মধ্য রাতের শূণ্য দোলনায়
০১.
বাইরে ঝুপঝাপ বৃষ্টি হচ্ছে।
বজ্রপাতের কমতি নেই। গগনবাসীরা কামার দাগাতে ভালোই জানে। হাতের নিশানা উলট্ পালট্ হলেও মাঝে সাঝে কুঁড়ে ঘর ফোঁড়তেও দ্বিধাবোধ করে না।
আমি বৃষ্টিতে পা রাখলাম। অমনি অভ্যর্থনা জানাতে সাদা বরফ ছুড়তে লাগলো গগনবাসীরা। কাদামাখা ঘাস, সবুজ আঙ্গিনা, সাদা তুলোর মতো হয়ে গেছে।
ভেতরে এলাম চলে। বৃষ্টির ছাট তাড়িয়ে নিয়ে এলো।
০২
আলো ভরতি ঘরটা আমার আলো শূণ্য করলো কে?
আধারটা করতাল বাজাচ্ছে। হাতরে দিয়াশলাই খুজছি। টেবিল থেকে র্যাকে,তারপর টিপয় ঘুড়ে হাত পড়লো নাক সম্বলিত একটা মুখে। এ,কি শূন্য ঘরে প্রানী এলো কোত্থেকে !!!
ভাবলাম ভাস্কর্যটা বোধহয়। আরে ওটা তো ডান সাইডে!!
আমি তো এখন বামে।
তাহলে……………
০৩
কে আপনি ?
আর আমার জীর্ণ কুঠির কি হেতু আগমন ? সামান্য আলো জ্বাল্লাম। একদম চুপ। ভেজা কালো পেড়ে একটা শিফন শাড়ী জড়িয়ে।
নাক ফুলটা চকচক করে জ্বলছে। মাথার চুল ভেজা। কফি কালার আঁধারে,পুরো মুখ দেখবার জো নেই। চুলে ঢাকা একাংশ। শরীরটাও ভেজা।
-আমাকে কিছুক্ষণের জন্য একটু আশ্রয় দিন” ভেজা গলায় বলে উঠেলো অপরিচিতা। কন্ঠে মেশাল রঙের আকুতি। চেনা ঠেকলো। একদল পশু আমাকে পেলে ছিড়ে খাবে রাস্তার ধারে; কথাটা বলেই থেমে গেল ও।
আমার কুড়েঁটা কিন্তু সুরক্ষা দেবার মতো তেমন উপযুক্ত নয়; বলে আমি বসলাম। কিন্তু কেন আপনাকে ধরবে প্রশ্নটার উঁকি ঝুকিঁ মনের দেয়ালে আঁকিবুকির করছে।
ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো এলোমেলো একরাশ কথা।
জানলাম দৈনিক কখগঘচ’র ক্রাইম রিপোর্টার। ধাতস্থ হতে পারছিনা। গগনবাসীদের কামান দাগার শব্দে বরফ হয়ে আছি।
মন মনিটরে ভেসে উঠলো, একটা পুরোনো কথামালার কিছু ছিন্ন চিত্র। মনে হলো সে,তো পরিচিত।
এই সময় হঠাৎ দমকা তার ঠমকা মেরে আলোটা খেয়ে ফেললো।
এবার আর শূণ্য রইলো না কোথাও। কালো রং ঢলে পড়লো সবখানে।
দেখা হলোনা অপরিচিতার মুখটা। কবাট খোলার মৃদু শব্দটা কর্নের সাথে বেঈমানী করলো। একটা হ্যাঁচকা টান কালো পেড়ে শাড়িটাকে বাইরে নিয়ে গেল। পিছু হটলাম না। জাপটে ধরলাম। গগনবাসী বিনা কারনে বর্ষণ অনুষ্ঠানে হঠাৎ টর্চ জ্বালানো বন্ধ রেখেছে। তাই চোখ এবার কালো রঙের সমুদ্র দেখছে চারিধার।
০.৪
নিষেধ মানছে না।
ছুড়ির ফলাটা ঢুকিয়ে দিলো; ব্যাকা ত্যাড়া হয়ে ঢুকে গেল উরুতে। ককিয়ে উঠলাম। লাল স্রোতের ধারা বইছে। ওরা টেনে হিছরে নিয়ে যাচ্ছে অপরিচিতাকে।
আমি খোড়া হয়ে আছি। ঝুপঝাপ বৃষ্টি। ক্রমে বাড়ছে। মুষল ধারে। এটাকে কুকুড়-বেড়াল বৃষ্টি বলা যায়। গগনবাসীদের কি হলো আজ ঢালাও বর্ষন চালাচ্ছো কেন ?
পড়নের শার্ট ছিড়ে বাধলাম উরুতে। আবার পিছু ছুটলাম।
অপরিচিতার আর্তনাদ আমাকে ঘোড়া পাগল করে ছুটালো গলি থেকে পথ। আমি থামছি না। আমার পায়ে খিল ধরে গ্যাছে।
গগনবাসী আজ বর্ষণ ধারায় ক্ষেপেছে। হুশ হারা পা’টা আতি পাতি করে খুজে একটু বিশ্রাম চাইছে। সে,হবেনা। প্রতি মুহুর্তে দংশন ভয় আমাকে তাড়া করছে। ছুটলাম আবার। কোথায় নিয়ে চললো ওকে। ছুটছি তো ছুটছি। পথের ধারে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে কোরাস তুলছে স্রোতের ধারা।
০.৫
কালো সময় দীর্ঘ হচ্ছে। আরো দীর্ঘতর। আমি ছুটছি কালো রাতকে গায়ে মেখে। গগনবাসীরা টর্চের আলো ফেলে পথ দেখাচ্ছে আমায়। কাঁদাপানি মাড়িয়ে আমি থমকে গেলাম।
দশভূজা মন্দিরের বটগাছটা কাদঁছে যেন। পিঁ-পিঁ একটা শব্দ। আমি বাকশূন্য।
কালো পেড়ে শিফন শাড়িটার আঁচল,দুলছে মগডালে। চক্ষু চড়কগাছ হবার জন্য ছলকে উঠলো।
কি, মায়াঢালা দু’টো চোখ অপরিচিতার। গগনবাসীদের কৃপায় দেখতে পেলাম। আমি কাদায় শুয়ে পড়তে চাইলাম। গগনবাসী আবার
টর্চ জ্বাললো। মানুষ মুখোশ পড়া নেকড়ের দল; গলায় শাড়ী পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে শূন্যের দোলনায়।
মুখটা চেনা যেন লাগছে। আপন কেউ নয়তো।
তিন কূলের আপন’রা তো গা’ঢাকা দিয়ে আছে। না হোক আপন। কিন্তু খুব চেনা লাগছে কেন ?
আবার মুখ উচুঁ করে থাকলাম। গগনবাসী বিনা চার্জে আরেকবার টর্চ জ্বাললো। এবার চোখ কি জানি বুঝে ফেললো। নোনা পানি ছাড়ছে আপনমনে।
আরে; এ,যে প্রেমা। হঠাৎ করেই পায়ের যন্ত্রণাটা কুণ্ডলি পাকাচ্ছে।
তিষি পরিমান ভালোবাসার প্রার্থী ছিলো যে, এই অপরিচিতা। যে এখন মগডালে শূন্য দোলনায়। আমি ছন্নছাড়া তাকে তা দিতে পারেনি।
এই অনাথ; কারো সংসারে আস্তাকুঁড়ে ফেলে রাখা আবর্জনা হয়ে বেচেঁ থাকতে চাইনি। চার্চে থেকে নিজে কিছু করতে চেয়েছি। এক ভরদুপুরে পথ ফুড়েঁ এসে, প্রেমা প্রেম নামক দাওয়াটা চেয়ে বসলো ভালোবাসার রোগ সারাবে বলে।
আমি দেইনি। কিন্তু গহীনে সুপ্ত হয়ে থেকেছে।
সামনে থেকে ফেরালাম মন থেকে ফেরাতে পারলাম কি !!
০.৬
কালো রংটা ছেয়ে যাক সমস্ত ভূবণ। আলো চাইনা। আমি চোখ খুলবো না।
দেখতে পারবেনা শূন্যে ঝুলে থাকা। গগনবাসী আলো চাইনা। আরো বর্ষণ চাই। রাতটা দীর্ঘ চাই। আমি অন্ধ হতে চাই।
আমার চোখ ঝলসে দাও তোমাদের বজ্র কামানে।
ভোর হয়ে আসছে। আমি হাটু গেড়ে বসে আছি বটতলে। গগনবাসীরা ঘড়ে ফিরছে। সাথে নিয়েছে শূন্যে ঝুলে থাকা প্রেমা কে। ভোর হলেই এক দঙ্গল চারপেয়ে’রা আমাকে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির কারাগারে ছুড়ে দেবে টিস্যুর মতো। তাই বেঁচে থাকার নয় মধ্য রাতের শূন্যতা
আজ হাহাকারটা কাঁদছে নোনা পানি ফেলে, গগনবাসীদের দুয়ারে।
————————-সমাপ্ত —————————–
6 Responses to মধ্য রাতের শূণ্য দোলনায়
You must be logged in to post a comment Login