তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

ভালোবাসা (সায়েন্স ফিকশন)

ভালোবাসা (সায়েন্স ফিকশন)
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আমার কোন বাবা নেই ,মা নেই । আমি একা । কিন্তু আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত অনেকে , আমাকে দেখাশুনার জন্য অনেক লোক। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সকল সময় আমি কিছু মানুষের তত্ত্বাবধানে থাকি। এসব আমার ভাল লাগেনা। কিন্তু কিছুই করার নাই। আমার ভালো লাগা না লাগতে তাদের কিছু যায় আসে না। আমার শৈশব কেটেছে এক বিশাল ল্যাবে। যেখানে আমার মত হাজারো ক্লোন মানবের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। আমি পুরোপুরি ক্লোন মানব নই। আমি আধো মানব আধো যন্ত্র। আমার নির্দিষ্ট কোন নাম নাই । আমাকে ডাকা হয় এম আর নাইন নামে।

এখন কত শতাব্দী জানেন? আমি জানি আপনি জানেন না ।কেউ এখন বছর আর শতাব্দী নিয়ে ভেবে তাদের সময় নস্ট করে না। এগুলো ছিল ” আর্থে “(যাকে মানুষ পৃথিবী বলে জা্নে  )  বসবাস কারী মানুষদের চিন্তা চেতনার বিষয় । আমি যেখানে বাস করি সেখানে এসবের বালাই নাই। হ্যা একটা জিনিস পরিবর্তন  হয়নি ৪৯৩২০ সালেও। সেটা হল দিন আর রাত। এখনো সকালে সূর্য উদয় হয় এবং অস্ত যায়। এর পরিবর্তনের জন্য চেস্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু সূর্য কে  নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে না।

নিজেকে আমি মানুষ বলে ভাবতে পারি না বেশ কিছু কারনে । প্রথমত আমি কোন স্বাভাবিক শিশুর মত জন্ম  নেইনি। দ্বিতীয়ত আমার শরীরের সকল স্থানে প্রতিস্থাপিত আছে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিন। তাই আমাকে আধা ক্লোন মানব বলা চলে। ক্লোনিং এর শুরু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে।কোন জীবের একটি দেহকোষ হতে হুবুহু ঔ জীবটিকে পুনরায় তৈরি করার পদ্ধতি ক্লোনিং নামে বিখ্যাত (আণবিক জীববিজ্ঞানীরা দৈনন্দিন আরেক প্রকার ক্লোনিং করে থাকেন যা হল ডি এন এ ক্লোনিং)। ১৯৯৬ সালে রোজালিন ইনশটুইট,স্কটল্যান্দ গবেষক, ড;আয়ান উইল্মবুট, তার ২৭৩ তম চেষ্টায় একটি ভেড়ার একটি দেহকোষের (স্তনবৃন্ত বা বাঁট থেকে সংগৃহীত) কেন্দ্রকে অন্যধরনের ভেড়ার কেন্দ্রবিযুক্ত ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপিত করেন ও তা হতে প্রথম ধরনের সম্পূ্র্ণ ভেড়া ডলিকে তৈরি করে জীব ক্লোনিং এর সফল সুচনা করেন।  আমার জানামতে প্রথমে প্রানীকুলের মাঝে ভেড়ার উপর সফল ক্লোনিং করে ডলি নামক এক ক্লোন ভেড়ার জন্ম দেন। সেই থেকে আমাদের জন্মের সুচনা শুরু হয় এরপর বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে মানব ক্লোনিং এর দিকে এগিয়ে যান। যদিও সেই সময় ক্লোনিং করা নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সময়ের এক বিশিষ্ঠ বিজ্ঞানী বিজিত ব্রাসার ভাইয়া সফল ভাবে মানব ক্লোনিং করতে সক্ষম  হন। যদিও  সেটা সেই সময় কেউ জানত না। পরবর্তীতে কিছু দেশ তাদের গবেষনা কারীদের দিয়ে মানব ক্লোনিং করতে থাকে ব্যাপক হারে। সেটাকে মানব সভ্যতা যে কাজে ব্যাবহার করবে বলে ভেবছিল শেষ পর্যন্ত  সেটা সে কাজে ব্যাবহৃত হয় নি।

যে কাজ একশ মানুষ এক্ত্রে করতে পারে সেই কাজ আমি অনায়াসে একা সম্প্রদান করতে পারি নিমিষেই। মানুষের শক্তির সাথে আমার দেহ কোষে বেশ কিছু আধার প্রতিস্থাপিত আছে আমার কব্জীতে । আসলে আমি একটা চলন্ত মেশিন। কেউ আমাকে নিয়ন্ত্রন করে তার ইচ্ছেমত। আমার আবেগ অনুভুতি এগুলোর কোন মুল্য ওদের কাছে নাই। প্রথম প্রথম আমার বেশ খারাপ লাগত কিন্তু এখন আমি সয়ে গেছি। এখন আমি যেখানে বাস করি একে আর পৃথিবী বলে না । সময়ের বিবর্তন  এবং কালের বিবর্তনে এর নতুন  নামকরন করা হয়েছে । এখন এর নাম ‘ দি সাঙ্কাসার ‘ । কিন্তু আমি মনে মনে একে পৃথিবী বলেই জানি। এক্সময় পৃথিবীর মানুষ চাঁদে সুরম্য বিলাস বহুল হোটেল বানিয়েছিল । সেই সব কে ঢেলে সাজিয়েছেন রোবটিক প্রধান । এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গবেষণা গার চাঁদে অবস্থিত। আগের দিনে মানুষ রকেটে করে চাঁদে যেত। এখন স্পুবা নামক এক বিশেষ স্পেস শিপে করে সল্প সময়ে চাঁদে যাওয়া যায়। এইতো সেদিন আমাকে নিয়ে যাওয়া হল মঙ্গল গ্রহে। যেখানে আগে প্রানের অস্তিত্ত ছিল কিনা তা নিয়ে গবেষনা করত পৃথিবী বাসী। আমাদের মহামান্য রোবটিক প্রধান বললেন মঙ্গল গ্রহে এক ধরনের প্রানী বাস করে যারা দেখতে হুবুহ মানুষের মত। কিন্তু তাদের শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতি অনেকটা ভিন্ন। তারা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহন না করে কার্বন মনোক্সাইড গ্রহন করে । তাদের ফুসফুস ভিন্ন প্রকৃতির । আমাদের মহামান্য রোবট প্রধান মনে করেন তিনি আমার এবং ক্লোন মানবের ফুসফুসের ধরন সে রকম বানাবেন। কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা নয়। তিনি মঙ্গল গ্রহে বেশ যাতায়ত করে এক মহিলাকে নিয়ে এসেছেন পৃথিবীতে ।

এখন সমস্যা হল একজন সত্যিকারের  মানবীর দরকার। কিন্তু বর্তমানে ‘ দি সাঙ্কাসার ‘ গ্রহে প্রকৃত কোন মানবী নাই। যে কয়েকজন আছে তারা সবাই ক্লোন । একই রকম চেহারা । একই রকম কাজ করে এরা সবাই। যার শরীর থেকে এদের ডি , এন, এ সংগ্রহ  করে এদের তৈরি করা হয়েছিল এরা ঠিক তার মতই কাজ করে। এরা কেউ বেশী জ্ঞানী , কেউ বেশী শক্তিশালী , কেউ বেশী চালাক । এদের কে পৃথিবীর সেই সময়ের বাছাইকরা নারীদের থেকে বানানো হয়েছিল।

এখন মহামান্য রোবট প্রধানের প্রয়োজন একেবারে সাধারন এক নারীর। ইতিমধ্যো ‘ দি সাঙ্কাসার ” গ্রহে বিশেষ তরঙ্গের মাঝে খবর দিয়ে দেওয়া হয়েছে কেউ যদি সত্যিকারের কোন নারী এনে দিতে পারে অথবা সন্ধান দিতে পারে তাকে দুই কার্ড স্পেশাল ইউনিট প্রধান করা হবে। এই খবর রোবটদের মাঝে প্রচার হবার সাথে সাথে সবাই তন্ন তন্ন করে সকল জায়গায় খোজ নিচ্ছেন। কারন দুই কার্ড স্পেশাল ইউনিট মানে অনেক কিছু ।

রোবট মানব এবং ক্লোন মানবের বেশ কিছু দল “দি সাঙ্কাসার” গ্রহ এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত স্পেশ শিপে করে খোঁজ করে ও কোন মানুষের সন্ধান পেলেন না । আমি চুপচাপ থাকি ইদানিং। কেন জানি কিছু ভালোলাগে না । আমি অবশ্য ভালোলাগা আর না লাগার মাঝে বিশেষ তফাৎ খুজে পাই না । আমি বসে বসে কি যেন ভাবছিলাম । ঠিক মনে করতে পারছি না । হঠাত আমার মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তনের আভাস পেলাম । আমি ঘোরের মধ্য চলে গেলাম । আমার মস্তিস্কে প্রতিস্থাপিত স্বয়ংক্রিয় মেশিন তার আর্কাইভ চালু করে দিয়েছে । আমি স্পষ্ট নয় তবে ঝাপসা ভাবে যেন দেখতে পাচ্ছি , চিরসবুজ একটা বন জঙ্গল। সেখানে দুজন মানব মানবী হেটে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে । কিন্তু চির-সবুজ বন জঙ্গল কোথায় তা বুঝতে পারছি না । এমন সময় আমার দান হাতে স্থাপিত যোগাযোগ মডিউলে মহামান্য রোবটের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল।

এম আর নাইন, তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছ?

হ্যাঁ । মহামান্য রোবট প্রধান , আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি । বলুন আমার জন্য কি আদেশ।

শোন তুমি কি কিছুক্ষণ আগে কিছু উপলব্দি করতে পেরেছ।

হ্যাঁ । পেরেছি । আমার মনে হল আমি বন জঙ্গল ঘেরা কোন সবুজ বনে দুজন মানব মানবীকে দেখতে পেলাম । তবে জায়গা টা কোথায় তা আআমি বলতে পারব না ।

তুমি দেখতে পেয়েছ , এটাই জানতে চেয়েছি । নিজ থেকে বেশী কিছু ভাবতে যেওনা । আমি জানি যন্ত্রের পাশা পাশি তোমার মনুষ্য মস্তিস্ক আপনা আপনি কিছু করতে চায়। সেজন্য তোমার মাথায় আমরা মাইক্রো চিপস লাগিয়ে রেখেছি । সকল চিন্তা ভাবনা সে করবে ।

জী ।

শোন তুমি যে বনের চির সবুজ ছবি দেখেছ সেটা বর্তমানে “দি সাঙ্কাসার” গ্রহের একেবারে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আছে । বলতে পার দি সাঙ্কাসার গ্রহে এর কোন গ্রাফ নাই। কারন আমরা নিজেরা ও জানতাম না দি সাঙ্কাসার গ্রহে এমন একটা জায়গা আছে । কিন্তু আমাদের রোবট বিজ্ঞানীরা গত দুই দিন গবেষণা করে জায়গাটা চিহ্নিত করেছে। তুমি কি আমার কথা শুনছ । এম আর নাইন ?

হ্যাঁ । মহামান্য রোবট প্রধান আমি আপনার কথা মনযোগ সহকারে শুনছি ।

শোন যা বলছিলাম । অনেক অনুসন্ধান করে আমরা জানতে পেরেছি সেই বনজঙ্গল ঘেরা জায়গাটা একসময় পৃথিবীর একটা জনবহুল দেশ ছিল । তার নাম ছিল বাংলাদেশ। একটি সাগরের পাড় ঘেঁষে সেই দেশ ছিল । আমাদের তথ্য মতে সেই দেশে সেই সময়ে জনসংখ্যা ছিল ৫০ কোটীর উপরে। আয়তনের দিক দিয়ে দেশটি তেমন বড় ছিল না । সেই দেশে চট্রগ্রাম নামক একটি নৌবন্দর ছিল। সেই সময় বিশ্বে শক্তীশালী দেশ চিল আমেরিকা এবং চীন নামক দুটি দেশ। তবে যখন পৃথিবী প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় তখন রেড ড্রাগন নামক দেশ চীনাদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা ছিল। এবার মুল প্রসঙ্গে আসি।

বাংলাদেশ নামক দেশটির নৌবন্দরের কাছাকাছি সমুদ্রের নিচে ইউরেনিয়ামের খনি আবিষ্কৃত হয়। বাংলাদেশের কাছে সেই খনি থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করার প্রযুক্তি ছিল না । চীন এবং আমেরিকা যৌথ উদ্দোগে সে কাজ করতে থাকে । এতে করে বাংলাদেশের স্থল ভাগের নিচে ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু দেশগুলো বাংলাদেশকে সেটা বুঝতে না দিয়ে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করতে থাকে দ্রুত গতিতে । যার ফলে এক মহা ভুমিকম্পে বাংলাদেশের চার ভাগের তিন ভাগ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাকী অংশের মানুষ ঠিক মত খেতে না পেরে চরম অসহায় এবং দুরাবস্থা নিয়ে মৃত্য বরন করতে থাকে । অতি দ্রুত দেশটি পুরোপুরি ধংস হয়ে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়।

ভূমিধ্বসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অংশটি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। কারন সেই সময় পুরো পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতার জন্য এক বিশাল যুদ্ধ বেঁধে যায়। সেই যুদ্ধ ছিল পারমানবিক যুদ্ধ। শক্তিশালী দেশ গুলো ভেবেছিল তাদের কাছেই শুধু পারমানবিক অস্ত্র আছে । কিন্তু যুদ্ধ লাগার পরে দেখা গেল ছোট ছট দেশ গুলো ও পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ । তখন যা হবার তাই হল বোকা মানুষ গুলো একে অন্যকে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠল মহানান্দে । এরপর পৃথিবী থেকে মানুষ সম্রদায় একেবারে শূন্যর কোঠায় এসে দাঁড়ায় । যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যে দুয়েকজনের জন্ম হত তারা কেউ অন্ধ , কেউ খোঁড়া , এমন হত । একসময় দেখা গেল মানুষ তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । তাদের সৃষ্ট মহান মানুষের ক্লোন গুলো একেবারে সুরক্ষিত থেকে যায়। আর সুরক্ষিত থেকে যায় তাদের সৃষ্ট অত্যন্ত শক্তিশালী আর ক্ষমতাধর রোবট গুলো। আসলে যুদ্ধে ব্যাবহৃত রোবট গুলোই মানুষের প্রজন ক্ষমতা নস্টের পারমাণবিক বোমা গুলো নিক্ষেপ করে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করে।তার পর এই পৃথিবীর নাম পরিবরতন করে এর নামকরন করা হয় “দি সাঙ্কাসার ” গ্রহ নামে।

গতকিছুদিনের অনুসন্ধানে আমরা জানতে পারি সেখানে বর্তমানে একজোড়া মানব মানবী রয়েছে। সেই মানব মানবীকে আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। আমরা ল্যাবে তাদেরকে চেক করব । তারা কিভাবে বেঁচে আছে। এছাড়া তাদের কে দিয়ে মঙ্গল গ্রহের মানুষ গুলোর সাথে বংশবূদ্ধির চেস্টা চালানো হবে। এই মহান কাজের জন্য আমরা তোমাকে নির্বাচন করেছি। আশা করি তুমি এই অভিযান সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।

আমি চেস্টা করব। মহামান্য রোবট প্রধান।

ঠিক আছে তাহলে তুমি স্পেশাল স্পেশ শিপ নিয়ে রওনা হয়ে যাও।

জি আচ্ছা।

গত দুইদিন ধরে স্পেশ শিপে করে ঘুরে ঘুরে অবশেষে আমি সেই বাংলাদেশ নামক জায়গাটার দেখা পেলাম। ধীরে ধীরে এবং অতি সাবধানে নিচে নামলাম । আমার মাঝে মানুষের কিছু লক্ষণ আছে তা না হলে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন কি? যেখানে অন্যান্য রোবট নির্দ্বিধায় যে কোন কিছু করে ফেলে সেখানে আমি অতটা নিশ্চিত হতে পারিনা ।

ঘন সবুজ বন । একেবারে ছবির মত। দি সাঙ্কাসার গ্রহে এমন সবুজের দেখা মেলা দুস্কর। বেশ কয়েকটি লম্বা গাছের পাশে আমার স্পেশ শিপ কে নামালাম। এই যে লম্বা লম্বা যেগুলোকে আমি গাছ বললাম , সেগুলো আমি চিনতাম না । কিন্তু আমার মস্তিস্কে প্রতিস্তাহপিত মাইক্রো চিপস আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল এটা’র নাম গাছ। আমি এখন দিব্যি চিনতে পারছি এটাকে গাছ বলে। আর সবকিছু করছে আমার মাথায় বসানো মাইক্রো চিপস। এমন সময় একটি গাছ থেকে কি যেন একটা খসে  পড়ল , আমার সামান্য সামনে। আমি কৌতূহল নিয়ে যেই জিনিসটা দেখছি, তখনি আমার মস্তিস্ক আমাকে বলল এটা এই গাছের ফল। মানুষ এটা খায় । এর নাম আম । আসলে আমি কোন খাবার খাই না তাই এই ফল টা খেতে কেমন হবে তা আমি জানি না । আমাকে প্রতিদিন টিউবে করে একটা পানীয় দেয়া হয় । এরপর আমার আর খিদে লাগে না। অনেকটা যন্ত্রের মতো কিনা । পুরোপুরো দুই দিন ধরে ঘুরলাম কিন্তু কোথায় ও সেই মানব-মানবীর দেখা পেলাম না।

আমি বনের বেশ গভীরে চলে এলাম । বনের মাঝ দিয়ে একটি নদী বয়ে গেছে । পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে লাগলাম । আমার কাছে একটা জিনিস বেশ লাগছে , এখানে আমি যেন প্রান ফিরে ফেয়েছি । আমার উপর খবরদারী করার কেঊ নাই । আমাকে দুইমাসের অগ্রীম খাবার দিয়ে দেওয়া হয়েছে । যা আমি পানীয় এর মত পান করি দিনে একবার । দি সাঙ্কাসার গ্রহে আমার এসব দেখাশুনার জন্য অনেক লোক ছিল। খুব মিষ্টি এবং কোমল একটা সুর শুনে এদিকে সেদিকে তাকালাম এবং নদীর পাড়ে মেয়েটিকে প্রথমে দেখতে পেলাম । আমি আমার মস্তিস্কে স্থাপিত চিপসকে বললাম মেয়েটি কি বলছে। আমার মস্তিস্ক সাথে সাথে জানাল মেয়েটি মনের আনন্দে গান গাইছে। এর কিছুখন পর আমি ছেলেটিকে দেখতে পেলাম । দেখতে হুবুহ আমার মত। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম আমাকে পাঠানোর কারন।

আমি চুপি চুপি তাদের কে অনুসরন করতে লাগলাম। তারা দুজনে দুজঙ্কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল।  দুজন বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে দুজনকে জড়িয়ে ধরল। আমি আমার স্পেশাল যন্ত্র টা বের করে আমার কানের লতিতে স্থাপন করলাম । আমি এখন তাদের কথাবার্তা সব বুঝতে পারব। এটা একটা বিশেষ যন্ত্র । যা যে কোন ভাষাকে ট্রান্সলিশেন করে আমাকে বলে দেবে এক সেকেন্ডের ও কম সময়ে।

আমি বুঝতে পারলাম তারা দুজনে ভালবাসার কথা বলছে । ‘দি সাঙ্কাসার ” গ্রহে আমি ভালবাসা শব্দটাই শুনিনি । তাই এর অর্থ বের করতে আমার বেশ বেগ পেতে হল । আসলে আমি যেখানে থাকি সেখানে কেউ কাউকে আপন বলে মনে করিনা । তাই ভালবাসার প্রশ্ন আসে না । তাদের মিষ্টি মিষ্টি ভালোবাসার কথা আমাকে অন্যজগতে নিয়ে গেল । আমি ভুলে গেলাম আমি এদের মত মানুষ নই । আমার বাবা , মা , ভাই , বোন কেউ নাই । আমি যার শরীরের ডি, এন , এ থেকে তৈরী তারা সবাই দেখতে আমার মত । কিন্তু তাদের প্রতি আমার যেমন কোন ভালবাসা নাই , আমার প্রতি ও তাদের কোন ভালবাসা নাই । একসাথে থেকে ও আমরা একে অন্যোর কাছে অনেক দূর। আমার মস্তিস্ক আমাকে কি যেন বলতে চাইছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ।

নদীর পাড় থেকে তারা একটা কুড়ে ঘরের দিকে চলে গেল । তাদের অলক্ষ্যে আমি তাদের অনুসরন করতে লাগলাম। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । আধার নামতে শুরু করল পুরো বন জুড়ে। একসময় তারা রাতের খাবার খেল বেশ তৃপ্তি নিয়ে । তারপর ঘুমাতে গেল । একে অপরকে বেশ আদর সোহাগ করল । তারা তাদের ভবিষ্যতের কথা বলতে লাগল । মেয়েটির পেটে বাচ্চা আছে , সে মা হবে । সে একটা পূরনাঙ্গ মানব শিশুর জন্ম দিবে। একথা শুনে আমি আবেগঘন হয়ে পড়লাম। মানব শিশু কেমন হয় আমি জানিনা । মেয়েটির সন্তান কে দেখার আমার ইচ্ছে হল।

কিন্তু আমি তো এসেছি ওদেরকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। আমি এসব কি ভাবছি। আমি আমার মস্তিস্কে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম। এই প্রথম আমার এমন অনুভব হল। সম্ভবত আমার ব্রেন স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলায় এমন হচ্ছে । চিপস মনে হয় তেমন সুবিধে করতে পারছে না । কারন আমি তাদের নেটওয়ারকের বাইরে।

দেখতে দেখতে দুই মাস সময় চলে গেল । আমি তাদের মায়ার জালে বন্ধী হয়ে গেলাম । আমাকে দেওয়া দায়ীত্ত আমি ভুলে গেলাম। আমি পারব না , দুজন প্রেমিক প্রেমিকা কে কার ও গবেষনার বিষয় বানাতে। আমাকে তাদের জন্য কিছু করতে হবে আমার হাতে সময় শেষ । আমাকে ফিরে যেতে হবে । আমি ফিরে না গেলে রোবট আসবে ওদেরকে নিয়ে যেতে। আমি কি করব ভাবছি।

আমি আমার সকল চিন্তা ভাবনা আমার রেকডিং যন্ত্রে রেকর্ড করে তাদের কূড়ে ঘরে রাখলাম। তারা দুজন এখন জমি চাষ করছে । আমি বনের বাইরে এসে একটা বলয় তৈরি করলাম। আমার স্পেশ শিপ থেকে কিছু মেশিন এনে স্থাপন করলাম বনের চারধারে। আমি জানি কিভাবে রোবট দের কে বোকা বানাতে  হয়। আমি আমার শিক্ষা সঠিক ভাবে প্রয়োগ করলাম । তারপর স্পেশ শিপে উঠে বসলাম। একটা বাটনে টিপ দিলাম আস্তে করে । দী সাঙ্কাসার গ্রহ থেকে আমি বনটাকে আলাদা করে দিলাম । আমি জানি আর কোন দিন মহামান্য রোবট এই বনকে খুজে পাবে না। অথচ তাদের সামনেই থাকবে। দুজন মানব-মানবির প্রতি ভালোবাসায় আমি এটা করলাম । আমি জানি আমি ফিরে গেলে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হবে । কারন আমি শত হলে ও মানুষের মতই। আমার কস্ট আছে , অনুভুতি আছে । তারা সেগুলোর প্রতি অত্যাচার করবে । তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দি সাঙ্কাসারে ফিরে যাব না । আমার স্পেশ শিপ এখন অনেক গতিতে ছুটছে। আমি এর কক্ষপথ পরিবরতন করে দিলাম । এই কাজটা করতে আমার খুব কস্ট হচ্ছে কিন্তু এই ছাড়া আমার কিছু করার নাই । আমি আমার স্পেশ শিপ কে আনফিনিটিতে সেট করলাম । আর এর গমন পথ দি সাঙ্কাসারের পরিবর্তে সূর্যমুখী করে দিলাম এবং আমি গভীর নিদ্রার একটা ইনজেকশন আমার বাম হাতের শিরায় পুশ করলাম। আমি জানি আর কোনদিন আমি জাগব না । কারন স্পেশ শিপ যখন দি সাঙ্কাসার ছেড়ে সূর্য মুখী যেতে থাকবে তখন স্পেশ শিপ উত্তপ্ত হতে হতে এক্সময় গলে যাবে, সেই সাথে আমিও। পেছনে পড়ে রইল একজোড়া মানব-মানবী এবং তাদের অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ভালোবাসা।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


8 Responses to ভালোবাসা (সায়েন্স ফিকশন)

You must be logged in to post a comment Login