অনু গল্প-কুঁড়ে ঘর[জীবনের অনুঘটক]
অনু গল্প-কুঁড়ে ঘর[জীবনের অনুঘটক]
তরবদারের পুকুরের পুব পারে, ছোট কুঁড়ে ঘড়, এখন তরবদার বাড়ীর ছুটা কামলা বছির।
এতিম বছির, সেই ছোট বেলা হতে তরবদার বাড়ীর নুন-ভাত খেয়ে ডাঙ্গর।
পুকুরের পুব পারের কোল ঘেঁসে ছোট খাল, দক্ষিনের মাঠে ঢলে পরেছে। খালের উপর বাঁসের সাঁকো।
খালের পুব পারে, রতন পুর এর পুব পাশেই পুবের মাঠ। বিশাল সবুজ ফসলের ক্ষেত, মাঠের পর মাঠ ধানের ভুঁই।
তরবদারের বেশীর ভাগ জমিই পুবের মাঠে। বছিরের সব যেন পান্তা ভাত, তরবদারের কোথায় কি আছে?
সব জানে বছির, কোন ভুঁইয়ে চাষ দিতে হবে, কোন ভুঁইয়ে চারা বুনতে হবে সব বছিরের জানা।
তাই তো বছির তরবদার খুব আপন পুত্রের আদরে বেড়ে উঠে।
আশে পাশের গ্রামের অনেক লোকই জানে, বছির তরবদারের ছেলে। ডাঙ্গর বছির রোদে তাপে, বর্ষার জলে ভিজে,
শরতের সাদা মেঘের উচ্ছ্বলতায়, হেমন্তের শ্যামা বর্ণে, তামাটে কৃঞ্চ শরীর সবার আগে দৃষ্টি কারে তরবদারের
ছোট মেয়ে বুবলির। একই সাথে বেড়ে উঠা কিশোর থেকে সাবালক অব্দি। ডালে আবডালে সুযোগ পেলেই,
সামনে এসে পথ আগলায় বুবলি। বছির বুঝেও না বুঝার ভান করে, বুবলির চাওয়াটাকে সায় দেয় না বছির।
বছিরের ছাইপোষা মন, এত উপরে উঠা ভাবতে পারে না, গোয়ারের মত সেই সাত সকালে কামলা গরু, লাঙ্গল-জোয়াল
সন্ধ্যা গড়িয়ে বাড়ী ফিরে বছির। ক্লান্ত শরীরে চাঁদ দেখার অবসর খুঁজে পায় না।
এমনি চঞ্চল দিনের ঘুর্নিপাকে, ভোরের মেঠো পথে কড়িয়ে পাওয়া ঝরা শিউলি বছিরের খুব মনে ধরে।
প্রতি দিনের মেঠো পথ ধরে পুবের মাঠে, সাঁকো পার হয়ে রতনপুর এর উপর দিয়ে প্রতিদিনের চেনা পথ।
ইদানিং বছিরের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। পারার কয়েকটা বাড়ি পরই করিম মাঝির বাড়ি,
করিম চাচা বছিরের খুব আপন সেই ছোট বেলা হতেই, হয়তো এতিম না হয় যাওয়া আসায় চেনা জানা।
পথে দেখা হতেই, আরে করিম চাচা যে, কেমন আছেন, ভালোরে বাবা, তোকে তো ইদানিং দেখি না যে,
না চাচা, কাজ বেশী সকাল সন্ধ্যা তোই পুবের মাঠেই থাকি। বাড়িতে এসো বাবা!! জি চাচা আসবো ক্ষণ,
বলে বছির বাড়ী ফিরে। হপ্তাখানিক পরে হটাত করিম চাচা বাড়ি যাওয়ার কথা মনে পরে বসিরের।
কোন কাজও মন নাই উচাটন বছির। নানা ভাবনায় গেল দুপুর গরিয়ে বিকেল, তাই আজ পথেই করিম চাচার বাড়ী হয়ে,
বলতেই করমি চাচার উঠানে হাজির বছির, চাচা, ওচাচা বাড়ী আছোনি, আমি বছির। তুমি সেদিন আইতে কইলা না
তাই ভাবলাম আজ একটু ঢু মারি কইতে কইতে এদিক ওদিক খোঁজে কেউ নাই মনে হয়। আসবে এমন সময়
সামনে এক ডাঙ্গর মেয়ে এসে হাজির, বাবজান গন্জের হাটে আসতে রাত হইবো। আমি যাই, অন্য একদিন আসুমনি।
ক্যা,দ্বারাও ফুফুরে ডাকি, আমারে চিনতে পারছো না বছির ভাই, আমি শিমু, মা’মরনের পর হতে তো মামার ওখানেই
ছিলাম, এখনথ বাবজানের কাছেই থাকুম। এই পথেই তোমাকে প্রতিভোরে যেতে দেখেছি, হাত ভরে শিউলি ফুল দিয়ে যেতে
আমার ফ্রকের আঁচলে। সেই লোভে প্রতি ভোরে রাস্তায় তোমার পথ চেয়ে থাকতাম। থাক সে সব কথা, আমি জানতাম
হয়তো এত দিন মামার বাড়িতেই তোমার বিয়া হইয়া গেছে। বেশ তো বাপ জানকে একটু দেখো যতদিন বাড়ি ছেরে না যাও।
এমন সময় ফুপু ডাকে ঘর হতে, কার সাথে কথা কস শিউলি। বাহিরে এসো, বছির ভাই।
এর কিছু দিন বাদে, বছির তরবদারের কাছে বিয়ের কথা পারে, তরবদারের তেমন উৎসহ টের পায় না বছির।
করিম চাচার সাথে কথা কওন লাগবো, শিউলিরে আমার মনে ধরেছে। আচ্ছা হবেনি কথা, এখন কাজে যা নারে বাপ।
বিয়া করলে হবেনি ঘর লাগবো না? বলে বির বির করতে করতে তরবতার বাড়ীর ভিতরে যায়।
তরবদারের পুকুরের পুব পারের সেই কুঁড়ে ঘরটিই এখন বছিরের সারা জীবনের পরিশ্রমের বাস্তহারা বাসস্হান।
>>>..সেই শিউলি এখন বছিরের টুনির মা।
গেন্জির ডান হাতে হাত ঢুকিয়ে, মাথার উপর হাত উঁচা করে, গেন্জিটা পড়তেই,
দীর্ঘদেহী বশির রোদে পেটা শরীরটা ধুনুকের মত বাঁকা হয়ে দরাজ গলায় ডাকে, টুনির মা!
গেলি কই? বেলা যে পরে এলো, গন্জের হাটে যাই। থলেটা দাও দেখিনি, নুন তেলের সোদাই আনি,
না হলে, আবার ফির সপ্তাহে হাট বার। টুনি বাবার সামনে এসে, আমারে নিবে না বাবা? তোমার সাথে হাটে।
বছির মুচকি হেসে, টুনিকে কোলে নিয়ে আদর করে, নারে মা’ ৮ কোশ দুরে হাট, এতদুর, নারে মা!
তুই বরং মায়ের কাছে থাকরে মা। টুনি বললি নাতো? কি আনবো তোর জন্য। লাল ফিতা, লাল চুড়ি,
লাল টুকটুকে আলতা, বল নারে মা………………………………………
=============================
১৪১৭@১৩ মাঘ,শীতাকাল
4 Responses to অনু গল্প-কুঁড়ে ঘর[জীবনের অনুঘটক]
You must be logged in to post a comment Login