কবির য়াহমদ

নিরবিচ্ছিন্ন কবিতাসমূহঃ পাখিসমাজের কাছে থেকে.

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

অপেক্ষা

একটা তীব্র পেলব রাতের অপেক্ষায় আছি
যার অধর ছুঁয়ে যাবে মখমল রঙে
আমি ছুঁয়ে যাবো তাঁর হৃদয় অলিন্দ্য; পোড়ামুখি নয় সপ্রতিভ আবেশে,
শুনেছি, রাতের গতরে জড়িয়ে থাকে অশেষ ওম
আমি ওম ছুবো, ওমের গতর ধরে টান দিয়ে ভেতরে দেখে নেবো নির্নিমেষ মোহময়তা,
মোহময়তায় আমার আকাক্ষখা ঢের
তাই ফি-রাত মোহময়তাকে খুঁজে ফিরি দূর্নিবার টানে।

রাতের গতরে বসত করে আদি প্রেম, আমি আদি প্রেমে সওয়ার হবো
গতরে গতরে যদি প্রেম জাগে আমি তবে বোবা দর্শক হবো
দূর থেকে দেখো নেবো সব, কাছে এসে গিলে নেবো সব
এ প্রেম সত্য সত্যই প্রেম নির্মোহ প্রাগৈতিহাসিক!

সুদূরের হুইসেল

এক রাত পাড়ি দিলে তুমি চলে আসো আমার কাছে
আমি বসে থাকি ঠায় দাঁড়িয়ে তোমার পানে
রেল লাইনের স্লিপারে জমে থাকে জীবনের ঘাম
ঘাম ঝরে নির্বিকার, ফোটা-ফোটা যেন শোধ হয় জন্মের ঋণ।

জন্মে যারা জেনে নেয় জন্মের ইতিহাস তাদের কথা আলাদা
যদিও তারা মৃত্যু পানে ধাবমান তবু জন্মের ইতিহাস পিছু ঘুরে
মাথা-মাথা ঘুরে আশ্রয়ের খোঁজে, আশ্রয় কোথা; কোন গহীনে,
যারা জানে তারা জেনেই চলে তাই পথিমধ্যে পৃথিবী আগলায়
কায়ক্লেশহীন জীবন তাদের, দূরে হাঁক ছাড়ে ভুখা শালিক,
শালিকের গলায় ঝুলে মুক্তো দানা, পথিকের খোঁজে পথ খোঁজে
পথে পথে আগলায় পথ চিরসবুজ আদুরে কথন।

থেমে যায় রেল লাইন রেলের স্লিপার ধরে, নেমে আসে চাঁদ একপ্রস্ত
কবে কোথাকার কোন চাঁদ বাড়ি ফিরে, রেল লাইনে সমূহ আশ্রয়,
রেল লাইনের ফাঁক গলা পথ হাপিত্যেসে মরে পদচিহ্নের খোঁজে
এক পথে তেড়ে আসে রেল আরেক পথে চতুর পা
পা হাঁটে, রেল দৌড়ায়, কার গতি কত মাপেনি কেউ
তবু কেউ কেউ আনমনা হয় নিজেদের ভেবে সময় ফুরায় ক্রমশ
যার গতি যত সে দৌড়ায় তত তবু রেল পথ নির্বিকার থাকে জন্মের মত
জন্মে বন্ধক রেখেছে জীবনের গতি জীবনের কাছে,
জীবন থমকায় শালিক পুচ্ছে, পালক খসে জীবনের সাথে
একটা শালিক, একটা জীবন তার তাই গতি কমে স্বভাববিরুদ্ধ হয়ে
পালক খসে রাতের সাথে তোমাকে ভেবে- আর কত পথ শুধায় পথিক
দাঁড়িয়ে থাকে ফের অদূরে কোথাও বেজে উঠবে সুদূরের হুইসেল!

পাপ

বৃষ্টি দেখি চোখে চোখে তাই সাধ হয়
একদিন বৃষ্টি হই, একদিন বৃষ্টি হয়ে জড়িয়ে নিই তোমায়
গা ছমছম বৃষ্টি, শ্বেত শুভ্র বৃষ্টি
বৃষ্টি হবো তাই বৃষ্টি মাঝে নিজেকে জড়িয়েছি আগাগোড়া।

তার চোখে চোখ রেখে একদিন বলেছিলাম
এসো বৃষ্টি নামাই, এসো বৃষ্টি হই-
সে কিছু বলেনি শুধু অবাক বিস্ময় তাড়া করছিলো তার চোখ
আমি বুঝে নিয়েছিলাম তার চোখভাষা
তাই শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামানো হয়ে উঠেনি
হয়ে উঠেনি বৃষ্টি অথবা তার আগেকার বিমূর্ত মেঘ!

সে কানে কানে বলেছিলো এ পাপ, জন্মের পাপ
অকালে বৃষ্টি হতে নেই-
আমি পাপের পথে পা দিতে বলি তবে কী পাপরাজ্যে আকাশের বাস
আমার অবাক চোখ আকাশ মাঝে খুজে পাপচিহ্ন।
পাপ, পাপ, অনেক পাপ, হাওয়ায় ভাসে পাপ
আমি পাপে পাপ খুঁজি হয়ে যাই পাপে একেশ্বর
অথচ দিনশেষে দেখি আকাশে কোন পাপ নেই-
আমি কেন তবে হবো পাপের ধারক!

গোরস্থানের ভাষা

গোরস্থানে শুয়ে আছে জ্ঞাতিগোষ্ঠী
তারা নৃ-তাত্ত্বিকতা ভেদে সংজ্ঞায়িত হয় কালে কালে
যদিও কভু শেখেনি নৃ-বিজ্ঞানের ছলাকলা।
একটা ভোগবাদী চামুচ উঠে আসে ধীরে
অধর ছুঁয়ে যায় হিম হাতে; কালো সে হাত
দিঘল কালো ঠিক ঠিক মজা পুকুরের মতো পানায় পানায় পূর্ণ,
একটা নক্ষত্র হেলে পড়ে ধীরে জ্যোতির্বিদদের ঘুম হারাম করে
তাদের মাথার ঘিলুতে মোচড় দিয়ে উঠে আমাদের একান্নবর্তী সময়ে
গোরস্থানে ঘাস গজায়। একটা গরু দৌড় দেয় প্রাণপনে
বেকুব গরু, মানুষ সমাজে থেকে থেকেও এতদিনে ভাষা শেখেনি মানুষের
দৌড়ায়, দৌড়ক্ষনে পিছন দেখেনা। স্বভাব সময়ে অভুক্ত থাকে এ বেলা
গোরস্থানে বেড়ে উঠা ঘাস আরো দীঘল হয় রমণীর কালো কেশের সাথে
ঘাস বাড়ে, কেশ বাড়ে, দৌড়ায় বেকুব গরু, গোরবাসীরা বুড়ো হতে থাকে
গোরস্থানের আলগা দরজায় টোকা মারেনা কেউ এমনকি নিজেরাও
গোরবাসী ভুলে যায় তাদের অতীত, গোরে শুয়ে শুয়ে গোরকল্পনা
ভুলে যায় একদিন তারাও মানুষ ছিলো আর মানুষ শেখেনি কভু গোরস্থানের ভাষা।

জন্মইতিহাসের লগ্ন

এক অতৃপ্ত আত্মার কাছে হাত পেতেছিলাম আত্মার লোভে
আত্মারা আত্মাময় হয় নিশিরাতে যখন পাড়ার ককুরও বেঘোরে ঘুমায়
ঘুম ঘুম চোখে কেউ জাগে প্রাগোইতিহাসিক ঢঙে আমিও হার মানি
মগজের জমে থাকা শিরাগুলোর নির্বিবাদী চিৎকার-উল্লাসে কেঁপে উঠে বুক’
বুকের জমিনে বাসা বাধে ঘুণপোকা নির্বিকার দেখে জন্মইতিহাস
জন্মের সময়ে জন্মাবার শপথ আর একবার মাথা চাড়া দেয় মাঝরাতে।

ভুলে যাই কাল ছিলো অমাবস্যার কাল আজ পূর্ণিমা পেখম খুলতে বসেছে
দেহে দেহে দেহের মাতম উঠে জন্মইতিহাসের লগ্ন শুরু হবে বলে!

সুযোগ পেলে ডাকাত হবো

ঝিম হয়ে আসে মাথা
ঝিম ঝিম ভাবে মাথায় ঢুকে ঘুণপোকা
ঘুণে কাটে সময়; ঘুণে কাটে মন
মন রাখে মনের খবর
তবু মন অবাধ্য মন বারেবারে খুঁজে মনের বাড়ি
মনবাড়ি মনবাড়িতে লুকিয়েছে অদ্য
মনের দেখা কোথা? তাই অদ্য ভেবেছি দিনভর
সুযোগ পেলে একবার ডাকাত হবো!

বৃষ্টি

কোন এক বৃষ্টিবিকেলে যদি আকাশের দিকে যাই
তবে মাটির সমতলপট গোমড়ামুখো হয়
বার কয়েক দৃষ্টি বিনিময়ে আপাত সম্মোহিতভাব
মিইয়ে আসে আচমকা বিসম্বাদে।
বিসম্বাদের ঝড় আহা, আহা বৃষ্টিবিকেল
আমাকে দেখিয়ে দেয় পাহাড়ীপথ-
আমার আশ্রয়স্থল একদিন দেখিয়ে দিয়েছিল
এক উদ্ভ্রান্ত শালিক ভোরবিহানে
আমি শালিকের পাখা দেখেছি খানিক ইশারাসদৃশ
বাকিটা আড়াল ছিল বায়বীয় বাতাসে।
জানি, জানি এবং জানি এ পথে বাতাসের তোড়
উল্টোপথেও উল্টোসুর-
তবু সব পথেই আজ বৃষ্টির দেখা
তাই আমি আজ বৃষ্টি ছুবো,
প্রিয় বৃষ্টি, আমাকে আজ ছুঁয়ে যাও তোমার প্রাণসখা ভেবে.

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


9 Responses to নিরবিচ্ছিন্ন কবিতাসমূহঃ পাখিসমাজের কাছে থেকে.

You must be logged in to post a comment Login