নীল নক্ষত্র

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব] পর্ব-১৯

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব] পর্ব-১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

ইউরোপ এবং এশিয়ার নানা দেশ দেখার আনন্দে এবং চমকে দিন গুলি বেশ কেটে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাহাজের সব বাংলাদেশিদের সাথে বিশেষ করে নিশাতের সমবয়সীদের সাথে ভাব জমে উঠেছে। দিন গুলি কেটে যায় কিন্তু যখন একা হয় তখন কোথা থেকে যেন নিরু এসে হাজির হয় ওই যে বীণা আপার বাসায়  নিরু যখন বলেছিল “দরকার হলে আমি সারা জীবন আপনার জন্য অপেক্ষা করব” ওই কথা বলার সময়ে নিরুর চেহারা এবং ওই ক্ষণটাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারে না। যখনই নিরুর কথা মনে হয় তখনই সেই চেহারা সেই পরিস্থিতি মনে ভেসে আসে। বীণা আপার বাসার সেই সোফায় বসে ওরা দুইজন, নিরুর ডান হাতটা শক্ত করে ধরা। নিরু বলেছে কিন্তু সিরাজ চাচা! যদি চাচা ওর কথা না মানে তাহলে! এমনিতে চাচা যেমন মেজাজি মানুষ! সে কি  নিরুর কথা রাখবে? কি জানি, রাখতেও পারে কারণ চাচা নিরুকে খুব ভালবাসে মা ছাড়া ডাকে না। বড্ড ভুল হয়ে গেছে, আবার ভাবল বীণা আপা বা অন্তত যূঁইকে কিছু একটা বলে আসলে ভাল হতো। এর বেশি আর কিছু ভাবতে পারে না নিশাত। নানা দুশ্চিন্তা এসে মাথায় ভর করে। মাঝে মাঝে একটু অন্যমনস্ক হলে অরুণ’দা এবং মুকিত ভাইয়ের কাছে ধরা পরে যায় কিন্তু তবুও কখনও নিরুর কথা জানতে বা বুঝতে দেয় না। শুধু ওই জেটিতে নাম লিখা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না। নিরু কি আমার হবে? এই এক প্রশ্ন সারা বেলা অবেলায়। কতবার ভেবেছে একটা চিঠি দেই কিন্তু কোথায় কিভাবে কার ঠিকানায় লিখবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। শুধু ভয় যদি অন্য কারও হাতে পরে তাহলে কি হবে! কত বড় কেলেঙ্কারি হবে! এই ভয়ে কত চিঠি লিখে ছিড়ে ফেলেছে আর সেগুলি হয়ত এখনও বিভিন্ন সাগর জলে ভেসে বেড়াচ্ছে।

মনে মনে নিশাতের যাবার তারিখ হিসেব করে নিরু দিন গুনছে ও কবে আসবে! কি যেন বলেছিল সেদিন? নয় মাস পরে আসবে! হে খোদা, মাত্র গেল সাত মাস! আর কত? এমনিতেই কতদিন পরে পরে দেখা হয় তার কাছে এই নয় মাস এমন কিছু না কিন্তু কেন যেন মনে হয় এই দুই মাস অনেক মাস। এর আগে কখনও এমন লাগেনি। শুধু ভাবনা আর জল্পনা কল্পনার মধ্যেই সীমিত ছিল কিন্তু এবার যেন একটু অন্যরকম। কেমন যেন বোঝান যায় না বলা যায়না। আর বলবেই বা কাকে! যেখানে হাতে ধরেছিল বারবার  সেখানে তাকায়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিজে একটু আলতো করে ছুঁয়ে দেখে নিশাতের স্পর্শ লেগে আছে কিনা! এই একটু খানি স্পর্শের জন্য আজ কতদিন ধরে অপেক্ষায় আছে সে কথা কি আর কাউকে বলা যায়? না, এ যে একান্তই তার নিজের অনুভব। কাউকেই এ কথা বলা যায় না। মানিকগঞ্জে নোমান ভাইয়ের কথাটা শুনে খুবই মিষ্টি লেগেছিল, মনে হলো তাই যেন হয় নোমান ভাই। মানুষটা এমন বোকা যে নিজে যেন কিছুই বলতে পারে না। কোন আভাস ইঙ্গিতও কি কিছু বুঝতে নেই! আর সেদিন কেমন হঠাৎ করেই হাত টেনে ধরল! অবাক কাণ্ড, ভাবাই যায় না এই মানুষ এমন করে বসবে। তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য মুখে যা আসে তাই বলে দিয়েছে। আসলে এইতো তার মনের কথা। সারা জীবন কেন অনন্তকাল ধরে ওর অপেক্ষায় থাকতে পারি। তখন ভয়েই আর কিছু বলা হয়নি। কত কথা জমে রয়েছে কত কি বলার আছে, কবে সময় হবে? ও কি আর একটু এগিয়ে আসতে পারে না?। তখন মনে ভয় ছিল যদি হঠাৎ করে আপা এসে পরে তাহলে?  যখন হাত টেনে ধরেছিল তখন কেমন যেন এক অনুভূতি আবার ওদিকে আপা চলে আসে কিনা সেই ভয়! ভয় আর অজানা এক শিহরণ মিলে কেমন যেন বলতে না পারা একটা ভিন্ন অনুভব। যা শুধু অনুভবেই অনুমান করা যায় কাউকে বলা যায় না। আপা কি কিছু বুঝে ফেলেছে? না! তা কি করে হয়! একটা চিঠিও তো দিতে পারে মানুষটা! কেমন? যুঁই আপার কাছে দিলে কি হয়? না থাক তাহলে জানাজানি হয়ে যাবে। শুধু আমার বুকের মাঝে রয়েছে তাই থাক আর কারো জানার দরকার কি? কিসে থেকে কি হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য সব কিছু ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। থাক যেমন আছে তাই থাক। এই আমার ভালো। ওর মনের কথা জানতে পেরেছি তাই বুকে করেই কাটাতে পারব।

নিশাত যাবার পর নিশাতের বাবা অফিস থেকে মতিঝিল কলোনিতে বাসা পেল। নিশাতকে জানিয়েছিল যাবে কিনা। ঢাকা শহরের মুল কেন্দ্রে বলে আশেপাশে অনেক ভাল স্কুল কলেজ আছে তাই নিশাত ছোট ভাই বোনদের ভাল লেখাপড়া হবে বলে বলেছিল এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় উঠে পরুন।
দেখতে দেখতে একদিন নিশাত তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা শেষ করে নয় মাস পরে কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে একটা অটোরিকশা নিয়ে মতিঝিলের বাসায় এসে হাজির। বাসায় মা একা ছিল সে দরজায় চেনা নক শুনে একটু অবাক হয়ে ভাবছিল কে এলো এই সময় একেবারে নিশাতের মত নক। দরজা খুলেই মা নিশাতকে দেখে অবাক স্তব্ধ হয়ে  তুই! বলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। একটু পরেই সম্বিত ফিরে পেয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরল বুকে। বাবা তুই এসেছিস! কোন খবর দিতে পারলি না?
না আম্মা সবাইকে চমকে দিব বলে ইচ্ছে করেই কাউকে খবর দেয়ার চেষ্টা করিনি। প্রথম বলে বিদেশ থেকে যা পেরেছে ছোট ভাই বোন এবং নিরুর জন্য কিছু কেনা কাটা করেছে। খাবার পর বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পর সবাই যখন একত্রে হলো বাবা মা ভাই বোন সবাই তখন যার জন্য যা এনেছিল সেগুলি একটা একটা করে দিয়ে দিল কিন্তু নিরুর জন্য যা এনেছিল সেগুলি আর বের করা হলো না। সুটকেসের ভিতরেই রয়ে গেল। পরদিন সকালে ফকিরাপুল গিয়ে একটা স্টিলের আলমারির অর্ডার দিয়ে এলো। কয়েকদিন পরে আলমারিটা এনে সুটকেস থেকে বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখল। নিরু যখন আমার হবে, নিরু যখন এই বাড়িতে আসবে তখন আলমারির চাবিটা নিরুর হাতে দিয়ে বলবে আলমারিটা খুলে দেখ ওখানে যা যা আছে সব তোমার। পরদিন বীণা আপার বাড়িতে এসে হাজির। দুলাভাই থাকলে বেশিক্ষণ থাকা যাবে মনে করে বিকেলের দিকেই এসেছিল। বাড়ির কাজের মেয়ে নার্গিস দরজা খুলে অচেনা মানুষ দেখে জিজ্ঞেস করল কাকে চান?
সর দেখি ভিতরে যেতে দাও।
একরকম ওকে ঠেলে ভিতরে এসেই দেখে বারান্দা দিয়ে নিরু এগিয়ে আসছে। ওকে দেখে নিরুর চলা থেমে গেল। কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়েই জিজ্ঞেস করল আপনি! এতো দিন নিশাত ভাই বলে ডাকত কিন্তু আজ কেন যেন আর সেই আগের ডাক ডাকতে পারল না। আপনি! এটুক বলেই থেমে গেল। কোথা থেকে যেন এক রাশ লজ্জা আর সংকোচ এসে পা জড়িয়ে ধরেছিল। নিশাত এগিয়ে এসে পিছনে কাজের মেয়েটার কথা ভুলে গিয়ে নিরুর কাঁধে হাত দেয়ার জন্য হাত তুলতে আসছে বুঝতে পেরে এক পা পিছিয়ে জিজ্ঞেস করল কবে এসেছেন? নিশাত একটু অভিমান ভরা কণ্ঠে বলল যেদিনই এসে থাকি তাতে তোমার কি? আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু পিছনের পর্দা সরিয়ে বীণা আপাকে আসতে দেখে থেমে গেল। বীণা আপাকে দেখেই এগিয়ে এসে নিচু হয়ে বীণা আপার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলল আপা আপনারা ভাল আছেন সবাই?
হ্যাঁ কিন্তু তুই কবে এসেছিস?
গতকাল এসেছি আপা! ছেলেরা কোথায় বলে একটা চকলেটের প্যাকেট নিরুর হাতে এগিয়ে দিয়ে বলল ওদের দিও।
ওরা বাইরে খেলতে গেছে একটু পরেই আসবে যা ও ঘরে বস গিয়ে আমি আসছি।
নিরু এসে লাইট জ্বেলে দিয়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু সেদিনের মত আবার নিরুর হাত টেনে ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল তুমি আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না? নিরু আজ হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল না। শুধু বলল কি জিজ্ঞেস করব? মনে মনে বলল আপনি কিছু জিজ্ঞেস করলেই পারেন। হঠাৎ বারান্দায় পায়ের শব্দ পেয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল আপা আসছে আমি যাই! একটু পরেই দুলাভাই এলো। অনেক রাত পর্যন্ত নিশাতের সমুদ্র যাত্রা ও লন্ডন ভ্রমণ নিয়ে গল্প সল্প হলো কিন্তু এর মধ্যে নিরু একবারও এ ঘরে এলো না। আপা দুলাভাই রাতে খাবার জন্য পিড়াপিড়ি করল কিন্তু কিসের এক অব্যক্ত অভিমানে নিশাত সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে চলে এলো।
প্রেম মানুষকে উদাস করে দেয়, উদার হতে শেখায়, ভালবাসতে শেখায় সেই সাথে নিষ্পাপ প্রেম মানুষকে বড়ই অভিমানী করে তোলে। সেই অভিমানের জের ধরে দুলাভাইর সাথে রাতের খাবার খেতে অসম্মতি। নিরু যদি একবারও অন্তত চায়ের ট্রে নিয়েও এ ঘরে আসত তাহলে এমন হতো না।  সে রাতে দুলাভাইর কথায় বুঝতে পেরেছিল নিরুর কলেজ বন্ধ। পরদিন সকালে হিসাব করে আপার ছেলেদের স্কুলে চলে এলো। জানে আজ নিরু বাসায় আছে কাজেই আপা তার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে আসবে না নিরুই আসবে। সত্যি সত্যি একটু পরেই দেখল একটা রিকশা আসছে তাতে নিরুর সাথে আপার বড় ছেলে অয়ন। রিকসা থামলে ভাড়া দেয়ার জন্য নিরু হাতের ব্যগটা খুলছে এমনি সময় নিশাত সামনে এসে অয়নকে বলল
মামা কাল চকলেট খেয়েছ?
হ্যাঁ মামা খুব মজা
আচ্ছা যাও স্কুলে যাও। নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল যাও ওকে ক্লাসে দিয়ে এখানেই আসবে আমি দাঁড়ালাম
যেন নিরুর উপরে তার কত দাবি। নিরু কেন এখানে আসবে? সে নিরুর কে? নিরু কেন তার কথামত চলবে? তাইতো!  নিরু এখানে না এলে কি করব? সাত পাঁচ অনেক ভাবনা আসছে যাচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই দেখল স্কুলের গেটের ভিতরের রাস্তা দিয়ে নিরু বের হয়ে আসছে। মাথায় ওড়না জড়ান হাতে সেই ব্যাগটা। মাথা নিচু করে নিরুর স্বভাব মত আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। নিরু আগের মত চঞ্চল ছটফটে নেই এখন অনেক বদলে গেছে। যে নিরু না হেটে দৌড়াত সেই নিরু এখন ধীর পায়ে হাটে। হতে পারে বয়সের সাথে বদলে গেছে কিংবা মনে কোন পরিবর্তন এসেছ। কি সে পরিবর্তনের কারণ? গেটের বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই নিশাত পাশে গিয়ে বলল আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরব চল রিকশায় ওঠ।
তোমাকে নিয়ে ঘুরব! বললেই হলো!
কেন?
সহজ সরল এই মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিরু কি বলবে একটু ভাবল।
কেন আবার কি, আপনি কি কোনদিনই কিছু বুঝবেন না?
এখানে বোঝার কি আছে?
আমি এসেছি অয়নকে স্কুলে দিতে, আর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগে তা আপা জানে না? সে সময় পেরিয়ে গেলে আপা কি করবে? কি বলব আপাকে? বলব তোমার প্রিয় ভাই নিশাতের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম? বলব এ কথা?
ও, এই কথা! তাহলে বল তোমাকে আমি একা কোথায় কখন পাব?
এত অস্থির হবার কি হলো? একা পাবার এমন কি প্রয়োজন?
অস্থির মানে কি বলছ তুমি! জান আমার এই নয়টা মাস কি করে কেটেছে?
কি করে কেটেছে?
শুধু নিরু আর নিরু, তুমি আর তুমি
কেন আপনার কাজকর্ম কিছু ছিল না?
শোন এত কৈফিয়ত আমি দিতে পারব না
তাহলে কি করবেন? বাসায় যাবেন?
চল বাসায় যাই
তাই চলেন কাল আপনি চলে আসার পরে মেঝ ভাই এসেছে
তাই নাকি?
হ্যাঁ যূঁই আপার বিয়ে ঠিক হয়েছে
কবে বিয়ে?
এই শুক্রবারের পরের শুক্রবারে
বাহ! আমি ভাবতেই পারছি না যূঁইর বিয়েতে আমি থাকতে পারব, শিহাব বাসায় আছে?
আমিতো ঘুমে দেখে এসেছি
একটা রিকশায় উঠে বসল। এই প্রথম নিরু আর নিশাত এক রিকসায় এত কাছা কাছি বসেছে। দুইজনের মনেই এক অপার্থিব সুখস্রোত বয়ে যাচ্ছে। স্বর্গিয় অনুভুতি, অনেকক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু একজন আর একজনের স্পর্শ অনুভব করছে। হঠাৎ করেই নিশাত এই নীরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করল
আমার কথা তোমার মনে পড়েনি?
পড়েছিল
সবসময়?
সবসময় কেন হবে? মাঝে মাঝে একটু একটু
তাহলে তুমি কাল রাতে একবারও ও ঘরে এলে না কেন?
আবার বোকার মত কথা বলছেন
কেন বোকার মত কেন হবে?
দুলাভাই কি ভাবত? আপা কি ভাবত?
ও আচ্ছা! কিন্তু যেদিন আকাশে সূর্যের উদয় হবে সেদিন কি ভাববে?
আগে উদয়তো হোক, তখন দেখব কে কি ভাবে!
চলনা আজ কোথাও একটু যাই
আমি আপাকে কিছু বলতে পারব না
আচ্ছা ঠিক আছে না বললে
আরও কিছু কথা হলো
বাসায় এলে বীণা আপা দরজা খুলে ওদের দুইজনকে এক সাথে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কিরে তোরা এক সাথে হলি কি করে?
আমি বাসে কল্যাণপুর যাচ্ছিলাম ওকে দেখলাম রিকশায় করে আসছে তাই নেমে ওর সাথে চলে এলাম।
এসে ভাল করেছিস আয় ভিতরে আয়। কাল শিহাব এসেছে যূঁইর বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামি সপ্তাহে
হ্যাঁ ওর কাছে তাই শুনলাম, শিহাব কোথায়?
কথা বলতে বলতে ভিতরে এসে দেখে শিহাব নাশতা খাচ্ছে। নিশাতকে দেখে এক লাফ দিয়ে উঠল
কিরে তুই কবে এসেছিস? তুইতো অনেক হ্যান্ডসাম হয়েছিস!
তুইওতো বেশ নাদুশ নুদুস হয়েছিস, এই যূঁইয়ের বিয়ে কবে রে?
এইতো সামনের শুক্রবেরের পরের শুক্রবারে
বাহ! কি আনন্দ! তুই বাড়ি যাবি কবে?
দুই তিন দিন পরে যাব, যাবি আমার সাথে?
একটু ভেবে বলল
তোর সাথে যেতে পারব না তবে আমি হলুদের দিন চলে আসব
বীণা আপার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল আপা আপনারা কবে যাবেন?
দেখি তোর দুলাভাইর সাথে আলাপ করিনি এখনও তবে মনে হয় আমিও হলুদের দিন যাব নিরু শিহাবের সাথে চলে যাবে। তুই তাহলে আমাদের সাথেই যাবি, পারবি? শিহাব আজ তোদের বাসায় যাবে চাচা চাচিদের দাওয়াত দিতে।
তাহলে ভালই হবে। ঠিক আছে আপা আমি আপনাদের সাথেই যাব
কথার সাথে সাথে শিহাবের নাশতা শেষ হলো, নিরু চা নিয়ে এলো। চা খেতে খেতে বলল এই চলনা আমি হাবিবদের বাড়ি যাব তুইও চল
আমাদের হাবিব?
হ্যাঁ, দুইজনে একসাথে গেলাম অথচ আমি চলে আসলাম ও কিন্তু এখনও আসতে পারেনি তাই চাচা চাচীদের সাথে একটু দেখা করে আসি আর ওর খবরটা জানিয়ে  আসি আর তুই যখন এসেই পরেছিস তাহলে হাসির সাথে একটি দৃষ্টি বিনিময় করে যাবিনা?
কি যে বলিস, সে দিন কি আর আছে?
কেন নেই কি হয়েছে?
কি আর হবে, কতদিন হয়ে গেল সব ভুলে গেছি
আরে যাহ! এই কি কেউ ভুলে না ভুলতে পারে? লুকাচ্ছিস কেন, চল দেখা করে আসবি, বেচারি হয়ত তোর পথ চেয়ে আছে
না রে আমার অনেক কাজ আছে সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে কিছু কেনাকাটা করতে হবে
আরে চল পরে আমিও তোর সাথে থাকব, যে কয়দিন ঢাকায় থাকবি আমি তোর সাথে থাকব
তাহলে তুই যখন বলছিস চল ঘুরেই আসি, তুই আর হাবিব কি এক সাথেই ছিলি?
না রে, আমি ছিলাম ইউরোপে আর ও ছিল এশিয়ান লাইনে তবে আমরা যখন মিডল ইস্টে আসতাম লোড নেয়ার জন্য তখন মাঝে মাঝে কথা হত। আমি দেশে আসছি জেনে বলে দিয়েছে ওদের বাড়ি যেতে।
চল

শিহাব যতদিন ঢাকায় ছিল নিশাত শিহাবের সাথেই ছিল। এই যাত্রায় সবার সাথে দেখা হলো আর সেই সাথে নানা সময়ে নিরুর সাথেও দেখা হলো।
পরেরদিন আপা জানাল তোর দুলাভাই বিয়ের দিন যাবে আমরা হলুদের দিনেই সকালে চলে যাব তুই কিন্তু এসে পরবি
আচ্ছা আপা, আমি সময়মত চলে আসব
তিনদিন পরে শিহাব আর নিরু চলে গেল।
পরের বুধ বারে সকালে উঠেই নাশতা খাবার সময় মাকে বলল
আমি বাড়ি যাচ্ছি যূঁইয়ের বিয়েতে। আজ হলুদ, বীণা আপা যাচ্ছে তার সাথে যাব আপনারা কি শুক্রবারেই আসবেন নাকি আগে আসবেন?
আগে কেমনে আসব, তোর বাবার অফিস আছে না!
আচ্ছা, তাহলে আপনারা আসেন আমি আজই চললাম।
বিয়ে বাড়িতে নিরুর সাথে সময়ে অসময়ে দেখা, চোখে চোখ আর সবার সাথে হৈ চৈ আমোদ প্রমোদে চলে গেল। নিরুর সাথে  দুই একটা সাধারণ কথা ছাড়া একান্তে তেমন আলাপের সময় বা সুযোগ হয়ে উঠেনি। শনি বারে বাবা মা সহ বীণা আপা, দুলাভাই নিরুর সাথে এক সাথে ঢাকায় চলে এল।
[চলবে। এতক্ষণ নিশাতের সাথে নিরুর চায়ের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login