তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

বহ্নির ঈদ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আম্মু আমাকে নতুন ড্রেসটাই কিনে দিতে হবে।সকাল থেকে বহ্নি জেদ ধরে আছে বাজারে আসা ঈদের নতুন ড্রেসটা তার চাই।রেহানা বেগম কত করে বুঝলেন তাতে কোন লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত মেয়ের জেদের কাছে হার মানলেন।

ঠিক আছে মা কিনে দেব। এবার স্কুলে যাও।

যাচ্ছি আম্মু।বলে জুতার ফিতা বাঁধতে লাগে বহ্নি।মনে মনে ভাবে আজ পর্যন্ত যা কিছুর আবদার করেছি তার সব পেয়েছি।

স্কুলে যাবার পথে রাস্তার পাশের বস্তিটাকে একটা জঞ্জাল মনে হয় তার কাছে। কেমন নোংরা গন্ধ ভেসে আসে । বমি থেকে রক্ষা পেতে মুখে রুমাল চেপে জায়গাটা পার হয় অতিদ্রুততায়।প্রতিদিনের মত আজ ও সেই পথ দিয়ে যাচ্ছে এমন সময় ছয় সাত বছরের একটা মেয়ে তার উড়না ধরে টান দেয়। পেছনে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখে রাগত স্বরে বলে

এই পিচ্চি উড়না ধরিস কেন?

আপা আমারে কয়ডা টাকা দিবেন।

দূর ভাগ।বাজে অভ্যাস শুধু টাকা চায়।পাজির একশেষ কোথাকার।

মেয়েটা কিছু বলে না শুধু অপলক আর অসহায় চোখে বহ্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।হুট করে মেয়েটা বহ্নির উড়না ধরে বস্তির দিকে টানতে শুরু করে।মেয়েটার অসহায় দৃষ্টির মাঝে যেন জাদু ছিল। সম্মোহিতের মত মেয়েটার পিছু পিছু যায় ।

ঝুপড়ি একটা ঘর।বাশের মাচার উপর এক বৃদ্ধ নোংরা একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।ঘরের কোনায় মাটির কলসিটা ভেঙ্গে পড়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলে উঠল

মা ! মা-রে কলসিটা ভেঙ্গে দিলি।

কে রে বেলা আইছস মা । কি আইনছস দে মা।পানির পিপাসা লাগছিল কলসির কাছে গিয়া দেহি পানি নাই। মাথাটা কেমন ঘুরে যায় তহন কলসির উপর আছড়ে পরি।তহন ভাঙ্গছেরে মা।দে মা খাওন দে।

বহ্নির যা বুঝার বুঝে নেয়। টিফিনের বাটিটা বেলার হাতে দিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে যায় বস্তির ঝুপড়ি ঘর থেকে।বেলা টিফিন বাটিটা নিয়ে বাশের মাচানে উঠে মায়ের কাছে।

সারাদিন স্কুলে অস্থিরতার মাঝে কাটায়।বুকের মাঝে অচেনা একটা কস্ট অনুভব করছে । হুট করে হেসে দেয় বহ্নি , তা দেখে ক্লাসের সবাই বলে –

কি হল আজ তোর বহ্নি।সারাদিন ঝিম মেরে আছিস,এখন আবার হাসছিস।

আরে কিছু না।

স্কুল থেকে ফিরে অন্যদিনের মত টিভি নিয়ে ঝগড়া হয়না, ছোট ভাই বিকাশের সাথে।তাতে রেহেনা বেগম একটু অবাক হন বটে।রাতের পড়া শেষে মেয়ে যখন মায়ের রুমে আসে তখন রেহানা বেগম ভাবে কোন আবদার নিয়ে এল আবার। বহ্নি মায়ের খাটের পাশে এসে বসে। আম্মু আমি যদি ঈদের ড্রেসটা নিজে কিনি তাহলে টাকাটা আমাকে দিবে ?

কেন নিজে কিনতে চাও ?

সেটা  এখন বলবনা ।দেবে কিনা তাই বল।

তোমার ড্রেস কিনলে ও টাকা যাবে , তুমি কিছু করলে ও যাবে।ঠিক আছে সকালে এই নিয়ে কথা হবে । এখন ঘুমুতে যাও।

ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকী।বহ্নি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সোজা বসুন্ধরায় চলে গেল। একঘন্টা পর যখন শপিং মল থেকে বেরুল তখন হাতে বেশ কিছু ব্যাগ শোভা পাচ্ছে।বাসায় যখন ফিরল ,মেয়ের হাতের দিকে তাকিয়ে মা বলল কিরে সব কিনেছিস?দেখি কি কিনলি।

না আম্মু আমাদের বাড়ীর নিয়ম কি ভুলে গেছ।আম্রা ঈদের দিন ছাড়া নতুন কাপড়ের প্যাকেট খুলি না।

ও আচ্ছা , তাই বল।

ঈদের সকালে সবাই ব্যাস্ত নতুন পোশাক নিয়ে।বহ্নির মা ব্যাস্ত রান্না নিয়ে। মুরাদ সাহেব সবসময়ের মত চুপচাপ।চার মাস পর গতরাতে তিনি কক্সবাজার থেকে ফিরেছেন। বহ্নির বাবা মুরাদ সাহেব নৌবাহিনীতে চাকুরী করেন।সবাই মুরাদ সাহেব কে ভয় পায়। এই সাত সকালে মেয়েকে একটা ব্যাগ হাতে বেরুতে দেখে বলেন

কোথায় যাও মা।

এইতো আসছি,পাচ মিনিট আব্বু।

বস্তির ঘরে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে বেলা পাশে অসুস্থ মা। বহ্নি বেলাকে বলল

এই বেলা দেখ আমি তোমার জন্য আর তোমার মায়ের জন্য কি এনেছি।বহ্নির আনা কাপড় দেখে বেলার চোখ আনন্দে চিকচিক করতে লাগল । ব্যাগ থেকে দুই প্যাকেট সেমাই আর দুধ বের করে সেমাই রান্না করতে বলল বেলার মাকে। তাদের খুশি দেখে নিজের চোখে পানি এসে গেল বহ্নির।

হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে বাসা অভিমুখে চলল বহ্নি ঈদের দুপুরে। তবে মনে বইছে অজানা সুখের বাতাস।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


2 Responses to বহ্নির ঈদ

You must be logged in to post a comment Login