মুহাম্মদ সাঈদ আরমান

স্রষ্টা,কবিতা আর আমি।

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

শিল্প আর শিল্পীর বন্ধন বিচ্ছিন্ন করা যায় না। শিল্পী ছাড়া শিল্প অস্তিত্ব পায়না। শিল্প দেখে আমরা বিমোহিত হই। শিল্পীকে কল্পনায় দেখার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে যে শিল্পের সৃষ্টি তাতে শিল্পীর মনযোগ বেশী থাকে না। মনের তাগিদে যে শিল্প, তাতে শিল্পী তার মনের মাধুরী মিশিয়ে দেন, ফলে তা হয়ে উঠে স্বকীয়তায় অনবদ্য। ‘তাজমহল’ শাহজাহানের অনবদ্য সৃষ্টি। তাজমহল প্রয়োজনের তাগিদে গড়া হয়নি, মনের তাগিদেই হয়েছে। ‘তাজমহল’ দেখলে শাহজাহানকে স্বীকার করতে হয়। ‘মোনালিসা’ বাচিয়ে রেখেছে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিকে। শিল্পী ছাড়া যেমন শিল্প অস্তিত্ব পায় না আবার শিল্প ছাড়া শিল্পী বাঁচে না। ‘কবিতা’ অন্যতম এক শিল্প। মানুষের বোল ফোটে এই কবিতা দিয়ে। কবিতা শিল্পকে মানুষ প্রথম ব্যবহার করে, যখন অন্য কোন শিল্পের সাথে তার পরিচয় থাকে না। মহাবিশ্ব, যা আমরা দেখি তা এক মহা শিল্প। এই মহা শিল্পের এক গ্রহে আমাদের বাস। যা প্রাণীকূলের বসবাস উপযোগী করে গড়া। এর একজন শিল্পী থাকবেন না তা কি বিশ্বাস যোগ্য? শিল্পী যদি ডেকে বলে- দেখ তো, আমার শিল্পে কোন খুঁত পাও কিনা? দর্শকের চোখ ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে, বলবে, না।

বলছি কবিতার কথা। সবার মত কবিতার সাথে আমার প্রথম পরিচয়- ‘মামার বাড়ি যাই’, অথবা ‘ভোর হল দোর খোল’ দিয়ে। তখন আমার কবিতা ভাল লাগার বয়স। আমি যখন কাজলাদিদি ক্লাসে। মানে যে ক্লাসে কাজলাদিদি কবিতাটি পড়ানো হয়। মাঝে মধ্যে আমার খালা নিরিবিলি ডেকে নিয়ে বলত, খোকা! কাজলাদিদি পড় । আমি মহা আহলাদে পড়তাম, দুই কারনে। খালা বুকে জড়িয়ে ধরবে, আদর করবে, যা আমি হারিয়েছি আমার চার বছর বয়সে। দুই টাকা তো পাবই। খালা শিক্ষিত ছিলেন না। কবিতাটি বুঝতেন বলেই বার বার শুনতে চাইতেন।“আমিও নাই, দিদিও নাই, কেমন মজা হবে” পড়ার সময় আমাকে বেশি করে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। কখনো কান্নাও করতেন নিরবে। আজ বড় হয়ে বুঝতে পারছি খালার কাছে কাজলাদিদির কি অর্থ ছিল। সাবাস, কাজলাদিদির স্রষ্টাকে, তুমি মরেও অমর। এই তো কবিতা, যা মনের কথা বলে।

যখন কবিতাকে ভালবাসার বয়স হল। কবিতা হয়ে উঠল আমার স্বপ্ন। যা দেখি বাস্তবে তা থাকে না। আমি কবিতার কাছে যাবার চেষ্টা করি। কবিতা আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমি আবিষ্কার করার চেষ্টা করি আমার দুর্বলতা। কেন এমন করে আমার প্রিয় কবিতা? কবিদের কাঠিন্যতা আর আমার অজ্ঞতা-মূর্খতাই কি এর কারন? আমি কবিতার সাথে মন খোলে আলাপ জমাতে পারিনি। কবিতার কাছে আমি বাক্ প্রতি বন্দী।
কবিতা আমার কাছে ‘মোনালিসা’। বুঝতে পারি না, হাসে; না অভিমান করেছে কিংবা ঘৃণা।

আমার অজ্ঞতা দূর করতে আমি শতবার চেষ্টা করেছি। কবিদের আসরে গেছি। শহীদ মিনারের পাদ-দেশে ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ ‘কবিতা হোক মজলুমের হাতিয়ার’ ‘কবিতা হোক গণমানুষের হাতিয়ার’ ‘বসন্তের কবিতা উৎসব’- লাল-নীল ব্যানারের আয়োজনে। আমি বুঝবার চেষ্টা করেছি। আফসোস আমি কিছুই পারিনি। আমার কবিতাকে সেখানে পাইনি। খদ্দরের পাঞ্জাবী,বাবরী চুলের বাহার অথবা পরিপাটি বাসন্তী শাড়ির ভাঁজ আর খোলা রেশমি চুলই দেখেছি। আর সামান্য কিছু শ্রোতা বাদাম খাচ্ছে। কবিতা যদি গণমানুষের হবে, শোনে না কেন মূর্খ জনগন?

কবিতা! তুমি যদি মানুষেরই হও, কঠিন কেন তোমার ভাষা? আমার মত অজ্ঞ-মূর্খের জন্য একটু সদয় হও। সামান্য যা বুঝেছি, কিছু কবিতা আমাকে আহত করেছে। আহত করেছে আমার বিশ্বাসকে। যে বিশ্বাস নিয়ে আমি বেচে আছি। কবিতা কি অকারণ আঘাত দিতে পারে? সে উত্তর কবিরাই দিতে পারবেন। আমি খুঁজে ফিরছি আমার কবিতাকে। কবিতা ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে? আমার দরকার সামনে চলার স্বপ্ন। কবির কবিতাই দেখাতে পারে সেই স্বপ্ন।

কবিকে স্বপ্নে আমি দেখেছি। কবি, তার কবিতা প্রেমীকে মনোকষ্ট দেয় না। কবির জন্মই কষ্ট ভুলিয়ে দিতে। ভূল যাওয়া স্মৃতিগুলো জাগ্রত করে কবিরা। কবি মনে করে মহাশিল্পীর মহাবিশ্বে সে এক ক্ষুদ্র কারিগর। কবিরা প্রধানত বিনীত কবির কলমের কালিতে জাফরান মাখা। সুঘ্রাণ ছড়ায় কবিতার ছন্দে-ছন্দে। ঘ্রাণে আত্মহারা করে কবিতা প্রেমীকে। আমার সেই কবি আমাকে দর্শন দেবে কবে?
স্রষ্টার সৃষ্টি মহাবিশ্ব,কবিতার স্রষ্টা কবি আর আমি অজ্ঞ-মূর্খ।
এই আমার কবি আর কবিতা।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


5 Responses to স্রষ্টা,কবিতা আর আমি।

You must be logged in to post a comment Login