নীল নক্ষত্র

নক্ষত্রের গোধূলি পর্ব-৩৫ (অধ্যায় ৩)

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সিঁড়িতে কার যেন পায়ের শব্দ পেলেন। টাকাগুলি পকেটে রাখার আগেই কবির রুমে ঢুকে হাতে টাকা দেখে জিজ্ঞেস করলো
কি, টাকা দিয়েছে?
হ্যাঁ দিলো, এইতো।
রেখে দেন, সাবধানে রাখবেন।
সাবধান আর কি, কোন লকার তো নেই।
সাথে রাখবেন, সবসময় সাথে রাখবেন। ভাববেন না এদেশে চোর নাই। এদেশেও চোর আছে, পকেটমার ছিন্তাইকারিও আছে। আপনে একা একা থাকতে চান কেন? একা একা থাকবেন না। একা থাকলে মন খারাপ হবে, নানান রকমর চিন্তা এসে মাথায় ঢুকবে থাকতে পারবেন না। তাস খেলতে পারেন?
জানি তবে একমাত্র ব্রিজ, তাও বেশীক্ষণ খেলতে পারি না মথা ঘুরায়।
আর কিছু পারেন না?
না আর কিছু পারি না। কেন আপনারা কি খেলেন?
আমরা খেলি টুয়েন্টি নাইন।
না আমি ওটা পারি না।
আপনার অফের কথা কিছু বলেছে?
অফ মানে?
অফ মানে ছুটি, যেদিন কাজ করবেন না।
না তা কিছু বলেনি।
বুঝেছি আপনার অফ দেলু ভাই এসে দিবে।
দেলু ভাই কে?
দেলু ভাই আমাদের কিচেনের সেফ এবং এই রেস্টুরেন্টের আর এক জন পার্টনার।
ও আচ্ছা, ওনার নামও কি দেলোয়ার?
হ্যাঁ আমরা দেলু ভাই বলি।
কবির ভাই আপনি এখানে কতদিন যাবত আছেন?
অনেক দিন প্রায় এক বৎসর।
আমাকে একটু অফ সম্পর্কে বলেন তো।
কি বলবো, সাধারণ ব্যাপার। রাতে ডিউটি শেষ হলেই আপনার অফ শুরু। আপনি ইচ্ছা করলে তখনই কোথাও যেতে পারেন। তারপর দিন সারা দিন ছুটি। যেখানে ইচ্ছা যাবেন, লন্ডন যান বার্মিংহাম যান, অক্সফোর্ড যান যেখানে খুশি। তারপর দিন সন্ধ্যায় এসে ডিউটিতে হাজির হবেন। ব্যাস আর কি?
আমারতো বাইরে যাবার জায়গা নেই, তাহলে আমি কি করবো?
কেন, অক্সফোর্ড যাবেন না হলে এই টাউনেই ঘোরাঘুরি করবেন। ভালো কথা, এখানে লাইব্রেরি আছে ওখানে যেতে পারবেন, কেনা কাটার দরকার হলে করবেন। কাপর চোপর ধুবেন।
আর খাওয়া দাওয়া?
কেন সময়মত এসে খেয়ে যাবেন।
কেউ কিছু বলবে না?
আরে না, কে কি বলবে? সবাইতো তাই করে।
হ্যাঁ আমার বন্ধু বলেছে লাইব্রেরিতে যেতে। ওটা কোথায়?
আসেন দেখিয়ে দেই।
জানালার কাছে গিয়ে
এই যে রাস্তাটা যেখানে শেষ হয়েছে ওখান থেকে বায়ে যাবেন। একটু এগিয়েই দেখবেন বায়ে আবিংডন লাইব্রেরি, ডানে সোমারফিল্ড সুপারস্টোর। ফল টল কিছু খাইতে চাইলে ওখান থেকে কিনবেন।
আপনারা কাপর চোপর কোথায় কি ভাবে ধুয়ে থাকেন?
কেন বাথরুমে ইয়েলো বাকেট আছে না?
মানে তাজমহল ডালডার বাকেট?
হ্যাঁ ওতে কাপর ভিজিয়ে রাখবেন, সকালে উঠে গোসলের সময় ধুয়ে বাথরুমের পাশে যে রুম ওটার বাইরে একটা বারান্দার মত আছে, ওখানে শুকাতে দিবেন তবে কাপর ভালো করে আটকাবেন নয়তো বাতাসে নিয়ে যাবে। রশিতে ক্লিপ আছে দেখবেন, হ্যাঙ্গারও আছে।
নুরু ভাইএর বেডের ওপাশে দেখে বলল
হ্যাঁ এইযে ইস্তারি আপনের রুমেই আছে চাইলে কাপর ইস্ত্রি করে নিবেন। আপনের কিছু ধুইতে হলে পাউডার আছে? না থাকলে আমার আছে নিয়ে নিবেন।
না এখন ধুইতে হবে না আর পাউডার নেই কিনতে হবে।
দেখেন কবে অফ দেয় সে দিন বাইরে যাবেন।
আর একটা কথা, আমিযে বাইরে যাব ফেরার সময় চাবির কি ব্যবস্থা?
সবই আছে কাল দেখিয়ে দিব। আজও কি আগেই সেহেরি খাবেন?
হ্যাঁ তাহলে যান আপনের সেহেরি খাবার সময় হয়ে গেছে।
যাক ভাই আপনার সাথে কথা বলে সময়টা ভালোই কাটল।
হ্যাঁ তাইতো বলি একা থাকবেন না একা থাকলেই বিপদ।
হ্যাঁ কবির ভাই, ঠিকই বলেছেন। চলেন সেহেরি খেয়ে আসি।
আমাদের সাথে খান না আমরা সালাদ বানাই খেতে পারবেন।
আসলে ভাই আমার একটু আগে সেহেরি খাবার অভ্যাস তাই আর কি।
ঠিক আছে যার যাতে সুবিধা খান আপনার যেভাবে সুবিধা, জানেন তো কোথায় কি থাকে ইচ্ছা হলে সালাদ বানিয়ে নিতে পারেন। তারপর রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতে ডান পাশে স্যালফ দেখেছেন ওতে আচার আছে খেতে পারেন। যা খাইতে ইচ্ছা হয় এখানে যা আছে খাবেন কেউ কিছু বলবে না।
আজ মঙ্গল বার। সেফ আসার কথা। গত সন্ধ্যায় মারুফ চলে গেছে। এই লোক আবার কেমন কে জানে এরাতো মোটামুটি চলছে। বিকেলে কাজে নেমেই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সের কালো একটু মোটামত গায়ে অলিভ গ্রিন রঙের জ্যাকেট, সাদা প্যান্ট, হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ এক অচেনা লোকের সামনে পরল।
এইযে শুনেন, আপনে কে?
আমি কিচেন পোর্টার।
ও আচ্ছা, ঠিক আছে আমার সাথে একটু আসেন।
হাতের ব্যাগ গুলি নামিয়ে রেখে কিচেনের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। রাশেদ তাকে অনুসরণ করে বাইরে এসে রেস্টুরেন্টের কাঠের বেড়ার ভিতরে লোকটার গায়ের জ্যাকেটের মত অলিভ গ্রিন রঙের পিছনে বনেট খোলা একটা গাড়ির পাশে দাঁড়ালো। ভিতরে বোঝাই মালামাল, ওগুলি দেখিয়ে বলল
এগুলি নিয়ে আসেন আমার সাথে।
একেকটা দশ কেজির চার পাঁচ প্যাকেট ফ্রোজেন চিকেন, এক প্যাকেট মনে হল ফ্রেশ ভেড়ার মাংস, টমাটো, গাজর, ফুল কফি, বিরাট এক রুই মাছ আরও টুকিটাকি অনেক কিছু। হাতে কাঁধে করে সব নামানো হলে লোকটা গাড়ি ঠিক করে পার্ক করে রেখে কিচেনে এসে হ্যান্ডশেক করে বলল
আমি দেলোয়ার।
ও আচ্ছা, হ্যাঁ আমিও তাই অনুমান করেছিলাম।
আপনে শুক্র বারে এসেছেন না?
হ্যাঁ।
সেদিন আমার স্ত্রীর ডেলিভারি হলোতো তাই আমি ছুটিতে ছিলাম।
হ্যাঁ শুনেছি, তা কি খবর?
ভালোই, ছেলে হয়েছে সবাই ভালো আছে।
বেশ ভালো। তা এগুলি কি করবো এখন?
হ্যাঁ আসেন আমি দেখিয়ে দেই। এইযে এই চিকেন গুলির প্যাকেট ফেলে দিয়ে এই ফ্রিজে রাখবেন, সবজীগুলি যেভাবে আছে ওই ভাবেই বাইরের স্টোরে নিয়ে রাখেন, ভেড়ার মাংসগুলি আমাদের। এগুলি আটটা ভাগ করে ব্যাগে ভরে এই ফ্রিজে রাখবেন। একটা পোটলা বাইরে রাখবেন আর কিমার প্যাকেটটা কোথায়? এই যে, হ্যাঁ ওইটাও বাইরে রাখবেন। আজ রাতে রেজালা হবে। ভেড়ার মাংস খানতো? মুখের দিকে তাকিয়ে বলল মাছটা ড্রেসিং করতে পারবেন? মনে হয় পারবেন না!  ঠিক আছে ওটা আমিই করব। মাথাটা আস্ত রাখবো, সেহেরিতে  মুড়ি ঘণ্ট হবে। কি, ঠিক আছে? ঢাকাইয়া মানুষতো মুড়ি ঘণ্ট পছন্দ করে, আপনে করেন না?
হ্যাঁ করি।
আচ্ছা এবার এগুলি গুছিয়ে রাখেন। আমি দেখি আমার কবির মিয়া কি করে রেখেছে।
রাশেদ সাহেব মালামালগুলি গুছিয়ে রেখে এসে দেখে উপর থেকে সবাই নেমে এসেছে। সেফ সাহেবের সাথে গল্প হচ্ছে। বিশেষ আর কি, ছেলে দেখতে কেমন হয়েছে হাসপাতালে কি কি হয়েছে। রাশেদ সাহেব জানতে চাইলেন
এখন কি করবো?
যান ফ্রিজ থেকে মাল বের করেন। ভাই আপনার নামটা কি বললেন যেন?
আমাকে রাশেদ বললেই হবে।
ও হ্যাঁ ঠিক আছে। তা ভাই আপনার ছেলে মেয়ে কি?
আমার তিন মেয়ে।
মেয়েরা কি করে?
রাশেদ সাহেব ফিরিস্তি দিলেন।
বাহ বেশ ভালোই হল আপনে যেদিন আসলেন সেদিনই আমার ছেলে হয়েছে কাজেই আমি ভাবছি আপনার ছোট মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিব, কি বলেন?
কি আর বলবো আপনার যদি এমন সখ হয়ে থাকে তাহলে দিবেন।
তাহলে তো আপনে আমার বিয়াই হলেন।
বেশ ভালো কথা।
তা বিয়াই সাহেব চা টা কিছু খাওয়ান, আমিতো হাসপাতাল হয়ে বাজার করে অনেক ঘুরা ঘুরি করে এসেছি বলে আজ মিষ্টি আনতে পারি নাই। আমি কাল আবার যাবো তখন মিষ্টি আনবো। কি মিষ্টি খাবেন?
কি জানি ভাই আমিতো জানি না এখানে কি মিষ্টি পাওয়া যায় আর ত ছাড়া আমার মিষ্টি লাগবে না আমি এমনিই দোয়া করি যেন আপনার ছেলে ভালো থাকে, মানুষ হয়।
কেন মিষ্টি লাগবে না কেন?
না ভাই আমি ডায়াবেটিকসের রুগী।
ও, তাহলে আপনার জন্যে নিমকি আনবো।
চায়ের জন্যে তার এই দুই দিনের পরিচিত ইলেকট্রিক কেটলি আনতেই সেফ বলে আরে না ভাই এটায় না আমরা এতে চা বানাই না। এই যে আমাদের চায়ের জন্যে এই প্যান। এতে আমরা দেশের মত জাল দিয়ে চা বানাই। আর ওই চা হইলো ইংলিশ চা ওতে আমাদের পোষায় না।
আমি একয় দিন জানতাম না আমিতো ও ভাবেই চা খেয়েছি।
কেন কেও বলে নাই আপনাকে?
না আমি যখন চা খাই তখন কেও ছিল না।  আসাদ ভাই উপরে থেকে বলে দিয়েছিল আমি নিচে এসে বানিয়ে খেয়েছি।
ঠিক আছে আজ বাংলা চা বানাই।
তাহলে দেখে নেন মানুষ কত জন সবার জন্যেই বানান।
বেশ, তাই হবে।
রাশেদ সাহেবকে কখনো চা বানিয়ে খেতে হয়নি। বাসায় কিংবা অফিসে কোথাও না। আজ তাকে তার কর্মস্থানে সবার জন্যে চা বানিয়ে দিতে হবে। রাশেদ সাহেব চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে দিয়ে ভাবছিলেন আর দুধ চিনি চা পাতা আনছিলেন। ভাবলেন এটাও চাকরির একটা অংশ। শেষ পর্যন্ত চা হল। সবাইকে যার যার জায়গায় কাপ পৌঁছে দিয়ে নিজে এক কাপে চুমুক দিলেন, না খারাপ হয়নি। পানির সাথে একটা তেজপাতা দিয়েছিলেন। ভালোই হয়েছে। অন্তত তার তাই মনে হল। দেলু মিয়াও চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই বলে বাহ! ফার্স্ট ক্লাস চ!

আজও কাজের তেমন কোন চাপ নেই ধীরে ধীরেই চলেছে ফাকে ফাকে আলাপ আলোচনা টুকি টাকি কথা বার্তা গল্প গুজব। কাজ শেষ। এবারে বন্ধ করার পালা। দেলু বলল
বেয়াই সাহেব, কাল আপনের অফ। কাল আপনের কোন কাজ নাই ছুটি, পয়সা পাইছেনতো? হা রবিবারে পেয়েছি।
বেশ তাহলে কাল বাইরে ঘুরা ঘুরি করবেন।
কোথায় যাইবেন ঠিক করছেন কিছু?
না কোথায় আর যাবো একটু লাইব্রেরিতে যাবো তারপরে একটু ঘুরে দেখবো।

একটু বেশিক্ষণ ঘুমাতে চাইলেও হোল না। সারে এগারোটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে নামাজ পরে রাতে ভিজিয়ে রাখা কাপর গুলি ধুয়ে শুকাতে দিয়ে রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে রইলো। আজ বাসায় ফোন করতে হবে। মনি পৌছার পরে মনির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ঘড়িতে প্রায় একটা বেজে গেছে। আর দেরি না করে কার্ডটা নিয়ে ফোনের কাছে গেলো। ওপাশে রিং হচ্ছে।
মনির কণ্ঠ, হ্যালো!
হ্যাঁ আমি, কেমন আছ তোমরা?
এ কয়দিন ফোন করনি কেন এখানে ভালো আছি সবাই তুমি কেমন আছ?
হ্যাঁ আমিও ভালো, সেদিন যেতে পেরেছিলে ঠিক মত? তোমার কাজ কেমন চলছে, কি অবস্থা খাওয়া দাওয়া কেমন, কেমন লাগছে কি কাজ করতে হয় পারো কিনা এক নিশ্বাসে সব প্রশ্ন করে একটু থামল।
তোমার এতো প্রশ্নের জবাব দিতে সময় লাগবে তার চেয়ে আমি এখন লাইব্রেরিতে যাবো ওখান থেকে মেইলে সব কিছু লিখে পাঠাবো দেখে নিও। এবারে বল তুমি কেমন করে গেলে রাস্তায় কি কোন অসুবিধা হয়েছিলো কি না বা কায়সার বেয়াই সাহায্য করেছে কি না?
কায়সার বেয়াই নাকি তোমাকে এয়ারপোর্টে দাড়াতে বলেছিল?
কই না তো, আমিতো তেমন কিছু শুনিনি। আমিতো তাকে বলেই আসলাম বেয়াই আমি চললাম আমাকে অক্সফোর্ড যেতে হবে।
না সেতো বলল আমি চেক ইন করতে যাবার আগে বেয়াইকে বলে গেলাম একটু দাঁড়ান, আমি এসে খুঁজে আর তাকে পাই না। দেখি উনি নেই চলে গেছে। আমাকে একটু বলে গেলে কি হতো?
মনে হয় সেই রাগে সারা পথে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি এমনকি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে হোটেল নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো সেখানেও কোন সাহায্য করেনি। তারটা সেরে দূরে গিয়ে বসে ছিল। আমি কাছে গিয়ে বলতে চাইলাম, সে অন্য দিকে ঘুরে বসলো। এদিকে আমি কিছু বুঝাতে পারছি না। কি একটা বিপদ। হিথরোতে ওই যে তালতলার যে লোকটাকে পরিচয় করে দিয়েছিলে সে তো এক বদমাইশ। বলে চলেন ভাবি আমরা হোটেলে এক রুমে ইতো থাকতে পারি। আমি বললাম, হ্যাঁ তাইতো তাই হবে একটু অপেক্ষা করেন। আবার কিউতে দাঁড়ালাম। হঠাত এক বাঙ্গালি ভাইকে পেলাম ওখানেই ক্লিনার এর কাজ করে।  হাতে ব্রাশ ট্রলি নিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তাকে বললাম ভাই আমার হোটেলের ব্যাপারটা একটু ঠিক করে দেন, আমার সাথে কেউ নেই। ওরা কি বলছে আমিতো কিছু বুঝি না আমার কথাও মনে হয় ওরা বুঝে না। তখন ওই লোক কাউন্টারে গিয়ে ওদের ভাষায় কি কি সব বলে দেয় তারপরে ওরা আমার ব্যবস্থা করে। উনি বলল
আপনি এইযে এই লোকের সাথে যান বলে লোকটার সামনে নিয়ে গেল।
আমাকে দেখে বলল আমি তোমাকে হোটেলে পৌঁছে দিব চিন্তা করবে না।
ইনি হোটেলে পৌঁছে দিবে আর ওখান থেকে ভোর পাঁচটায় তুলে আনবে। এখন এখানে বাজে রাত বারোটা আপনার ঘড়ি মিলিয়ে নেন। আমি বলেছি আপনি এ দেশের ভাষা জানেন না আর আপনার সাথে কেউ নেই তাই আপনার সাথে আর কথা বলবে না। আপনাকে হোটেলের রুমে পৌঁছে দিয়ে আসবে। আপনি শুধু ভোরে সময়মত রেডি হয়ে থাকবেন যাতে করে এদের লোক হোটেলে গিয়ে আপনাকে ডাকলেই পায়।
যাই হোক তখনকার মত তো বের হয়ে মাইক্রো বাসে উঠলাম। সাথে আর কয়েক জন ছিল। দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে একটা হোটেলে পৌঁছে হোটেলের রিসিপশনের সামনে নিয়ে গেল। ওখানে পাসপোর্ট রেখে একটা রেজিস্টারে সই নিয়ে বয়ের হাতে একটা চাবি দিয়ে আমাকে ওর সাথে যেতে বলল। শেষ পর্যন্ত এই বয় আমাকে এনে রুমে দিয়ে গেলো। ঢুকেই দরজা বন্ধ করে কাপর বদলে হাত মুখ ধুয়ে বসে রইলাম। তখন প্রায় একটা বাজে। ওরা আমার সাথে এই গাড়িতে আসেনি। মনে হয় ওদের অন্য হোটেলে পরেছিল, অনেক প্যাসেঞ্জার তো। যাই হোক ভাগ্য ভালো বলতে হবে। প্লেন থেকে নামার  আগে খাবার দিয়েছিলো ক্ষুধা টুধা লাগেনি। রুমে টিভি ছিল তাই চালিয়ে বসে রইলাম। সারা রাত বিছানায় শুইনি। একা একা ভয় করছিলো। এভাবেই রাত কেটে গেল। সারে চারটায় উঠে রুমের মধ্যেই একটু হাটা হাটি করলাম। পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগেই ফোন, মনে হয় ইন্টার কম বেজে উঠলো। ধরলাম, রিসিপসনিস্ট বলল নিচে যেতে। ব্যাগটা নিয়ে রিসিপসনিস্টের সামনে দাঁড়িয়ে নাম বললাম পাসপোর্ট বের করে দিল। এখন দেখি এয়ারলাইনের অন্য লোক। ইউনিফরম দেখে চিনলাম। রিসিপসনিস্ট মেয়েটাও দেখিয়ে দিলো, মেয়েটা বেশ ভালো তোমার খুকুর মত হ্যাংলা লম্বা। না বাঙ্গালি না, মালয়েশিয়ান।  গাড়িতে উঠলাম, এয়ারপোর্টে নামলাম। ড্রাইভারই বলে দিল সাথের লোকজনের সাথে যেতে। ওদের সাথে এসে লাউঞ্জে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই চেকইন হোল। তারপর প্লেনে বসে সারা পথ যা ভেবেছি ঢাকা নেমে কি করবো? এখানেও কায়সারের সেই একি ব্যাবহার। যাই হোক এখন কি আর করবো, বললাম বেয়াই আপনি কিভাবে যাবেন?
আমি ট্যাক্সি নিব।
তাহলে আমাকে কল্যানপুরে নামিয়ে দিবেন।
না তা পারবো না আপনি এক কাজ করতে পারেন আমার সাথে চলেন ওখানে আমি বাসায় নেমে গেলে ওই ট্যাক্সিতেই আপনি যেতে পারেন।
আর কি করি নিজের শহরেতো পৌঁচেছি, এখন আর ভয় নেই তাই মেনে নিয়ে তার সাথে উঠলাম। আজিমপুর পর্যন্ত আসলাম সারা রাস্তায় একটা কথাও না এমনকি লাগেজটা ধরে উঠাতেও একটু সাহায্য করেনি। উনি আজিমপুর পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে তার বাসায় নেমে গেল। যাবার সময় কিচ্ছু বলে গেল না। আমি ট্যাক্সির ড্রাইভারকে বললাম ভাই আমাকে একটু কল্যাণপুর বাস ডিপোর সামনে নামিয়ে দিবেন। ড্রাইভারটা ভালো ছিল, সে আর কোন কথা বলল না। এসে জিজ্ঞেস করলো
এয়ারপোর্টে আপনার কেউ যায় নাই?
না আমিতো হঠাত করে এসেছি তাই কাউকে জানাতে পারিনি।
বাসা কোথায়? যেতে পারবেন না কি দিয়ে আসব?
না না এইতো কাছেই বাসা আপনি যেতে পারবেন না কষ্ট হবে চাপা রাস্তাতো আমি একটা রিকশা নিয়ে যেতে পারবো।
রাস্তার মুখে ট্যাক্সি দাড় করিয়ে একটা রিকশা ডেকে বলল ম্যাডামকে নিয়ে যাও। এই লাগেজটা উঠাও।
আমি অবাক হয়ে গেলাম ড্রাইভারের কাণ্ড দেখে। আমাদের বেয়াইর চেয়ে লক্ষ গুনে ভালো মানুষ এই লোক। ভাড়া যা এসেছে তার সাথে আমি বিশটা টাকা বেশি দিলাম। খুশি হয়ে সালাম দিয়ে চলে গেলো। (চলবে)

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


2 Responses to নক্ষত্রের গোধূলি পর্ব-৩৫ (অধ্যায় ৩)

You must be logged in to post a comment Login