শাহেন শাহ

কৌতুক: বাল্যবিবাহ – আ. পোর্তের

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আমাকে স্কুলে ডেকে পাঠানো হলো। ‘নিশ্চয়ই আবার কোনো কুকীর্তি ঘটিয়েছ?’ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম।
‘ভুল কথা। তেমন কিছুই করিনি। বিয়ে করেছি শুধু…’
‘কী?!’
‘বিয়ে করেছি…’
‘বিয়ে করেছ মানে?’ শরীর ঠান্ডা হয়ে এল আমার। ‘কাকে বিয়ে করেছ?’
‘তানিয়া মুরজিনাকে, আমাদের ক্লাসেই পড়ে,’ এমনভাবে উত্তর দিল সে, যেন কিছুই হয়নি! তারপর জীর্ণ পাঠ্যপুস্তকগুলো ভরতে শুরু করল স্কুলব্যাগে।
‘য়্যুরিক, শোনো। আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু বিশ্লেষণ করে বলবে কি?’
‘বিশ্লেষণ করার কী আছে এখানে! একা থাকা দুরূহ, তাই বিয়ে করেছি।’
‘একা থাকা দুরূহ মানে? কী সেই দুরূহ ব্যাপারগুলো?’
‘তুমি তো জানো, পড়াশোনা করা কত কঠিন এখন। তোমাদের সময় অনেক সহজ ছিল। এই যেমন, তোমাদের যুগে পদার্থবিদ্যা শেষ হতো ওহমের সূত্রতে। এরপর আরও কতশত নতুন আবিষ্কার হয়েছে, সেটা জানো?’
‘ন্-না, জানি না।’
‘দেখলে তো? তুমি জানো না, কিন্তু আমাকে জানতে হয়।’
‘য়্যুরিক, আমি তবু বুঝতে পারছি না,’ যথাসম্ভব মৃদুস্বরে বললাম, ‘তোমাদের পড়াশোনার সঙ্গে কী সম্পর্ক তোমার এটার… ইয়ে, মানে…’
‘শুধুই কি পড়াশোনা! তাহলে তো সমস্যাই থাকত না। একাই ম্যানেজ করে নেওয়া যেত। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে আন্তস্কুল অলিম্পিকে যেতে হয়? হয়। নানান স্টাডি সার্কেলে যেতে হয়? হয়। এক্সকারশনে জাদুঘরে যেতে হয়? হয়। ফেলে দেওয়া কাগজ রিসাইক্লিংয়ের জন্য কুড়িয়ে এনে জমা দিতে হয়? হয়। একা একা এত কাজ করা সম্ভব? এ ছাড়া আরও চালু হয়েছে ঐচ্ছিক ক্লাস। সবকিছু সামলাতে আমার আর তানিয়ার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। তানিয়া যখন নাচের ক্লাসে যায়, আমি আমাদের দুজনেরই অঙ্কের হোমওয়ার্ক সেরে ফেলি। একজনে সবকিছু করা অসম্ভব।’
‘একে অন্যকে সাহায্য করার ব্যাপারটা আমি বুঝি। কিন্তু শুধু বন্ধুত্ব করে থাকা যেত না? এই ইয়ে, মানে… ওই কাজটা না করলে চলত না?’
‘নাআআআ! বন্ধুত্ব দিয়ে পার পাওয়া যেত না। আর বন্ধুত্ব ব্যাপারটা যে আসলে কী, ঢের জানা আছে! প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম, চিঠি চালাচালি…। কিন্তু এসবের সময় কোথায়? এখানে প্রয়োজন সিরিয়াস সম্পর্ক, তোমার আর মায়ের মধ্যে যেমন, যেখানে দুজনের ভিন্ন ভিন্ন কর্তব্য নির্দিষ্ট করা আছে…’
‘হুমম,’ যুক্তি খুঁজে না পেয়ে বললাম, ‘তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, তুমি বিয়ে করেছ হিসাব করে। ঠিক?’
‘কিসের হিসাব! আলেক্সান্দার পুজিরিয়ভের কথা ভিন্ন। সে বিয়ে করেছে হিসাব করে। তানিয়ার বাবা-মা কী করে, জানো? বাবা রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক, মা বিভাগীয় প্রধান। তারা তাদের মেয়ে আর জামাইকে কতভাবে সাহায্য করে, সেটা জানো?’
আমি চূড়ান্তভাবে বাকরহিত হয়ে পড়লাম। কী বলব বা কী জিজ্ঞেস করব, মাথায় আসছিল না।
‘তো এখন কী করবে, ভাবছ?’ প্রশ্নটা বেরোলো আপনা থেকেই।
‘সে তো জানা কথাই, স্কুল শেষ করব। বাচ্চাটাকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে হবে…’
‘কোন বাচ্চা, য়্যুরিক?’ মুখের ভেতরটা শুকিয়ে এল আমার!
‘ক্লাস থ্রির ভোভার কথা বলছি। আমি আর তানিয়া মিলে অক্টোবর চিলড্রেন*-এর পক্ষ থেকে ওর ভার নিয়েছি।
‘এই ভোভাকে তোমাদের প্রয়োজন কী?’
‘বয়সে কম হলেও ওদের দুরবস্থা আমাদের চেয়ে কম নয়। তানিয়া আর আমি তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর দেখভাল করব, সাহায্য করব। নইলে দেখা যাবে, কয় দিন বাদে সেও বিয়ে করে বসেছে। ওই বয়সে সেটার কোনো দরকার আছে? … আচ্ছা, শোনো, বাবা, ছেলে ঘড়ির দিকে তাকাল, ‘আমাকে এখন যেতে হবে। তানিয়াকে রুশ হোমওয়ার্ক কপি করতে দিতে হবে। গতকাল সে আমার হয়ে কয়্যারে গান গেয়ে এসেছে।’
সমস্ত পাঠ্যপুস্তক স্কুলব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে দৌড় লাগাল সে। যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘শুধু একটা ব্যাপার বুঝি না, বড়রা বিয়ে করে কেন? তাদের না আছে ক্লাস, না আছে হোমওয়ার্ক, না আছে এক্সট্রা কারিকুলাম…’

*অক্টোবর চিলড্রেন—সোভিয়েত শাসনামলে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের কমিউনিস্ট সংগঠন।

সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমু

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login