আজিজুল

শুভাশিষ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

খুব আনন্দঘন মূহুতে’ মানুষের অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে। আমি সাইন্টিস্ট মানুষ। অন্তত বিজ্ঞান বুঝবার অভিপ্রাস জ্ঞাপন করি। ইদানিং কবিতা ও ছোট গল্পে ছেদ পড়েছে। নিজের  লিখা সাহিত্যকম’ পড়ে হাতড়াচ্ছিলাম কিভাবে আবারো নব নবরুপে লিখা যায়। আশরাফুল প্রতি বলে একই ভাবে ছক্কা পিটালে বাহবা পড়েবে সত্য কিন্তু আজিজূল একই রকমের, একই স্বাদের কবিতা লিখলে মানুষ নাকও সিটকাবেনা।

তো যা বলছিলাম, এখন আমার বেশ আনন্দঘন মুহূত’। সময়ঃ ২১ আগষ্ট, শনিবার, ১১:২১ দুপুর (Mountain Time).

সমস্যা হলো প্রবাসে আনন্দঘন মূহুত’ পালনের সময়বিড়ম্বনা ও আশেপাশেরমানুষের ব্যাস্ততা।

প্রথমেই খবরটা শুভ্যানুধায়ী ও আপনজনদের জানানো উচিত।

কাকে জানানো যায়? বাবা-মা? উহু, হবেনা, বাবা ফোন ধরেই ভারী গলায় বলবেন, তোর জন্যে পাত্রী দেখছি।বায়োডাটা দেখে আমায় জানা। মা? সে এক বিশাল ইতিহাস।

সেদিন লাগলো পাশের state British Columbia’য় আগুন । মাকে জানালাম- মা নিলি’প্ত গলায় বললেন, ‘ও খোকা-বাতাস কর চুলায়’। আবারো বুঝায়ে বললাম- ঘটনার তীব্রতা বুঝানোর জন্যে বললাম- আগুনের ধুয়ায় ৫০০ কি মি দুরে আমাদের শহরেও কুয়াশার মতন কালো ধোয়ায় ছেয়ে আছে।বাতাসে কাব’ন মনোক্সাইড গেছে বেড়ে। মা বুঝলেন। একটু বেশিই বুঝলেন হয়তো। বললেন- ‘ও খোকা, তুই এর মাঝে কি করিস? আমি আগেই বলেছিলাম বিদেশ যাসনে। এখন ফায়ার ব্রিগেড ডাক। আগুনটা নেভা অন্তত। বাসায় জল নাই?’

আমার আপন বলতে আছে মেজো ভাই। সমস্যা হচ্ছে সময়। এখন দুপুর। ঘড়ির কাটায় বাজে ১১:৪৩। ভাই গম্ভীর ও কিছুটা রাগ লুগিয়ে বলবে-আজিজ, আমি তো অফিসে।কি বলবি জলদি বল।

কারো তাড়া থাকলে তাকে আনন্দের খবর জানাতে সমস্যা আছে। সেই ব্যক্তি খুব অভিনয় মুখে হয়তো বলবে- “ওহ, ওয়াও। তাই নাকি।” এরপরেই বলবে, “দেখেন ভাই, আমি তো একটু ব্যাস্ত-ব্যাপারটা পরে বিস্তারিত শুনবো।” পরে শুনাতে গেলে তা বাসি হয়ে যায় বৈ কি। আজকালকার সবখানেই ব্যাস্ততা বেড়েছে। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এক ক্লাস শেষে শিক্ষক আরেক ক্লাস যাবার মাঝেও সময় পান না। মানুষ ছুটছে!

উপায় পেলাম না।

দেশে থাকলে কে জানে কি করতাম। আশে পাশের জুনিয়র ছেলেপেলে থাকলে কিছু না বুঝেই হয়তো বলে বসত, “এ ভাই। সেইরকম তো! এইবার আমাদের আজিজ ভাই বাবুলের দোকানে চা ও সিঙ্গাড়া খাওয়াবেন। ভাই, শুনে হেব্বি খুশি হলাম”

ক্ষুধার রাজ্যে পথিবী গদ্যময়-এদের দেখলে অনুধাবনেও বাস্তবতার রং পাই।

তাহলে একা একা উদযাপন করা যেতে পারে।

সমস্যা হলো বাইরে বিষম বৃষ্টি। এমনতর বৃষ্টিতে আমার মতন জারুল প্রেমী বষা’ পাগল ছেলে ঘরে থাকবার নয়। নিজের রুম থেকে বেরুলেই ছাদহীন ব্যালকনি তে ভেজা যেতে পারে। কিন্তু এখন নিরস কানাডায় শীত নেমে গেছে। ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আমি কি বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবো? হয়তো পারবো না। আমি অনেক কিছুই এখন আর আগের মতন সাহস করে করতে পারিনা। বয়স আর পাথি’ব চাহিদা নাকি মানুষের দুঃসাহস কমিয়ে দেয়। আচ্ছা আমা কনটা বেড়েছে- বয়স না জাগতিক চাহিদা?

সে যাহোক, বৃষ্টিতে ভেজার আইডিয়া cancel.তাছাড়া কোন সুখের ব্যাপার কখনোই একা উপভোগ করা যেতে পারেনা-এতে এককেন্দ্রিকতা বাড়ে হয়তো।

নানা জনের নানান মত।

তাই বাংলা ব্লগ শৈলিই ভরসা। আর এতে আমার শুভ্যান্যুধায়ীদেরকেও জানানো হলো। বেশি লোকের মাঝে আনন্দ উদযাপনের মজা আছে।

এত সব কথা পড়ে ভাবছেন, “কিরে ব্যটা, কি এমনতর আবিষ্কার করলিরে!”

রেসো ব্রাদার, সংক্ষেপেই বলছি ব্যাপারটা।

প্রায় মাস দেড়েক হতে চললো-আমি ও আমার পিএইচ ডি সুপারভাইসার বিপদে পড়েছি। আমাদের সমস্ত কাজ (আমার গত ২ বছরের পি এইচ ডি গবেষনা ও সুপারভাইসরের ৬-৭ বছেরের কাজ) সব গেছে মুছে। মুছে গিয়েছে বললেও কম বলা হয়। আমাদের তিলে তিলে গড়া সফটয়ার, যা মোটামুটি ইউনিক -সবগুলোই সব ক্রাশ করেছে।

প্রানান্ত চেষ্টা করে আমরা কিছু কিছু বানাচ্ছিলাম। বাধ সাধলো- নাসা(nasa)র কয়েকটি স্প্যাসক্রাফট (কত্রিম উপগ্রহ) যেগুলো অনেক বড় বড় ক্যাল্কুলেশনের পর আমাদের মূল রেজাল্টে জুড়িয়ে দায়া যেত -সেগুলি আর নাই। আজ অনেক পরিশ্রমের শেষে শনিবার এ নিজের ভাগ্য মঙ্গলময় হয়েছে হয়তো! অনেক সাধনার পরে সুখের হাসি, আহা শান্তি!

যদিও আমরা মাত্রই বিল্ডিংয়েন্র structure শেষ করে ফেললাম- এখন ইট ও সিমেন্ট দেবার পালা। দুবছর লেগে যাবে আরো। এরপরেই বিজ্ঞান থেকে ছুটি নিয়ে দেশ এ আগমন করবো চির সময়ের জন্যে। মোদ্দা কথা আমি খুশি হয়েছি দেশে যাবার সময় ঘনিয়ে এলো বলে। আমি জারুল ও গন্ধরাজের ভক্ত। যেনতেন গন্ধরাজ নয়- আমার চাই সিলেট শহরের সাগরদীঘিরপাড়ের গন্ধরাজ! বষা’র দিনে এইসব ফুলগুলো অনেক সুখের কথা স্মরন করিয়ে দেয়।

আজকের দিনটা বিশেষভাবে আনন্দঘন বৈ কি!!

ও হ্যা, ভালো খবর হলে মিষ্টি মুখ করবার রেওয়াজ আছে। আমি বিশিষ্ট অথ’দৈনতার মাঝে আছি। তাছাড়া- ইন্টারনেটে তো আর সবাইকে সামগ্রী পাঠাবার বন্দোবস্ত নাই, তাই জারুল ফুলেই শুভাশিষ।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


10 Responses to শুভাশিষ

You must be logged in to post a comment Login