জুলিয়ান সিদ্দিকী

বিগলিত বিভ্রমের ছায়া

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page


দিন ধরে আকাশটা যেন দিনরাত কাঁদছে। মাঝেমধ্যে কান্না থামালেও যেন তার বিষণ্ণতা কাটছে না অথবা প্রচণ্ড অবসাদে জড়িয়ে আসছে তার দুচোখ। কখনো বা সূর্য উঁকি দিলেও মনে হয় ঘুমের তাড়নায় তার চোখ ঢুলুঢুলু। আর ঘুম-কাতুরে সূর্যের কারণেই হয়তো তেমন আলোকিত হচ্ছিলো না দুপুরের পৃথিবীটাও। তবুও জীবন থেমে থাকে না বলে, আর সব প্রয়োজনও জীবনের প্রয়োজনেই হয়তো জরুরি মনে হয়।

সেই কোন ভোর বেলা ঘুম ভেঙেছে সলিমুদ্দিনের। আর তখন থেকেই সে প্রতীক্ষায় আছে কখন আকাশটা পরিষ্কার হবে। আশ্বিন আর কার্তিকে এমন হতো। টানা আট-দশদিন বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামার কোনো লক্ষণই ফুটে উঠতো না। উঠোনে ধানের স্তূপ থেকে ধোঁয়া বেরুতে আরম্ভ করতো। তখনই সবার ভেতর কেমন এক ধরনের শঙ্কা অথবা চাঞ্চল্য ফুটে উঠতে দেখা যেতো। যে কোনো আলাপ আলোচনার শুরুটাই হতো যে, এইবার বুঝি ধানের চাইল পইচ্যাই যাইবো!

অইত্যানীঅথবা কাইত্যানীযেটা যে মাসে ঘটে, অর্থাৎ কার্তিক মাসের এমন অবিরাম বৃষ্টিধারাকে বলে কাইত্যানী। আর আশ্বিন মাসেই এর নাম বদলে হয়ে যায় আইত্যানী। তখন হাটবাজার কাজকর্ম সবই বন্ধ। সময় কাটানোর জন্য পড়ে পড়ে ঘুমানোও একঘেয়ে মনে হয়। একঘেয়ে মনে হয় একই কাঁথার নিচে জড়াজড়ি পড়ে থাকা স্ত্রীর সঙ্গও। মন কেবল আঁকুপাঁকু করে বাইরে যেতে। শুকনো মাটিতে হেঁটে বেড়াতে। অতি বর্ষণে ভেজা মাটিতে বা কাদা পথে চলতে ফিরতে গিয়ে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে বেশ চুলকায়। কখনো বা ফুস্কুড়িও বেরোয়। চুলকাতে চুলকাতে ঘা হয়ে গেছে কত। কিন্তু আজকাল রাম যেমন নেই, নেই সেই অযোধ্যাও। কিন্তু অনেক কিছুই বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় বদলেছে সময়। হয়তো বদলে গেছে মানুষের অদৃষ্টও। আর সেই অদৃষ্টের পাকেই বুঝি সলিমুদ্দিন আজ নীত পরিত্যক্ত এ রেলের বগিটিতে।

এখানে অনেকদিন ধরেই আছে সলিমুদ্দিন। আশপাশে আর কোনো বস্তি চোখে পড়ে না। রাতের বেলা বেশ নীরব হয়ে যায় চারদিক। মাঝেমধ্যে ক্রমাগত ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ফেলে আসা গাঁয়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তখন তার মনে পড়ে হানেরার কথা। দীর্ঘকাল তার অভাবী সংসারে বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে গিয়ে হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছিলো সে। মাঝেমাঝে বেশ ঝাঁঝের সঙ্গেই আক্ষেপ প্রকাশ করতো, কী একটা সংসার হইলো আমার, আইজ চাইল আছে তো নুন নাই। নুন আছে তো ভাতেরই জোগান নাই। তখন সলিমুদ্দিনের মুখে কোনো কথা যোগাতো না। সে সামর্থ্য তার ছিলো না। আর থাকলেও হয়তো হানেরার মুখে এ কথা শুনতে হতো না তাকে। কিন্তু একটি দড়ির যেমন অনন্তকাল বাঁধন ক্ষমতা থাকে না, তেমনি হয়তো দুটি মানব-মানবীর সম্পর্কও চিরকাল অটুট থাকে না। যে কারণে তার মন চায় পরিবর্তন। খানিকটা রুচি বদল। আর রুচি বদল করতে গিয়েই হয়তো নিজেই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো হানেরা। আর সে কারণেই বুঝি একদিন বলে কয়েই সঙ্গ ছেড়েছিলো সে। যাবার আগে বলেছিলো, মনে জানি কষ্ট নিয়েন না। অনেকদিন তো আপনের লগে থাকলাম। কপালের কোনো মাপজোক বুঝলাম না। ঘুইরা ফিরা দেখি কপালের কোনো গতি করন যায় কি না। তারপরই কোথায় হারিয়ে গেছে সে। প্রথম প্রথম নিজের অবচেতনেই হয়তো অপেক্ষা ছিলো। কখনো বুঝি ঘুমের ঘোরে প্রতারণা করেছে শ্রুতি। কখনো বা দৃষ্টিও। তারপর দীর্ঘদিন অভাব আর রোগভোগের পর বাস্তু ছেড়েছে সে। আসলে বাধ্য হয়েই তাকে ছাড়তে হয়েছে সব। বাস্তুহারা অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে তার ঠাঁই মিলেছে এ পরিত্যক্ত বগিটিতে।

কখনো কখনো খুবই রাগী চেহারার কটি ছোকরা আসে। সঙ্গে কখনো দুটি বা তিনটি মেয়েও থাকে। মাঝরাতে তারা এসে বগির ধাতব গায়ে পাথর দিয়ে আঘাত করে। বিকট শব্দে কখনো তার ঘুম ভাঙে। কখনো বা জেগে থাকলে এলোমেলো হয়ে যায় তার ভাবনার ঊর্ণাজাল। চটের পর্দা সরিয়ে বাইরে মুখ বাড়ালে তাদেরই কেউ বলে ওঠে, বুড়া মিয়া, একটু বাইরে আস তো!

সলিমুদ্দিন জানে তাদের প্রয়োজন। বোঝে তাদের বয়সের আগ্রাসনও। সে চুপচাপ বগি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কেউ তার হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট গুঁজে দিয়ে বলে, একটু ঘুরাঘুরি কইরা আস। কখনো বা হাতে ধরিয়ে দেয় সিগারেট আর দেশলাই সহ শুকনো খাবারের প্যাকেটও।

সলিমুদ্দিন কখনো কোনো প্রশ্ন করে না। কখনো তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে হয় না যে, তোগো কি ঘরবাড়ি নাই? ঘরবাড়ি কি নাই লগের মাইয়াগুলারও?

মনের ভেতরই হয়তো বা জিজ্ঞাসাগুলো বুদবুদ তোলে। কখনো বা একটু উঁকি মেরেই ফের ঝিমিয়ে পড়ে। মানুষের সামর্থ্যের ওপরই হয়তো নির্ভর করে তার সাহস আর ক্ষীপ্রতা। আর সে কারণেই হয়তো নির্জীব শ্রেণীর মানুষকে কেউ কখনো উস্কে না দিলে তেমন একটা প্রতিবাদী হতে দেখা যায় না তাদের। প্রতিবাদ করে না সলিমুদ্দিনও। ছোকরাগুলো যেমন এসেছে কিছুক্ষণ পর আবার ফিরেও যাবে। সে যেমন এ বগিটির স্থায়ী মালিক বা বাসিন্দা নয় ওরাও তেমনি। কাজেই শুধু অধিকারের প্রশ্নে কেন কণ্টকিত করবে নিজের অবস্থান? তার ওপর সাময়িক বলেই হয়তো ব্যাপারটি মেনে নিতে সমস্যা হয় না সলিমুদ্দিনের।

আকাশের অবস্থা খারাপ থাকায় বাইরে বেরোতে পারেনি বলে নিজের সংগ্রহে যে সামান্য কটি শুকনো খাবার ছিলো তাও ফুরোতে আর বাকি নেই। পানিও হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন বগির ভেতর সলিমুদ্দিন ঠিক ঠাহর করতে পারে না পানির অবস্থা। প্লাস্টিকের কালো ক্যানটির ওজনে কেবল অনুভব করতে পারে পানির স্বল্পতাটুকু।

তখনই আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। ধারে-কাছে কোথাও হয়তো বজ্রপাতও ঘটে। আকস্মিক বজ্রপাতে সলিমুদ্দিনের বেশ ভয় হয়। আর ভয় পেলে তার প্রবল বেগে পেশাব চাপে। সে আবছা অন্ধকারে হামা দিয়ে দরজা বরাবর এগিয়ে এসে উঠে দাঁড়ায়। তারপর লুঙ্গি উঁচিয়ে চটের পর্দার ফাঁক গলিয়ে লিঙ্গটাকে তাক করে বাইরের দিক। মূত্রত্যাগের ছরছর শব্দ কানে এলে তার বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক অভিজ্ঞতার ভেতর এ কথাটি জেনেছে যে, পুরুষ হয়ে জন্ম নিলেও অনেক যন্ত্রণার একটি হচ্ছে শরীর। মানুষের এই শরীরের অদ্ভূত রকমের একটি বোধ বিপরীত লিঙ্গকে কামনা না করে থাকতে পারে না। এখন সলিমুদ্দিনের বয়স পঞ্চাশেরও কিছু বেশি। তবুও সে ভাবে যে, অনাহারে অর্ধাহারে শরীর নির্জীব হয়ে গেলেও যৌনাঙ্গের শক্তি বা দৃঢ়তা বজায় থাকে কী করে? নাকি এর শক্তি বা দৃঢ়তা সঞ্চয়ের সঙ্গে খাদ্য আর খাদকের কোনো সম্পর্ক নেই? যেখানে কোনো কোনো দিন দুটো পায়ের ওপর দৃঢ় হয়ে দাঁড়াতেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়, সেখানে হাঁড়বিহীন এ অঙ্গটি দিনরাতের তোয়াক্কা না করেই দৃঢ়তার প্রাবল্যে তাকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলে রাখে। শারীরিক সংকটের জটিল সময়গুলোতেই হানেরার কথা আরো বেশি বেশি মনে পড়ে তার। মনে পড়ে আর সব কষ্ট থাকলেও হানেরা থাকা অবস্থায় শরীরের এমন দূর্বোধ্য কষ্টের শিকার তাকে হতে হয়নি কখনো।

সে অনেক সময় কাম-তাড়িত বা যন্ত্রণা কাতর শরীরে নানা দিকে অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থেকেছে বিনা খরচে কোনো নারী সঙ্গ পাওয়া যায় কি না। কিন্তু সে আশা তার অপূর্ণই থেকে গেছে। যে কটি নারীকে সে চেনে বা যাদের সঙ্গে তার উপরে উপরে হালকা সখ্য রয়েছে কেউই তাকে পাশে জায়গা দিতে চায় না। কেউকেউ একা ঘুমালেও তাদের পাশে তার ঠাঁই হয় না। এমন পুরুষ তাদের প্রয়োজন নেই বা পুরুষের যন্ত্রণায় এমনিতেই অতিষ্ঠ বলেই হয়তো নতুন করে আর কোনো যন্ত্রণার বোঝা বাড়াতে চায়নি তারা।

একবার একটি মেয়ে তার কষ্টের কথা বুঝতে পেরে পাশে এসে কিছুক্ষণ বসেছিলো। হয়তো বা তার সকাতর দৃষ্টির আর্তনাদ ছুঁয়ে গিয়েছিলো তাকে। কিছুক্ষণ ইতস্তত: করে, বরাভয়ের ভঙ্গীতে পিঠে হাত রেখে বলেছিলো, বুড়া মিয়া, আমি একশ ট্যাকার কমে কারো লগে যাই না। তুমি আমারে পঞ্চাশ ট্যাকা দিও। তারপর মেয়েটির সঙ্গে আরো অনেকবারই দেখা হয়েছে সলিমুদ্দিনের। কথাও হয়েছে বেশ কয়েকবার। আলাপে আলাপে জানা হয়ে গেছে তার নাম সফুরা। সলিমুদ্দিন এ পর্যন্ত পঞ্চাশ টাকা সংগ্রহ করতে পারেনি বলে সফুরার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথাও ভাবে না। অক্ষমতা মানুষের সাহস কেড়ে নেয়। ইচ্ছে শক্তিকেও দিনদিন দুর্বল করে দেয়। পঞ্চাশ টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে সে সফুরার দিকে চোখ তুলে তাকাবে না বলে ঠিক করেছে। নিজে যেচে এসে যে মেয়েটি তার কষ্ট লাঘবের প্রস্তাব করেছে, তাকে এভাবে অসম্মান সে করতে পারে না। যে করেই হোক তার পঞ্চাশ টাকা সংগ্রহ করা চাইই।

চালচুলো-বাস্তুহীন মানুষের টাকা সংগ্রহের জন্য দুটো পথই খোলা থাকে। একটি হলো গায়ে-গতরে খেটে কাজ করা। আরেকটি উপায় হচ্ছে ভিক্ষে। অবশ্য ভিক্ষে করতে হলেও কম-বেশি শ্রমের প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তার শিরদাঁড়ার কাছে একটি ব্যথা লেগে আছে। মনে হয় ভেতরের দিকে কোনো শিরা বা পেশী ওলট-পালট হয়ে আছে। কতদিন যে রোদে তপ্ত রেলের বগির গায়ে হেলান দিয়ে পিঠ সেঁকেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেঁকের পর সাময়িক উপশম হলেও ঘুম থেকে জেগে উঠলেই ব্যথাটা পূর্ববৎ জেগে উঠছে। যে কারণে কায়িক শ্রমের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।

মূত্রত্যাগের পর নির্ভার দেহে ফিরে এসে শুয়ে পড়তে নিলেও তার মনে হয়, বাইরে বৃষ্টি পড়তে কি দেখেছে? সে সন্দিহান হয়ে ফের চটের পর্দার বাইরে দৃষ্টি ফেলে। না। আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার মনে হয়। কাজ অথবা খাবার দুটোর যে কোনো একটির সন্ধানে তাকে বেরোতেই হবে। আজ খাবার না জুটলে কাল-পরশু তাকে অনাহারেই হয়তো কাটাতে হতে পারে।

বগি থেকে নেমে সে চারদিকে তাকায়। কোনদিকে যাবে? কাছের কোনো লোকালয়ে নাকি স্টেশনে? স্টেশনে যদি যায়, তাহলে কোনো একটা কাজকর্ম জুটে যেতেও পারে। নিদেনপক্ষে দুএকটা মোট বওয়ার কাজও যদি জুটে যায় তাহলে মন্দ কি? দশ-পাঁচ টাকা করেই একসময় তার কাছে বেশ কিছু টাকা জমে যেতে পারে। খাওয়াটা না হয় চেয়ে চিন্তে সেরে নিতে পারবে। কিন্তু নগদ কারবার যেখানে প্রধান, সেখানে টাকা ছাড়া যাওয়াটাই অপরাধের সামিল।

প্রথম যৌবনে একবার মন্নাফ মিয়ার মেয়ের কাছে রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি সে গিয়েছিলো। তার বয়সের অনেকেই যেতো তখন আর ফিরে এসে নানাবিধ রসালো গল্পে মেতে উঠতো। তাদের মুখেই সংবাদটা জেনে এক রাতে দুরুদুরু বুকে সেও হাজির হয়েছিলো মন্নান মিয়ার চালার পেছনে। ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে ডেকে উঠেছিলো, ফুলি! অ ফুলি!

ক্যাডারে? মন্নাফ মিয়ার বউ রাশেদা বেরিয়ে এসে ফিসফিসে কণ্ঠে জানতে চেয়েছিলো।

আমি সলিমুদ্দিন।

অন্ধকারে তাকে জাপটে ধরে কানের কাছে মুখ রেখে রাশেদা বলেছিলো, একটা লাল বেলাউজ নিয়া আহিস। দিমুনে!

পরদিন সলিমুদ্দিন লাল ব্লাউজ কিনতে বাজারে গিয়ে খুবই ঝামেলায় পড়েছিলো। দোকানী যখন জানতে চেয়েছিলো, ব্লাউজ কার লাইগ্যা? বয়স আর শইল-স্বাস্থ্য কেমুন? তখনই অকস্মাৎ ঘাবড়ে গিয়ে তো তো করতে আরম্ভ করেছিলো সে। তার আর ব্লাউজ কেনা হয়নি সেদিন। হানেরার সঙ্গে দীর্ঘদিন বাস করলেও কখনোই তাকে ব্লাউজ কিনতে হয়নি। তবে, হানেরাকে কখনো ব্লাউজ ছাড়া দেখেছে কিনা বলতে পারবে না সে।

চলার সময় পিঠের ব্যথাটা তার প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই যেন বলে উঠছে, আমি আছি! আমি আছি! একবার ভাবে যে, বগিতে ফিরে গিয়ে শুয়ে থাকাটাই হয়তো নিরাপদ। কিন্তু তখনই খাবারের অবস্থার কথা মনে হলে কেমন একটা জেদ তাকে কিছুটা দৃঢ়তা দেয় যেন। আজ তাকে যেভাবেই হোক কাজ জোটাতেই হবে। নইলে ভিক্ষে ছাড়া পথ নেই। দীর্ঘদিন ধরেই সে স্টেশনের প্লাটফরমে ঘোরাঘুরি করে বলে অনেকেই তাকে মুখ চেনা চেনে। ভিক্ষে চাইলেও ধমক জোটে। কাজ করতে চাইলেও ধমক জোটে। সে যাবে কোথায়? অর্থোপার্জনে অক্ষম বলে কি তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই? নাকি অদৃষ্টকেই মেনে নিয়ে তাকে মৃত্যুর ক্ষণ গুনতে হবে?

বয়সের কারণেই হোক আর নির্জীব শরীরের কারণেই হোক, তার কোনো কাজ জোটে না। স্টেশনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ঘোরাঘুরিই সার। মনেমনে শঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। ভাবে যে, রাতে তাহলে খাবে কি?

তখনই চোখে পড়ে একটি বেঞ্চের তলায় গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে এক নারী। সেদিকে তাকিয়েই তার মন খারাপ হয়ে যায় আরো। সফুরা এখানে করছে কি? এ সময় তাকে কখনো শুয়ে থাকতে দেখেছে বলে মনে পড়ে না। সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সেদিকেই। হঠাৎ চোখাচোখি হতেই সফুরা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

সলিমুদ্দিন এগিয়ে গিয়ে বলে, এহানে পইড়া আছস ক্যান?

শইলডা ভালা না বেশি। কয়দিন ধইরা জ্বর। কোনো ক্ষ্যাপেও যাইতে পারি না। তারপরই তার মুখে একটি ম্লান হাসি ফুটে ওঠে। বলে, বুড়া মিয়া, তোমার কাছে দশ ট্যাকা হইবো না?

দশ ট্যাকা দিয়া কি করবি?

খওন নাই। জ্বরের বড়ি কিনমু কয়ডা।

আছস কই?

এহানেই। কই আর যামু!

বাইরে এমন পাক্কার উপরে পইড়া থাকলে তো তর জ্বর কমবো না! আরো ঠাণ্ডা লাইগ্যা মারা পড়বি। আসমানের অবস্থা দেখছস? যেই কোনো সময় আবার ঝরি শুরু হইতে পারে।

সফুরার মুখে ম্লান হাসিটি আবার ফিরে আসে। বলে, তুমি তো হুনছি রেলের বগিতে একলা থাক। আমারে নিবা?

তোরে নিমু ক্যামনে? আমার কাছে তো ট্যাকা-পয়সা নাই।

দশ ট্যকা নাই এইডা ক্যামনে বুঝি! তুমি না পুরুষ মানুষ? বলার সময় তার দৃষ্টিতে হাজারো বিস্ময় বুঝি আছড়ে পড়ে শতধা হয় পলকেই।

সলিমুদ্দিন হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলো, দশ ট্যাকা দূরের কথা, দশটা পয়সাও নাই। আর সে আক্ষেপ বুঝি আরো চরম হতাশার অতলে চেপে ধরে সফুরাকে। আহারে! তাইলে কি আমি ওষুধপথ্য ছাড়াই মারা পড়মু? যেন বিলাপ করে উঠতে চেয়েও অনিশ্চয়তা যেন তার কণ্ঠ চেপে ধরে।

সফুরার অবদমিত হতাশা পূর্ণ বেদনার অনুরণন সলিমুদ্দিনের বুকের কন্দরে হাহাকার করে ওঠে। সে তখনই বিনা বাক্যে উঠে পড়ে সেখান থেকে। তখনই একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তাকে ডাকেন। দুটো বড়বড় সুটকেস দেখিয়ে বললেন, এ দুটো নিতে পারবে?

কোই যাবেন?

ট্যাক্সি বাইরে আছে। সেখানে নিয়ে গেলেই হবে।

টেরেন তো এহনই আসবে!

আমার আজ যাওয়া হবে না। চলো।

সলিমুদ্দি কুঁজো হয়ে একটি সুটকেস হাতে তুলতেই পিঠের মাঝ বারাবর কেমন কিড়কিড় শব্দের মতই ব্যথার প্রাবল্যে খানিকটা কঁকিয়ে ওঠে। মনেমনে হার মেনে বলে ওঠে, নাহ। আর তখনই সফুরার কাতর কণ্ঠ তার কানে ভাসে।

সলিমুদ্দিন এবার ব্যথা উপেক্ষা করতেই হয়তো দীর্ঘ দম নিয়ে শ্বাস বন্ধ করে দুটো সুটকেসই দুহাতে তুলে নেয়। আর কী আশ্চর্য, সুটকেস দুটোকে কেমন যেন খুবই হালকা আর পলকা বলে মনে হয়। তখনই সে খুবই দ্রুত গতিতে স্টেশনের গেট দিয়ে যেন ছিটকে বেরিয়ে আসে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। ফুটপাতের ওপর সুটকেস দুটো নামিয়ে রেখে খুবই হাঁপাতে থাকলে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয় না। ফুটপাতের ওপরই থেবড়ে বসে পড়ে। তখনই সুটকেসের মালিককে কেমন উদভ্রান্তের মত ছুটে আসতে দেখা যায়। দৃষ্টিতে ফুটে আছে দারুণ বিস্ময় অথবা ভয়। তিনি কাছে এসে বললেন, আরে, তোমাকে তো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

কাঁধের গামছা দিয়ে সলিমুদ্দিন কপালের ঘাম মুছে বলে, আপনেরেই উল্টা খুঁজি আমি।

ভদ্রলোক একটি দশ টাকার নোট বাড়িয়ে ধরতেই সলিমুদ্দি ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়েই স্টেশনের ভেতরের দিকে ছোটে। বেঞ্চের নিচে গুটিসুটি সফুরার কাছে ফিরে এসে, নে! বলেই, টাকাটা ছুঁড়ে ফেলে তার মুখের কাছাকাছি।

হতবিহ্বল সফুরার ঘোর কাটতে হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু সলিমুদ্দিনের সে সময় নেই। সে ছুটতে থাকে স্টেশনে গড়াতে থাকা চিটাগং মেইলের সঙ্গে সঙ্গে। একজন রেলওয়ের কুলি তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, তুই দৌঁড় পারস ক্যান বুইড়া? প্যাসেঞ্জারের কোনো মালে হাত দিবি না!

সলিমুদ্দিন যেন হঠাৎ চুপসে যায়। খানিক পূর্বে আকস্মিক শ্রমের কারণে বা ট্রেনের সাথে সাথে তাল রাখতে ছোটার ফলেই হয়তো তার শ্বাস-প্রশ্বাসও জোরে বইছিলো। আর তাই নিজকে সামাল দিতেই সে দু হাঁটু চেপে ধরে কুঁজো হয়ে দম নিতে থাকে শ্রান্ত কুকুরের মতই।

ল্যাংড়া তারু দূর থেকে দেখে সলিমুদ্দিনকে। সে ভিক্ষে করে মদ খায় বলে সলিমুদ্দিন তাকে সহ্য করতে পারে না। তার ওপর একবার কানা সেজে ভিক্ষে করার পরামর্শ দিয়েছিলো বলে, তার ত্রি-সীমানায় সে থাকতে চায় না। কিন্তু ল্যাংড়া তারু চারহাতে পায়ে এগিয়ে এসে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো, আরে বুইড়া, দুই ঢোক মাইরা দেখ, নিজেরে কেমন সালসা মনে হয়!

সলিমুদ্দিনের খুব রাগ হলেও তেমনি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, দে হালার পুত! কই তর মধু?

আয় আমার লগে। বলে, হামাগুড়ির ভঙ্গিতে সে এগিয়ে যায়। তারপর আস্তানার কাঠের বাক্স থেকে একটি কাচের বয়েম বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে, ভালা লাগলে দশ ট্যাকা দিবি কইলাম।

সলিমুদ্দিন বয়েমের ঢাকনা খুলে ভেতরকার পাণিয় দুঢোকেই গিলে ফেলে। কিন্তু ভালোমন্দ কিছু বুঝতে না পেরে খেঁকিয়ে উঠলো ল্যাংড়া তারুর প্রতি। হালার পুত, বাটপারির জাগা পাস না!

তারু রাগে না। শান্তস্বরে বলে, কিছুক্ষণ বয়। তার বাদে দেখিস। ততক্ষণে আমি দেহি কিছু কামাই করতে পারি কি না।

তারু স্থির ট্রেনের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলে সলিমুদ্দিন রেলওয়ের কুলিদের অগোচরে ছোটছোট মোট বয়। বয়েমের তরল বস্তুটা গেলার পর যেন সত্যিই কিছুটা ভালো লাগছে তার। পিঠের ব্যথাটাও যেন সহনীয় মনে হয়। সে আরো অধীর হয়ে লক্ষ্য রাখে লাল সার্ট বা গেঞ্জি পরা কুলিদের প্রতি। কোনো একটি সুযোগও যেন না ফস্কায়।

ক্ষুধায় বেশ কিছুটা কাতর হলেও থামে না সলিমুদ্দিন। টাকা-পয়সা সব সময় হাতের নাগালে পাওয়া যায় না। যে কারণে অনেক দিন পর নিজকে খানিকটা ধাতস্থ মনে হয়। ট্রেন ছেড়ে দিলে সে তারুর বাক্সের পাশে এসে বসে থাকে। অপেক্ষা করে সে কখন ফিরে আসে। খানিক দূরেই তারুকে হেলে দুলে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে দেখেই সে উঠে পড়ে। কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে, আমার খুব খিদা পাইসে। ল চাইরডা ভাত খাই।

তুই যা। আমার ভালা লাগতাছে না। প্যাটে খিদা নাই!

তারু বাক্সটার ওপর চড়েই কাত হয়ে শুয়ে পড়ে।

সলিমুদ্দিনের আজ রোজগার ভালো। কতদিন হলো ভাত খেতে পায় না। তাই খানিকটা দ্রুত পায়েই সে একটি সস্তা রেস্টুরেন্টের দিকে হেঁটে যায়।

ভরপেট খেয়ে সলিমুদ্দিন ফিরে আসে প্লাটফরমে। পেট শান্তি তো জগত শান্তি, কথাটিকেই এ মুহূর্তে তার কাছে জগতের একমাত্র সত্য বলে মনে হয়। সে চলতে চলতে জ্বর কাতর সফুরার কথা ভাবে। প্রতিটি বেঞ্চের নিচে তাকায়। কিন্তু সেখানে কাউকে শুয়ে থাকতে দেখে না। খানিকটা ইতিউতি তাকিয়ে সে ভাবে যে, গেল কই? ট্যাকা নিয়া কি ভাইগ্যা গেল?

তারপরই তার মনে হয় যে, অভাবী মেয়ে মানুষ। দশ টাকা নিয়ে না হয় ভাগলোই। কিন্তু পেট পুরে কিছু খেয়ে যদি দুটো জ্বরের বড়ি খেতো তাহলেও তার টাকাটা একটা ভালো কাজে লাগতো মনে হয়। শত হলেও তার পরিশ্রমের টাকা। যে টাকায় মিশে আছে তার দেহের ঘাম। সে টাকা যদি উড়ো খইয়ের মত চলে যায় তাহলে তা কেমন বেদনাদায়ক ভুক্তভোগী বিনা কারো জানার কথা নয়।

পরবর্তী ট্রেন আসতে কিছুটা দেরি আছে। সে সময় কুলিদের হাঁকডাক তেমন শোনা যায় না। তা ছাড়া অনেকেই পেট পুরে খাওয়ার পর নাক ডাকিয়ে ঘুমায়। কেউ বা চোলাই টেনে লোহার থামের গায়ে হেলান দিয়ে ঝিমোয়। সে সময়টাই সলিমুদ্দিনের মত মানুষদের জন্য খানিকটা নিরাপদ। কিন্তু অত রাতে মোট বইতেও খুব একটা ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু নারায়ণের ভাতের দোকানে বসে খেতে খেতে হঠাৎ করেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে, বাঁচতে যদি হয় তো আনন্দ নিয়েই বাঁচবে। আর আনন্দ করতে হলে চাই টাকা। আর টাকা হলে শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে। শরীরের দায় মেটানোরও সুযোগ কমবেশি পাওয়া যাবে। বুড়ো হয়েছে বলে কি এতটাই বুড়িয়ে গেছে সে? বুড়ো বলে সে অতটা ফ্যালনা হয়ে যায়নি।

আজ তার খুব একটা ঝিমুনিও আসে না। সে ল্যাংড়া তারুর কাছে এসে দেখতে পায় যে, সে ঘুমিয়ে পড়েছে। এ সময় তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না ভেবে একবার তার আস্তানা থেকে ঘুরে আসতে মনস্থ করে। আর তখনই তার মনে পড়ে পানির পাত্রটা প্রায় শূন্য হয়ে আছে। লাইন ঘেঁষে পড়ে থাকা দুলিটারের কোকের বোতল কুড়িয়ে নেয় দুটো। তারপর স্টেশনের টয়লেটের কল থেকে বোতল দুটো পানি ভর্তি করে নিয়ে সে হাঁটতে আরম্ভ করে তার বগির দিকে। রেল লাইনের স্লিপার ধরে সে এগিয়ে যেতে থাকলে মাঝ পথে পূর্বেকার দুটো ছোকরার সঙ্গে দেখা হলে সে বলে, তগরে আইজ-কাইল দেখি না, হইছে কি?

ছোকরা দুজন হাসে। একজন বলে, জাগা বদলাইছি। হেই বার পুলিশের হাতে ধরা খাইতে খাইতেও বাঁইচ্যা গেছি!

সলিমুদ্দিন যেন কিছুটা খুশি হয়। কিন্তু সেটা তার আচরণে প্রকাশ হতে দেয় না। শ্লথ পায়ে লাইন ধরে হেঁটে চলে। বগির ভেতর দিনের বেলাতেই অন্ধকার বলে, রাতে আরো বেশি অন্ধকার মনে হয়। স্টেশনে জ্বলতে থাকা রাত-বাতিগুলোর আলোতে বাইরের অংশটা আবছা আবছা দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু ভেতরে কিছুই দেখা যায় না। একবার দেশলাই নিতে ভুলে গিয়েছিলো বলে, অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বেশ কিছুক্ষণ নিজের বিছানাটাই খুঁজে পায়নি সে।

এভাবেই নানা কথা ভাবতে ভাবতে সে বগির সামনে এসে উপস্থিত হলে, একবার মনে হয় কারো কাশির শব্দ যেন শুনতে পেলো। তারপরই ব্যাপারটা মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিয়ে অন্ধকার বগির ভেতর প্রবেশ করে সে। অন্ধকারেই হাতড়ে হাতড়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে মোম আর দেশলাই নিয়ে মোম ধরিয়ে পানির বোতল দুটো বিছানার সিথানের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখে।

আপাতত এখানকার কাজ তার শেষ। তাকে আবার ফিরে যেতে হবে স্টেশনে। তখন হঠাৎ করেই আবার কাশির শব্দ শুনতে পেয়ে দ্বিগুণ ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। হাত থেকে জ্বলন্ত মোম নিচে পড়ে নিভে যায়। ফের কাশির শব্দে সে কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠে বলে, কে? কে কাশে? কিন্তু আবার সব যেমন আগের মতই সুনসান মনে হয়। কিন্তু ভয়ের কারণে তার পেশাবের বেগ হলে সে চটের পর্দা সরিয়ে দরজায় দাঁড়িয়েই পেশাব করতে থাকে।

তখনই পেছন থেকে নারী কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো, বুড়া কি আবার ইস্টিশনে যাইবা?

এবার আরো ভয় পায় সলিমুদ্দিন। সহসা প্রস্রাবের গতি মাঝপথেই রুদ্ধ হয়ে যায় তার। কোমরে লুঙ্গির ভাঁজে গুটিয়ে রাখা টাকাগুলো মুঠি করে ধরে কিছু বলতে চেয়েও পারে না। গলা দিয়ে স্বর বের হয় না। হাত-পা যেন স্থির হয়ে আসে।

কিছুক্ষণ পরই তার হাত থেকে দেশলাই নিয়ে কেউ আলো জ্বালায়। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মোমও জ্বলে ওঠে ভৌতিক অন্ধকারে। চোখের সামনে জলজ্যান্ত নারী মুখ দেখেও যেন বিস্ময় কাটে না সলিমুদ্দিনের।

নারীটি বলে ওঠে, হইছে কি তোমার?

সলিমুদ্দিনের ফের প্রস্রাবের বেগ হয়। এমন কি কোনো রকম প্রস্তুতির আগেই সঙ্গে সঙ্গে নিচ দিয়ে লুঙ্গি ভিজতে থাকে। সে টের পেলেও তা প্রতিরোধের কোনো উপায় খুঁজে পায় না। মনে হয় হাত-পাগুলো যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।

আলো হাতে নারীটির মুখের দিকে বিমূঢ়ের মত তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার মনে পড়ে আজকের সব ঘটনা। আর তখনই যেন সম্বিৎ ফিরে পায় সে। কোমরের ভাঁজ থেকে টাকাগুলো হাতে নিয়ে পরনের ভেজা লুঙ্গির উপর দিয়েই কাঁধের গামছাটা পেঁচিয়ে ধরে। তারপর পেটের কাছের গিঁঠ খুলে দিলে আংশিক ভেজা লুঙ্গিটা নিচের দিকে পড়ে যায়। হয়তো তা দেখে হাসতে গিয়েও থেমে যায় সফুরা। বলে, যা হওনের হইছে, এখন থাইক্যা আমি তোমার লগেই থাকমু!

সলিমুদ্দিনের মনে হয় প্রচণ্ড ভয় অথবা ল্যাংড়া তারুর কাছ থেকে বিষাক্ত চোলাই মদ খাওয়ার কারণে তার মাথাটাই পুরোপুরি বিগড়ে গেছে। নয়তো বাস্তবে এমন ধরনের অদ্ভুত আর অযৌক্তিক কোনো ঘটনা ঘটার আদৌ কোনো সম্ভাবনা ছিলো না।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


10 Responses to বিগলিত বিভ্রমের ছায়া

You must be logged in to post a comment Login