মেট্রোদিন
সকাল আট’টা দশ
ঘড়িতে এ্যালার্ম দিয়ে রাখার পরও অপলার ঘুম ভাঙতে আজ দেরি হয়ে গেছে। গভীর ঘুমের অতলে তলিয়ে থাকা অপলার কানে এ্যালার্মের সুরেলা আওয়াজ ওর ঘুমের কোন বিঘ্নই ঘটাতে পারেনি। জানালার পর্দার ফাঁক গলে রোদ যখন ওর চোখ বরাবর পড়ে বেলা বাড়ার কথা জানান দিল তখন সত্যি বেশ দেরী হয়ে গেছে। রোদ পড়াতে অপলার গাঢ় ঘুমের সূতো ক্রমশ ছিঁড়তে শুরু করল। অপলার শোবার ঘরের তিনটে দেওয়ালের রঙ দুধ সাদা আর একদিকের দেওয়ালের রঙ বাদামী। সেই দেওয়াল জুড়ে বড় দেওয়াল ঘড়িটা হেলে দুলে জানান দিচ্ছে সকাল আটটা বেজে দশ। ঘড়িতে চোখ পড়তেই অপলার মস্তিষ্ক দ্রুত সচল হয়ে গেলো। বিছানা ছেড়ে অপলা এবার দুদ্দার ছুটতে শুরু করেছে।
কিউবিকল–খ্যাঁচাকল
লেভেল পনের’র বাটন প্রেস করে লিফটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে অপলা। লেজার কাট চুলে মুখের একধার ঢেকে থাকলেও ফর্সামুখের অন্যদিকের ঋজু ভাব বলে দেয় অপলা সরকার এখন পুরোদস্তুর কর্পোরেট মেজাজে। আইডি কার্ড সোয়াপ শেষে, কাঁচের দরজা ঠেলে কিউবিকলে নিজেকে পুরে নিতে নিতে অপলার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। খুব জোড় বাঁচা গেছে আজকের মতো। কাল থেকে আরও এলার্ট হতে হবে ওকে।
অপলার প্রমোশনটা হয়েছেই মাস দুয়েক। টিম লিডার হয়ে যাওয়াতে কাজের চাপ যেমন বেড়েছে তেমনি নতুন ডেজিগনেশন পাওয়াতে অপলার কাজের প্রতি মনোযোগ আগের থেকে অনেক বেশী। কাজের ডেডলাইন ধরে এগোতে গিয়ে অনেক সময়ই খেয়াল থাকে না অপলার যে, বার কি চৌদ্দ ঘন্টা তাকে কাজ করতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই তাই বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। অবশ্য এই যে অপলা এখন কিউবিকলের খাঁচাবন্দী, এখন তার মাথায় প্রোজেক্ট, টিমওয়ার্ক, লিডারশিপের মিক্স মশলা ছাড়া বাড়িঘরের চিন্তা একেবারেই নেই। নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে অপলা সরকার কিছুক্ষণের মধ্যেই টিম মিটিঙ শুরু করবে।
রাত সাড়ে দশটা
অপলা আজকের মত বেশ তাড়াতাড়ি কাজ গুছিয়ে এনেছে। আজকের মত আর নো ওয়ার্ক। প্যাক আপ সব। এখন একটু একটু টায়ার্ড লাগছে। লিফটে নামতে নামতে হঠাৎই মনে হলো আজও সারাদিনে একবারও শোভনকে ফোন করা হয়নি। লাঞ্চ কি নিয়েছে, ফিরেছে কখন সেটাও জানা হয়নি কাজের চাপে। সেলফোনে ট্রাই করতে গিয়ে শোভনের ফোন বন্ধ পেলো ও। কর্পোরেট খোলস ছিঁড়ে মধ্যবিত্তের টেনশন ঘিরে ধরছে অপলাকে। মনে পড়ছে, দেরিতে ফেরার জন্য প্রায়দিনই শোভনের গম্ভীর মুখ, কথা কাটাকাটি, দুজনের দুদিক ফিরে ঘুমানো আর সকালে কেউ কারো মুখ না দেখে বেরিয়ে পড়ার আরেকটি রুটিন ওয়ার্কের শুরু হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরই।
20 Responses to মেট্রোদিন
You must be logged in to post a comment Login