চারুমান্নান

অনুগল্প-মর্মপীড়া, ‍সময়ের জট

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

অনুগল্প-মর্মপীড়া, ‍সময়ের জট

আমি আমার সন্তানকে,ভালোবাসতে শিখি নাই কিংবা সঠিক পথে চালাতে পারি নাই। তাই বোধ হয়, রতন টা নষ্ট হয়ে গেল।একটা সময় ছিল, যখন ওর পাশে বসতে পারি নাই। কথা গুলো বির বির করে বলছিল,কেরামত মওলা।
একমাত্র ছেলে রবি, মাদকাসক্ত। লক্ষ লক্ষ টাকা সব বিফলে গেল। কোন চিকিত্সাতেই কাজ হল না। তবুও হাল ছাড়লো না, রবিকে বিয়ে করা লো। এক মাত্র নাতি আছে। কিন্ত শান্তি নাই, রাত দিন ঝগড়া। অশান্তি একটা না একট আছে। থানা পুলিশ, পাড়ার বিরক্তিকর কথা। সব মুখ বুজে হজম করতে হয় কেরামত মওলার।

আবার ভাবে এই জন্য হয়তো আমিই দায়ি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। আজ এই মিটিং তো কাল ঐ মিটিং। বাসায় আসতে আসতে সবাই ঘুমে। টাকা পিছে ‍পিছে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে নতুন কুড়ির চারাটা, সবুজ পাতা ভর্তি তর তাজা গাছ হয়েছে টের পাইনি কেরামত মওলা। সেই গাছে এখন মোড়ক লেগেছে। বাঁচানো কষ্ট সাধ্য।

তিনি এখন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। হুইল ‍চেয়ার যার এখন চলার একমাত্র সঙ্গী। গাড়ী বাড়ী টাকার পাহাড়, এখন কেরামত মওলার যেন এক অস্পৃশ্য যন্ত্রণা। এত টাকা তাকে সুস্থ করে না। তার শরীরকে সোজা করে না।
সন্তানরা আজ নষ্ট। ঘুনে কেটেছে শিকড়, তাজা গাছের। দিন দিন সবুজ গাছটি হলুদ বর্ণ ধারন করছে। যে সুখের জন্য এত ছুটাছুটি। সেই পারছে না সুখ দিতে। গত তিন বছর, স্ত্রীটা মরে বাঁচলো। আমাকে এই প্রাসাদ সুখে কবর দিল।

কেরামত মওলার স্ত্রী প্রায় বলতো, এত ছুটাছুটি কেন তোমার? এবার একটু ক্ষান্ত দাও। জীবন বোধে,ধ্রুবতারার একটু ছোঁয়া নেওয়ার চেষ্টা কর। একদিন শক্তি হারালে আর ছুঁতে পারবা না, ঐ ধ্রুবতারা অমীয় আলো।
সেই দিন কেরামত মওলা স্ত্রীর কথা পাত্তা দিত না। এখন বুঝতে পারছে হারে হারে, কথাগুলোর মর্মার্থ অনুধাবনে খানিক তটস্থ হয়। কিন্ত শরীর আর কুলায় না।

১৪১৮@২৩ অগ্রহায়ণ,হেমন্তকাল

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


9 Responses to অনুগল্প-মর্মপীড়া, ‍সময়ের জট

You must be logged in to post a comment Login