শাহেন শাহ

হুমায়ুন আহমেদ এখন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন!!

হুমায়ুন আহমেদ এখন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন!!
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

শুরুতেই কঠিন তথ্যগুলো জানিয়ে নেই:

আমাদের প্রিয় লেখক, এই সময়ের কিংবদন্তী হুমায়ুন আহমেদ এখন দূরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন। প্রায়ই বলতেন, সামান্য কচ্ছপ কয়েক শ বছর বাচে; আর মানুষ তা বাচে না!!!
সেই মানুষটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
তার শরীরে গুরুতর পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার ধরা পড়েছে; যা লিভারসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। ঈদের পর নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যান। সেখানেই চিকিৎসকরা ক্যান্সারের উপস্থিতি তাকে জানান।
আজ ভোর রাতে (৪টায়) স্যারকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমেরিকায়। স্যার এখনও্ সচেতন আছেন। তবে চিকিৎসকরা খুব ভালো কিছু শোনাতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মোমোরিয়াল সোলেন ক্যাটারিন হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা হবে। (পুরো আপডেটই মৌখিকভাবে পাওয়া, ক্রস-চেকড নয়)


এবার আমার হুমায়ুন আহমেদ:

আমি তখন কাশ ফোর কি ফাইভে পড়ি। আমাদের বাসায় টেলিভিশন ছিল না। রাতে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ব্যারিস্টার কাকুদের বাসায় ছুটতাম; দ্য এ টিম দেখব বলে।
একদিন হঠাৎ দেখি বাংলা একটা নাটক হচ্ছে; ধারাবাহিক যে, তখন বুঝতে পারিনি। নাটকটায় একটা ডাক্তার ছিল। সেই হাবাগোবা ডাক্তারের কান্ডকীর্তি দেখে খুব মজা লাগল; প্রেমে পড়ে গেলাম নাটকটার। এরপর প্রতি সপ্তাহে ওই ডাক্তারের নাটকটা দেখা চাই চাই।
সেই শুরু। সেই শুরু আমার হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে পথ চলা। এরপর সেবা প্রকাশনী আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কল্যানে পড়তে শিখলাম। একটু একটু করে দু চার পাতা পড়ছি আর এগোচ্ছি। এই সময় হঠাৎ কোত্থেকে যেন হাতে চলে এলো হিমু বিষয়ক একটি উপন্যাস; সম্ভবত ময়ুরাক্ষী।
ব্যাস, আর যায় কোথা! হুমায়ুন আহমেদের থেকে আর চোখ ফেরাতে পারি না। হুমায়ুন আহমেদের প্রতিটা বাক্য, প্রতিটা শব্দ আমার পড়া চাই।
একদিন কে যেন বললো, হুমায়ুন আহমেদ পুত্র সন্তান লাভের জন্য মাজারে হত্যে দেন! কথাটা শুনে মন খারাপ হল। তখন নতুন নাস্তিক হয়েছি; ভাবলাম, বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক মাজারে কেন যাবেন? প্রশ্নটা করে চিঠি লিখলাম ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালকে।
জাফর ইকবাল স্যার যে উত্তরটা দিয়েছিলেন, সেটা আজও তোলা আছে।
কিন্তু এখন এই এতো বছর পর এসে বুঝি, সে উত্তরের কোনো দরকার ছিল না। আজ আমি একজন মানুষের বিশ্বাসকে বুঝতে পারি। আজ আমি নতুন করে আবিস্কার করতে পারি আমার হুমায়ুন আহমেদকে।
একটা সময় রক্তটা টগবগ করতো, যা কিছু প্রতিষ্ঠিত, যা কিছু সুকোমল তার বিরুদ্ধে লড়তে ইচ্ছে হত। তখন হুমায়ুন আজাদের মতো আমারও মনে হত, এই হুমায়ুন আহমেদ লোকটি ‘অপন্যাস’ লিখে জীবন পার করছে।
আমি এখন গর্ব করে বলতে পারি, আমি হুমায়ুন আহমেদের ‘অপ-সাহিত্য’ পড়ে যে আনন্দ পাই, তা কমলকুমার মজুমদার, হুমায়ুন আজাদরা বারংবার চেষ্টা করেও কাউকে দিতে পারবেন না। এই পৃথিবীতে কাঠখোট্টা ছাপাবাক্য করে জীবনটাতে তেতো করতে আসিনি। আনন্দ পেতে এসেছি। যার ইচ্ছে, জীবনটা তিতে ওষুধ বানিয়ে চলতে পারে।
আমার হুমায়ুন আহমেদই সই।
হুমায়ুন আহমেদ এক ছোটগল্প দিয়ে সাহিত্যে যতোদিন বেচে থাকবেন, বহু চশমা ঘোলা করে ফেলা মানুষের কপালে তা জুটবে না।
নাহ। এই সময়ে হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্য বিচার নয়।
কয়েক দিন ধরেই জানতাম, মানুষটি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রানঘাতী কোলন ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পড়েছে; এখান থেকে মানুষের ফেরা প্রায় অসম্ভব। স্যারের ইচ্ছে ছিল না বলে খবরটা এতোদিন গোপন রাখা হয়েছিল। এবার শেষ লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন….
চিকিৎকরা বলেন, এই পর্যায়ের ক্যান্সার থেকে একমাত্র সৃষ্ঠিকর্তা ছাড়া কাউকে কেউ বাচাতে পারেন না। হুমায়ুন আহমেদ তো বিশ্বাসী ছিলেন, হুমায়ুন আহমেদ তো বাচতে চাইতেন; সৃষ্ঠিকর্তা তার এতো ভক্ত মানুষটির এই চাওয়াটা অল্পদিনের জন্য হলেও পূরন করবেন না?
হে ঈশ্বর, মানুষটিকে বিমুখ করো না। আমাদের মতো লাখো লাখো মানুষের প্রার্থনা ফিরিয়ে দিও না।

উপরে লিংক দেওয়া ব্লগের মন্তব্য অংশে একটা লিংক পেলাম, ১৮ জুলাই/২০০৮ সালে হুমায়ুন আহমেদ সমকাল পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ-

বাংলাদেশের লেখকরা কি স্বাধীন?
– হ্যাঁ, বাংলাদেশের লেখকরা স্বাধীন।

: তাহলে ড. হুমায়ুন আজাদকে মরতে হলো কেন?
– কারণ যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না।

ঠিক একই কারণে কি তসলিমা নাসরিন দেশ থেকে বিতাড়িত?
– হয়তোবা।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম দেশদ্রোহীর মামলা মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ওনার অপরাধ কী ছিল? আপনি কী মনে করেন?
– ওনাকে তো কেউ খুন করেনি। উনি তো ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। ওনাকে দেশদ্রোহী কখনোই বলা হয়নি। দেশদ্রোহী কথাটা ভুল ইনফরমেশন। তার বিরুদ্ধে কখনোই দেশদ্রোহীর মামলা করা হয়নি। তাছাড়া পুরো ব্যাপারটাই ছিল এত তুচ্ছ, আমরা জানি যে, পুরোটাই ছিল একটা সাজানো খেলা। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মৌলবাদীরা তো কতবার আমাকে মুরতাদ বলেছে, তাতে কি আমি মাথা ঘামিয়েছি কখনো? কখনো না।

স্বাধীন দেশের লেখকদের তার নিজ দেশ থেকে নির্বাসনে যেতে হয়ে, সেই লেখকেকে তার লেখা বই পড়ে আহত হওয়া হিংস্র কুকুরদের হাতে রাস্তাঘাটে ধারালো কোপ খেতে হয়, দিনে দুপুরে কল্লার দাম নির্ধারন করা নিলাম ডেকে- কেমন স্বাধীন তোমরা বাপু?

তিনি কাউকে না করতে পারেন না, অমায়িক ভদ্রলোক- গ্রামের সেই কুমারী মাতার মতোই কাউকেই মানা করতে পারেন না, সবাইকে ‘হ্যাঁ‘ বলে দেন। মাওলানা মান্নানের দৈনিক ইনকিলাবে জাহানার ইমামের না লেখার অনুরোধ সত্বেও লিখে গেছেন বিরতীহীন ভাবে। ঘোস্ট রাইটার বলে নাকি একটা কথা আছে, পিকাসো, ভিঞ্চিদেরও অনেক ছাত্র ছিলো যারা তাদের গুরুদের কাজ অনুকরন করে চিত্রকর্মের দক্ষতা বাড়াতো। একই ছবি অনুকরণ করে বছরের পর বছর অনুশিলন করে যেত। মিকেলেঞ্জেলোর কথা পড়েছিলাম, তিনিও একই কাজ করতো। তার ছাত্রের অনুশিলন শেষে সেখানে নিজের নাম আর তার প্রতীক এঁকে দিতো। এতে করে বোঝা যেত ছাত্রটি কোন গুরুর অধীনে শিখেছে। ভিঞ্চিরাও তার ছাত্রদের সাথে একই কাজ করতো। এজন্যই ভিঞ্চির মৃত্যুর পর অনেক অনেক পড়ে তার নামাঙ্কিত ছোট খাটো কাজ পাওয়া যায় , যেগুলোকে একসময় মনে করা হতো তার কাজ নয়। তার স্বাক্ষরিত কাজ, হতে পারে সেটা তার ছাত্রেরও কিংবা তার নিজেরও কোন খসড়া জাতীয়। তবে এটা গুরুতর অভিযোগ,লেখার মান হারাতে পারে, প্রমাণ ছাড়া সম্মান ধরে টান দেওয়া উচিত হবে না।

এইটা আসলে ধ্রুবতারা ঐখানে মন্তব্য করতে চাইছিলাম কিন্তু লিখতে লিখতে বড় হয়ে গেল। তাই পোস্ট করা।

শেষ কথা হলো, আমাদের সাধারন ইন্দ্রিয় দ্বারা কারো মাধ্যমে প্রভাবিত হলে, ব্যক্তি প্রভাবের সম্বন্ধে আমরা যেভাবে তাকে পারসিভ করি, সেটা নির্ধারন করে তার প্রতি আমরা কি রকম আচরন করবো, আর আমরা তার প্রতি যেরকম আচরন করি বা তার সম্বন্ধে যা ধারনা করি তা নির্ধারন করে সে কে।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


8 Responses to হুমায়ুন আহমেদ এখন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন!!

You must be logged in to post a comment Login