তাহমিদুর রহমান

ধারাবাহিকঃ নিশিযাত্রা (পর্ব ৭)

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সাত

তাহের অফিসে বেশিরভাগ দিনই দুপুরের খাবার খায় না। কিন্তু যেদিন খায় সেদিন খাওয়ার পরেই দুম করে ঘুম নেমে আসে চোখে। আজ যেমন এসেছে, ঘুমে মাথাটা প্রায় নুয়েই পড়েছে টেবিলের উপর। ফাইলগুলো নিয়ে জেগে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। আজকের মধ্যে একটা রিপোর্ট জমা দিতে হবে, সকালে বেশ বকাঝকা করেছেন ম্যানেজার স্যার; আজেবাজে কথা বলে অপমান করেছে তাকে। ময়লা জমে জমে চামড়া মোটা হয়ে গিয়েছে তার, কোন বকাঝকাই আর পাত্তা দেয় না সে; তবু কাজগুলো ঠিকই করে দেয়। নতুন যখন এ চাকরিতে জয়েন করল তখন খুব মেজাজ খারাপ হত তাহেরের, জীবনের চাহিদা বাড়তে বাড়তে সেই রাগ কোথায় উড়ে গেল; সেই দম্ভ আর ইচ্ছা মত ঘোরাঘুরি পালিয়ে গেছে কবেই। আজ যেমন শত ঘুমের মাঝেও কলমের সাথে কাগজের বিয়ে দিয়ে চলেছে সে। তবে এটা সত্য যে, ও কাজ করতে ভালবাসে; এভারেস্টের সমান কাজ হলেও ঠিকই সময় বেঁধে কাজ শেষ করে উঠে পড়ে সে।

সাইদুর সাহেব উনার কলিগ, কথা বলার সুযোগ পেলেই নিজের আত্নজীবনী শুরু করেন। এমনিতে তাহের তাকে এই সুযোগ কমই দেয় কিন্তু এখন তার আত্নজীবনী শোনার উপযুক্ত সময়, এর চেষে ঘুম কাটানোর ভাল উপায় আর কি হতে পারে? উনার কথায় আঞ্চলিকতার টান আছে, তবে কোন দেশি টান বলা শক্ত। মিশ্র আঞ্চলিক ভাষা বলে বাংলা ব্যকরনে কিছু নাই। তবে সাইদুর সাহেবের কথা শুনে ব্যকরনবিদগন নতুনভাবে এ বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য, তাহের নিশ্চিত।

-সাইদুর ভাই, সাড়াশব্দ নাই? ব্যাপার কি?

-আরি কইয়েন না বাই, বউটার জ্বালায় অতিষ্ঠ হইয়া গ্যাছি।

কিছুদিন হল সাইদুর সাহেব বিয়ে করেছেন। কথায় কথায় এখন বউয়ের কথা তোলেন। উনার বয়স তেত্রিশ, চৌত্রিশ আর বিয়ে করেছেন আঠার, উনিশ বয়সের মেয়েকে; এইচএসসির পরেই বিয়ে। মেয়েটা মনে হয় লেখাপড়ায় ভাল ছিল, রেজাল্টের পর অফিসের সবাইকে রসগোল্লাও খাওয়ালেন; একদম ম্যানেজার স্যার পর্যন্ত।

তাহের সাইদুর সাহেবের কথায় কৌতুকবোধ করে।

-কেন? আপনাকে দেখলে তো মনে হয় ভাবির সাথে ভালই আছেন।

-হে হে……

সাইদুর সাহেব সুখের হাসি হাসেন। বলেন,

-আপনেরে আর কি কইব কন? আপনি মিয়া হাচাই আমারে বহুত বুঝেন। ক্যামনে কনত?

-আপনার শরীরে কচি চর্বি লেগেছে তাই।

এবার সাইদুর সাহেব হো হো করে হাসলেন, হেসেই চারদিকে তাকান; মনেহয় একটু ভয়ও পেলেন। সাইদুর সাহেব এবার গলার স্বর নিচুতে নিয়ে আসেন।

-আর কইয়েন না ব্রাদার, সারারাত জাগি থাইকতে হয়।

-কেন?

-এইটাও কি বুলতে হবে আপনেকে, বুঝবার পারছেন না?

তাহের ঠিকই বুঝে, বুঝে না বোঝার ভান করে; ঠোঁটে দুষ্টমি হাসি।

-বুঝতে পারিনি তো।

সাইদুর সাহেব গলার স্বর আরেক স্কেল নিচুতে এনে বলেন,

-অ্যা্রে মিয়া এইটাই বুঝবার পারলেন না। সারারাত প্যায়ার, ভালবাসা চলে আর কি। মিয়া, তেত্রিশ বছর পর কোন নারীর সংস্পর্শ পাইছি। আহ্, যৌবনটা তো শ্যাষই হয়া গ্যাল বুলতে গ্যালে।

তাহের চুপচাপ হাসতে থাকে। বিয়ে করার পর থেকে বেশ রসিক হয়ে গেছেন সাইদুর সাহেব। হলেই ভাল, মানুষের নিঃশ্বাসের কোন দাম আছে? অল্প কটা দিন তা আনন্দ ফূর্তিতেই কাটুক, ভাবে তাহের।

তাহের আফিস ছুটির পর এক ঘন্টা লেট করে বের হল। আজকাল এমন হয়েছে, বিকেলের পরেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে পড়ে, তবে ল্যামপোষ্ট আর দোকানপাটের আলো চারদিক আলোকিত করে রেখেছে। অন্ধকার ফুঁড়ে উজ্জ্বল আলো মাঝে মাঝে চোখে এসে লাগে। তাহের পকেট থেকে মোবাইল বের করে, সাতটা আট মিনিট বাজে। পিক পিক শব্দ করে মোবাইলটা ব্যাটারীর চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানান দেয়। তাহের নিলাকে কল করতে গেলেই বিদায়ের সুর বেজে মোবাইলটা বন্ধ হয়ে যায়। “ধুর শালা” বলে তাহের বিরুক্তি প্রকাশ করে। ওর এক বড়লোক বন্ধুর ম্যারেজ অ্যানিভারসারীতে যাওয়ার কথা, দাওয়াত দিয়েছে ওকে। তাহের বহুদিন অফিস বাড়ি ছাড়া কোথাও যায় না আর টিউশনিও আজ নেই, তাই ভেবেছিল আজ একবার ঘুরেই আসবে; নিলাকে জানানো দরকার ছিল।

তাহেরের অফিস থেকে বাসস্টপটা বেশি দূরে নয়, তবু রিক্সাওয়ালা দশ টাকা চায়; ডাকাত মনে হয় তাদের। এটুকু রাস্তার জন্য সাহেবগিরি করে কোন লাভ নেই, তাহের ফুটপাত ধরে হাঁটা দেয়। যা ভীড় তাতে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাও যুদ্ধ জয় করার মত, আর বাসে সিট তো পাবেই না; ধানমন্ডি থেকে উত্তরা অনেক দূর। তাহের বাস স্টপে পৌঁছতেই বাস এসে পড়ে। তড়িঘড়ি করে টিকেট কেটে বাসের গেটের দিকে যেতে থাকে। গেটের কাছে ইঁদুরের মত লোকজন উঠছে, সুপারভাইজার তাহেরের টিকেটটা ছিঁড়ে দেয়। তাহের বাসে উঠতে গিয়েই এক মহিলার সাথে ধাক্কা খায়, হাতে নরম কিছুর স্পর্শ পেয়ে লজ্জায় পিছিয়ে আসে; মেয়েটার তবু ভ্রুক্ষেপ নেই। ফাঁক গলে আরেকটি লোক বাসে উঠে পড়ে, লোকটার পিছন পিছন তাহেরও বাসে উঠে। ও বাসে উঠে পাশে লক্ষ্য করতেই আবারো মেয়েটাকে দেখতে পায়, একদম পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। বয়স কত হবে, বাইশ কিংবা তেইশ; এর বেশি হতেই পারে না। বাসে পা ফেলার জায়গা নেই, তাহের মেয়েটির শরীরের গন্ধ পর্যন্ত পাচ্ছে এখন। যখন ব্রেক কষছে বাসের ড্রাইভার, যারা ভদ্রলোক তারা বলছে, “ভালভাবে চালান ড্রাইভার সাহেব” আর যারা ভদ্রলোকীর তোয়াক্কা করে না তারা বলছে, “ঐ খানকির পোলা, ভালা কইরা চালা”। আর এদিকে ব্রেক কোষার সাথে সাথে মেয়েটার বুক, পেট, উরু সবকিছু তাহেরের শরীরের সাথে এঁটে বসে যাচ্ছে। মেয়েটার বুকের ওড়নাটাও গলার কাছে উঠে গিয়েছে, এত কাছ থেকে বুকটা বেঢম করে ফুলে আছে মনে হচ্ছে। তাহেরের গোপন অঙ্গ নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে, তাহের আড়ষ্টবোধ করে। নিলা সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরে খুব কমদিনই তাহের কামবোধ অনুভব করেছে কিন্তু আজ হচ্ছে।

মহাখালী আসতেই আবার মানুষগুলো ইঁদুরের মত নামতে থাকে, তাহের এবার একটা সিট পেয়ে যায়; সিটটা মেয়েটাও পেতে পারত কিন্তু সম্ভবত অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। বাসটা ফাঁকা হতেই মেয়েটা যে জায়গায় ছিল সেখান থেকে একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, গোটা পাঁচেক লোক মেয়েটার সাথে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তাহের পাশের জানালার দিকে মনোযোগ দেয় কিন্তু ঘুরেফিরে মেয়েটার উপরেই তার চোখ নিবদ্ধ হয়। মেয়েটার ডান সাইড দেখতে পাচ্ছে এখন, চুম্বকের মত ওর বুকটাই আকর্ষন করছে তাহেরকে। বাসের টিমটিমে আলোতে ফিনফিনে কাপড়ের পায়জামার জন্য সালোয়ারের ফাঁক দিয়ে কোমড় পর্যন্ত আবছা আবছা থামের মত মনে হয়। পিঠে লাল ব্রাটা সাদা কাপড়ের উপর দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তাহের আবারো অস্বস্তি অনুভব করে। কয়েক মাস ধরে এসব অনুভূতির বাইরে ছিল ও। কাকলির কাছে আসতেই তাহের একটা কাজ করে ফেলল, নিজে উঠে গিয়ে মেয়েটাকে বসতে দিল। বদলে মেয়েটা একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিল না, তাহের কিছুটা ক্ষুন্ন হয়। সামনে ট্রেন সিগনালে বাস দাঁড়ানোর পর মেয়েটার পাশের সিটের লোকটা “ধুত্তুরি” বলে উঠে গিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। তাহের সেই সিটে বসতে গেলে মেয়েটা বাধা দেয়, লোক আছে বলে জানায়। মেয়েটা বাসের পিছনে হাত নাড়তেই একটা ছেলে এসে মেয়েটার পাশে বসে। তাহের কিছুক্ষন বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যা জ্যাম উত্তরা যেতে এখনো এক ঘন্টা লেগে যেতে পারে, কে জানে? বিস্বাদ মন নিয়ে তাহের বাসের একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, মনে মনে নিজেকে নিজে একটা কুৎসিত একটা গালি দেয়।

তাহের ভেবেছিল বন্ধুর বাসার এলাকার দিকে গেলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে কিন্তু হল ঠিক বিপরীত। ওর বাসার সামনে রাস্তাটা কবে পাকা হয়েছিল বুঝা যায় না, বৃষ্টি হলেই কাদা জমে থাকে; ঘরবাড়িগুলোও মৃত্যুপথযাত্রীর মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর বন্ধুর বাসার এলাকার রাস্তা সবই চওড়া, পরিষ্কার আর সুন্দর করে পাকা করা ও তরতাজা; খালি পায়ে হাঁটলেও খারাপ লাগবে না তাহেরের। পাশাপাশি বিল্ডিংগুলো অজস্র ছোট ছোট বাতি দিয়ে লাইটিং করা, যেন প্রত্যেকটা স্বপ্নপুরীর আকাশে জ্বলজ্বল করছে লাল-নীল-সবুজ তারা। আর তার মানুষগুলো ঝকমকে কাপড় দিয়ে মোড়া, সবাইকে রাজকুমার আর রাজকুমারী মনে হয় তাহেরের। সে তুলনায় ওর শরীরের কাপড় নিতান্তই মলিন, বাসার ভিতর ঢুকতেই তাহেরের নিজেকে মাটির সাথে মিশে ফেলতে ইচ্ছে করে। কারো সাথে কথা বলার জন্য ঠিক যতটুকু কাছে থাকা দরকার তার চেয়ে বেশি দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াল সে যেন হঠাৎই কোন নিষিদ্ধ জায়গায় চলে এসেছে। রুমটাকে হলরুম বলা যায়, ছাদের এক কোনে খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো। তাহেরের চোখ চারদিক ঘুরতে থাকে, খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে ও, সবার হাতে গ্লাসে হলুদ রংয়ের পানি দেখে সেও এক গ্লাস নিয়ে নেয়; চুমুক দিয়ে আস্বস্ত হয় যে সেটা কমলার রস বৈ অন্যকিছু নয়। চারদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎই এক মহিলাকে দেখে চোখ আটকে গেল। মহিলা বলা ঠিক হচ্ছে কি? বয়স যে কম মনে হচ্ছে? কোথায় যেন দেখেছি? অ্যা্রে বন্যা রহমান না? হ্যাঁ, হ্যাঁ তিনিই তো; বেশ রবীন্দ্র সংগীত গায়। আশ্চর্য তো। এত বড় গুনী গায়িকা এই সামান্য ম্যারেজ অ্যানিভারসারিতে। বন্ধুর ভাগ্যকে ইর্ষা করে না তাহের তবে মনের কোথায় যেন বাধে। দূর থেকেই বন্ধুকে লক্ষ্য করছে তাহের, কিন্তু কেন জানি ওর কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না। বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো লোকটাকেও চিনত পারল, জনৈক জনপ্রিয় লেখক; খুব নাম কামিয়েছেন কিছুদিনের মধ্যেই। এখানে না আসলে কি এদের এভাবে সামনাসামনি দেখতে পারত, ভাবে তাহের। তবু তার মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠল না। বাসে অনুভূত হওয়া কামবোধ কি এর জন্যে দায়ী? এখনো রয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে, আজ কি স্থায়ী বাসা বাঁধল? পুরো দুই ঘন্টা ঘরের এক কোনা থেকে অন্য কোনায় দাঁড়িয়ে থেকে কাটালো, কেন জানি বন্ধুকে জানাতে ইচ্ছে হল না; বরং এসি রুমে টানা এতক্ষন থাকার কারনে ফ্রিজে ঢুকে গিয়েছে বলে মনে হল ওর। এভাবেই রাতের খাবারটাও খেয়ে ফেলে চুপচাপ। কিন্তু বিদায়ের সময় বন্ধুকে দেখা দিতেই হল কারন গেটে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে ও সস্ত্রীক।

-কিরে তাহের? তুই এসেছিস আমি জানতেই পারলাম না?

তাহের শুকনো করে হাসে।

-এইতো।

-না, না। বিশাল অন্যায় করেছিস তুই। আমাকে জানাবি না?

এরপর বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-এই হচ্ছে তাহের। কলেজে একসাথে পড়েছি। তারপর ও গেল ইউনিভার্সিটি আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।

তাহের স্বস্তিবোধ করে। যেবার ওরা এইচ এস সি পাশ করে সেবার তাহের ফেল করে, পরেরবার পাশ করে সেই কলেজেই পাস কোর্স করে শহরের একটা কলেজ থেকে মাস্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করে। তাহেরের বন্ধুটির হয়ত সেটা মনে নেই কিংবা তাহেরের বন্ধুর মান যাবে বলে সে নিজেই মিথ্যে বলল। কিন্তু তাহেরের ভালই লাগল, ও নিজেও ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ায় খুশি হল।

-অনিমেষকে মনে আছে তোর? মোটা করে, এতদিন কানাডায় ছিল; গত সপ্তাহেই তো ফিরেছে।

তাহের মাথা নেড়ে জানায়, যে তার অনিমেষকে মনে আছে। তাহেরের বন্ধুটি এবার খুঁজে খুঁজে অনিমেষকে তাহেরের সামনে এনে দাঁড় করায়। আগের চেহেরার সাথে কোন মিল নেই, বেশ স্পোর্সম্যান বডি। সাথে বউ, জিন্স আর শার্ট পড়া। অনিমেষ বলল

-ও আচ্ছা সেই তাহের। কেমন আছেন।

অনিমেষ তাহেরকে আপনি বলে সম্বাধন করেছে তাই কথাবার্তাও তেমন এগুলো না, কেমন জানি আলগা আলগা ভাব।

ফিরতি পথে বাস থেকে নেমে গলিটার মুখে তাহের একটা রিক্সা নিয়ে নেয়। সময় এগারটা তেইশ। এখনো কামবোধটা থেকেই গিয়েছে তাহেরের। সেটাকে ছাপিয়ে নিলাকে নিয়ে চিন্তা হল ওর, বাইরে যাওয়ার কথা না বলতে পারায় রাগ করেনি তো? এই সময় দু’রাস্তার মাথায় আরেকটা রিক্সা এসে ওর রিক্সাকে ধাক্কা দেয়। তাহের যে রিক্সায় উঠে আছে সেই রিক্সার রিক্সাওয়ালাই মুখ খুলল প্রথমে,

-খানকির পোলা, চোখ কি হোগার মইধ্যে ঢুকাই রাখছস?

অন্য রিক্সাওয়ালাটাও ক্ষেপে উঠে।

-বাঞ্চত, তুই চোউক্ষে কি দ্যাখস?

একটা ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ও রিক্সাওয়ালাকে শান্ত করে, এগুতে বলে সামনে। কিছুদূর সামনে গেলেই অন্য রিক্সাওয়ালাটা আবার বলে উঠে,

-সালা মাদারচোত।

এবার তাহেরের রিক্সাওয়ালাটি তাহেরকে উদ্দেশ্য বলল,

-দ্যাখছেন ভাইজান, পিডানোই দইরকার আছিল। আপনি পিডাইতে দ্যালেন না।

এত রাতে নিলার ঘুমিয়ে থাকার কথা, ঠিক তাই; ভিতর বিছানার দিকে শুয়ে আছে ও। তাহের নিঃশব্দে রাতের কাজ শেষে যখন বিছানায় এল তখন ওকে অবাক করে দিয়ে কথা বলে উঠল,

-কোথায় গিয়েছিল?

-বন্ধুর বাসায়।

-বলে যাওনি কেন?

এমনিতে নিলা সবকিছু্তেই চিৎকার চেঁচামেচি করে কিন্তু শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করছে দেখে তাহের একটু ঘাবড়ে যায়। শুয়ে নিলার দিকে শরীর গড়িয়ে কাছে যায়, একটা পা নিলার পায়ের উপর তুলে দেয় যেন ওর জোড়াস্থান নিলার বা পায়ের উরুর উপর পড়ে। সে জায়গায় চাপ দিয়ে তাহের যেন আরাম পায়। বা হাতটা কখন নিলার ডানবুকে চলে গিয়েছে। কিন্তু মুখের কাছে হাতটা নিতেই একি, নিলা কাঁদছিল। তাহের সাথে সাথে উঠে বসে।

-নিলা তুমি কেঁদেছ?

-না।

তাহের নিলার মাথাটা ওর ডান বাহুর উপরে টেনে আনে; বা হাত দিয়ে নিলার চোখ মুছে দেয়। মুখটা নিলার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে সরি বলে ঠোঁটে একটা আলতো চুমু এঁকে দেয়। তারপর বা হাত দিয়েই তলপেটে আদর করতে থাকে যেখানে শুয়ে রয়েছে ওদের ভালবাসার ফসল।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


One Response to ধারাবাহিকঃ নিশিযাত্রা (পর্ব ৭)

You must be logged in to post a comment Login