রহস্যগল্প: বিধাতার বিচার (পর্ব-১)
অনেকগুলো মানুষ একটা লম্বা কিঁউয়ে দাড়িয়ে। সবারই অঙ্গে কোন না কোন অদ্ভুত ক্ষতের চিহ্ন। কারো হাত ভাঙ্গা, কারো বুকের পাজরেঁর কাছে দগদগে রক্তাক্ত ছিদ্র। চারপাশের এই অস্বাভাবিকতায় অয়নের ধাতস্ত হতে বেশ খানিকটা সময় লাগল। লাইনের মাথায় একটি পরীর মত অপরূপ সুন্দরী মেয়ে সবাইকে কি যেন জিজ্ঞেস করছে এবং একটি বিশেষ ঘরের ভেতর যাবার জন্য নির্দেশ করছে। অয়ন সচেষ্টভাবে এই অদ্ভুত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করল।
এই ঘরের কোন আসবাবপত্রই জাগতিক মনে হচ্ছে না অয়নের কাছে। রুমটিতে কোন জানালা বা বাতি নেই। তা সত্ত্বেও ঘরে ভরা জোৎস্নার মত মায়াবী আলোর আভা ছড়িয়ে আছে।
গলার ব্যথাটা এখনও খুব পীড়া দিচ্ছে। পানির পিপাসা এখন আরো বেড়েছে। বলার মত কাউকে দেখছেও না যাকে পানির কথা বলা যায়। হঠাৎ একজন বিকৃত লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে অয়ন রীতিমত আর্তনাদ করে উঠল। ম্লান আলোতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লোকটির পেট ও পিঠ থেতলানো। দেখে মনে হচ্ছে, একটা বড় ট্রাক পেটের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এমন মূমুর্ষূ অবস্হায় এরকমভাবে চলার কথা না লোকটার। লোকটি বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকটা ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে লাগল।
-“আপনি অয়ন কুমার?”
অয়ন দেখল অস্বাভাবিক চেহারার একটি লোক তার পেছনে দাঁড়িয়ে।
-“হ্যাঁ, আমিই অয়ন কুমার।“
অয়ন কথা বলে বুঝতে পারল তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অয়ন রোবটের মত বলে উঠল, “একটু পানি দেওয়া যাবে আমাকে।”
-“আপনি পাশের ঘরটিতে গিয়ে বসুন, কিছুক্ষের মধ্যেই পানির পিপাসা কমে যাবে।“
অয়নের এর পেছনে কোন সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছা করল না। সে খুব দ্রুত পাশের খালি ঘরটিতে গেয়ে বসল। আর সত্যিই পানির পিপাসাটা এখন নেই। কিছুক্ষন আগে অয়ন এই অস্বাভাবিক পরিবেশের পেছনে কিছু যুতসই যুক্তি খুজেঁ নিয়ে নিজেকে সহজ করবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন আর সেগুলি কোন কাজেই দিচ্ছে না।
-“আপনার পানির পিপাসা মিটেছে?”
-“হ্যাঁ, ধন্যবাদ। আচ্ছা বলা যাবে আমি এখন কোথায়? কিভাবে এলাম এখানে?”
-“হ্যাঁ, বলা যাবে। আপনি এখন নারক জগতে “Selection Board” এর ওয়েটিং রুমে বসে আছেন।”
অয়ন ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষন লোকটির দিকে। বুঝে উঠতে পারছে না কিছুই। গলা শুকিয়ে আসছে। তীব্র পানির পিপাসা আবারও পেয়ে বসেছে, অয়নের।
4 Responses to রহস্যগল্প: বিধাতার বিচার (পর্ব-১)
You must be logged in to post a comment Login