মামুন ম. আজিজ

গল্প: বারান্দার ওপাশে

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

॥ এক ॥
থপ, থপ ……থপ, থপ
তারপর নিরবতা- অল্প কিছুক্ষণ।
আবার – থপ, থপ ……থপ, থপ

একটু পর পরই কানে শব্দটার এই আলোড়ন শুনে মনে হচ্ছে কেউ যেন বারবার কাদা মাড়িয়ে খুব কাছে চলে আসছে…

যদিও রেলিং নেই তবু  দু’তলার উপরে বারান্দায় মই ছাড়া উঠবে কিভাবে? বিছানা থেকে  উঠতে যাব তখনই  মনে হলো-ঠিক সেভাবে কি কখনও খেয়াল করেছি? নিচ থেকে উঠে আসার কোন উপায় তো থাকতেও পারে। কত ব্যাপারই তো চোখ এড়িয়ে যায়, আর আমার তো একটু বেশীই। সে কারনেই তো আমি এত সাধারণ। একটা সময় ছিল এই সাধারণ হওয়াটাকেই ভাল বাসতাম। এক সময় বলছি কেনো- আজও তো তাই। এবং চরম সত্য হলো আমার এই সরল সাধারণ স্বভাবের কারনেই মানুষ আমাকে ভালবাসে, সেটা আমি বুঝি। যে পাত্রে বিপদের সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেখানেই ছড়িয়ে পড়ে মানুষের ভালবাসার কারেন্ট জাল।  নিশির বাবা মানে আমার শশুর মশাইতো বিয়েতে মত দিয়েছিল আমার এই সরলতায় মুগ্ধ হয়েই। গোটাকয়েক কাগুজে সনদ ছাড়া  আর কিই বা ছিল তখন আমার?

শব্দ থেকে কোথায় চলে গেলো ভাবনা। এই একটিই আমার সমস্যা। একা থাকি যখন-একদম একা। চারপাশে সুনশান নিরবতা, হঠাৎ হঠাৎ মন তার স্বাভাবিকতার রূপ পরিবর্তন করে , সরল মনটাও ভাবতে শুরু করে দেয়, সে ভাবনা বিস্তৃত হয় উত্তর থেকে দক্ষিনাবধি। যদিও সে সব ভাবনা কখনও ছুতে পারেনা সরলতা বর্জনের ইচ্ছেকে।

বারান্দায় গিয়ে দেখে আসতে ইচ্ছে করছে । সেই সাথে না হয় একটু পরখ  করে নেবো বহিঃঅনুপ্রবেশ হতে বারান্দাটার সত্যিকার নিরাপত্তা। যদি খুঁজে পেয়ে যাই উপরে উঠে আসার কোন সহজ উপায়, চেপে যেতে হবে, নিশিকে তো একদমই বলা যাবেনা। ভীষন ভয় ওর। বাসায় থাকলে এই থপ থপ শব্দেই এতক্ষন তোলপাড় শুরু করে দিত। প্রথমেই ডাক পড়ত দাড়োয়ানের এবং তাকে তৎক্ষণাৎ শব্দের উৎসের খোঁজ নিয়ে আসতে হতো । কে হাঁটে , কেনো হাঁটে –সব। কৌতূহল অসীম তার। আমাকে কাছে পেলে জিদ ধরবে দেখে আসার জন্য। অথচ আমার আবার কৌতূহল নিদারুনই কম। দুর শব্দ হচ্ছে হোক। ছন্দময় হোক বা ছন্দহীন -আমার তাতে কি? সেই আমি এই মুহূর্তে নিজেকে বদলাতে চাইছি। একাকীত্ব দূর করার ভালো উপায় স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধাচারণ। অন্তত এই মুহূর্তে এই থিউরী গ্রহন করতে ইচ্ছে করছে।

থপ, থপ — শব্দটি এখনও শোনা যাচ্ছে সেই একই ছন্দে। নিশ্চিত- কেউ হাঁটাহাঁটিই করছে। কিন্তু এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে, রাত ১২টায় কেউ হাঁটতে বেরোবে কেনো? হাঁটুক না, আমার তাতে কি? সুর তুলে, ছন্দ বানিয়ে. গলা ছেড়ে গান গেয়ে, থপ থপ গবগব যেমনে ইচ্ছে শব্দ করে হাঁটুক…আমার কি ? অন্য সময় না হলেও এখন অনেক কিছু। নিশিকে ছাড়া একা রাত কাটবেনা। এই একটাইতো নেশা আমার জীবনে। অফিস, মিটিং  সেরে প্রায় প্রতিদিনই একটু দেরীই হয় আমার বাড়ী ফিরতে । তারপর নিশি নিশি আর নিশি , সেই তো সব আমার নিশিথের । তার সান্নিধ্য বিনে আমি যেন নেশাদ্রব্যবিহীন এক পাড় নেশাখোর। উপায় নেই। থপ থপ শব্দ এখন সেই নেশাটাকে ছাইয়ের তলে চাপা রেখে সময়টা পার করার বেশ ভাল একটা পুঁজি ।

নিশিকেও ফোন করা যায় , তাতে নেশার উদ্রেগ হবে আরও তীব্র তাছাড়া রাগও হচ্ছে, সেই সন্ধ্যার পর একটু ফোন করে কোন খবর জানালাও না।  ফোন অবশ্য করব-যখন ঘুম চোখের অধিকার নিয়ে নিতে চাইবে ঠিক তখন। নেশার সাথে ঘুম মিলে যাবে। নিশি হাসবে , আমি ছোট্ট শিশুর মত ঘুমিয়ে যেতে থাকব।

ঘুমের ঘোরেই ঝগড়া করতে থাকব। আসলে আমিই হেরে যাব শেষে। ভাবলাম বলি, কালকে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরতে পারবো, কাল ই না হয় একসাথেই দুজন যাব। বলা হলো না । ‘নিষেধ’ বলে একটা শব্দ যে আদরের বউকে আদৌ বলা যায়, আমি সেটা জানিই না। তাই বলে ভাবলে ভুল হবে আমি স্ত্রৈন। আমি হলাম সরল সাধারণ, নির্ঞ্ঝাট। বাপের বাড়ী যাবে , কোন কারন তো আছেই, যাবেই তো, যাক না । নেশা ছাড়া একটা দুটো রাত কাটানোর প্রয়োজনও আছে। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতেও আজকাল ইচ্ছে করে। এইতো মাত্র দুদিন আগে, আমরা ঘুমানোর আয়োজন করছি। হঠাৎ সামনের দোতলা বাড়িটার দোতলায় ডান দিকের ঘরটাতে এক জোড়া নরনারীর চ্যাঁচামেচি। ঝড়গড়াঝাটির পর্যায় পেরিয়ে বিষয়টা আরেকটু বেশীই ছিল। তাদের কথা শুনে সেরকমই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য , তাদের সকালে সে দু’জনকেই দেখলাম বারান্দায় বসে গলাগলি ভাব, হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে পারলে নিচে পড়ে যায় আর কি।

দেখে একটু সময়ের জন্য আফসোস হয়েছিল, সত্যি বলছি। আমার নিশির নেশায় যাতনাটার অভাব সাময়িক  বোধ হলো। ইস ঝগড়াতো আজকেই একটা করা যেত। নিষেধ শব্দটা শিখে নিয়ে বললেই হতো-আজ ও বাড়ী যাওয়া চলবেনা। হঠাৎ কি এই পরিবর্তন সম্ভব, তাও আমার দ্বারা। সেই কখন যাওয়ার কথা, পৌঁছে এখনো অবধি একটা কলও দিলোনা। না ঝগড়ার মজাটা আজকেই শুরু করতে হবে।

॥ দুই ॥
কি আশ্চর্য ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে। রাগ হচ্ছে আমার। বিরক্ত হচ্ছি। থপথপ শব্দটা এখন ও বন্ধ হয়নি। বিরক্তির মাঝে সে শব্দ যেন আগুনে ঘি এর কাজ করলো। আর শুয়ে থাকা গেলোনা। উঠে গিয়ে হাজির হলাম বারান্দায়। একরাশ আঁধার সাথে সাথেই গ্রাস করতে ছুটে এল। অন্য যেকোন রাতের চেয়ে পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। অথবা ভিন্ন আমার দৃষ্টি। ঘন্টা খানেক আগেও জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এখন প্রায় থেমেই গেছে। হাতটা বাড়িয়ে দিতেই দু একটা নাবালক ফোঁটার অস্তিত্ব টের পাওয়া গেলো। ভেজা আমেজটা আছে, বেশ ঝিরঝিরে বাতাসে বইছে। সে বাতাসে নিশির শীতল দেহের উষ্ণ অভাব বোধ বেড়ে যেতে চাইছে একটু বেশী। অন্যরকম মনে হচ্ছে সত্যি পরিবেশটাকে। অন্ধকারটাও যেনো একটু বেশি বেশি।

বারান্দার সামনের গলিটা একটা অন্ধ গলিই বলা চলে। আমাদের বাড়ীর এই বারন্দাটা দক্ষিন দিকে আর বাড়ীর মেইন গেট পূর্বে, গেটের সামনেই বড় রাস্তা চলে গেছে , সেটারই একটা শাখা এই গলি। গলিটার সামনের ডানপাশের বাড়ীটার পাশেই একটা প্লট খালি। সেখানের বুনো ঝোপঝাড়ের পাতগুলো ভীষণ কালা কালো দেখাচ্ছে। মনে পড়ছে ওটার বামপাশেই ল্যাম্পপোষ্টটাতে সোডিয়ম বাতি জ্বলে রোজ। আজ জ্বলছেনা। ওটা জ্বললেও অন্ধ গলির শেষমাথায় এই বাড়িক’টা একটু নির্জনতায়ই ডুবে থাকে। নিশির বিহনে আঁধার নিশি যেনো আমাকে টানছে কাছে। দু’একটা জানালায় হালকা নীল বা লাল আলো জ্বলছে। তাতেই পথটা একটু আধুটু চিকচিক করে উঠছে; ভেজা পথতো। কিন্তু না কোথাও কেউ হাঁটছেনা। কোন জনমানবের কোন চিহ্নই নেই। শব্দ আবার কানে আসতেই চোখ চলে গেলো সামনের খালি প্লটের দিকে। আমাদের পাশের বাড়ীটা  তিন তলা করার সময় ওখানে একটা একচালা টিনের ঘর করা হয়েছিল, মালসামান রাখার জন্য। মিস্ত্রীরাও থাকত। তারই কিছু ভাঙা বেড়া , চাল বাঁশ এখনও বিমুর্ত হয়ে পড়ে আছে। ভাঙা চালের কোন এক কোনে পানি জমেছে , সেখানথেকেই চুয়ে চুয়ে পানির ফোঁটা পড়ছে নিচে। নিচে  তো থাকার কথা মাটি খোয়া বা ঘাস লতা। টুপটুপ শব্দ থপথপ হয়ে গেলো কেনো?  ধূর! এই শব্দ নিয়ে এত ভাবার কি আছে, শব্দ তো কত রকমই হতে পারে। নিচে প্লাস্টিক বা কাঠ টাঠ কিছু পড়ে আছে মনে হয়, সেখানে পানির ফোঁটাগুলো পড়ছে নির্দিষ্ট সময়ের বিরতি দিয়ে আর এই সুনশান পরিবেশে সেই শব্দ আমার কানে ওমন ভয়াবহ হয়ে ধরা পড়েছে। তাই হবে। চিন্তুা মুক্ত হয়ে এবার ঘুমানো উচিৎ। কিন্তু নিশি এখনও মোবাইল বন্ধ করে রেখেছো কেনো? মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে একটা ঝগড়ার ভাব আসছে আমার।

সামনের বাড়িটার দোতলায় চোখ গেলো ঘোরার মুহুর্তে । ক’দিন আগে ঠিক এইরকম সময়েই তো ঝগড়া বাধিয়েছিল। সেদিন কৌতূহল হয়নি। আজ হচ্ছে । আজ কেনো আবার ঝগড়া করছেনা। কান পেতে মনোযোগ দিয়ে শুনতাম, শিখতাম একটু। এত ঘুম কেনো আজ ও বাসায়? সব ঘরের আলোই বন্ধ। এত ঝগড়ার পর আবার সকালে কি করে ওমন ঢেউ খেলোনো মধুর প্রেমের বাতাস বয় দুজনার মনে? খটকা! পরীক্ষা একটা করেই দেখতে হবে। আমার দ্বারা কি একসাথে ওমন দুটো ভিন্ন ডাইমেনশনে রূপদান করা আদৌ
সম্ভব? মনে হয়না।

ঘুরে দরজায় পা বাড়াতে গিয়েই চোখ আটকে গেলো । বারান্দার কোল ঘেঁষে নিচে সোজা নেমে গেছে দু দুটো পাইপ। বেশ মোটাই এবং লোহার।
বিল্ডিয়ের ডিজাইন হিসাবে খাঁজগুলো পাইপের সাথে সাথে এমনভাবে মিলেছে যে সহজেই পাইপ বেয়ে কেউ উঠে আসতে পারবে। একবার চেষ্টা করে দেখবো নাকি? সাহস কিন্তু পাচ্ছি। ঐ খাঁজটা ভেঙে দিলেই তো হতো…কিন্তু কোনদিন চোখে পড়েনি কেনো? নিশির চোখ তো এড়ানোর কথা না। নিশির চোখ যখন এড়িয়ে গেছে, চোরের চোখতো এড়াবেই।

হু হু করে জোড়ালো এক পশলা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো মুখের বাম পাশে। একটু অবাক হলাম। মনে পড়ল, নিশি বলেছিল, কোন এক রাতে-এমন এক পশলা বাতাসের হঠাৎ ঝাপটা নাকি বিপদের সংকেত। কতনা কুসংস্কার বিশ্বাস করে মেয়েটা! আমি কখনও বিশ্বাস করিনা। দূর বলে উড়িয়ে দেই। বাতাসের কাজ আসা যাওয়া , তাই তার যেভাবে ইচ্ছে আসবে , তাতে ঘটনার সম্পর্ক যুক্ত করা কেনো বাবা? কিন্তু নিশি মানেনি। পরদিন সকালে যখন বিল্ডিংয়ে কাজ করতে গিয়ে একটা লোক পড়ে গেলো, নিশি চেয়ে চেয়ে দেখলো। বলল, ওটাই সেই বিপদ, রাতের বাতাসের। কি ভীষন ভয় পেয়েছিল সেদিন নিশি। কম করে হলেও ১০ দিন ও জানালার পাশে যায়নি। আমি কিন্তু মানিনি। তিনতলা থেকে মিস্ত্রী পড়ে যাবার উপযুক্ত কারন ছিল। পুরাতন রশি দিয়ে বাঁশ বেঁধেছিল। নিজের দোষে নিজে পড়েছে। বাতাস মিয়া এখানে কি দোষটা করল কে জানে? নিশিকে কে বোঝাবে?  জানি বোঝাতে পারবনা, তাই ওর বিশ্বাসে বেশী জোড়ে হাতুড়ি চালাইনি। কটা ভাঙব। ওমন শত শত কুসংস্কার ওর মনে। আর ভেঙেও লাভ কি? ঐ যে কথায় বলে না…বিশ্বাসে মিলায় বস্তু..। বিশ্বাস নিয়েই তো সুখী আমার নিশি। তাই ও যখন গলিতে কোন হৈচৈ শুনে বারান্দায় গিয়ে কান পাতে সন্ধার পরে আমি আর মনে করিয়ে দেইনা হঠাৎ ভুলে যাওয়া তার কুসংস্কার- “সন্ধ্যায় মেয়েদের খোলা চুলে আকাশের তলে দাঁড়াতে নেই।” সাময়িক কুসংস্কার ভুলে হৈচৈ এর কারন অনুসন্ধানে যে আনন্দ পাচ্ছে, পাক না।

একটা বাচ্চা কেঁদে উঠল যেনো আশেপাশে, থপথপ শব্দর সাথে মিশে সে কান্না পরিবেশটাকে কেমন জানি ভূতুড়ে করে তুলল। আমার মনেও কুসংস্কার চলে আসতে চাইলো সে শব্দে। আবার কান্নার শব্দ। আরে দূর! বাচ্চা হবে কেনো? ওটা তো বিড়ালের কান্না। নিশিও একবার বেশ ভয় পেয়েছিল ও কান্না শুনে। আমি যতই বলি বিড়াল, ও মানবে না। সেই রাত দুটোর দিকে দারোয়ানকে ডেকে তুলে খুঁজতে যেতে হলো কোথায় বাচ্চা কাঁদছে। কেউ আশে পাশে বাচ্চা টাচ্চা ফেলো দিয়েছে হয়তো, ও ভাবলো তাই। আমি একাই যেতে চাইলাম। না কিছুতেই একা দেবে না যেতে। দারোয়ানকে নিয়েই যেতে হবে। এই এক জ্বালা। নিজে কুসংস্কার বিশ্বাস কর ভাল, আমাকেও করতে হবে কেনো? অবশ্য এর একটা ভালো দিক আছে- অনাহুত বিপদ এড়ানো যায়।

॥ তিন ॥
কানে থপথপ শব্দের অস্তিত্ব এখনও স্পষ্ট। মন অস্থির হয়ে উঠলো হঠাৎ। নিশি নেই। কুসংস্কার মনে করিয়ে দেয়ার মত কেউ নেই। এই সুযোগ, সময়টাও ভালো কাটবে। যায়ই না একটু, ওমন নিশীথ কাঁপানো ভুতুড়ে শব্দের উৎস খুঁজে দেখেই আসি। একবার ভাবলাম দাড়োয়ানটাকে ডেকে নেই। না থাক। তারচেয়ে বরং বারান্দার সদ্য আবি®কৃত গুপ্ত পথটাই একটু পরখ করে দেখি। খুব সহজ না হলেও খাঁজ গুলো বন্ধুর মত সাহায্য করল নিচে নেম যেতে। যতই কুসংস্কার মুক্ত হই না কেনো। ভয় আমার ঠিকই করছে এখন। পরিবেশটাই তো ভূতুড়ে। কার না ভয়ে গা ছম ছম করবে ? একদিকে থপথপ আর অন্যদিকে নিশ্চুপ নিশীথের অন্ধকারের ছায়া। গাছের পাতাগুলো দুলছে হালকা বাতাসে। পাতার থেকে পানি ছিটকে আসছে মুখে। ভেজা ভেজা এক আলতো পরশ আনন্দ ত্বকে । মনে আমার অসাধারণ কিছু একটা করার গুপ্ত অভিলাষ। এমন কোন কাজ নয়, তবুও অতি সাধারণ এই আমার কাছে স্বাভাবিকতার প্রচন্ড বিপরীত। থ্রীলভাব তাই ভয়ের চেয়ে বেশী কাজ করতে লাগলো। রহস্য উন্মোচনের এক নেশা তখন প্রাণে। গুটি গুটি পায়ে রাস্তা পেরিয়ে ওপারের দুবিল্ডিংয়ের মাঝে খোলা প্লটটা দিকে এগোলাম। পায়ে কিছুর খোঁচা লাগলো, জ্বলে উঠলো। কাটল বোধহয়। হাত দিয়ে দেখলাম কাঁটা গাছের গুল্ম। টর্চ না নিয়ে বড় ভুল হয়ে গেছে। যাক মোবাইলটা আছে পকেটে। তারই টিমটিমে আলোয় এগোতে লাগলাম শব্দের উৎস ধরে।

ভাঙা একটা চালের এক কোনায় পানি জমেছে। চুইয়ে চুইয়ে সেখান থেকে নিচে পড়ছে একটা বাঁেশর বাঁকা অংশে। বাঁশটা ভেঙে বেঁকে আছে। ভাঙা অংশের ভেতরের অংশটা কোটোরের মত । সেখানে পানি জমছে আর একটা লেভেল পর্যন্ত উঠলেই নলের মত একটা গিঁটের গোড়া বেয়ে টুপ করে নিচে পড়ছে। মোবাইলের আলোটা নিচে ধরতেই চোখে পড়ল সাদাটে কিছু একটা। হাতে উঠিয়ে নিলাম। মোবাইলে সিমকার্ড। পাশেই আরেকটা। দুটোই হাতে উঠিয়ে তালুতে রাখলাম। মাটির উপরে একটা ইটের গায়ে লেগে কাত হয়ে পড়েছিল দুটোই। প্রতিবার যখন নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই সিম কার্ডদুটোতে পানির ফোঁটা পড়তেই সীমদুটো লাফিয়ে উঠতে চাইছিল আর বাড়ি খাচ্ছিল ইটের গায়। সবমিলে শব্দটা ওমন থপ থপ ধরনের এক অদ্ভুত হয়ে পৌছে যাচ্ছিল আমার কানে। এখন আর সেই বিচিত্র থপ থপ হচ্ছে না। থেমে গেছে, সিম দুটো আমার হাতের তালূতে । শব্দ যা হচ্ছে তা খুবই স্বাভাবিক পানির পতনের শব্দ মাটিতে।

পুলকিত এক শিহরণ মনে জাগলো আমার। মহা এক রহস্য যেন আমি উন্মোচন করে ফেলেছি। বীর দর্পে আমার নিজের বারন্দার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। সীমকার্ডদুটো দুটো যে হাতেই রয়ে গেছে খেয়াল হলো হঠাৎ। কেনো আনলাম? কেই বা ফেলে গেলো …নষ্ট নাকি? কিন্তু দুটো একসাথে। ভাবনা পূর্ণ হবার আগেই যেনো মনে মনে উত্তর ও চলে এলো। নিশ্চয় কেউ ছিনতাই করেছে কাউকে। তা মোবাইল সেটদুটো (কিংবা এক সেটে দুই সীম ও হতে পারে) নিয়ে যাবার সময় সীমদুটো খুলে ফেলে গেছে। ধরা পড়ার ঝামেলা রেখে লাভ কি? তাই হবে , ঠিকই।

আচ্ছা সীমদুটো টেস্ট করে মূল গ্রাহককে ফিরিয়ে দিলে কেমন হয়। বেচারার এমনেতেই সেট গেছে , সীম দুটো পেলে অন্তত নতুন করে তোলার ধকল থেকে মুক্তি পেত। কিন্তু খুশি না হয়ে যদি আমাকেই ছিনতাই কারী ভাবে, কিংবা যদি চোর…

ভাবতে ভাবতে বারন্দার তলে এসে দাড়িয়েছি। একটু ঘুরে ডানে উঁিক দিলাম, দাড়োয়ানের কোন চিহ্ন দেখা গেলো না নিচের বড় দরজায়। নব আবি®কৃত চোরাই পথ বেয়ে অনেক চেষ্টা করেও বারান্দায় এবার উঠা গেলো না। নামা যত সহজ হয়েছিল ওঠাটা আমার জন্য অত সহজ হচ্ছে না। অভ্যেসের ব্যাপার আসলে।

বাধ্য হয়ে দরজার সামনে গিয়ে হাজির হলাম। বড় দুটো তালা ঝুলছে। এ বাড়িতে ১২ টার পড়ে কেউ বাইরে যেতে পারে না আসতেও পারে না। এ বাড়ীর বহুদিনের নিয়ম ওটাই। সেই সুযোগটা কাজে লাগে দাড়োয়ানের । ঘুমাতে কেউ বাধ সাধতে আসে না। আজ আমি এলাম। অবশ্য এ বাড়ীতে লোকই বা আর কয়জন। কে আসবে এত রাতে। দু’তলায় কেবল আমি আর নিশি। নিচতলায় আমার ফুফাতো বোন শিখা আর জামাই আর তাদের ছোট দুটো বাচ্চা। একটার বয়স চার অন্যটার দুই। ওরা অবশ্য ভাড়া দিয়েই থাকে। নিশির নামে বাড়ী তো, আমার আত্মীয় হলেও নিশির কাছে তো ভাড়াটেই। শিখারাও নেই আজ। কক্সবাজার বেড়াতে গেছে। সচারচর লোকজন দেখেছি বর্ষাকালে কক্সবাজার যায়না। অথচ আমার মনে হয় বৃষ্টির সাথে সাগরের মিতালী না দেখলে সাগরের আসল উচ্ছলতা অদেখাই রয়ে যায়।

দাড়োয়ানকে বেশ কয়েকবার ডাকার পর লিকলিকে দাড়োয়ান রূপী লোকটা হাজির হলো। তাকে দেখলে মোটেও দাড়োয়ান মনে হয় না। আমার আপত্তি করার অবশ্য কারন ছিলনা, কারন নিশির বাবাই তাকে পাঠিয়েছিলেন, ওনার খুব বিশ্বস্ত। চোখ ডলতে ডলেেত এসে বলল, “স্যার, এত রাতে ? কই গেছিলেন, বাইর হইলেন কেমতে, ম্যাডাম ওনার ডুপ্লি চাবি দিয়ে খুলে দিয়েছিলেন নাকি?”

…ম্যাডাম মানে, ও সন্ধ্যার সময় চলে গেছে না।
‘তাই নাকি স্যার? আমি তো যাইতে দেখি নাই। দুপুরে বলছিল একবার বাইরে যাইব, কিছু ফলমুল কিনে নিয়া আসতে কইছিল, আইনা ও দিছিলাম। তারপর তো আর ডাকেন নাই ।’

ভীষন অবাক হলাম। অজানা শংকায় কেঁপে উঠল বুকের বাম পাশ।
‘তুমি ঠিক বলছ তো?’ তাপর একটু সুস্থির হবার চেষ্টায় বললাম,‘ তুমি কি বিকালে বাইরে টাইরে গিছিলা হয়তো খেয়াল কর, তখন বের হয়ে গেছে হয়তো, যাও , তুমি ঘুমাও , আমি বারন্দা দিয়া নিচে নেমেছিলাম, এই যে এই কার্ডদুটো পড়ে গিয়েছিল। বারান্দা দিয়ে যে নামা যায়  তুমি নিশ্চয় জানো  না, খেয়াল রোখা , খুব সহজেই ওঠা নমা যায়। খাঁজ গুলো ভেঙে দেবো আগামী শুক্রবার। ম্যাডামরে কিছু বল না।  ’

‘জি স্যার।’

উপরে সিড়ি ভাঙতে ভাঙতেই আবার ফোন দিতে লাগলাম নিশির নম্বরে। রিং হচ্ছে না। বন্ধ বলছে। আশ্চর্য তো! বিপদ আপদ হলো নাতো কোন? শশুর মশাইয়ের বাসার ল্যান্ড ফোনে কল দেবো নাকি ভাবলাম একবার। আচ্ছা যদি নাই যেয়ে থাকে , ওনাদের এত রাতে টেনশনে ফেলে কি লাভ। কিন্তু নিজের উদ্বিগ্নতা দূর করি কেমনে।

হু হু এক পশলা  বাতাস ঢুকলো খোলা জানালা দিয়ে। নিশির বিশ্বাসে ওটা বিপদ সংকেত ! মনে ভাবনার কত শত কালো রূপ। হাতে ধরা সীম কার্ড দুটোর দিকে তাকিয়ে অন্য এক শংকা জাগতেই টেবিলের ড্রয়ার হতে অব্যবহৃত পুরানো মোবাইল সেটটা হাতে নিলাম। চার্জে দিয়ে একটা সীমকার্ড ঢুকালাম। কল দিলাম আমার নম্বর টিপে। হতবাক! বিমূর্ত মুহুর্তে আমি। এত অবাক আমি বোধহয় আর কখনই হয়নি। নিশির জন্য যে বিশেষ রিং টোন সেট করা সেইটা বাজছে। কি ভীষন রকমের অবাক কান্ড। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নিশির জন্য ব্যবহৃত বিশেষ নামটা উঠেছে । অব্যবহৃত সেটটা লাল বোতাম চাপতেই আমার নিজের নিজ রাজ্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। এটাতো নিশির মোবাইলের সীমকার্ড। কণ্ঠ দিয়ে বের হয়ে হলো -‘ কি আশ্চর্য!’

সাথে সাথে মাথায় ঘুরপাক খেলো অনেকগুলো কিন্তু … ওখানে গেলো কি করে সীমটা? নিশির কি তাহলে কোন…নাহ্, কিন্তু অন্যটা সীমটা আবার কার। আমার অজ্ঞাত কোন গোপন সীম নিশির? কিন্তু…

কি করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছিনা। ভাবতে ভাবতেই অন্য সীমটাও সেটে ঢুকালাম। লাগাবার দেরী নেই, কল চলে এল ঐ নম্বরে। রিসিভ করলাম। তীব্র মেজাজে কথা বলতে লাগল ওপাশে একজন পুরষ মানুষ। অনেকগুলো কথা কানে এলো দ্রুত, অনঢ় শুনে গেলাম কিছুক্ষণ। আমার মুখে দিয়ে হ্যালো ছাড়া আর কোন শব্দ উচ্চারিত হলো না। ওপাশের বক্তব্য হতে মোটামুটি বুঝলাম মোবাইল সীমটি সুবর্ণা নামে কোন এক মহিলার। যিনি ফোন করেছেন তিনি ঐ সুবর্ণার স্বামী মহাশয়, ওনার নাম আসফাক। অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করে পাচ্ছেন না বলেই তার এই তীব্র মেজাজ। তিনি ভেবেছেন আমি তার বউয়ের পরকীয়া প্রেমিক-রাসেল। যে প্রেমিকের খবর তিনি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন। প্রেমে মক্ত হয়ে সুবর্ণা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। সুবর্ণাকে দিলাম না দেখে খুব গাল মন্দ শুরু করলেন যখন তখন আমি যেই বলতে গেলাম আপনি ভুল করছেন- শুনুন, তার মুখ দিয়ে চ-বর্গীয় শব্দ বের হতে শুরু করল। আমি অফ করে দিলাম , কেনো জানি মনের ভেতর তখন রাগ আর অস্থিরতা মিশে যাচ্ছিল।

দ্রুত কিছু হিসাব মেলাতে চাইল মন আমার। স্পষ্ট মনে করতে পারলাম, সামনের ডানের দোতলায় ভদ্রলোক সেই রাতে তার বউকে ধমাকনোর সময় সুবর্ণা নামটি উচ্চারণ করছিলেন। উহ্ ! আল্লাহ যা ভাবছি তা যেন নাহয়!
প্রচন্ড উৎকণ্ঠায় বারান্দা দিয়ে নেমে যেতে এবার আর কষ্ট ই হলো না। প্রয়োজনে বাধা তুচ্ছ হয়ে যায়, এটা তারই প্রমাণ। নিচে নেমেই দ্রুত ওপারে সেই শব্দের উৎসে চলে গেলাম এক দৌড়ে। টর্চ আনতে এবার আর ভুল হয়নি। মাথা ভালই কাজ করছে টেনশনেও সেটা বুঝতে পেরে কিঞ্চিৎ পুলকিত হলাম। তারপরই টর্চের আলো ভালো  করে মারতেই দেখলাম কিছূ জায়গার মাটি ওলট পালট হয়ে আছে। তখন কেনো খেয়াল করলাম না? সেখানের গুল্ম লতা ভেঙে পড়ে আছে। দ্রুত হাত দিয়ে কিছু খসানে মাটি আলগা করতেই অনড় অসার হয়ে গেলাম। নিশ্চিত সামনে কেউ থাকলে দেখতো চেহারা আমার পুরো ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। মাত্র চার আঙ্গুল মাটির নিচেই পাশাপাশি দুটো নারীর মুখ। মুখ পুরোপুরি মাটিতে ঢেকেও ছিলনা। আলো আঁধারিতে কেবল বোঝা যাবার মত অবস্থায় ছিলনা কাদামাটি মাথা মুখাবয়ব দুটো।

হাত পা অবশ হয়ে আসতে চাইছে, কি করি বুঝতে পারছি না। গলা দিয়ে স্বরও বেরোচ্ছেনা। দাড়োয়ানকে ডাকতে হবে , ডাকতে পারছিনা। অগত্যা  রাস্তা পার হয়ে আমার বাড়ীর দরজায় ধাক্কাই দিলাম গোটাকয়েক। দাড়োয়ান উঠে এলো। না ব্যাটার ঘুম পাতলা আছে। হাতের ইশারায় দরজা খুলে আসতে বললাম। পুরো শরীর কাঁপছে আমার। দাড়োয়ান পিছে পিছে আসতে থাকলো , মুখ থেকে শুধু একটা শব্দ বেরোলো …ওখানে নিশি..। তারপরও দাড়োয়ানও ছুটল আমার সাথে। আলগা মাটি সরাতে বেগ পেতে হলোনা। দুজন মিলে নারী দেহদুটো উঠিয়ে পাকা রাস্তায় শুয়ে দিলাম। নিশির নিথর মুখটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো আমি মুর্ছা যাচ্ছি। দাড়োয়ান আমার হাত ধরে আছে, কাঁদছে। অজান্তেই নিশির বুকে কান পাতলাম। আছে তো, ওঠানাম আছে, বেঁচে আছে এখনও আমার পরান পাখী।
‘দাড়োয়ান, গ্যারেজ খোলো, ’

‘স্যার কিন্তু ড্রাইভার তো চলে গেছে।’
‘লাগবে না আমিই চালাবো’, বলেই দাড়োয়ানের গায়ের চাদরটা টান দিয়ে খুলে নিয়ে মুছে দিলাম দু’ নারীর মুখের কাদামাটি। অন্য নারীটি যে সুবর্ণা আর সন্দেহ নেই। দারোয়ানও চিনতে পারল। তার জীবন স্পন্দন আছে কিনা দেখার প্রয়োজন বোধ হলোনা। দুজনকেই দ্রুত গাড়ীতে তুলে ছুটলাম হাসপাতালে।

॥ পরিশিষ্ট ॥

…নিশির জ্ঞান ফিরল পরদিন সকালে। বাম হাতের কব্জিতে একটা ফ্রাকচার হয়েছিল।

সুবর্ণাকে রাতেই মৃত ঘোষনা করেছিল ডাক্তার। হাসাপাতাল থেকেই ওর স্বামীকে ফোন করে মোটামুটি সব খুলে বলতে বললাম দাড়োয়ানকে। দাড়োয়ান ওনাকে চিনতো, তাতে কাজটা আরেকটু সহজ হলো। আমিও কথা বললাম।  ফোনের সেই গালিবাজ ভদ্রলোকটিকে আসলেই অতি নিরহ ভদ্রলোক বলেই মনে হলো। তখন যে আমি কল করেছিলাম সেটা আর বললাম না। ওনার কাছে সেটা রাসেল ছিল , তাইই থাক।

আসফাক সাহেব শুনেই রওনা দিয়ে দিলেন। ঐ সেই রাতে স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার পরদিন প্রত্যুষে তিনি ব্যবসার কাজে চট্রগ্রাম গিয়েছিলেন। বুঝলাম সেদিন সকালে তাহলে যাকে দেখেছিলাম সেই তাহলে হারামীর বাচ্চা রাসেল।

জ্ঞান ফিরে পেয়েই পুলিশের কাছে জবান বন্দী দেয়ার আগেই নিশির হাতদুটো ধরে পাশে বসে শুনলাম সেই রাতের অজানা ঘটনার আদ্যপান্ত।
…চ্যাঁচাম্যাচি শুনে সে বারন্দায় ছুটে গিয়েছিল। তখনও বৃষ্টি নামে নি। মেঘ করেছিল। কালো মেঘের সাথে কালো সন্ধ্যাও নেমেছিল সবে। বাবার বাড়ী যাবার জন্য রেডি হচ্ছিল নিশি। নিচে নেম ড্রাইভারকে বলতে যাবে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে আনতে ঠিক তখনই  কৌতূহল মেটাতেই তার বারান্দায় যাওয়া আর  সেই কৌতূহলই হলো কাল।

রাসেল যখন গলা চেপে ধরল সুবর্ণার- নিশি দেখে ফেলল । ঢলে পড়ছিল সুবর্ণার দেহটা। ও পাশে নিশির অবাক চেহারটা এড়ালোনা রাসেলের । সুবর্ণার দেহটা মুহূর্তে ছূড়ে ফেলে ছুটে এলো এই বারান্দার উপর। রাসেলের বারান্দার খাঁজ বেয়ে উপরে ওঠার সময়ই নিশি হতভম্ব হয়ে পড়ে। কণ্ঠ কাঁপছিল, দাড়োয়ানের নাম ধরে ডাকবে অথচ মুখ দিয়ে স্বর বেরোচ্ছিলনা ভয়ে। হারামীটা গায়ে হাত দিতেই জ্ঞান হারায়। চিৎকার করার অবকাশই পায়নি সে। তারপর তো বোঝাই যায়। দুই নারীর দেহদুটো মাটি চাপা দিয়ে পালিয়েছে হারামী টা। দাড়োয়ান তখন নিচে ঘরে বসে ঝিমাচ্ছিল। কিছূই টের পাওয়ার কথাও না। কারন দরজা থেকে বারান্দা তো দেখাই যায়না।
নিশিকে জিজ্ঞেস করেও জানা গেলো না হাতটা ভাঙল কেমন করে? সম্ভবত বারান্দা থেকে নিচে নামার সময়ই হাতে আঘাত লেগে থাকতে পারে।
দাড়োয়ান সব শুনে খুব লজ্জিত হলো। কেঁদেও উঠলো। নিশির বাবা আর বড় এসে দাড়োয়ানকে খুব বকেছেন।

পুলিশকে আমিই ফোন করেছিলাম নিশির জ্ঞান ফেরার পর। বিশ্বাস করাতে দেরী হয়নি। আসফাক সাহেবও চলে এসেছেছিলেন। খুব ভেঙে পড়লেও তার চেহারায় অন্য রকম একটা প্রশান্তি আমি ঠিকই দেখেছিলাম। নিশির বাবার পরিচয় পেয়ে পুলিশের বিশ্বাস খুব সহজেই এসেছিল। এটা পৃথিবীর নিয়ম , ক্ষমতার একটা দাপটতো থাকেই। ঐ দিনই সুবর্ণার মোবাইল সীম থেকে রাসেলের ফোন নম্বর খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।  পুলিশ অফিসার কথা দিলেন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ব্যাটাকে ধরা যাবে। শুনে অবশ্য আস্বস্ত হবার মত কিছু পেলাম না। নিশির জীবন সান্নিধ্য আর নিজেক অসাধারণ ভাবার সুখেই আমি বিভোর তখন।

নিশির ডান হাতটা  মুঠোয় নিয়ে হাসপাতালে বসেই মনস্থির করলাম বারান্দার ওপাশে ঐ উপরে ওঠার গোপন পথের খাঁজগুলো আজকেই ভেঙে ফেলব, আজকেই।


শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


19 Responses to গল্প: বারান্দার ওপাশে

You must be logged in to post a comment Login