মামুন ম. আজিজ

কালো গোলাপ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

এক
গত দু’বছর লোকটা এই বিশেষ দিনটি অন্তত ভোলেনি ।
কথাটা ভেবে মনে শান্তির এক বিশুদ্ধ ঝর্ণার ধারা বয়ে গেলো সতপার মনে। আজ তার বিয়ের তৃতীয় বার্ষিকী। তার স্বামী চৌধুরী আরমান ইন্তেখাব সকালে আজও যন্ত্রের মত নিত্যদিনের প্রতিটি কাজ করেছে। দিনটি মনে আছে কিনা তা একবার ও তার আচরণে বোঝা যায়নি। এ নতুন নয়। প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন ঠিক এইভাবে যখন সকালে উঠে স্নান সারল, তারপর পেপার টা হাতে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে নিরবে ঠিক ১৫ মিনিট কাটিয়ে সেখানেই এক কাপ চা পান করল। তরপর অফিসের কাগজগুলো ঠিক ঠিক দেখে নিয়ে ব্রিফকেসে ভরল, তখনও সতপা ভেবেছিল আরমান উইশ জানানোর মত কিছু একটা বলবে। অথচ মোটেও তা নয় বরং নিত্যদিনের মতই নাস্তা করতে করতে সতপার সারাদিনের কোন পরিকল্পনা, কোথাও যাওয়া কথা বা টাকার প্রয়োজন থাকলে তা জিজ্ঞেস করল। খুব অবাক হয়েছিল। জীবেন এত ক্যালকুলেটিভ মানুষটা বিয়ের ১ম বার্ষিকীর কথা একবারও মনে করল না সেই সকালে। প্রতিটি কাজে আরমানের সময় ধরাবাধা। সেটা প্রথম ১টা বছরে ধরে জেনে জেনে মেনে নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা। ভালবাসার কোন কমতি যে নেই আরমানের মনে সেটাও সত্য। যদিও তার প্রকাশটাই ওমন যান্ত্রিক। এমনকি নাস্তার পরে গেটের বাইরে পা দেবার আগে রোজ তিনটে চুমু খেতেও লোকটা ভোলে না। প্রথম প্রথম খুব উচ্ছ্বাস আর মজা থাকলেও সেটা এখন অভ্যাসের মধ্যে পড়ে গেছে। অভ্যাসের উল্টো ঘটলে যেমন খারাপ লাগে , কোনদিন কাজে ঢাকার বাইরে বা দেশের বাইরে থাকলে সতপার  ঠিক তাই হয়।
কাজ করতে করতে লোকটা একটা পুরোমাত্রায় যন্ত্রই হয়ে উঠেছে। এর সুফল হিসেব সতপার প্রাপ্তি আর্থিক স্বচ্ছলতার পাহাড়সম অবস্থা । সারাটা দিন সেই প্রাচুর্যের মধ্যেও প্রচন্ড মনমরা হয়ে থেকেছিল প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে। চোখ দিয়ে ঝড়েও পড়েছিল জল, কেউ দেখেনি। সূর্য তাই প্রচন্ড রোদ ছড়িয়ে সেটা উধাও করে দেয় বারবার। সতপা তো ভোলে নি ঠিকই, আরমানের প্রিয় খাবার মুরগীর ছোট ছোট টুকরো দিয়ে মটর শূটি, টমেটো আর গাজর ভূনা , গরুর মাংস পাতলা করে কেটে কেটে পিয়াজ আর কড়া মরিচ দিয়ে ভাজা ভাজা এসব যা যা বিশেষভাবে আরমানের পছন্দ তার অনেকটাই সে চেষ্টা করেছিল রান্নার।
বিকেলর শেষে সূর্যটা ডুবে গিয়ে  তাকে ভীষণ অবাক করে আরমান বাড়ী ফেরে। ব্যতয় ঘটায় নিত্যদিনের মত রাত করে বাড়ী ফেরার অভ্যেসটার । যন্ত্র স্বামীটার ঠোঁটে সে সন্ধ্যাক্ষণে পুরোমাত্রায় ফুটে ছিল মানবীয় হাসি। চোখে ছিল প্রেমের প্রবল আবেগের উচ্ছরণ। মুখে কোন কথা জোটেনি সতপার। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আরমানকে। তারপর পেছন থেকে হাতটা সামনে নিয়ে আসে যখন আরমান , তার হাতে একশটা টকটকে লাল গোলেেপর একটি তোড়া। মাঝে একটা খুব সুন্দর কালো গোলাপ। লালের মাঝে অসাধারন এক সৌন্দর্য নিয়ে সেটা ফুঁটেছিল। আরমান বলে ওঠে, হ্যাপি ম্যারেজ ডে সতপা, লক্ষ্মী বউ আমার।
সতপা অবকা হয়ে ফুলের তোড়াটা টা হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে থাকে। আরমান বলে ওঠে, খুব অবাক হয়েছো না? এই  মাঝখানের কালো গোলাপ এইটা আমি, তাই না? আর চারপাশে তুমি আর তুমি। লাল উজ্জ্বল, প্রেমময়।
তারপর যতটা সময় কাটতে থাকে, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হতে থাকে তার। সে ভেবেছিল যদি তার স্বামীর এই দিনটির  কথা মনেও পড়ে , দেখা যাবে অনেক রাতে যখন বাসায় ফিরবে , ব্রিফকেস থেকে খুব দামী একটা হীরার হার বের করে হাতে  দেবে। তারপর বলবে মিটিং ছিল, খেয়ে এসেছি। চল বিছানায় যাই। তারপর দেহটাকে নেড়ে চেড়ে প্রয়োজন টুকু মিটিয়ে ধূপ করে ঘূমিয়ে যাবে। অথচ এত সুন্দর একটা ফুলের তোড়া …সে অভিভূত।  যন্ত্রের মত মানুষটা সেই সন্ধ্যায় পুরোমাত্রায় মানবীয় হয়ে ওঠে, তার প্রেমের উৎসরণ এতই প্রবল ছিল, সতপা এত কষ্ট করে রান্না করা খাবারের কথাই সব ভুলে যায়। ওমন প্রেম , ওমন করে দেহটাকে শেয়ার সে কি কোনকালে করেছে আর। মধুর প্রেম আর সহবাসের চরম আনন্দ মনে প্রাণে ছড়িয়ে দুজন ঘুমিয়েই পড়ে যখন তখন রাত এগারো বারো হবে ।
সতপার মনে পড়ে তার পরদিন সকাল থেকেই লোকটা আবার সেই একই যন্ত্র । একইরূপ সময় পালন। একই রূপ যান্ত্রিক চুমু।
আবার একটা বছর পর। দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর সকালে সেই চিরচারিত যান্ত্রিক আরমান আর সন্ধ্য বেলাতে বিরল পরিবর্তনের পুনরাবৃত্তি। সেবার ফুলের তোড়াটা ছিল আরও বড় আরও সুন্দর। মাঝে ছিল উজ্জ্বল কালো দুটো গোলাপ। সতপার গলায় সেবার আরমান পড়িয়ে দিয়েছিল পুরো হীরের একটা হার। এর আগে কত দিয়েছে, কিন্তু পড়িয়ে দেয়া সেই প্রথম। তারপর ঠিক ১ম বিবাহ বার্ষিকীর মত প্রেম আর সহবাসের চূড়ান্ত আনন্দ লাভের পর শান্তির ঘূম।
তৃতীয় বার্ষিকীর আজকে ও সকালে যান্ত্রিকতার পূর্ন ঘটনা তো ঘটেছেই। তবুও আশা আজও সন্ধ্যায় লোকটা নিশ্চয় পুরো বদলে যাবে। হোক না বছরে একদিনের জন্য । সেটাই খারাপ কি। সারা বছর যান্ত্রিক প্রেম আর একদিনের জন্য অন্তত মানবীয়। অতি মাত্রায় রোমান্টিক। ভাল জিনিস অল্প অল্প পাওয়াই ভাল। মজাটা বেশীদিন স্থায়ী হয়। তারতো একটা বছর কেটে যায় এই প্রশান্তির আবেশেই।
আরমানের প্রিয় সব খাবার রান্নায় ব্যস্ত হতে হতে এইসব ভেবে নেয় সতপা। যদিও ওত চূড়ান্ত রোমাঞ্চের মাঝে সে সব খাবার গ্রহণের সময়ই হয়ে ওঠে নি বিগত দুবছর। ডুপ্লেক্স বাড়িটার দোতালার এক কোনায় খোলা একটা বারান্দা  আছে। সেখানে  বিগত দুটো বিবাহ বার্ষিকীতে সন্ধ্যায় টেবিলে দুজনা দুজনার মুখোমুখি বসে কেক কেটেছে, মোমবাতি জলেছে নিভেছে,  চলেছে ড্রিংকস। মানুষটার ওই অ্যভাস আছে সে জানে, কিন্তু বাসায় ঐ দুুদিনই দেখেছে, সতপাও মানা করেনি। এত অপ্রিয় জিনিসটাও সে সেদিন আকণ্ঠ গিলেছে। তারপর সেই অভাবনীয় আলিঙ্গন আর প্রেম । ভাবতে ভাবতে আলাদা একটা শিহরণ খেলে যায় মনে তার।

দুই
সত্যিই এত কাজ , টাকার পিছে ছোটার নেশা তার এই বাস্তব ব্যস্ততার বাইরের অনেক কিছূই তাকে মনে করায় না। আরমান ভুলেই গিয়েছিল তাদের বিবাহ বার্ষিকী। যেমন ভুলেছিল এর আগের দুবার। কিন্তু এবার অদৃষ্ট তাকে মনে করিয়ে দেয়। তাকিয়ে ছিল কম্পিউটারের মনিটরের দিকে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্যালেন্ডার তৈরীর ছবি বাছাই করছিল। সে সব ছবির মধ্যেই ছিল একটা কালো গোলাপের ছবি। ও ছবিটাই মনে করিয়ে দিল।
প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন। সন্ধ্যার পরেই বাড়ী ফেরার কথা ছিল। যদিও বার্ষিকীর কথা বেমালুম ভুলেই ছিল সে। ঠিক সেই সময় খবর এল ওয়েস্টিনে বিদেশী এক ক্লাইন্ট আর্জেন্ট মিটিং কল করেছে। অত বড় পার্টির ডাক ফেলাই যাবে না। সতপাকে বলার দরকার হয় না। কত রাতেই দেরী হয় তার। আরমানের ধারনা সতপা বোঝে  টাকার পেছনে দৌড়াতে গেলে অত রাত দিন দেখলে হয় না। কই বউ এর কোন অভিযোগ সে কোন দিন দেখেনি তো। বরং ঘুরছে ফিরছে, বাবার বাড়ী যাচ্ছে, এটা কিনছে। এমনই তো সে চেয়েছিল। তার স্ত্রীর কোন অভাব থাকবে না। সব সে পুরণ করবে। সব । সে পারছে। নিজেক মুহূর্তে গর্বিত মনে হয়। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। তার অনেকদিনের ক্লাইন্ট  সুইডিশ ভ্রদ্রলোকটা। লোকটা সে রাতেই চলে যাচ্ছে। আসবে আবার ৬ মাস পরে। সে কারনেই দ্রুত কিছু ব্যবসায়িক কথা বার্তা বলার জন্যই ডাকা। ফিরতে ফিরতে ১২ টা হয়ে যায়। হবে না কেনো এই শহরে জ্যামটাইতো নিশ্চিত, সময়টাই বরং অনিশ্চিত।
সতপা ঘুমিয়েই পড়েছিল। জাগালো না। হঠাৎ চোখে পড়ে বেড টেবিলের উপরে একটা ছোট প্যাকেট । উপরে সুন্দর করে লেখা- ‘১ম বিবাহ বার্ষিকীতে তোমার জন্য।’ সারা দিন রাতের পর পরের দিনের সীমানা লগ্নে এইবার আরমানের মনে পড়ল। খুব সুন্দর একটা ঘড়ি প্যাকেটটা থেকে বের হলো।  না মনে পড়ার জন্য সে খুব একটা লজ্জিত হলোনা। তবে কিছূ উপহার দেয়া হলো না, এটার জন্য কিঞ্চিৎ দুঃখ পেল মনে। হঠাৎ চোখ গেলো ফুলের তোড়াটার দিকে। মাঝে তার অদ্ভুত চেয়ে আছে একটা বড় কালো গোলাপ। অবকা হলো। এত সুন্দর , মানবীয় হয়ে উঠতে চাইলো মন। তার বউটার এই সৌন্দর্য প্রীতি তাকে প্রায়শই মুগ্ধ করে। কিন্তু সেই লাল গোলাপের মাঝে কালো গোলাপের সাজানো অভিব্যক্তি তাকে মুহূর্তে যান্ত্রিকতা হতে যেন পরিত্রান দিতে চাইল। যদিও পরিত্রান সে চায় না। সে এই মুহূর্তে চাচ্ছিল একটা কাচা দেহ। প্রথম যেদিন পেয়েছিল সেই দেহটা, লোভটা জেগে গেলো চিরকালে জন্য। এখন প্রায় রোজ রাতেই ঘুমোনোর আগে প্রয়োজন । কিন্তু সতপাকে জাগানোই গেলো না। ফুলের সৌন্দর্য থেকে পাওয়া মানবীয় মনটা একটু বুঝল, ভুলে যাওযা উচিৎ হয়নি। পরদিন সকালে অবশ্য হাজার পঞ্চাশ টাকার একটা চেক দিয়ে বলেছিল কিনে নিও কোন গহনা টহনা যা ভাল লাগে, রাগ করো না , খুব ব্যস্ত থাকি তো। সতপা টাকাটা নিয়ে মনে মনে হেসেছিল খুব।
আরমান ভেবেছিল দ্বিতীয় বার্ষিকীটা ভুলবে না। অথচ ভুলে গিয়েছিল। সে রাতে ১০টার দিকে অফিস থেকে বের হয়েছিল। পথে গাড়ীটা বিগড়ে যায়। সেটা ঠিক ঠাক করে ঢাকার রাতের জ্যাম পেড়িয়ে বাড়ীতে পৌঁছাতে সেবার ও বাজল ১২ টা। এবার উপহার ছিল ঠিক সেই একই ভাবে টেবিলটার পাশে  খুব সুন্দর একটা প্যাকেটে খুব সুন্দর একটা সান গ্লাস। পাশে আগের বারের চেয়েও সুন্দর একটা ফুলের তোড়া। লাল লাল ফুলের মাঝে দুটো বড়কালো গোলাপ। সে রাতে একটু লজ্জাই পেয়েছিল আরমান। জাগানোর চেষ্টা করেনি। সকালে ছুটি ছিল। জীবনে প্রথম সতপার সাথে শপিং এ বের হয়। নিজে থেকে একটা খুব দামী শাড়ি কিনে দিল।
আর এবার তো মনেই পড়ে গেলো। এইবার আর লজ্জা পেতে হবে না। সতপার নিশ্চয় অনেক পছন্দ ঐ কালো গোলাপে সাজানো লাল তোড়া। এবার তিনটে ফুল সে নিজেই জোগাড় করে আনবে। তাহলেই ঘুচবে তার ভুলে যাওয়ার পাপ। খোঁজ নিতে শুরু করল। অফিসের এসিসটেন্ট ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল না। সারা ঢাকা শহরের সবগুলো ফুলের দোকানে খোঁজ নেয়া হলো। কোথাও কোন কালো গোলাপ নেই। দোকানদাররা জানালো ঢাকার কোথাও পাওয়া যাবে না। পিএস মেয়েটার কাছ থেকে একটা আশা পাওয়া গেলো। তা তথ্য মতে খোঁজ নিতে নিতে জানা গেলো ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশিষ্ট শিক্ষকের বাসায়  কালো গেলোপের গাছ আছে। সেই বাড়ীর ঠিকানা জোগার করল আরমান। শিক্ষকের সাথে কথাও বলল। তারপর লোক পাাঠানে হলো ময়মনসিংহে। তার হাতে যখন সত্যি সত্যি তিনটে কালো গোলাপ এসে পৌঁছালো তখন বাজে রাত ১০ টা। যদিও সেই গোলাপগুলির মত অতটা টকটকে কালো নয়। তবে কালোর কাছাকিিছ। বেগুনি আর কালো মিক্সড। একটা আবার খুব ছোট সাইজের। আগে থেকে আনিয়ে রাখা ১০০টা লাল গোলাপের মাঝে নিজে হাতে সে তিনটা গেঁথে নিল।  যাক এইটা পেলেও অন্তত সতপা খুশি হবে। আজ নিশ্চয় সে নিজে কোন কালো গোলাপ জোগার করতে পারেনি। কোথায় পাবে। সারা ঢাকা শহরেই সে পায়নি।
গোলাপটা হাতে পাবার আগে ভেবেছিল ফোনে একবার বিবাহ বার্ষিকীর কথা মনে করে উইশ করলে কেমন হয়। পরক্ষণে নিজের কাছে লজ্জিত হলো। আগের দুবার মনে না পড়ার লজ্জাটা বাধা দিল। ফুল আসুক একবারেই সারপ্রাইজ দেয়া যাবে। তারপর অফিসের একটা ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হঠাৎ মন ব্যবসায়িক চিন্তায় ডুবে গিয়েছিল দ্রুত। …
বাসায় ফিরতে ফিরতে বাজল সাড়ে এগারোটা । হাতে এখনও তার ৩০ মিনিট সময় আছে। দিন শেষ হয়নি। সে আজ উৎফুল্ল।  আজ সে কোন দামী উপহার নেয়নি। সে বুঝতে পেরেছে। কেবল  প্রাচুর্য আর বিত্তই সুন্দর মুহূর্ত আনে না। গেট দিয়ে ঢুকে গেলো তার গাড়ী। ঐ তো হালকা একটা আলো জ্বলছে এখনও তার ঘরে। ডিম লাইট।  নিশ্চয় জেগে আছে। ঘুমালে ওটাও বন্ধ করে ঘূমাতো। একটা ফোন করে আসলে কতই না ভালো হতো।  আবারও ভুল হয়ে গেলো। যদি ও ঘূমিয়ে যায়। ওর ঘূম কি এত সহজে ভাঙে!
সত্যিই ঘূমিয়ে পড়েছে। বুকের অর্ধেক তার উন্মেচিত। হালকা আলোয় সুন্দর বুকের মনমাতানো ভাঁজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গলায় একটা অসাধারণ হীরের হার থেকে দ্যুতি ঠিকরে বেরোচ্ছে। টেবিলের পাশে ছোট একটা উপহারের প্যাকেট। ঠিক সেই একই ভাবে সুন্দর করে লেখা তার নাম। পাশে একটা ফুলের তোড়া। লাল টকটকে ফুলের তোড়া। কালো ফুল নেই সেখানে একটাও। নিজের আনা ফুলের তোড়াটা সেখানে রেখে দিল। সকালে উঠে ও নিশ্চয় খুব খূশি হবে। প্যকেট টা খুলে অবাক হলো , খালি। এটা কোন সারপ্রাইজ হয়তো। টেবিলের উপর ফুলের তোড়াটা রেখে চাদরটা উঠিয়ে উন্মোচিত বক্ষটাকে ঢেকে দিতে গেলো তখনই হাতে ঠেকল ভেজা ভেজা কিছু।
সতপার বাম হাতটা ভেজা। চটচটে ভাব। তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালালো। হঠাৎ আরমানে মনে হলো একটা ছায়ার মত কিছূ সরে গেলো জানালার পাশ দিয়ে ২য় বার আর চোখে পড়ল না। মনের ভূল ভেবে সতপার দিকে তাকিয়েই চোখ ছানাবড়া হলো তার। তার প্রিয় স্ত্রীর বাম হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। শিরা কেটে ফেলেছে। মুখের কাছে হাত দিয়ে দেখল নিশ্বাস আছে। বুকটা উঠছে নামছে। অথচ নিথড় তার দেহ। পাশে পড়ে আছে তিনটে কালো টকটকে গোলাপ। গোলাপের নিচে বড় বড় কাঁটা। কাঁটাগুলোর গায়ে লেগে আছে রক্তের দাগ। কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দ্রুত হাসপালে ফোন করে একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকল আরমান। তার মত একটা যন্ত্র টাইপ মানুষের চোখেও জল আসছে। সে কিছুতেই থামাতে পারছে না। কিছুতেই না।
একটা ছায়ামুর্তি যেন আবার উঁকি দিল জানালায়। উঠে দেখতে যাবে তখনই কানে এল অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ।
ছুটে গেলো স্ত্রীর নিথর দেহটাকে  কোলে নিয়ে। ছুটে গেলো গেটের দিকে।

///মামুন ম.আজিজ

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


16 Responses to কালো গোলাপ

You must be logged in to post a comment Login