শাহেন শাহ

বইমেলা ও শাহবাগের তরুণদের মহাসমাবেশ মিলেমিশে একাকার ॥ লাখো মানুষের ঢল

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ (বিডিএনএন২৪) :- অমর একুশে গ্রন্থমেলা আর শাহবাগ চত্বরের তরুণ প্রজন্মের মহাসমাবেশ আজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি ও একুশের বইমেলায় শরীক হতে মানুষ প্রাণের টানেই আজ ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন রাজপথে। যে ব্যক্তিটি আগে বইমেলায় এসেছেন, তিনিই বাড়ি ফেরার পথে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়েছেন শাহবাগে। আবার মহাসমাবেশে আগে আসা ব্যক্তিটি বই বগলদাবা করেই বাড়ি ফিরেছেন। অনেকে পুরো পরিবারসহ এসেছেন বইমেলা ও শাহবাগ চত্বরে। এ দু’স্থানসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা আজ পাঠক, দর্শনার্থী ও যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি নিয়ে আসা লাখো জনতার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

কণ্ঠে দ্রোহের আহবান নিয়ে বিকেলে যে জনস্রোত প্রজন্ম চত্বরে ছিল, সন্ধ্যায় মেধা ও মননে শুদ্ধ হতে তা আছড়ে পড়ে একাডেমী প্রাঙ্গণে। এছাড়া আজ শুক্রবার হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিদ্যার দেবী স্বরসতী পূজা থাকায় সকাল থেকেই বইমেলা প্রাঙ্গণ জমে উঠে। তার উপর আজ মেলায় তৃতীয় শিশুপ্রহর থাকায় সকালে শিশুদের যেমন আধিপত্য ছিল, তেমনি এসেছিলেন সর্বস্তরের পাঠক। সারাদিনই পাঠকদের এই আগমনে প্রকাশকদের বেশ খুশি দেখা গেছে। আজ মেলা শুরু হয় সকাল নয়টায়। শুরুতেই পুরো একাডেমী চত্বর মুখর হয়ে উঠে খুদে কন্ঠের সুমধুর ধ্বনিতে।

কারণ বইমেলা উপলক্ষে একাডেমী আয়োজন করেছিল শিশু-কিশোরদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতার। শিশুদের কলকাকলিতে মুখর এই প্রতিযোগিতায় প্রায় তিন শ’ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। ভাষার গান ও ছড়া এ দুটি বিভাগে শিশু-কিশোররা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর তুলে ধরে। সকাল দশটার দিকে মেলা প্রাঙ্গনে আসে ঢাকার অদূরে অবস্থিত কেরানিগঞ্জের চরাইল নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক দল ছাত্র। স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর উৎসাহে তারা ছুটে আসে মেলায়। শিক্ষকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেলায় এসে প্রত্যেকেই কিনেছে একটি করে বই। ১৬ জনের এ দলে ছিলো রাকিব, রিয়াদ, আরিফ, সোহাগ, সাগর, ইকরাম, রব্বানী, ফুয়াদ, সাবের, ইয়াসিন, মাসুম, এনাম, নাঈম, বায়েজিদ, হাসান ও জাহেদ।

এদের মধ্যে বায়োজিদ বিডিএনএন২৪কে বলেন, আমি জীবনে এবারই প্রথম বইমেলায় এসেছি। এতো বই দেখে আমার মনটা আনন্দে ভরে গেছে। আমি এখানে এসে ভেবেছি বড় হয়ে লেখক হবো। এমনই উচ্ছ্বাসে ভরা ছিলো শুক্রবারের শিশু প্রহর। শিশুরা অভিবাবকদের হাত ধরে মেলার স্টলে স্টলে ঘুরেছে। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখেছে। যে বইটির প্রচ্ছদ ও ভিতরের অলংকরণ মনে ধরেছে, সেটিই কেনার বায়না ধরেছে।

প্রকাশকদের মতে, আগের দুই শিশু প্রহরের চাইতে শুক্রবারের শিশুপ্রহরে বেচাবিক্রি ভালো হয়েছে। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রায়হান বলেন, গত শিশু প্রহরের চাইতে আজকে শিশুদের উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাস দু’ই বেশি। আর আমাদের বিক্রিও ভালো। শিশুদের উচ্ছ্বাসের সূত্রপাত দিয়ে শুরুর দিনটি বিকেলে নানা বয়সী মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে অল্প সময়েই মেলা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মানুষের উপচে পরা ভিড়ে বেচাকেনা নিয়ে সন্তষ্ট প্রকাশকরা।

আজ মেলায় দেখা গেছে এবার একুশে পদক পাওয়া কবি আসাদ চৌধুরীকে। তিনি বিডিএনএন২৪কে বলেন, মেলায় আজ উপচে পড়া ভিড়। বরাবরই ছুটির দিনে ভিড় থাকে। তবে আজ ভিড় বেশি হওয়ার কারণ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের গনজমায়েত। মুক্ত মনের মানুষরা আজ মেলা থেকে শাহবাগ অথবা শাহবাগ থেকে মেলায় আসছেন। এক কথায় “রথ দেখার সাথে কলা বেচা” আর কি। শাহবাগের কারণে বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে না প্রকাশকদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, শাহবাগ বর্তমানে বাংলাদেশের নাভী। প্রকাশকরা হয়তো এখন বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে না বলার একটা কারণ পাচ্ছেন। কিন্তু আসল কথা হলো- প্রকাশকরা কখনোই বেচাকেনা ভালো হচ্ছে, এটা বলেন না।

উৎস প্রকাশনের সত্বাধিকারী মুস্তাফা সেলিম বলেন, ‘প্রতিবছরই মেলার মাঝামাঝি সময়ে মেলা জমতে শুরু করে। এবারো তার ব্যাতিক্রম নয়। শাহবাগ আন্দোলনের কারণে আমাদের বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে, তবে এখন সময় এসেছে তারুণ্যের জাগরণে সংহতি প্রকাশ করার। তাদের এই আন্দোলন আরো দীর্ঘায়িত হলেও, আমরা তাদের সাথে আছি। ভাষাচিত্রের প্রকাশক খন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলা এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার প্রচুর পাঠকের সমাগম ঘটেছে। তাদের প্রত্যেকে হয়তো বই কেনেনি, কিন্তু তাদের এ আগমন আমাদের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক।

নজরুল মঞ্চের চিত্র
আজ মেলার পঞ্চদশ দিনে উন্মোচিত হয়েছে ১০ টি নতুন বইয়ের মোড়ক। এর মধ্যে আলমগীর মোহন রানার ‘নষ্ট দ্রোহের নীল চোখ’ ও ‘প্রথমা তোমার জন্য অপেক্ষায়’ বই দুইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, বাকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম ও এস এম সালাউদ্দিন। কবি কামাল চৌধুরী উন্মোচন করেন আগামী প্রকাশনী থেকে আসা শেখ হাফিজুর রহমানের দুইটি বই ‘হিরোমনি’ ও ‘স্বর্গ থেকে প্রত্যাবর্তন’।

নতুন বই
বাংলা একাডেমীর সম্বনয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আজ মেলায় ১৯৯ টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে জনান্তিক থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আমিই সে’, সমরেশ মজুমদারের ‘স্বপ্নের বাজার’, হাওলাদার প্রকাশনী থেকে এসেছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্ল¬াহর ‘গল্প’, জাগৃতি থেকে আনিসুল হকের ‘ভুল ও ভালোবাসার গল্প’, অনন্যা থেকে হানিফ সংকেতের ‘কষ্ট’, রোদেলা প্রকাশনী থেকে শামসুজ্জামান শামসের ‘নোবেল বিজয়ী তিন বাঙালি’, মুক্তদেশ থেকে মুম রহমানের ‘বিশ্বসেরা চলচ্চিত্র’, মিজান পাবলিশার্স থেকে সাগর চৌধুরীর ‘বাজি’, চন্দ্রছাপ থেকে এসেছে ড. মো. ইউসুফ মিঞার ‘কবিতার ছন্দে পানির রসায়ন’ ইত্যাদি।

মূল মঞ্চের আয়োজন
আজ মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘গবেষক-সম্পাদক আবদুল কাদির’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন আবু বকর সিদ্দিক। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, গবেষক সলিমুলাহ খান এবং গবেষক হাবিব রহমান। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন কাজী আরিফ, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, হুসনে আরা রুবী এবং মিজানুর রহমান সজল। মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় ‘দৃষ্টি’, মোহাম্মদ ফয়জুল বারীর পরিচালনায় ‘সুরতাল সঙ্গীত একাডেমী’ ও সুলতানা হায়দারের পরিচালনায় ‘সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন’ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়।

আগামীকালের আয়োজন
কাল শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোরদের সাধারন জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। বিকেলে মেলার মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘শহীদুল জহির : কোথায় পাব তারে’ শীর্ষক আলোচনা সভা। মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন প্রশান্ত মৃধা। মনজুরে মওলার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন আনিসুল হক, সাদ কামালী ও শাহ্নাজ মুন্নী। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Courtesy: khabor.com

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login