শামান সাত্ত্বিক

ক্ষমাহীন প্রহর

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

চোখে বেশ যন্ত্রণা নিয়ে আছে কিছুদিন সবুজ। এই যন্ত্রণার উৎস তার জানা নেই। ডাক্তারের কাছে যাবো যাবো বলে যাওয়া হচ্ছে না। এই ছোট শহরে, ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানে তার ভেতরের অপরাধবোধকে ডাক্তারের কাছে জানিয়ে দেয়া। যেমন গীর্জার ফাদারের কাছে পাপীর কনফেস করা। এটা খুবই একান্ত বোধ সবুজের। ডাক্তারের কাছে এলে মনে হয়, সে যেন ধরা পড়ে যাবে এখনি। তার মনের বা গোপনের সব খবরই ডাক্তার জেনে যাবে।

কথা ছিল শিনুকের কাছ থেকে চিঠি পাবে। শিনুক পাঠিয়েছে তাও। জানালো কী করে এখন তার বাচ্চাটা, যাকে সবুজ দারুন আদর করতো। একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখতো কোলের ছোট মেয়েটাকে। মাকে দিতে না পারা ভালবাসা, বাচ্চাকে আদর দিয়ে পুষিয়ে দিতে চাইতো। মার কাছে লেখা শিনুকের চিঠিতে কৃতজ্ঞতার কথা লেখা থাকতো। দেশে এসে আপনার ছেলের কাছ থেকে যে আদর পেয়েছে আমার ছোট মেয়েটা, তাতে তার মন ভরে গেছে। মেয়েটা এখন ঘরে থাকতে চায় না। গভীর রাতে জেগে উঠে আধো আধো বোলে বলে, তবুজের সাথে বাইরে যাবো, আমাকে এখানে ওখানে নিয়ে যাবে। আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। সে এখন কঠিন বাংলা শব্দ, ‘অন্ধকার’-ও উচ্চারণ করতে পারে।

মনের ব্যথা মানুষ কতদিন মনে ধরে রাখতে পারে। সে হিসেব ভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন। সবুজের হিসেবটা আবার সম্পূর্ণ তার নিজের। খালার মেয়ে সেনিলার উৎপাত তার ভালই লাগতো। মানুষকে বোধ হয়, জ্বালাতে জানতে হয়। সেটা অবলীলায় সেনিলার রক্তমাংসে ছিল। সে টের পায়নি, সবুজের গভীরে শিনুক প্রবাহমান। সবুজ জেগেই আছে। তার এই জেগে থাকা মনে রঙ বেরঙের রঙ ধরে। কেউ কাছে এলে নীরব নিরীহতায়, সবুজ শুষে নেবে সব, তার মাতাল হাওয়ায়। দূরবর্তী শিনুক দূরে থাকে যতই, সবুজের নেশায় মাদকতা বাড়ে ততই। মামার বিয়ের শেষে, প্রাইভেট কারে করে ফিরছে সেদিন বাসায়। সবুজের অগ্রজ চালকের পাশে বসে ঝিমাতে ঝিমাতে যায়। বিয়ে বাড়ির চাপ সামলিয়েছে খুব বেচারায়। পেছনের সিটের একপাশে সবুজ, মাঝে বসে সেনিলা, অন্য পাশে সেনিলার ছোট বোন নাবিলা। সেনিলার সুদীপ্ত শরীর সবুজকে আবেশে ডোবায়। নদীর বহমানতা সেনিলার শরীরে, কোমরে নেয় সরু বাঁক। শাড়ীতে বয়ে যায় পাল তোলা নৌকোর উদাম বাতাস। চোখ মুদে শুয়ে থাকে সে নৌকোয় সবুজ। ঘাম আর পারফিউমের গন্ধে সয়লাব। বিয়ের দিনের রূপজ সাজ। নৌকোয় শুয়ে থেকেও নদীর সুগহীন তলদেশে নিমজ্জন। সেনিলার ক্লান্ত শরীরও চায় দু’দন্ড সুখ। নিরালা নৈঃশব্দে একান্তে কাছে খুঁজে পায় তাহারে। আহা, রাত্রির আলো আঁধারে। গাড়ীর ছুটে চলা গতির তন্দ্রালু স্বরে। বিয়ে মানে দুই নর-নারীর জেগে উঠা। আর কেউ কী জাগে না! সে রাত পুরো রূদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সবুজের। বাড়িতে পৌঁছে বার বার উঠে দাঁড়িয়ে জানালায় বাইরে বৃষ্টি দেখতে হয়েছিল। সেনিলার ডাগর চোখে গভীর সমুদ্র খেলা করেছিল বেশ কিছুদিন।

শাতিলার শ্যামল পরীর রূপটিই ভরে দিয়েছিল মন। জীবের প্রতি প্রেম ছিল তার প্রখর। ঘরে ছিল এক বিড়াল আর এক জোড়া সাদা খরগোস। লম্বা ছিপছিপে হলেও বিড়াল আদর ছিল তার পছন্দ। সবুজের মনে হতো তাকে সেই আদর দেয়া যায়। আদর দেয়ার মাঝে যে আদর পাওয়া যায়, সেটাও সে ধীরে ধীরে অবগত হতে শুরু করেছে। কিন্তু বিড়ালের মতো কোমল হলেও খুব ভয় হয় শাতিলাকে, কখন সে তার কড়া নখর বসিয়ে দেয়। কেমন ত্যাড়ত্যাড়ে তেজী। শাতিলার এই তেজী ভাবই একসময় কাল হলো সবুজের। সব কিছুকেই পেছনে ফেলে এলো সে, কিন্তু শিনুক।

প্রতিবছরের মত একবার করে দেশে আসে শিনুক। এক জমাট উষ্ণ আন্তরিক জলের কোমল প্রবাহই বইয়ে দেয় চতুর্দিক। যেন এক জলবিদ্যুত। সবুজ পারে না। বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে। শাতিলার নখর নয়, শিনুকের দাঁতে কাটার আঁচড়ে সবুজের ফর্সা বুকে পড়ে টকটকে লালের মোহনীয় ছোপ। শীত পড়েছেও খুব। একটু গরম পানি না হলে নাওয়া হয় না। সবুজ গোসলের জন্য প্রস্তুত। গৃহকর্মী রুকুর কী সাহস! এমন টগবগে গরম পানি কিচেন থেকে তুলে এনে একেবারে বাথরুমের বালতিতে ঢেলে দেয়। হৈ হৈ করে উঠেছিল সবুজ। উদোম শরীর। রুকু বের হলেই বাথরুমে ঢুকে যাবে। বাথরুমের দরজা পেরিয়েই রুকু থমকে যায়। তার মুখ ভাবের পরিবর্তন ঘটতে থাকে দ্রুত। সে সাথে চোখেরও। সবুজ আশ্চর্য হয়, লক্ষ্য করে রুকুর দৃষ্টি তার ফর্সা বুকের আরক্তিম ছোপে। রুকুর চোখে অচিরেই জেগে উঠে ঘোর, নেশালো ভাব, সমর্পণের অভিপ্রায়। সবুজের এইভাব এখন আর অজানা নয়। সে দ্রুত সরে আসে। নিজ কক্ষে ঢুকে পড়ে। কিন্তু তার এক পোষাক ধোয়ার কথা রুকুকে স্মরণ করিয়ে দিতে সে কক্ষ থেকে বের হয়। রুকুর কাছে দাঁড়ালে, রুকুর সেই ঘোর আবার ফিরে আসে। ফর্সা বুকে লাল টকটকে আঁচড়, এমনভাবে কোন নারীকে জাগিয়ে দেবে ভাবেনি সবুজ। এক নারীর পরম আদরে রেখে দেয়া প্রেমচিহ্ন, আরেক নারীর যৌবনে আবেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে দেবে, এ এক নতুন অনুভূতি বিস্ময়। অথচ রুকু রুকুই ছিল। গৃহকর্মী, সাতাশ/আটাশের দিকে যার বয়স, সুঠাম শরীর, উন্নত বক্ষা, নিস্তব্ধ নিথর যৌবন। রুকু স্বাদ আহ্লাদ বিবর্জিত এক নারী। ভোর থেকে মাঝ রাত অবধি খেটে, শুধু দু’তিন বেলা দু’মুঠো দানাপানি যোগাড়ই যার যথেষ্ট। সে সাথে বাসায় থাকার সুবিধে, মাঝে-সাঝে পরণের কাপড় পাওয়ার সুবিধে, নিত্য দুপুরে গোসল করার সুবিধে অর্জন। রুকু বেশিদিন বাসায় থাকেনি। যে নারীর সাথে সবুজের ছিল শুধু টেবিলে খাবার দেয়ার, কাপড় ধুয়ে দেবার সম্পর্ক, সে নারীর আকাঙ্খায় সবুজ স্থান করে নেবে, সেটা ভাবার মত বিষয় ছিল না সবুজের রোমান্টিক মনে এবং যৌক্তিক চেতনায়। ফলশ্রুতিতে রুকুর সাথে কাজে অকাজে ক্রোধের প্রকাশ। মেয়েটাকে যত দূরে রাখা যায়, ততই নিরাপদ, এতো সহজ সমাধান। সুঠাম সোমত্ত মেয়ের কোন বাড়িতেই হয় না বেশিদিন স্থান। তা মেনে নেয় রুকু। চলে যেতে হয়। সাথে নিয়ে যায় সে, তার একরাশ শূন্যতা। শূন্যতাই, যেখানে কিছু নাই – প্রেম নাই, আদর নাই, সন্মান নাই, বেঁচে থাকার ন্যূনতম অর্থ নাই। অন্ধকার হতে এসে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। কাছের বস্তিতেই সে স্থান নেয়, গ্রাম থেকে এসে যেখানে নিয়েছিল প্রথম ঠাঁই। এরপর একটি দিনই নাকি সে বাসায় এসেছিল গোসল করার সুযোগ নিতে। মেলেনি।

এক গভীর চাঁদনী রাতে রুকু বস্তি থেকে বের হয়ে এসেছিল। বস্তিতে ছিল এক পঞ্চাশোর্ধ্ব কাঠ মিস্ত্রী। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সেও বস্তি থেকে বেরিয়ে আসে। দু’চোখে দু’চোখে চার চোখ হয়ে উঠে। কাঠমিস্ত্রীর ঘরে রুকুর নতুন ঠাঁই হয়।

এখনো ভরদুপুরের নিরালায় অথবা রাত্রি প্রহরে, বিছানায় শুয়ে কাউকে পাশে খুঁজে না পায়, তখন রুকু সবুজের মাঝে চরম হয়ে জেগে যায়। এক অপরাধবোধ তাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে খায়। কী দোষ ছিল মেয়েটির। সে যে শিনুক নয়, সেনিলা নয়, শাতিলা নয়। রুকু মানুষ নয়, সে ছিল মাংসপিন্ড। একদলা মাংসপিন্ড। সুরা, শরাবে সবুজের চোখ আরক্তিম হলেও রুকু দমকা হাওয়ায় নিভে যাওয়া মোমের শিখা। রুকু আঁধারের সম্পদ।

তুমি কি ক্ষমা?
হাঁ।
আমি জানতে চাইছি, তোমার ওখানে কোন কাজের সুযোগ হবে অদূর ভবিষ্যতে?
তুমি কিভাবে আমার নাম্বার পেলে?
কেন? ফ্রন্ট ডেস্কে কল করেছি। বলেছি তোমাকে কানেক্ট করে দিতে।
অন্য প্রান্ত নিরুত্তর। তাই এই প্রান্ত থেকে প্রশ্ন –
কোন সমস্যা?
না।
একটু পরে ক্ষমার প্রশ্ন –
আমি কি তোমাকে চিনি?
যদি তুমি মনে করো, আমাকে চেনো তবে চেনো। তুমি আমাকে দেখনি আজ, তাই আমি তোমাকে কল করছি।
একটা হাহ্‌ টাইপের হাসির ভাব ফোনের এই প্রান্ত থেকে টের পাওয়া গেল।
তোমার নাম?
গ্রীন।
কি বলছো?
গ্রীন।
কি চাও তুমি?
কেন, বলেছি তো চাকরি। তোমাদের টিমে আমি ভবিষ্যতে কিভাবে জায়গা করে নিতে পারি?
আমি তোমাকে কল করবো।
তোমার কাছে আমার ফোন নাম্বার আছে?
না।
ক্ষমাকে কি একটু নিস্প্রভ মনে হলো? একটু পরে ক্ষমা বলে –
তোমার ফোন নাম্বার দাও।
ওকে। লিখে নাও…………………………।
সবুজ আবার বলে –
তুমি তোমার বাসা থেকেও আমাকে ফোন করতে পারো।
হোয়াট!
না, বলছিলাম, যখন তুমি সময় পাও তখন।
ওকে।
আমি কখন তোমার কাছ থেকে একটা কল আসা করতে পারি?
ধরো, দিনের শেষের দিকে।
আবারও সে রকম হাহ্‌ টাইপের হাসির ভাব ফোনের এই প্রান্ত থেকে টের পাওয়া যায়।

অধীর আগ্রহ নিয়ে সবুজ ক্ষমার ফোনের জন্য বসে থাকলো বিকেল অবধি। তারপর রাত আটটা-সাড়ে আটটা হয়ে গেলে সে তার ফোনের আশা ছেড়ে দেয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে অন্যরকম রিংটোনে একটা কল আসে। ভারী গলায় সবুজ বলে, হ্যালো। আবারও গলার স্বরটাকে একটু খেলিয়ে বলে, হ্যালো……। লাইন সংযোগচ্যূত হয়। ফোন ধরার আগে এবং পরে সবুজ ভালভাবেই জানতো, এটা ক্ষমার কল। সে ইনকামিং কললিস্ট চেক করে। সেখানে লেখা সময়, রাত ৯টা ৩৬ মিনিট, নো আইডি। ক্ষমা ফোন করার আগে ব্যবস্থা করে নিয়েছে, তার বাসার ফোন নাম্বার যেন গোপন থাকে।

পাঠক, তার পুরো নাম ক্ষমা প্যাটেল। সে ভারতের গুজরাট থেকে ক্যানাডায় এসেছে। আপনি যদি এই উত্তর এমেরিকায় আসেন, তবে এখানে অনেক প্যাটেলের দেখা পাবেন। এরা ক্যানাডায় যত না, তার চেয়ে অনেক বেশি এমেরিকায়। ভারতীয়দের মধ্যে এই গুজরাটি ভারতীয়রাই সংখ্যাধিক্য। যেমন, লন্ডনে বাংলাদেশের সিলেট থেকে আগত অধিবাসীরাই সংখ্যাধিক্য। সবুজ এই গুজরাটিদের খুব একটা পছন্দ করতো না। এদের নিজেদের মধ্যে এতো একতা যে, এদের কারণে তার পেশার কোন চাকরিতেই সে সুবিধা করতে পারছিল না। কিন্তু এই ক্ষমা মেয়েটা হয়ে এসেছিল, সবুজের কাছে সব গুজরাটিদের জন্য ক্ষমা হয়ে। ‘ক্ষমা’ নামটাই তার বেশ পছন্দের ছিল। সবুজ তার শেষ নাম ‘প্যাটেল’-এর দিকে একেবারেই ফিরে তাকাতো না। স্মরণ করতে চাইতো না। কেননা, তার কলিগদের মধ্যে এরকম এক হালি প্যাটেল রয়েছে। এরা এতো ধুরুন্দর, উপরে উপরে সবুজের সাথে খবু ভাল ভাব দেখালেও, স্বার্থের প্রশ্ন আসলে নিজেদের মধ্যে একাট্টা। তারপরও ক্ষমা ছিল বলেই সে এতদিন এই কোম্পানীতে কাজ করতে পেরেছে। নতুবা অনেকবারই ভেবেছে, সে একাজ ছেড়ে দেবে। ক্ষমা ওদেরই বয়সী। কিন্তু কোম্পানীর সহকারী ম্যানেজার। এখানেই পড়াশুনা, বেড়ে উঠা। পাশ করার সাথে সাথে কাজ শুরু করেছে বলে, পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে উপরে উঠে গেছে। মেধাবী তো বটেই। অভিবাসী হয়ে এলে এদেশে, আপনি যতবড় চাকরিই করুন না কেন নিজ দেশে, আপনাকে এই অল্পবয়সীদের অধীনেই কাজ শুরু করতে হবে। না, ক্ষমার সাথে আমাদের গল্পের সবুজের তেমন দহরম-মহরম হয়নি। তবে সবুজের প্রতি তার এক প্রচ্ছন্ন ভালবাসা কাজ করতো, তা সে আর সবুজ ছাড়া আর কেউ বোঝার সামান্যতম সুযোগই পায়নি। এটাই সহকারী ম্যানেজারের কারিশমা। ক্ষমার ভালবাসার এই প্রচ্ছন্ন সুযোগ সবুজকে তার কাজের ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দেয় নি। আর কাজের কোন সমস্যায় সুপারভাইজারের কাছেই রিপোর্ট করার নিয়ম। তাই ক্ষমা একটা দূরত্ব রেখে ঠিকই চলতো। এই দূরত্বে থেকেও ভাবে-ইঙ্গিতে গোপনে তাদের মাঝে যে মন দেয়া-নেয়া চলতো, যাকে ইংরেজিতে বলে ফ্লার্ট, তা দিনে দিনে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। প্রণয় কৌতুক যখন চরমে উঠে , তখন কোম্পানীতে কাটছাঁট শুরু হয়ে যায়। মন্দা মৌসুম দেখা দেয়। ক্যানাডা, এমেরিকার অর্থনীতির এ এক স্বাভাবিক আচরণ। আরো কয়েকজনের সাথে সবুজও তার চাকরি হারায়।

এখানকার ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বলিউডের চলচ্চিত্র দেখলে ক্ষমাকে খুব মনে পড়ে সবুজের। নায়িকাদের পশ্চিমী ধাঁচের পোষাকে দেখলেই তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। এই তো ক্ষমা। যতদিন ওই অফিসে ছিল, ততদিন ক্ষমাকে তার আধুনিক বলিউডি নায়িকাই মনে হতো। আর নিজেকে মনে হতো বলিউডি নায়ক। সে জিমনেসিয়ামের সদস্য হয়েছিল। নায়কদের তো শরীর ফিট রাখতে হয়। নিজের ওজন কমিয়েছিল। ভূঁড়িও কমেছিল। বেশ ইয়াং ইয়াং লাগতো। ওই প্যাটেল কলিগগুলোই টিপ্পনী কাটতো বেশি, ‘কি হয়েছে ইয়ার? কোন প্রেম এলো বুঝি? কোন গার্লফ্রেন্ড।’ একদিন চুল কেটে এসেছিল। চমৎকার লাগছিল তাকে। তারপর ক্ষমা-কে দেখেছে আরো গাঢ় হতে। আরো প্রেমময়ী হয়ে উঠতে। আরো চোখে মুখে কপোত ভাব জাগিয়ে রাখতে। সে সময়গুলো কি ফুরফুরেই না কেটে যাচ্ছিল।

ক্ষমা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আসেনি। সরে যেতে এসেছে। এর মাঝে কোন এক ম্যাসেজ দিতে। কী ম্যাসেজ! সবুজ এখনও তা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

এখনো সবুজের মাথা ব্যাথা করছে। সাইনাসের সমস্যা এসে জুড়েছে। আগে চোখের সমস্যা ছিল শুধু। তবে এখন ডাক্তারের কাছে যেতে তত ভয় করে না। কোন অপরাধে ধরা পড়ারও ভয় নেই তার। অনেকটা সাবধানী হয়ে গেছে। সে জেনে গেছে, কিছু জিনিস ছাড়তে হয়, কিছু জিনিস ধরে রাখতে হয়।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


14 Responses to ক্ষমাহীন প্রহর

You must be logged in to post a comment Login