শৈবাল

২৯শে অক্টোবর : বিস্ময়বোধক চিহ্ন

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

তিন বার । ঠিক শুনছি , এই নিয়ে তিন বার শুনলাম । সুর শলাকার রোগা শব্দের মতো শুরুর দিকটায় ছিলো , এইবার তো র্গিজার ঘন্টার মতোই ঘুম তাড়ালো । ভূতে পেলো নাকি ওটাকে ! অযাচিত বললে কম হবে , রাতের শহরে শেষ ট্রেনের শিটি মানা যায় , কোন ট্রাক থেকে ভারি মাল ফেলার শব্দ বা দূরপাল্লার ধুমসী বাসের জোর ধমক বা দু একটা অল্পপ্রাণ গুলি বাজি বোমার স্বর কিংবা কোন নারীর হঠাত্‍ করাত চিত্‍কার কাঁচের মতো অন্ধকারকেও টুকরো টুকরো করলেও মেনে নিতাম । তাই বলে ব্যাঙের ডাক … এই শহরে ! পুকুর ঝিল ডোবা কল্পনায়ও যারা দেখে না যেখানে জল মানেই সুয়েজ নর্দমা , ওখানেও বা কতোটুকো পানি ? সবটাইতো কালো ময়লায় জমটা বাঁধা , ঘনত্বে কঠিনের কাছাকাছি ।গেলো কয়েক রাতে একটা টিয়া পাখি ছিলো আমার কাছে বিজ্ঞাপনের নামে নাম ;ইরা , কথা শিখাতে শিখাতে ঘুম পাড়াতাম একদিন ঘুম ভেঙে দেখি পাখিটার পাদুটো ডানায় লুকানো ডানাদুটো শক্ত হয়ে আছে চোখ বন্ধ আমার বুকের শীতে ; সমান্য সর্দি জ্বরেই মারা গেলো পাখিটা । আজ এলো এই উভয়চরটা , রুমের কোণ থেকেই তো ডাকছে , ব্যাঙের ডাক আবার খুব একটা শালীন না … বর্ষা কাল এলো না কি ? নাতো এটাতো অক্টোবর হুম আজ ২৯ । আবার ডাকলো ! হতচ্ছাড়া আমার ঘরটাকে ঝিল বানিয়ে ছাড়বে বিছনায় কাঁদা জমে গেলো পা তুলে তুলে হাঁটছি তাতেও পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ছে ছাঁচের মতো নরম মাটিতে … আর পারছিনা ব্যাগ খুলে ব্রোমাজেমাপ আর মিডাজোলাম … আরে যা হোক একটা কিছু চাই ঘুম চাই । আরে প্যাকেটের গায় সুন্দর একটা ছবি জানলার পাশে বিছনায় শুয়ে আছে একটা মেয়ে গালের উপর তারার ছায়া তার নিচে লিখা … now count stars in your dream . দুটা পাঁচটা দশটা বিশটা উঁ হুম কয়টাতে শেষ ঘুম আসে আমি জানি , প্রায় দেখি রুগীরা আসে একপাতা আধা পাতা ব্রোমাজেপাম খেয়ে … আমার হাসি পায় সুইসাইড এতো সোজা !
জানলা খুলো দাঁড়ালাম নক্ষত্র গুণবো বলে । বৃষ্টি পড়ছে বৃষ্টি ইলসেগুঁড়ি ; যাক এতক্ষণ জলই খুঁজছিলাম … বৃষ্টি পড়ছে চাঁদটাও কমলার একটা কোষের মতো বাতাস আসছে জানলার পর্দাগুলো আবৃত্তি করছে । কী আবৃত্তি করতে পারে ? … হুম… হুম… হুম পেয়েছি
T E HULME …
ABOVE THE DOCK
above the quiet dock in midnight

tangled in the tall masts corded height ,

hangs the moon . What seemed so far away

is but a child’s balloon forgotten after play .

বাহ হিউম বেলুন বললো চাঁদকে , মাস্তুলের উপর ঝুলছে । তাইতো এই চাঁদটাওতো ঝুলছে দূরের এন্টেনার উপরের …

আবার ওদিন কোথায় যেন পড়ছিলাম বৃষ্টিকে প্রস্রাবের সাথে তুলনা করছে কোন একটা কবিতায় হয়তো ! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ও দেখি জল জল করতে করতে পেচ্ছাপ করে দেয়
এই যেমন তাঁর জলের সামনে কবিতায়

” জলের ভিতর গিয়ে নিজের শরীরটাকে চিনে নেয়

জলের ভিতরে

সহাস্য পেচ্ছাপ করে লজ্জাহীন বাতাসের মতো জল , পরাগ ছড়ায় “

আবার ইচ্ছে কবিতা বলছেন
” কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায়

ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি “

আরে অনেক জায়গায় কবি হিসি করেছেন তাঁর ব্লাড সুগারটা দেখা দরকার বহুমুত্র রোগ কি না কে জানে ! হিসির উপর অতি আগ্রহের
আরেকটা ডায়গোনোসিস হতে পারে urolagnia , সঙ্গাটা এমন a pervertion in which sexual excitement is associated with the sight or thought of urination . কী বিচিত্র ! … Havebck Ellis একজন বিখ্যাত sexologist ৬০বছর বয়সে যখন তিনি এক মহিলা কে প্রস্রাব করতে দেখলেন তখনই তিনি প্রথম বারের মতো আবিষ্কার করলেন তিনি নপুংসুক না । এটাকে বিকৃত কাম বলা যেতে পারে । কিন্তু ফ্রেয়েড আবার তাঁর Three essay on the theory of sexuality তে এই বলেই রেশ টানেন all human are innately perverse .

কী জানি জানি না ! পড়তে হয় তাই পড়ি পড়ে এমনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ পাই যেন পাবলিক টয়লেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি …

এরচেয়ে হিউমের বেলুনটাই বেশ , শান্ত উড়ছে চাঁদটা ঝুলছে আমার মুঠোর মধ্যে নক্ষত্র জ্বলছে একমুঠো সিডেটিভ


– কি রে ? ঘুমাসনি ?
– বাবা তুমি ! কি একটা শব্দ বিরক্ত করছে খুব । তুমি ঘুমোও নি ?
– হুম ঘুমিয়েছিলাম । ভেঙে গেলো । কিসের শব্দ পেলি আবার ?
– একটা ব্যাঙ । আচ্ছা এমনি এমনি ঘুম ভেঙে গেলো ? ঘুমের ঔষধ লাগবে ?
– না রে । বসবি ? একটু কথা বলি
– হুম । বসলাম
– তুই একটা স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারবি ?
– বলো , শুনি ।
– ছেলে বেলায় একটা স্বপ্ন প্রায় দেখতাম আমি আর তোর দাদী একটা মাঠ পেরুচ্ছি … আমি বারবার জিগ্যেস করছি মা আমরা কোথায় যাচ্ছি ? তোর দাদী বলতো তোর নানার বাড়ি যাচ্ছি বাপ । যেতে যেতে একটা কাশবন নিবিড় সাদা … তোর দাদী আমাকে টেনে ঢুকে পড়লো ঐ বনে আমার নাকে মুখে তুলো চোখে তুলো চোখ বুজে ফেলি । হাঁটছি আর হাঁটছি ঐ হাঁটা শেষ হয় না … আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি আমি একলা সাদায় ডুবে যাচ্ছি তোর দাদী নেই । আমি মা মা কেরে ডাকছি তোর দাদী নেই … শুধু একটা কথা কানে এলো হাঁটতে থাক বাপ থামিস না , আমি আর পারছি না রে বাঁকিটা তুই একাই পারবি … আমি ছুঁটতে শুরু করলাম তোর দাদীর কন্ঠটার দিকে ..
জানিস তুই এই স্বপ্নের মানে ?

– না বাবা জানি না ।ঐ স্বপ্নটা দেখলে বুঝি এখন আবার ?

– তোর দাদী মরার পর প্রায় দেখতাম ।

– না তুমি আর দেখবে না এই স্বপ্ন । বাবা তোমার কোলে মাথা দেই একটু ?

– কি রে কাঁদছিস না কি আবার ?

– না তো এমনি শুয়ে আছি খুব ঘুম বাবা অনেক ঘুম পাচ্ছে । আমি আর কাঁদি না বাবা চোখে পানি আসলেও কাঁদি না বাবা । নিষেধ আছে …

– কার নিষেধ রে ?

– আমার এক বন্ধুর ।

– তোর বন্ধু ? হাসালি ।

– কেন ? আমার বুঝি বন্ধু থাকতে নেই ?

– আজ কি স্বপ্ন দেখেছি জানিস ?
দেখলাম আমি আর তুই ঐ মাঠটায় হেঁটে যাচ্ছি তোর কত্তো প্রশ্ন … আর আমার আঙুল ধরে টানছিস এই বলে সেই বলে যেতে যেতে ঐ কাশবন , তুই ছুটে যেতে চাইছি ওদিকটায় আমি দিলাম না জাড়িয়ে রাখলাম দুবাহুতে … তারপর হঠাত্‍ তোর ডাক শুনি ” বাবা বাবা আমি হারিয়ে যাচ্ছি বাবা আমাকে তুলে ধরো আমি ডুবে যাচ্ছি “। দেখি আমার মুঠো ভর্তি কাশ ফুল তুই নেই …
আর তখনই ঘুম ভেঙে গেলো তোর ডাক শুনে ।

– না বাবা , আমি ডাকি নি । ঐ ব্যাঙটা ডেকেছে ।

– কোথায় ব্যাঙ ! দে ঔষধগুলো দিয়ে দে মুঠ খোল বলছি ।

– নাও বাবা ফেলে দাও ওগুলো । আমি যাবো না , তুমি আমাকে এই ভাবে জাড়িয়ে রাখো ।

– তুই আর বড় হলি নারে ! মনে আছে একবার রাগ করে তোর মায়ের ঔষধ খেয়ে ফেললি ?

– হুম মনে আছে হোমিওপ্যাথের ছোট্ট শিশিগুলো তিনটা একসাথে ।
তারপর তো খুব মারলে আমায় ওটা বুঝি মনে নেই ? জ্বর চলে এসছিল

– আছে আর আজও তোকে মারতে ইচ্ছে হচ্ছে ।

– তো মারো আপত্তি নেই ।

– না মারবো না । একটা কবিতা শুনাবি ? ঐ ফররুখ আহমেদের কাশবনের কবিতাটা …

– ফররুখ আহমেদ কেন বাবা ! ওনার কবিতা আমি পড়ি না , উনি বির্তকিত । ডানপন্থী ঘেঁসা ছিলেন ।

– তাতে কি রে ? ডান বাম আমি সারা জীবনেও বুঝলাম না ?

– হা হা ওটা আমিও বুঝি না । ধরো এমনিতেই পড়ি না ।

– তোর মুখস্থ নেই ?

– বাবা বৃষ্টি বেড়েছে আমি জানার পাশে যাচ্ছি তুমি শুতে যাও আমি বৃষ্টি দেখবো …

৩.
হুতুম ,
অনেকদিন পর লিখছি তোকে । আমি জানতাম না আমার চিঠিগুলো তোর বিরক্তির কারণ হবে , একটা একটা করে লিখেছি কখোন হসপিটাল থেকে কখনো রিকসায় কখনো ঘুমতে ঘুমতে কখনো ঘুম থেকে জেগে কখনো অঘুম নাইটডিয়্যুটি থেকে ফিরে ।আর ঐবজ্জাত ডাকপিয়নটা সব জমা করে রেখে তোর ঘাড়ে এক বস্তা চিঠি নিয়ে ফেললো , তুই খুব বিরক্ত হয়েছিস জানি মাফ করে দিস । আমার ছেলেমানুষীগুলো তোকে খুব কষ্ট দেয় ।

একটা কবিতা লিখেছি শুনবি


আমার জমানো চিঠিগুলো ভারি হয় পোস্টবক্সে

তোর সামনে পড়লে ঝরে যায় মাথা নিচু করে

আমি বলি – পাঠাবো না আর ।

সাজ করে আনা , কড়ি আনা কথাগুলো

চিঠির পাতায় থাকে না আর চুপ করে

ডাকঅফিসে পোস্ট করার আগে ঠিকানা জিগ্যেস করে

আমি বলি – ভুলে গেছি

তামাদি শব্দরা পৌঁছে যায় লাশকাটা ঘরে ।

তাও খাম কিনি বিষের মতো নীল খাম

চিঠি পুরি খামে কাফনের মতো সাদা চিঠি

আমি বলি – তোর ঠিকানাটা কী

… যদি এটাই হয় শেষ চিঠি ।

আজ মন খুব ভালো তাই তোর নিষেধ শুনবো না তোকে আবার লিখবো ।আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে । তোর চুল নিংড়ানো জল দিবি না আমায় ? আমার জ্বর নামাবো ।কয়েক সপ্তা ধরে রাতের খাওয়ার টাকা থেকে জমাচ্ছি একটা বই কিনব তোর জন্য কিন্তু তোকে লিখাইতো বারণ পাঠাবো কি করে জানি না । হুতুম আমি আর ঘুমের ঔষধ খেয়ে তোকে খুঁজি না যেদিন এক্কেবার ঘুমবো …
দেখিস একদিন আমি ঠিক খুঁজে নিবো তোকে ঐ কাশবন থেকে । তুই কি এখনও প্যাঁচাটাই আছিস না একটা সাদা বক … ভালো থাকিস তোর জন্য অনেক দোয়া করি চিঠিগুলো না পৌঁছোলেও দোয়া তো পৌঁছুবে … তাতে তো তোর রাগ হবে না ।


চিঠিটা শেষ হলো হয়তো শেষ চিঠি … তারপর একটি ! বিস্ময়বোধক চিহ্ন চিঠিটার উপর নড়ে বসলো । আরো একটা তামাদি চিঠি

একটা কল করবো । এতোক্ষণ ধরে এলার্ম বাজছিল ফোনটায় খেয়াল করিনি …

“হ্যালো ,
বাবা ।

নাতো নাইট ডিয়্যুটি না
এমনিতেই জেগে আছি

ঘুম আসছিল না

একটা কবিতা শুনবে বাবা


বৃষ্টি এলো কাশ বনে ,
জাগল সাড়া ঘাস বনে ,
বকের সারি কোথায় রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে ।
নদীতে নাই খেয়া যে
ডাকলো দূরে দেয়া যে ,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে ।
গাঁয়ের নামটি হাটখোলা
বৃষ্টি বাদল দেয় দোলা ,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে
যায় দাঁড়িয়ে পথ ভোলা ।
মেঘের আঁধার মন টানে
যায় সে ছুটে কোন খানে
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে ***

জানলার ফাঁকে হাত হাতের মুঠোয় নক্ষত্র বৃষ্টিতে ভিজছে সবগুলো ছুঁড়ো দিলাম শহরটার দিকে শহরটা ঘুমোক আমি ঘুমোবো না । শহরটা ঘুমোবে তার স্বপ্নে একটুকরো গ্রাম , গ্রাম জুড়ে বৃষ্টি কাশবনে বৃষ্টি একটা বক নরম বাতাসে দুলছে একটা বিস্ময়বোধক চিহ্নের মতো ।
বক

[ আমি যা ভাবি তাই লিখি আমি যা তাও লিখি তাতে অনেক খসড়া হয় দুএকটা কবিতা হয় কিন্তু গল্প তো আর হয় না , তাই এই পোস্টটায় গল্প করতেই চেষ্টা করেছি তাতে আমি হয়তো কম কিংবা একটুও নেই কিন্তু আমারইতো লিখা আর আমার গল্প লেখার এই চেষ্টাটুকো আমার প্রিয় লেখিকা রাবেয়া রব্বানির জন্মদিনে বিনীত হোক । শুভ জন্মদিন অনেক ভালো থাকুন আবার লিখুন … অনুরোধ ]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


17 Responses to ২৯শে অক্টোবর : বিস্ময়বোধক চিহ্ন

You must be logged in to post a comment Login