জুলিয়ান সিদ্দিকী

প্রমিত বাংলা বিষয়ে একটি অসম্পূর্ণ আলাপ (শেষ কিস্তি)

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page


আমাদের দীনতা প্রায় সব ক্ষেত্রেই বেশ দৃষ্টিকটূ হয়ে ফুটে ওঠে। কিন্তু কখনো কখনো নিজেদের দৈন্য স্বীকারেও আমাদের লজ্জা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয়। লাইটার কথাটা ইংরেজি। আরবিতে বা আরো অনেক ভাষায় হয়তো তাদের নিজস্ব শব্দ আছে। কাপ কথাটি ইংরেজি। তাগালুক ভাষায় তার নাম বাসো। কিন্তু আমাদের বাংলায় এমন অনেক শব্দ আছে যা যে ভাষা থেকে এসেছে তেমনই আছে নয়তো খানিকটা বিকৃত হয়ে আমাদের নিজস্ব হয়েছে। কেন আমরা সেসব বিদেশি শব্দের পরিভাষা তৈরি করতে পারছি না?

আমাদের বিজ্ঞজনেরা কর্ম্ম কে কর্ম করে, ধর্ম্ম কে ধর্ম করে অথবা য-ফলার ব্যবহার তুলে দিয়ে এমন ভাব দেখান যে, বেশ কিছু বৃহৎ কর্ম সম্পাদন হইল। এটা কিন্তু একটি দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। কালের পরিক্রমায় মানুষের সঙ্গে ভিন্ন জাতি ও দেশের মানুষের সামাজিক বা ভাষিক যোগাযোগের ফলে অনেক কিছুই নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে যেতে পারে, যা আইন করে বা জোর করে বন্ধ করা সম্ভব নয়। কেবল ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার কারণেই পৃথিবীর অনেক ভাষা আজকাল হারিয়ে যেতে বসেছে। যেমন আমাদের চাকমা ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা আছে। অথচ তা কেমন অনেকেই জানেন না। এমনকি অনেক চাকমাই হয়তো খুব বেশি জাতীয়তাবাদী না হলে নিজেদের বর্ণমালা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না বলেই মনে হয়। যার ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষার দাপটে এমনি অনেক উপভাষা এবং তার বর্ণমালাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে

আমাদের ভাষায় প্রচুর সংখ্যক বিদেশি শব্দ আছে সেই সঙ্গে রয়ে গেছে পর্যাপ্ত পরিভাষার অভাব। আর যেগুলো আছে তা শিক্ষার্থীদের কাছে এতটাই কঠিন যার বেশির ভাগ অর্থ জানতে আরেকটি অভিধান প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুতরাং বানান পদ্ধতি নিয়ে পড়ে থাকলেই আমাদের চলবে না। সেই সঙ্গে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে বিদেশি শব্দের পরিভাষা সৃষ্টির দিকে, যা সহজবোধ্য আর লিখতেও তেমন একটা বেগ পেতে না হয়।

অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের কোনো একটি লেখায় বা চঞ্চল আশরাফের লেখায় পেয়েছিলাম যে, বাংলা একাডেমী একটি প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ রচনার জন্য হুমায়ূন আজাদকে ধরেছিলো। কিন্তু দু পক্ষের চুক্তির মাঝে মাত্র একলক্ষ টাকার ব্যবধান ছিলো। হুমায়ূন আজাদ বাংলা একাডেমীর কাছে তিন লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। আর বাংলা একাডেমী বলেছিলো দু লক্ষ টাকা।

মাত্র একলক্ষ টাকার কৃপণতা বা উদারতার জন্য জাতি বঞ্চিত হলো একটি প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ থেকে। আজ হুমায়ূন আজাদ নেই। বাংলা একাডেমীও নানা খাতে খরচ করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই। কিন্তু আজ অবধি বাংলা ব্যাকরণ পেলাম না।

বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে বা বাঁচিয়ে রাখার সাধ্য কোনো একাডেমীর নাই। কিন্তু বাংলা ভাষা চর্চা যাতে আরো বেশি মাত্রায় হয় সেই দিকটি নানা মাধ্যমে নানা দিক থেকে উন্মোচিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আরেকটি ব্যাপার না বলে পারছি না এ কারণে যে, আমাদের দেশের বাংলা সংবাদপত্রগুলোর লেখালেখির স্বাধীনতাটা অতিমাত্রায় হওয়ার ফলেই হয়তো তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো বানান রীতি ব্যবহার করে থাকে। প্রমিত বাংলা বা বানানের ক্ষেত্রে যা নৈরাজ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। যে লেখক যে পত্রিকায় লেখালেখি করেন, তিনি সেই পত্রিকার নিজস্ব বানান রীতিকে অনুসরণ করতে বাধ্য হন। অথচ লেখক হিসেবে, জাতির বিবেক বা সমাজের দর্পণ হিসেবে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট নীতিকে মেনে চলা উচিত ছিলো। বিশেষ করে সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা, এমনকি প্রকাশকদেরও প্রমিত বানান রীতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করা উচিত। দেশ একটি। প্রমিত ভাষাও একটি। সে ক্ষেত্রে বানান রীতিও সবাই একটিকেই অনুসরণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, রীতি-নীতি প্রশ্রয় পাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

(সমাপ্ত)

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


8 Responses to প্রমিত বাংলা বিষয়ে একটি অসম্পূর্ণ আলাপ (শেষ কিস্তি)

You must be logged in to post a comment Login