৭১’এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গভীর রাত থেকে শুরু হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে বর্তমানের বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডের সাধারন মানুষের উপর হত্যা-ধর্ষনসহ একটা পরিকল্পিত গনহত্যা এবং বুদ্ধিজীবি নিধনযজ্ঞ অভিযান। এটা পরিচালিত হয় পাকিস্থানী সেনাবাহিনী এবং বাঙালীর মধ্যে একদল দালাল – রাজাকার, আলবদর, আল শামস এবং শান্তি কমিটি নামক সহযোগী বাহিনী তৈরীর মাধ্যমে।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির৷ একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের সক্রিয় এই সেনা যুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সক্রিয় হন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের এক লড়াকু সৈনিক শাহরিয়ার কবির৷ যুদ্ধের সময় দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা নিয়ে গঠিত হয় সাত নম্বর সেক্টর৷ এই সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন শাহরিয়ার৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধের নানা অভিজ্ঞতা বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি৷
যে স্মৃতি ভুলবার নয়
একাত্তরের কিছু স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় শাহরিয়ার কবিরকে৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন এমনই এক অভিজ্ঞতা, যা কখনো ভুলবার নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘একটা ঘটনা আমার এখনো চোখে ভাসে৷ ছোট্ট একটি ছেলে, যার বয়স তখন ১৩ কিংবা ১৪ বছর, নাম শিবলী৷ তাকে রেকি করতে পাঠানো হয়েছিল, রাজশাহী শহরে রকেট হামলার আগে৷ কিন্তু সে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যায়৷”
শিবলীকে রাজাকাররা অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে৷ শাহরিয়ার বলেন, ‘‘তাকে তারা বেঁধে গাছের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়েছে৷ তার চামড়াগুলো ফালি ফালি করে কেটে লবণ মাখিয়েছে৷ রাজাকারদের উদ্দেশ্য ছিল, শিবলীর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা৷ কিন্তু শিবলী একটা কথাও বলেননি৷ চুপচাপ সমস্ত নির্যাতন সহ্য করেছেন৷ সারারাত নির্যাতনের পর সকালে মারা যান শিবলী”৷
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শাহরিয়ার কবির৷ স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন তিনি৷ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত এই মুক্তি সেনা৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন করেন শাহরিয়ার কবির৷ তবে শুধু ব্যক্তি নয়, যেসব সংগঠন যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত সেসবকেও বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চান তিনি৷ শাহরিয়ার কবির এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীকে বিচার করতে হবে, রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর বিচার করতে হবে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কিন্তু মিত্রশক্তি জার্মানির নাৎসি বাহিনী, এসএস, এসএফ – এদের বিচার করেছে এবং চারটি সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন৷ আমরা সরকারের উপর সেই চাপটা দিচ্ছি, যে সংগঠনেরও বিচার করতে হবে, ব্যক্তির পাশাপাশি”৷
বর্তমানে একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি নিয়ে ব্যস্ত শাহরিয়ার৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে এই প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছেন তিনি৷ এজন্য সেদেশের কয়েকটি এলাকাও সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন শাহরিয়ার কবির৷ তিনি বলেন, ‘‘কদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম শিলং-এ শ্যুটিং করতে৷ সেখানকার একটা মুসলমান পরিবার, হোসেন ভ্রাতৃদ্বয়, তারা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যেতেন, শহীদ হতেন, তারা সেই লাশগুলো এনে দাফন করতেন৷ লাশের যাতে কোন অমর্যাদা না হয় সেজন্য, তারা শহীদদের লাশগুলো রাতের বেলা গাড়িতে করে নিয়ে এসে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করতেন”৷
শাহরিয়ার জানান, যুদ্ধের সময়কার এরকম বিভিন্ন ঘটনা আমরা প্রামাণ্যচিত্রে তুলে ধরা চেষ্টা করছি৷ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই প্রামাণ্যচিত্রটি উদ্বোধন করা হবে৷
মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাদের চোখে ধর্মোদ্রোহিতা, এবং দেশদ্রোহিতাও। পাকিস্তানী প্রভুদের মনোরঞ্জনে এরা করেনি এহেন অপকর্ম নেই। সোনার বাংলায় আগুন দিয়েছিল, বুদ্ধিজীবি ও সাধারন মানুষ হত্যা করেছে, মুক্তিকামীদের তুলে দিয়েছে পাক হানাদারদের হাতে। তারা নয় মাসে আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছিল। ইসলামের নামে এদেশের ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। আমরা ইতিহাসের সব থেকে বড় ঘৃণিত তিরিশ লক্ষ স্বজন হত্যার বিচার চাই।






সেরা বাংলা ব্লগ পুরস্কার পেলো -শৈলী














10 Responses to ৭১’এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
You must be logged in to post a comment Login