আহমাদ মুকুল

নেকড়ে ও মেষ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

নেকড়ে ও মেষ

আহমাদ মুকুল

ঠক ঠক ঠক….এই দরজা খোল! এতরাতে কে ডাকে? ধড়মড় করিয়া বিছানা হইতে উঠে বুড়ো মেষ। খোড়াইতে খোড়াইতে দুয়ারের কাছে যায়। ভয়ে ভয়ে খিল খুলিয়া দেখে কাল পোশাক পরা ধাড়ি নেকড়ে। তাহার পশ্চাতে চেলা চামুন্ডাগণ।

ছোটমেষ কই? হুঙ্কার ছাড়েন নেকড়ে নেতা, ডাক্ তাহারে।

কাঁথামুড়ি দিয়া গুটিশুটি মারিয়া ঘরের কোণায় ঘুমন্ত ছোটমেষ। হৈ চৈ এর আওয়াজে চোখ ডলিতে ডলিতে বিছানা ছাড়িয়া উঠে।

গলায় মোটা রশি বাঁধিয়া মেষশাবককে লইয়া যায় নেকড়ের দল্।

রাতের অন্ধকারে ক্ষেত আইল পার হইয়া সড়কে উঠিয়া আসে সবাই।

– বুনো শুওর কই? নেকড়ে নেতা বাজখাই গলায় ছোটমেষকে জিজ্ঞাসা করে।

– এই গ্রামে বুনো শুওর আইব কই থেইকা? এইগুলা তো বন-জঙ্গলে থাকে। ছোটমেষের কাঁপা কাঁপা উত্তর।

– যাহা জিজ্ঞেস করি, তাহার ঠিক ঠিক উত্তর দে। তুই তো উহার দলের লোক।

– আমি তাহারে কখনও দেখি নাই, চিনি না। বিশ্বাস করেন।

– তাহা হইলে তোর বাপ নিশ্চয়ই চিনে।

– আমার বাপ নাই। পানি ঘোলা করিবার অপরাধে আপনার পিতার হস্তে উনি মরিয়াছিলেন।

– তাহা হইলে তোর দাদা বুড়ামেষ চিনে।

– উনিও বাচিয়া নাই, সিংহে খাইছিল তেনারে। বুড়ামেষ আমার চাচা। জলে নামিয়া কুমিরের   কামড় খাইয়া তিনি পঙ্গু।

মেষের বাড়ি হইতে সিজ করিয়া আনা ছোটমেষের ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে বই-খাতাও ছিল।

– ইউরেকা…এই যে ক্লু পাইয়াছি। ছোটমেষের বইয়ের পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে শুকরের একটা ছবি পায় ধাড়ি নেকড়ে। সবাইরে উচাইয়া দেখায়। বলিয়াছিলাম না, এই ব্যাটা দুষ্ট শুওরের সাথে ‘ওয়েল কানেক্টেড’?

‘প্রাণি পরিচিতি’র বই ওইটা- আর্তনাদ করিয়া উঠে ছোটমেষ।

কে শোনে কাহার কথা! শান্তিরক্ষা দলে বিজয়ের আনন্দ।

………………………………………………….

নেকড়ে নেতার অনেক দয়া! ছোট্ট মেষশিশুটিকে জানে মারে নাই। পশু হাসপাতালে শুইয়া ছোটমেষ ভাবে, সে কত ভাগ্যবান! তাহার বাবা মরিয়াছে কোতয়াল নেকড়ের খাওয়ার জল ঘোলা করিবার অপরাধে। দাদা পরদাদা গিয়াছে দেশের রাজা সিংহের পেটে। সে অনেক কৃতজ্ঞ বর্তমান সিংহরাজের প্রতি, বর্তমান মহারাজ মাংশাসি নন।

এইদিকে অনেক কিছু ঘটিয়া যায়। নিজের খাইয়া বনের মহিষ তাড়ানো একটা গোষ্ঠির অত্যাচারে কিছুটা বিব্রত হয় নেকড়েকূল। মহিষগুলি বন হইতে বাহির হইয়া এইখানে ওইখানে ঢুকিয়া পড়ে। নেকড়েদিগের সাজানো বাগানে হানা দিয়া ব্যাপক সৌন্দর্যহানী ঘটায়। এই কষ্ট কোতয়ালদলকে যতটা না স্পর্শ করে, তাহার চাইতে আঘাতটা বেশী নিজেদের করিয়া লয় শাসক সিংহসমাজ। সিংহরাজের মন্ত্রণাদাতাগণ সবাইকে সতর্ক করিয়া দেন-

….এই মেষশাবক মোটেই মেষ নহে, ইহার খোলসের নীচে বুনো শুকর লুকানো। অধিকন্তু মেষকূলকে অতটা বিশ্বাস করিবার কারণ নাই। সেই তুলনায় অনেক বিশ্বস্ত আমাদের নেকড়েসমাজ।……

অনেক টানা-হেঁচড়ার ফাঁকে ছোটমেষ ভাবে, তাহার মত তুচ্ছ প্রাণিকে লইয়া লোফালুফি খেলা বুঝি উচ্চ শ্রেণীর প্রাণিকূলের এক প্রকার বিলাসিতা! কোন অভিযোগ/অনুযোগ করিবে, ইহা চিন্তায়ও আনে না সে ও তাহার স্বজনগণ।

সিংহের রাজ্যে মেষদের বাঁচিয়া থাকাই যে এক পরম সৌভাগ্য!

(বহুল পরিচিত জ্ঞানরচনার অজ্ঞানতাপ্রসূত কল্পিত বর্দ্ধন। ঐতিহাসিক কিংবা সমসাময়িক কিছুর সাথে মিল খুঁজতে যাওয়া পাঠকের চরম অবিবেচনার কাজ হবে।)

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


10 Responses to নেকড়ে ও মেষ

You must be logged in to post a comment Login