯ বছরের মধ্যে নিজের বয়স হলে) নম্বর, এনওসি (National Occupation Classification)-ভূক্ত চাকরির অভিজ্ঞতার জন্য বছর ভেদে সর্বোচচ ২১ (১,২,৩,৪ বছরের জন্য যথাক্রমে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট ১৫,১৭,১৯,২১) নম্বরের ব্যবস্থা রয়েছে ।
স্মর্তব্য, অনেকেই কানাডায় থাকা পরিচিতজনদেরকে রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়ার ও চাকরির অফার লেটার যে কোনভাবে ম্যানেজ করার জন্য অনুরোধ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেন। কারণ প্রথমটি অসম্ভব এবং দ্বিতীয়টি শুধুমাত্র তাদের জন্যই সুবিধা যাদের নিজস্ব ব্যবসা বা কোম্পানী রয়েছে।
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে রাজনীতিবিদের সাথে আমাদের দেশের অনেক স্বনামধন্য ছড়াকার, নারী নেত্রী, লেখক, কবি-সাহিত্যিক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই সরকার ও পুলিশ কর্তৃক ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর দমননীতির দৃশ্য প্রদর্শন করে এবং টুরিস্ট ভিসায় এসে সর্বস্ব ‘হারিয়ে’ রিফিউজি শ্রেণীতে এদেশে এসে ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার চেষ্টা করেন।

দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবি এবং রিফিউজি শ্রেণীতে গত দশ বছরে এদেশে বার্ষিক ২২ লক্ষেরও বেশী মানুষ অভিবাসী হয়েছে। এ শ্রেণী ছাড়াও ব্যবসায়ী, ঊদ্যোক্তা ও বিনিয়োগী প্রোগ্রামের আওতায় অনেক মানুষজন এসে থাকেন। কোন অভিজ্ঞ দুর্ণীতিমুক্ত ব্যবসায়ী সাড়ে তিন লক্ষ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী তিনি ‘ব্যবসায়ী’ (Business) কোটায় এবং যিনি কানাডাতে এসে নিজে কোন একটি ফার্ম কিনে তা চালানোর ক্ষমতা রাখেন তিনি ‘সেলফ্‌ এম্পলয়েড’ শ্রেণীতে আবেদন করতে পারেন।
আট লক্ষ কানাডিয়ান ডলারের সম পরিমাণ সম্পত্তি অথবা কানাডা সরকারের নিকট পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য সূদবিহীন ভাবে ৪ লক্ষ ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টর প্রোগ্রামে কোন ব্যবসায়ী আবেদন করতে পারেন। দু’ধরণের ইনভেস্টর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে ফেডারেল ইনভেস্টর ও কিউবেক ইনভেস্টর।

অন্য আরেকটি জনপ্রিয় ও সহজ পদ্ধতি হলো ‘ছাত্র ভিসা’র মাধ্যমে এসে ইমিগ্র্যান্ট হওয়া। প্রতি বছর এদেশে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার বিদেশী ছাত্র/ছাত্রী আসে পড়াশোনা করতে। উন্নতমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও ইমিগ্র্যান্ট ছাত্রদের জন্য সূদমুক্ত ঋণ (যা ধীরে ধীরে দীর্ঘ দিন ধরে পরিশোধ করা যায়) প্রদানের ফলে ছাত্র/ছাত্রীরা খুব বেশী কষ্টের সম্মুখীন হয় না। অধিকন্ত, সাচকেচুয়ানে ইমিগ্র্যান্ট (http://www.aee.gov.sk.ca ) হওয়ার অপেক্ষাকৃত সহজ নিয়ম কানুন ছাত্রদের ওই প্রদেশে যেতে উতসাহী করে। এদেশে বাংলাদেশী ছাত্র/ছাত্রীরা পড়ালেখা করে এরকম ঊল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে টরন্টো (Toronto), রায়েরসন (Ryerson), ম্যাকমাস্টার (McMaster), ওয়াটারলু (Waterloo), ওয়েস্টার্ণ অন্টারিও (Western Ontario), উইন্ডসোর (Windsor), ম্যানিটোবা (Manitoba), আলবার্টা (Alberta), কনকোর্ডিয়া (Concordia), কার্লটন (Carleton), ম্যাকগিল (McGill), ইয়র্ক (York), কেপ ব্রেটন (Cape Breton) এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিগুলো অন্যতম। গুগল বা ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম টাইপ করে যে কেউই ব্রাঊজ করে সমস্ত তথ্যাদি ভালমত অবহিত হতে পারে। কোন প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্টাক্ট মেইলে সরাসরি ইমেইল পাঠিয়ে আবেদনকারী সহজেই উত্তর পেতে পারে।

ধার্য কৃত প্রসেসিং ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র জমা দিলে আবেদনকারীকে একটি ফাইল নাম্বার দেয়া হয়। অসস্মপূর্ণ আবেদনপত্র প্রত্যাখাত হয় না। আবেদনকারীকে জানানো হয় কোন কোন কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য, প্রক্রিয়া দ্রত সম্পন্ন করতে চাইলে উচিত কোন একটি ডকুমেন্টের জন্য অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি দরখাস্ত জমা দিয়ে ফাইল নাম্বারটি নিয়ে নেয়া। উল্লেখ্য, প্রার্থী তার আবেদনপত্রের স্ট্যাটাসও জেনে নিতে পারেন উপরোক্ত অফিসিয়াল বা সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ।

নির্মম বাস্তবতা
নতুনকে অভিবাসী হিসাবে কানাডা যেভাবে স্বাগত জানায়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিজ পেশায় চাকুরির বাজার ঠিক সেভাবেই তাকে ফিরিয়ে দেয়। দেশটি ‘ট্রু কানাডিয়ান’ অর্থাৎ আপনার পরবর্তী প্রজন্মদের নিয়েই ভাবতে বেশী পছন্দ করে। ‘নিছক কানাডায় অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রত্যাশিত চাকুরি নাই, আবার চাকুরি ছাড়া এদেশের অভিজ্ঞতা অর্জনই বা সম্ভব কিভাবে’ এই দ্বন্দ্বে নতুন ইমিগ্র্যান্টদের অনেকেই প্রত্যাশিত চাকুরি খোঁজার শেষ আশাটুকুও পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরকম হাজারো ভাগ্য বিড়ম্বিত অভিবাসী বনি আদমের মর্মস্পর্শী করুণ কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে নটকানাডা ডট কম (http://www.notcanada.com) । আদিম মানুষদের মত হাত-পা রশি দ্বারা আবদ্ধ কাষ্ঠ কাঁধে মানুষদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বনান্‌চঞলে সারিবদ্ধভাবে যাত্রার সাথে কানাডার নতুন জীবনের তুলনামূলক প্রচ্ছদ ও একজন ‘ব্যাক হোম’ পিএইচডি ডিগ্রীধারী ট্যাক্সিক্যাব চালকের পরিচয়পত্রের সচিত্র প্রতিবেদন নতুন আবেদনকারীদের ভীতবিহবল করে তোলে। সবার জন্য এসব সমানভাবে সত্য না হলেও ইমিগ্র্যান্ট অভিলাসীকে অবশ্যই নিজের বয়স ও অনাগত জীবনের জন্য প্রাণান্ত সংগ্রামকে মনে রাখতে হবে। প্রত্যাশিত চাকুরির বাজারে নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য দীর্ঘ ও নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তত থাকতে হবে।
উত্তর আমেরিকার অন্তত একটি ডিগ্রী, নিজের পেশায় লেটেস্ট সফট্‌ওয়্যারে পারদর্শী অথবা ডিপ্লোমা অর্জন, ইংরেজীতে কথাবার্তা বলা , ড্রাইভিং ও পাশ্চাত্যের ইন্টারভিও স্কিল (এর জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বইয়ের নাম হল Knock’em Dead, লেখক হলেন Martin Yate) রপ্ত করা প্রার্থীরা শতভাগ সফল হন। নিজ পেশায় সম্মানজনক চাকুরি নামক সোনার হরিণটি পেয়ে তাঁরা তর তর করে উপরে উঠে যান, পরিবার-পরিজনদের মুখে হাসি ফুটান এবং সেই সাথে স্বদেশের সম্মানও বয়ে আনেন।

কিছু প্রতিবন্ধকতা
বিভিন্ন বিভাগের প্রফেশনাল চাকুরি স্ব স্ব বিভাগের বিভিন্ন এ্যাক্ট (যেমনঃ ইঞ্জিনিয়ার্‌স এ্যাক্ট, মেডিকেল এ্যাক্ট, এডুকেশন এ্যাক্ট ইত্যাদি) দ্বারা রেগুলেটোরি বডি (Regulatory body) কর্তৃক লাইসেন্সিং ও সার্টিফিকেশন প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। যেমন, একজন প্রকৌশলী নিজের পেশায় প্র্যাকটিস করতে হলে অবশ্যই তাকে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার বা পি, ইঞ্জ (http://www.peo.on.ca) অর্থাৎ লাইসেন্স নিতে হবে, ডাক্তারদের জন্য মেডিকেল অফ কানাডার কোয়ালিফায়িংয়ের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পরীক্ষা (http://www.mcc.ca), একাউন্টেন্টদের জন্য সিএমএ (http://www.cma-ontario.ca), মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য টিসার্চ সার্টিফেকেট (http://www.oct.ca), আইটি প্রফেশনালদের বিভিন্ন শাখা বা মডিউল ভিত্তিক বিভিন্ন সার্টিফিকেট (http://www.sap.com), ফার্মাসিস্টদের জন্য ফার্মাসিস্ট সার্টিফিকশন (http://www.pebc.ca) ইত্যাদি। এসব প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে বেশ দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ায় অনেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সহজল্ভ্য নিজের পেশার বাইরের ‘অড জব্‌’ বা কষ্টকর চাকরি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। অনিশ্চিত ও উট্‌কো ঝামেলার মধ্যে পা না বাড়িয়ে তারা নিজ সন্তানদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। অনেকে আবার মেনে নিতে পারেন না, বড় অংকের অর্থকড়ি খুইয়ে ফিরে যান আগের ঠিকানায়। তিন বছর আগে বাংলাদেশী এক পরিবার এসেছিলেন টরোন্টোতে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে শুধুই হতাশার কাহিনী শুনে ল্যান্ড করার তিনদিনের মাথায় তরুণ এই দম্পতি ফিরে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় তাঁদের পুরোনো চাকরিতে।

এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এদেশে প্রায় পঁচাশি ভাগ চাকুরিই পরিচিতদের মধ্য থেকে হয় এবং বাকী মাত্র পনেরো ভাগ হয় ইন্টারনেট বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। তাই পরিচিতজনের পরিধি বাড়ানোর সমস্ত উপায়ই বিশেষ করে বিভিন্ন ইয়াহু গ্রুপ (যেমনঃ ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য bena, আইটি’র জন্য bdcan, মুসলিম প্রফেশনালদের জন্যhttp://www.mapcanada.com, বৃহত্তর পরিসরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন গ্রুপ dahuk, alochona, sonarbangladesh, eshomabesh, shetubondhon ইত্যাদি) ছাড়াও স্থানীয় পেশাভিত্তিক বিভিন্ন এসোসিয়েশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে মাঝে মাঝে অংশগ্রহন করা যেতে পারে। কোন মাধ্যমেই কাজ না হলে বিকল্প পথ হিসাবে কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অনেকে আবার আমেরিকার প্রফেশনাল চাকুরির বিশাল বাজারে সহজেই প্রবেশ করেন।

বসবাসের জন্য পছন্দনীয় স্থান
দেশী কমিউনিটি, দেশী গ্রোসারী ও হালাল দোকান, মসজিদ, ইসলামিক স্কুল, সহজসাধ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চাকুরির মোটামুটি নিশ্চয়তার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যের বড় বড় শহরে ইমিগ্র্যান্টদের বসতি গড়ে উঠেছে। অন্টারিও’র টরোন্টো, হ্যামিল্টন, লন্ডন, ঊইন্ডসোর ও অটোয়া, কিউবেকের মন্ট্রিয়েল ও কিউবেক সিটি, আলবার্টার ক্যালগেরী ও এডমন্টন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যানকোভার এবং ম্যানিটোবার উইনিপেগ বৃহত্তর ও জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এগুলোর মধ্যে টরোন্টো মেগাসিটির সহস্র বাংলাদেশীর পদভারে প্রকম্পিত। বহুমাত্রিক ও বহুজাতিক মানুষের শহর বৃহত্তর টরোন্টোর জনসংখ্যা আধা কোটিরও উপরে যাদের মধ্যে ইমিগ্র্যান্ট ৪৯% এবং দক্ষিণ এশীয় ১০.৩% (অর্থাৎ আড়াই লাখেরও বেশী)। গত ৫ বছরে এই শহরটি একাই সারা দেশের দুই তৃতীয়াংশ (৬৯,০০০) নতুন ইমিগ্র্যান্টদের স্বাগত জানিয়েছে। প্রতিটি শহরেই ফ্রি ইংরেজী শিক্ষার ও নিজ পেশার দক্ষতা বাড়ানোর বিভিন্ন সুযোগও সরকার বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকে। যেমন, স্কিল ফর চেঞ্জ, এডাল্ট লার্ণিং সেন্টার ইত্যাদি। পাশাপাশি কেউ উচচ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ তার হাতের নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবে।
তেল ও খনিজ সম্মৃদ্ধ শহর ক্যালগেরীর চাকুরির সাম্প্রতিক ঈর্ষ ণীয় বাজার এবং সব শাখায়ই লোকবলের চরম ঘাটতি ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও নতুন/পুরাতন সব অভিবাসীদের নিকট বসবাসের জন্য শহরটির কদর বর্তমানে অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
যথাযথ ও সঠিকভাবে প্রসেসিং করা হলে বাংলাদেশের দক্ষ জনগোষ্ঠী ও ঊল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রদের কানাডায় ইমিগ্রেশন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয়সমূহ এক্ষেত্রে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করতে পারে

*আমার এ লেখাটি দৈনিক যায়যায়দিন ও কানাডার স্থানীয় সাপ্তাহিকী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

http://www.somewhereinblog.net/blog/shahin72blog/28724248

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


One Response to কানাডায় ইমিগ্রেশন ও নতুন জীবন সূচনার চ্যালেঞ্জ

You must be logged in to post a comment Login