বহ্নিশিখা

নারী : পুরুষালি বৃত্তের বন্দিনী

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’। নজরুলের এই বাক্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলতে চাই- নারীরাই সভ্যতার মূলমন্ত্র। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই পুরুষের সার্বিক সহযোগিতায় যেমন নারীরা জলাঞ্জলি দিয়েছে জীবনের মুহূর্তমদির সময়, তেমনি কট্টর পুরুষালি মানসিকতার বলয় ভেঙে হাতে তুলে নিয়েছে জীবনমানের হাতিয়ার। পুরুষের পাশাপাশিই বরাবর থাকতে চেয়েছে নারীরা, ভালোবাসা-মমতাসহ আর্থিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহমর্মিতায়। কিন্তু এই সহমর্মিতা-ভালোবাসা উপেক্ষা করে নারীকে ঘরকুণো করা হয়েছে কেবলমাত্র পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে। প্রকৃতিপ্রদত্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই শক্তি-জুলুম প্রয়োগ হয়েছে নারীর মানসিকতার উপর। বাধ্য করা হয়েছে পুরুষের অনুগত থাকবার। কেননা- নারীরা বাইরের পৃথিবীর সাথে পরিচিত হবার ফলে ভালোমন্দ বুঝার ক্ষমতা অর্জিত হলেই যত বিপত্তি। মিথ্যা ছলাকলা, ভেল্কিবাজি আর নাটকীয় সাংসারিক মনোবৃত্তি যেসব পুরুষের, তাদের তো যুক্তি ধোপে ঠিকবে না। জগতে চলতে হলে সমান অধিকারে চলা আবশ্যক, এই নীতিকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয় তবে কর্তৃত্ব ফলাতে ব্যর্থ হবে পুরুষ। ক্ষমতাও হবে খর্ব।
যা হোক, বাংলা ব্লগগুলিতে আমি ছিলাম নীরব পাঠিকা। কখনো মনে হয় নি আমার লেখার দরকার আছে যশমান লেখককুলদের মাঝে। তারাই নারীদের সমস্যা নিয়ে ইতিবাচক কিছু লিখবেন। অথচ অবস্থা তথৈবচ। যেসব লেখক নারীজাতির অগ্রগতির পথে সমুহবাধা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা হয়তো কেউ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার, কিছু লেখিকা পুরুষদের চাটুকার। আর যারা আছেন তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে নানা ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করিয়ে। তাই ইচ্ছে হলো কিছু কথা বলার। কেননা- আমার অধিকার আমিই বুঝে না নিলে কেউই যেচে ঘরে এসে দিয়ে যাবে না। কেননা- আমরা পুরুষালি বলয়ে আবদ্ধ অসহায় পরিণতির লিঙ্গ। এই অসহায়ত্ব জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীর মনন ও মগজে।
মোট কথা অতীত থেকেই নারীকে তার সঠিক ও ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে ধর্মীয়-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। ধর্ম তো নারীকে সঠিক নির্দেশনা দেয়ই নি, উপরন্তু সম-অধিকার এবং ন্যায্য পাওনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে হাস্যকর কায়দা-কানুনে। পারলৌকিক ভয় দেখিয়ে স্বামীসেবাই নারীর মহান ব্রত বলে বর্ণিত হয়েছে সব ধর্মেই। কিন্তু ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে উহ্য রাখা হয়েছে স্ত্রীসেবা কথাটি।
সমস্যাসঙ্কুল এই পৃথিবীতে পুরুষের পাশিপাশি নারীরাও আজ সরব অনেকটা তোতাপাখির মতো। সভ্যতার বিকাশে বর্তমান বিশ্বে নারীর অবদানও কম নয়। কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও এগিয়ে আছে এই নারী। তবুও কোনো নারীই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে, পুরুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের মতো আমার প্রাপ্যটুকুও যথেষ্ট।
এরকম হাজারো সমস্যা আছে নারীর অগ্রগতির সামনে বড় বাধা সরূপ। পরে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার আশা আছে। অনেকের হয়তো ইতোমধ্যেই গাত্রদহন শুরু হয়েছে। হয়তো পেরে উঠতে না পারলে কেউ অক্ষম আক্রোশে বলবেন আরেক তসলিমার উদয় হয়েছে— বাংলা ছাড়। তবু করার কিছু নেই। যদি কারো জ্বালায় আমি জ্বলি সে আগুনে তাকেও পোড়াতে দোষ কোথায়?

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


58 Responses to নারী : পুরুষালি বৃত্তের বন্দিনী

You must be logged in to post a comment Login