নাজমুল হাসান নিরো

সত্যান্বেষণের প্রচেষ্টায় সকল রাজনৈতিক দলে পদার্পন এবং আমার রাজনৈতিক ধারনার বিবর্তন

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

একজন পর্যটক ছুটে বেড়ায় দেশ থেকে দেশান্তরে, পৃথিবীর এপাশ থেকে ওপাশে। মনের সাধ মেটানোর জন্য, বিভিন্ন স্থানের কৃষ্টি-কালচার, প্রকৃতি, মানুষ সম্পর্কে জানতে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে বিভিন্ন সময়ে আমার পদার্পন ছিল একজন পর্যটকের মতই। ঘুরে বেড়িয়েছি এক দল থেকে আরেক দলে। সকল দলে পা ফেলেছি। একটি সত্যের খোঁজে, একটি আদর্শবাদী, মানবতাবাদী দলের খোঁজে যাদের ছায়াতলে আমি আশ্রয় নেব, যাদের আদর্শে আমি দীক্ষিত হব। কিন্তু শেষতক আমি ব্যর্থ হয়েছি। ফলাফল হয়েছে শূন্য। কিছুই খুঁজে পাই নি আমি। শুধু ক্রমে ক্রমে বিবর্তিত হয়েছে মানসিকতার। আর পতিত হয়েছি না ভোট এ। সৃষ্টি হয়েছে একটি বিবর্তনের গল্পের। আজ সে গল্পটিই আপনাদের শোনাব।

তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। ধর্মের প্রতি প্রচন্ড রকমের অনুরক্ত। জানাশোনার গন্ডি খুব বড় না। সেই দৃষ্টিকোন থেকে ইসলামী চিন্তা-চেতনা আর আচার-অনুষ্ঠানের একান্ত পৃষ্ঠপোষক দল তাবলীগের সাথে জড়িয়ে পড়লাম। আগেই বলে নিচ্ছি এটা রাজনৈতিক দল না হলেও এর মাধ্যমেই একটি আদর্শবাদী দলের খোঁজে আমার পদাচারনার শুরু।
তাবলীগে প্রবেশ করে প্রথমেই আমি মুগ্ধ এবং উৎফুল্ল তাদের আখলাক এবং আন্তরিকতা দেখে। আর লক্ষ্য করলাম তাদের আখলাক আর আন্তরিকতার কারনে খুব সহজেই মানুষ ইসলামী আমলের প্রতি আকৃষ্ট এবং অভ্যস্ত হয় – এবং তখনকার মতে এবং এখনকার জানামতে তাবলীগই ইসলামের পথে মানুষকে টেনে আনতে সবচেয়ে সফল দল।
সুতরাং খুব জোরেশোরেই তাবলীগের কার্যক্রমে অংশগ্রহন শুরু করলাম।
কিন্তু কিছুদিনের মাথায়ই এর একটা বাগ আমার চোখে পড়ল। দ্বীনি আমল দুই ধরনের।
ফাজায়েলে আমল আর মাসায়েলে আমল। আমি লক্ষ্য করলাম ফাজায়েলে আমলের প্রতি এরা যথেষ্ট যতœবান হলেও মাসায়েলে আমলের প্রতি মোটেও যতœবান নয়। অর্থাৎ কোন্ কাজ করলে কতটুকু সওয়াব হবে তাই নিয়েই এরা ব্যস্ত থাকে, মাসায়েলে আমল তথা ধর্মীয় প্রত্যেকটি কাজের যে সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে; নামাজ, ওজু আর গোসল ছাড়া বাকীগুলোকে এরা পাত্তাই দেয় না।
আরেকটা জিনিস চোখে পড়ল। প্রত্যেকটি দলের দু’টি কন্ডিশন থাকে। এক. এর নীতিগত আদর্শ আর দুই. কর্মী লেভেলে তার প্রয়োগ। এক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা গেল। তাবলীগের নীতি আদর্শ খুব ভাল। কিন্তু কর্মীরা তাবলীগ থেকে ঘুরে এসেই তার সবগুলো ভুলে বসে থাকে। তাবলীগে গিয়ে যে মানুষটি “ইকরাম-উল-মুসলিমিন” এর জন্য অন্যকে অজুর পানি পর্যন্ত তুলতে দেয় না সেই মানুষটিই তাবলীগ থেকে ফিরে তুচ্ছ কারণে অন্যের সাথে কলহ বাধায়। আর এদের আলোচনার একটা অংশ জুড়েই থাকে জামায়াতী ইসলামের নিন্দা।
এই কারণগুলো খুব খোঁচা দিতে শুরু করল আমাকে একসময়। বয়স তখন কম ছিল, জটির চিন্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত এত মেন্টাল পেইন নেয়ার ক্ষমতা ছিল না। তাই আস্তে আস্তে লেজ গুটিয়ে সরে এলাম। তবে এখনও আমি পুরোপুরি তাবলীগ ছাড়ি নি। এখনও আমি তাবলীগ সমর্থন করি অনেকটা। কী কারণে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এরপর ক্লাশ এইটের কথা। বন্ধু রাফাতের হাত ধরে যোগ দিলাম আন্ডারগ্রাউন্ড এক দলের সাথে। এরা সব সময় সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে ক্লাশের ফার্স্ট বয়দের টার্গেট করে থাকে। সে টার্গেটে পড়েই আমার এই দলে পদার্পন ঘটল – এবং
আমার জীবনে পদার্পন করা রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সব দলের মধ্যে এই দলের দলগত আদর্শ সবচেয়ে কমপ্লেক্স। দলটির মূল আদর্শ কী তা যেমন তখন আমি উদ্ধার করতে পারি নি তেমনি এখনও বুঝতে পারি না এই দলটির মূল আদর্শ কী ছিল। এরা কমিউনিজমে বিশ্বাসী না হলেও কাজ করত ঠিক কমিউনিস্টদের কায়দায়। কমিউনিস্ট বলতে আমাদের বাংলাদেশের মার্কসবাদী পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট দলের মত। যারা শাস্তি হিসেবে অপরাধীকে জবাই করে। আবার এরা ইসলামী আচার অনুষ্ঠান পালন করলেও যাদু-টোনা, তন্ত্র-মন্ত্র, বানমারা, প্লানচেট প্রভৃতির চর্চা করত। যে কারণে এদের দলীয় মতাদর্শ বুঝে ওঠা অনেক কঠিন। কৌতুহল নিয়ে দলে প্রবেশ করলেও আধিভৌতিক বিদ্যার প্রতি আকর্ষন থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই দলটির প্রতি আগ্রহ জন্মাল এবং বেশ সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠলাম।
দলটির কার্যকলাপের মধ্যে অনেক বিচিত্রতা থাকার কারণে অনেক নতুন ও কৌতুহলেদ্দীপক ও বিচিত্র বিষয়ের সাথে যেমন পরিচিতি ঘটল তেমনি অনেক বিচিত্র কাজে অংশগ্রহনও করতে হত। যেমন: বন্ধুর বাড়িতে গ্র“প স্টাডি করতে যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে পুরো একটি রাত কবরস্থানে কাটাতে হল সাহসের পরীক্ষা দেবার জন্য, কয়েক দফা প্লানচেটে বসেছিলাম, প্লানচেটে বসার জন্য অনেক দূরের নওগাঁর একটি প্রত্যন্ত এলাকার এক দর্জির কাছ থেকে আলখাল্লা বানিয়ে আনতে হয়েছিল। এদের মাধ্যমেই আমার প্রথম পরিচয় ঘটে চে গুয়েভারার বিপ্লবী চেতনার সাথে, প্লানচেট-যাদুটোনা প্রভৃতি আধিভৌতিক বিষয়ের সাথে এবং সর্বোপরি দলটির কার্যকলাপের মধ্যে একটা এ্যাডভেঞ্চার মিশে থাকত সব সময়। যার কারণেই রহস্য ও রোমাঞ্চের নেশায় দলটিতে আঠা লেগে গিয়েছিলাম।
এর মাঝেই আমাদের অচেনা কিন্তু দলের কার্যক্রমে জড়িত থাকত এমন দুজন সিনিয়র কর্মী চট্টগ্রাম থেকে জঙ্গী ট্রেনিং নিয়ে এল। আমাদেরকে পাঠানো হল না ছোট বলে এবং বাড়ি থেকে বাবা মার অনুমতি ছাড়া বের করা যাবে না বলে। তখন থেকে আরেক ধারনা হল এরা জঙ্গীবাদী।
প্রথম থেকেই খুব আগ্রহী থাকলেও এদের দ্বীমুখী কার্যকলাপ আমাকে এক সময় খুব দ্বিধায় ফেলে দিল। বিশেষ করে ধর্মের সাথে যাদুটোনার সংঘর্ষ বাধতে লাগল বেশি করে।
এদের বিপ্লবী কাজ কর্মের একটা আদর্শ ছিল: সমাজে যার অপরাধ খুব বেশি হয়ে যাবে তাকে একবার মাত্র ওয়ার্নিং দিতে হবে, তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
এতদিন ধরে আমাদের কার্যকলাপ সব আমাদের বিভিন্ন বিষয় চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। খুন কিংবা ওই ধরনের কোন কাজের বালাই ছিল না। কিন্তু সময়ের আবর্তে এক সময় একটা খুনের সাথে সরাসরি জড়িয়েই যাচ্ছিলাম প্রায়। সে সময়ই টনক নড়ল আমার। এটুকু চেতনা জন্মাল যে আর যা-ই হোক মানুষ খুন অন্তত একটা দলের আদর্শ হতে পারে না। ধীরে ধীরে সরে আসতে শুরু করলাম দল থেকে। আর তার অল্প কিছুদিনের মাথায়ই দলই ভেঙ্গে পড়ল কোন এক অজানা কারণে।

এত দিনে দুটি দলে সম্পৃক্ত হলেও কোন দলে থিতু হতে পারি নি। তবে এই দলগুলোর মধ্যে কোনটা রাজনৈতিক দল ছিল না। ক্লাশ নাইনে টিটিসিতে ভর্তি হয়ে এবার একটি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িয়ে গেলাম। এবার জড়ালাম ছাত্র শিবিরের সাথে। এবারও মেধা শিকারের কবলে পড়লাম। টিটিসির এগারটি ডিপার্টমেন্টের ফাস্ট বয়কে তারা যে কোন মূল্যে চাইল দলে ভেড়াতে। আর ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুরক্ত আমি খুব সহজেই তাদের জালে ধরা দিলাম – এবং ধরা দেবার পর আমি তৃতীয় বারের মত উৎফুল্ল হলাম। কারণ তাদের দৈনন্দিন রুটিন এমনভাবে সাজানো যে তা অনুসরণ করলে যে কোন ছাত্র যেমন অনায়াসেই খুব ভাল ফলাফল করতে পারবে তেমনি তাদের রুটিনে ধর্মীয় কাজেরও খুব বাধাধরা নিয়ম থাকত যেমন: দৈনিক এত আয়াত কোরআন পড়তে হবে, এত আয়াত হাদীস পড়তে হবে, বিভিন্ন অজীফা পাঠ করতে হবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে যাতে পরকালীন আমলও সূচারুরূপে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব। এছাড়া ফাজায়েলে আমল এবং মাসায়েলে আমল সঠিকভাবে জানার জন্য তারা বিভিন্ন বইও সরবরাহ করত।
এটা ছিল তাদের প্রথম পাঠ। আমার ধারনা এসবের কারণে তারা দলে কর্মী যোগাতে সক্ষম হয় বেশি। এরপর দলে যখন কিছুটা পুরাতন হলাম তখন তাদের দ্বিতীয় পাঠ শুরু হল। এবার কথায় কথায় জিহাদ আর কাফিরদের কতলের কথাই বারেবারে উচ্চারিত হতে লাগল। আমার এত দিন জানা ছিল জিহাদ হয় অমুসলিম-কাফির-ইসলামের প্রতি হুমকি স্বরূপ মানুষদের বিরুদ্ধে, তাও আবার অনেক শর্ত সাপেক্ষে। তাই তাদের এই মতাদর্শ আমার কিছুতেই মন:পুত হল না। সিনিয়র কর্মীদের সাথে আমার তর্ক লেগে যেত প্রায়ই। সে সময়ই একজন সিনিয়রের সাথে আমার তর্ক ছিল এরকম:
> জিহাদ অবশ্যই করতে হবে। জিহাদ ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আগেও সম্ভব ছিল না এখনও সম্ভব না। জিহাদের মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুখের কথায় কোন কাজ হবে না।
> কিন্তু হুজুর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষইতো মুসলমান। আমরা কি তাহলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব?
> ভাই, মানুষ এমন কিছু কাজ করে যেগুলো করলে মানুষের মধ্যে আর ঈমান থাকে না, সে আর মুসলমান থাকে না। সামান্য একটি কথাতেই অনেক সময় ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।
> হুজুর তাহলে আমরা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছি আমাদের ঈমান এখনও ঠিক আছে? আমরা কিভাবে বুঝবো সামান্য কোন কথার কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যায় নি?
তিনি কথাটার আর উত্তর দিতে পারেন নি। এমন সময় থেকেই আমার ঘুন ধরা শুরু।
এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এরা গোঁড়া, কট্টর তাবলীগ বিরোধী। এদের আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকত তাবলীগের নিন্দা। তাবলীগকে এরা দুই চোখে দেখতে পারে না। তাবলীগও এদের বিরোধী তবে এতটা না। এদের অযথা তাবলীগ বিরোধীতাও আমার খুব ভাল লাগত না। জিহাদ-জিহাদ-জিহাদ আর কতলের কথা শুনতে শুনতে এক সময় আমি মহা বিরক্ত হয়ে পড়লাম। জিহদ; তাও আবার মুসলমানের বিরুদ্ধে…….. একসময় অতিষ্ট হয়ে আবার আমি লেজ গুটিয়ে ফেললাম।

এরপর দীর্ঘ তিন বছরের মত কোন দলের সাথে আর যুক্ত হওয়া হয় নি।

আবার একটা সময় এল নতুন কোন দলে যুক্ত হওয়ার। তখন আমি পলিটেকনিকে চতুর্থ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড না করে ইয়ার লসের পাল্লায় পড়ে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছি। চিন্তা করলাম এই সময়টা রাজনীতি করলে মন্দ হয় না। এসময় আমি শ্রদ্ধেয় মুজিব, ভাসানীর আদর্শে দীক্ষিত আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা অনুরক্ত। এখানে উল্লেখ্য যে আমার বাবা দাদার চৌদ্দ গোষ্ঠীর সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থক। কাকা আওয়ামী লীগের বড় নেতা। কাকাকে জানালাম দলে যোগ দেব।
আমার বিক্ষিপ্ত আর বিচিত্র কার্যকলাপের সাথে কাকা আগে থেকেই পরিচিত। তাই নিজে আমাকে না বললেও অন্য এক কাকাকে দিয়ে বলালো যে ওকে আবার ভাবতে বল। আমি নাছোড়বান্দার মত হ্যাঁ জানালাম।
কিছুদিন পর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির নির্বাচন। এখানে অনেকগুলো পদই আছে। সভাপতি পদ থাকলেও সেটা তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ না। সভাপতিকে সব সময়ই একটা কলাগাছের মত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ক্ষমতা এবং এ্যাকটিভিটির দিক দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হল সেক্রেটারি পদটি। তাই সব দিক ভেবে চিন্তে সেক্রেটারি পদেই দাঁড়াব ঠিক করলাম। সবচে’ অবাক করা ব্যাপার হল দলে ঢুকে পড়ার আগেই নির্বাচনেই দুর্নীতির নির্মম দিকটা আমার দেখা হয়ে গেল। সেক্রেটারি পদটা ইম্পর্ট্যান্ট হওয়ার কারণে পদটা দখলের জন্য হাজার হাজার টাকার খেলা শুরু হয়ে গেল। অবশ্য নেতাজী কাকার ক্ষমতার জোরে কোন টাকার খেলাই জমল না। ক্ষমতার জোরে আমিই সেক্রেটারি সিলেক্টেড হয়ে গেলাম।
এর মাঝে নির্বাচনের আগেই একটা ঘটনা ঘটে গেল। আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে কাকার সুপারিশে ওয়াজ করার সুযোগ পেলাম। সেখানে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাইকে বাজিয়ে দিলাম “আমাদের বাবা দাদা সবাই লীগ করে, আমাদের রক্তই আওয়ামী লীগের রক্ত।” শোরগোল পড়ে গেল, দলে আমার অবস্থান পাকাপোক্ত হয়ে গেল সেই সূত্রে।
ক্ষমতাও এল হাতে কিছুটা। লংকায় গেলে সবারই লেজ গজায়। আমারও গজাল। ক্ষমতার অপব্যবহারও করতে শুরু করলাম অনায়াসেই। ছোট বোনের কুৎসা রটানোর দায়ে এক জনকে সাপের মত পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলাম। এলাকায় যথেষ্ট আলোড়ন পড়ল। বিচারও বসল। নেতাদের ছত্রছায়ায় আমার কিছুই হল না। এমনকি চিকিৎসার টাকা পর্যন্ত আমার কাছ থেকে আদায় করা হল না।
এরপর দলীয় কার্যক্রমের পালা। যেহেতু আমার তখন হাতে কোন কাজ নেই তাই দলীয় সকল কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহন শুরু করলাম। কিন্তু এখানে এসেই আবার আমার আদর্শের সাথে কনফ্লিক্ট হওয়া শুরু হয়ে গেল। মুজিব, ভাসানীর যে আদর্শের প্রতি অনুরক্ততা নিয়ে আমি দলে যোগ দিয়েছিলাম এখানে তার ছিটেফোটাও পেলাম না। তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হত বিএনপির বিরোধীতাকে ঘিরে। দেশ কিংবা এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা ছিল না। তাদের ধান্ধা ছিল শুধু কিভাবে দলে লোক বাড়ানো যাবে এবং নেতাদের টার্গেট ছিল কোন কাজে তাদের পকেটে কত ঢুকবে।
আবার আমার আদর্শবাদী মন বিদ্রোহ ঘোষণা করল এবং অল্পদিনের মধ্যেই আমি পদত্যাগ করে দল থেকে বেড়িয়ে এলাম – এবং আবশ্যকভাবে কাকা মনক্ষুন্ন হলেন।

শেষতক বাদ থাকে আর ছাত্রদল। এখানে পদার্পন করার খায়েশ হয় নাই আমার আর। কারণ ততদিনে এদের আদর্শ সম্পর্কেও ভাল ধারনা হয়ে গেছে।
এবং, এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দলে পরিভ্রমনের ফলাফল দাঁড়াল শূণ্য। আমি কোন দলের কুত্তা-রাজনীতির আদর্শে দীক্ষিত হতে পারলাম না এবং গত জাতীয় নির্বাচনে আমার ভোট উপনীত হল “না ভোট”-এ।
জাতীয় ভোটের সময় সবাইকে ডিক্লেয়ার দিয়ে আমি না ভোট দিতে গেলাম। কাকা অবশ্য কিছুটা আহত হলেন কিন্তু কিছু বললেন না। কারণ তিনি জানেন এই গোঁয়ারকে ঘাঁটিয়ে লাভ নেই। আমি সহ আমরা চার চাচাত ভাইবোন এবং আমার মা সেবার না ভোট দিয়েছিলাম। অবশ্য সেটা দল দেখে নয় প্রার্থীর দিকে দেখে।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


9 Responses to সত্যান্বেষণের প্রচেষ্টায় সকল রাজনৈতিক দলে পদার্পন এবং আমার রাজনৈতিক ধারনার বিবর্তন

You must be logged in to post a comment Login