নীল নক্ষত্র

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব] পর্ব-১০

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সিরাজ চৌধুরী এক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। আশে পাশে দশ গ্রামে তার প্রতাপ। বিভিন্ন শালিস দরবার, আচার অনুষ্ঠানে সিরাজ চৌধুরী উপস্থিত না হলে সে অনুষ্ঠানের মান হানী হয়। গ্রামে যথেষ্ট জমি জমা, পাশের বাজারে বিশাল ব্যবসা। দেশ বিভাগের আলামত পেয়ে আগেই কোলকাতায় কাপড়ের যে ব্যবসা ছিল তা গুটিয়ে ভাইকে নিয়ে চলে এসেছিল। চল হাশেম এখন আর আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না। গ্রামে ফিরে কোলকাতার ব্যবসার টাকা দিয়ে ঢাকায় কিছু জলা ভূমি কিনে রেখেছিল আজ যার দাম কোটি টাকার উপরে। বাকি টাকা দিয়ে স্থানীয় বাজারে একটা দোকান করেছে সেটা ছোট ভাই হাশেম দেখা শুনা করে। পৈতৃক  জমিগুলি আগের মতই রাখাল চাকরেরা দেখে। দুই ভাই মিলে একান্নবর্তী সংসার। রাখাল চাকর, দোকানের কর্মচারী মিলে বাড়িটা একটা হাটের মত। বাড়িতে দৈনিক প্রায় এক মন চাউল না হলে চলে না। মাঝে মাঝে বাজারে ছোট ভাইকে সাহায্য করে। আশে পাশের যত দরবার শালিস করা আর বর্ষা এলেই লোহা কাঠের তৈরি জেলেদের মত এক মস্ত মাছ ধরার নৌকায় চেপে পদ্মার ইলিশ পাঙ্গাশ ধরার নেশা। এই নিয়েই তার দিন বেশ সুখে কেটে যায়। মাছ ধরার এমন কোন সামগ্রী নেই যা তার সংগ্রহে নেই। ও পাড়ার সুবল তার মাছ ধরার সঙ্গী বা সহকারীও বলা যায়। নৌকার যত্ন নেয়া, যন্ত্রপাতির যত্ন নেয়া গুছিয়ে রাখা এ গুলি সেই করে। কোথাও যাওয়া আসার পথে এক নজরে জমি জমা যা নজরে আসে তাই যথেষ্ট, বাড়িতে ফিরে বা ক্ষেতের আলে দাঁড়িয়ে প্রধান রাখাল জয়নুলকে বলে দেয় কি ব্যাপার জয়নুল মিয়া এই জমিতে কি আগাছার চাষ করেছ না কি বুনেছ কিছু বুঝতে পারছি না, পাশের জমিটা একটু দেখ ওর পিয়াজ গুলি কেমন সুন্দর হয়েছে আর তোমার এ অবস্থা হলে সংসার কোথায় যাবে? তাড়াতাড়ি নিড়ানি দেবার ব্যবস্থা কর।

 

বড় মেয়ে বীণার বিয়ে দিয়েছে ভাগ্নে কবিরের কাছে, ঢাকায় তার বাড়ি আছে, ভালো চাকরী করে বেশ সুখেই আছে। মেঝ মেয়ে নিরু গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে যায় আসে। পড়াশুনার চেয়ে বাবার মত মাতব্বরি করাতেই তার বেশি আগ্রহ। গ্রামের আর সব সম বয়সীদের নিয়ে তার সমাজ। তাদের মধ্যে বিচার সালিশ করা, ঝগড়া ঝাটির নিষ্পত্তি করা, গাছের মাথায় শালিকের বাসা থেকে বাচ্চা তুলে এনে পেলে পুলে বড় করা, সারা দিন এ গাছের ও গাছের ফল মুল পেড়ে বিলানো তার প্রধান কাজ। ওদের বাড়িটাও বেশ বড়, গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাড়ি বলা যায়। বাড়ির সামনে পিছনে দুই দিকেই রাস্তা। সামনের রাস্তা দিয়ে উঠে ডান পাশে সাবেক আমলের পরিষ্কার টলটলে জলের বিশাল এক ইঁদারা, তার একটু দুরেই পুরনো এক জাম গাছ, বাম দিকে একটু ভিতরে একটা কত বেল গাছ। চারি দিকে ঘিরে নারকেল, খেজুর, সুপারি এবং নানা জাতের ফলমূলের গাছ পালায় ঘেরা বাড়ি। পশ্চিমে চাচাত ভাইয়ের বাড়ি। পূর্ব দিকে পুকুরের পাড়ে ঈদগাহ, তাদেরই পূর্বপুরুষদের ওয়াকফ করে দেয়া। নিরুর গণ্ডি অবশ্য এর মধ্যেই সীমিত। পুকুরে ডুবানো নৌকা তুলে মাছ ধরাও তার বাবার মত এক নেশা।

বাবা পদ্মা থেকে মাছ ধরে ফিরে এসে বাড়ির ঘাটে পৌছার আগেই ডাক ছাড়ে কই রে মা নিরু আয় দেখ কি এনেছি। নিরু এসে দেখে নৌকা তখনো ঘাটে ভিড়েনি। তাতে কি, এক লাফ দিয়ে পানিতে নেমে সাতরে নৌকার কাছে যেয়ে হাত বাড়িয়ে বাবার হাত ধরে নৌকায় উঠে পাটাতন খুলে মাছ দেখে চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডেকে অস্থির। ততক্ষণে সুবল ঘাটে ভিড়ে লগির সাথে নৌকা বেধে ফেলেছে। নিরুর চিৎকারে মা চাচী ভাই বোনেরা এসে ধরা ধরি করে মাছ গুলি ভিতরে নিয়ে গেল। এবার ভিতর বাড়ির পালা। নিরুর মা হাঁক ছাড়ল বারেকের মা তাড়াতাড়ি মশলা বাট।

এই নিরু এখন একটু বড় হয়েছে। গ্রামের পাঠশালা ছেড়ে ঝিটকা হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এক দিন স্কুল থেকে ফিরে দেখে অচেনা এক ছেলে চাচাত ভাই শিহাব আর বোন যুঁই এর সাথে শিহাবের ঘরে বসে সিনেমার নায়কদের মত সুন্দর ভাষায় কথা বলছে। কোঁকড়ানো চুল, সুন্দর চেহারা, পরিপাটি করে শার্ট প্যান্ট পরা। এই চেহারা তো আগে কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারছে না। মনে একটু বিস্ময় নিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাড়ির ভিতরে এসে বই খাতা টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে দাদির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল

ওই যে ওই ঘরে মেঝ ভাই আর যুঁই আপার সাথে কথা বলছে ও কে?

কেন, তোর পছন্দ হয়েছে, ঘটক পাঠাবো?

তখনো সে এই ইঙ্গিতের পছন্দের মানে বোঝে না, ঘটক কে জানে না। তবে ওর মনে হলো ও যেমন সুন্দর খুঁজছে, যেমন সুন্দরের ছবি ওর মনে আঁকা আছে এ যেন সেই। আজ সেই ছবি যেন নিজের ঘরে খুঁজে পেয়েছে।

এ যে প্রকৃতির নিয়ম, যা একান্তই স্বাভাবিক। যে ভাবে এতো দিন ধরে এই পৃথিবীতে চলে এসেছে। অদৃশ্য ভালবাসা আর প্রেমের বন্ধন। যা কখনো কাউকে জানিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে আসে না। একান্ত নীরবে এসে ধরা দেয়। যা এখনো জীব জগতে সকল প্রাণীকে বিহ্বল করে রেখেছেঅদৃশ্য এক সুতার টান। নিরুও তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। নিরুর মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন এলো, মনটা কেমন যেন নাড়া দিয়ে উঠল।

আহা দাদু বল না ও কে? আগে তো ওকে কখনো দেখিনি।

দেখেছিস তোর মনে নেই, ওরা গ্রামে থাকে না। ওই পুরনো বাড়ির ফরিদের বড় ছেলে, ওর নাম নিশাত। তুই যখন খুব ছোট তখন দেখেছিস তোর মনে নেই।

ও আচ্ছা।

দাদিকে এ কথা বলে চলে এলো কিন্তু ওর মনে কেমন যেন একটা তৃষ্ণার্ত ভাবের উদয় হলো যা আগে কখনো হয়নি। কেন যেন আবার দেখতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু অবুঝ হলেও নারী মন তাই কোথা থেকে এক পাহাড় লজ্জা নেমে এসে সে ইচ্ছা থামিয়ে দিল। নিরু এই লজ্জার পাহাড় অতিক্রম করবে কি করে? একান্ন বর্তি সংসারে বড় হচ্ছে, বড় বোনদের দেখে আসছে তাদের কাছে এমন কিছু দেখেনি। যদিও এ বাড়ির আর সব মেয়েদের থেকে নিরু একটু ভিন্ন। তারা প্রায় সবাই ভীরু, নরম মেজাজের যেন মোমের পুতুল কিন্তু, নিরু তা নয়। সে তো অস্থির, দুরন্ত, চঞ্চল, দৌড়া দৌড়ী, লাফ ঝাপ হৈ চৈ যার স্বভাব। যেন চৈত্রের তপ্ত সূর্যের প্রখর তাপ। কিন্তু নিমেষের মধ্যেই নিরুর এ কি পরিবর্তন! নিরু দাড়িয়েই আছে। নিশাতের সাথে কথা বলার ফাঁকে যুঁই বেরিয়ে এলো ওর জন্য নারকেলের লাড়ু আর মুড়ি নিতে। বেরিয়ে দেখে দাদির পাশে নিরু দাঁড়িয়ে আছে।

নিরু, এক জগ পানি আর গ্লাস নিয়ে ও ঘরে রেখে আয়, আমি নাড়ু মুড়ি নিয়ে আসছি।

নিরু এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। কোন ভাবে পা টেনে রান্না ঘরে ঢুকে কলস থেকে এক জগ পানি ভরে ভালো করে একটা কাচের গ্লাস ধুয়ে এ ঘরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইল। যুঁই এসে ওকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল

কি রে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন, আয় ভিতরে আয়।

সামনে যুঁই আর তার পিছনে নিরু ঘরে ঢুকতেই নিশাতের চোখে পড়ল। ফর্সা এক কিশোরী হালকা আকাশী নীলের উপর কাল ছাপার ফ্রক পরনে, মাথায় দুই বেণী, তাতে ফুল করে ফিতে বাধা, চুল গুলি কিছুটা কুঞ্চিত মনে হলো। মানুষ এমন সুন্দর হতে পারে? আমি কি এই ছবি আঁকতে চাইছিলাম? এই কি সেই যে ছবি আমি এতো দিন ধরে কোথায় দেখেছি কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে? চোখের দিকে তাকিয়েই নিশাত বুঝতে পারলো এ মেয়ে দুরন্ত। সাধারণ নয়, অসাধারণ কিংবা আরও কিছু। শিহাবের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ কথা থেমে গেল। এক পলকে ওর দিকে চেয়ে রইল। কে? ওদের বাড়ির কেউ নিশ্চয়, কিন্তু কে? ওদিকে এক হাতে পানির জগ আর এক হাতে গ্লাস নিয়ে নিরু ঘরে ঢুকে এক নজর নিশাতের দিকে তাকিয়েই নিরুপায় দুটো চোখ মাটিতে নামিয়ে এক ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। অদৃশ্য নিয়তির লীলা ভূমিতে এর মধ্যেই একান্ত নীরবে রোপিত হলো দুটি মনের প্রথম প্রেমের একটা নতুন অংকুর যা ওরা কেউ বুঝতে পারলো না। নিশাতের মনে হলো বিধাতা কি একে আমার জন্য পাঠিয়েছেন? হ্যাঁ, এ তো আমার। ওদের এ ভাবে দেখে যুঁই বলল

কি রে নিশাত কি হলো?

নিশাতের কানে সে কথা গেল না। যে ভাবে কিশোরীকে দেখছিল তেমনিই তাকিয়ে রইল। সে কোন এক অচেনা দূর দেশে চলে গেছে যেখানে প্রবল এক চৌম্বক শক্তি ওর চোখ দুটিকে আটকে রেখেছে। নিশাতের অন্তরাত্মা চিরাচরিত এক সুরের মূর্ছনায় সম্মোহিত হয়ে গেল। নিরুও ঠিক তেমনই একই সুতার এ প্রান্ত আর ও প্রান্ত যেমন তেমনি বিমোহিত হয়ে দাড়িয়েই রইল। পানির জগ গ্লাসের কথা ভুলে গেল। এতো দিন কোথায় ছিল? শিহাব একটু ধাক্কা দিয়ে বলল

কি রে নিশাত কি হলো?

তখন নিশাত সম্বিত পেয়ে জিগ্যেস করল কি বললি, এ কে?

জুই বলল আমার চাচাত বোন, বীণা আপার কথা মনে আছে?

কোন বীণা আপা, ওই যে ঢাকায় থাকে? বীণা আপা!

হ্যাঁ।

তার ছোট বোন নিরু, আগে দেখেছিস এখন বড় হয়েছে তাই চিনতে পারছিস না।

ও আচ্ছা।

নিরু তাড়াতাড়ি হাতের জগ গ্লাস টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে পায়রার মত এক পলকের মধ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নিশাতও ভাবল হ্যাঁ তাহলে এই সেই যাকে আমি ভাবছি, যাকে আমি খুঁজছি। আমার মনের গোপন ভল্টে যার নাম লিখা আছে। যাকে সেই অনেক দিন আগে দেখেছিলাম বকুল ফুলের মালা গাঁথতে। তাহলে এইই সেই।

এর পর নিশাতরা যত দিন দেশে ছিল দুই এক দিন পরে পরেই ওদের বাড়িতে আসলে প্রায়ই সামনে পরত। দুই চার দিন ওকে দেখেই নিরু মিথ্যে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করত। এভাবে কি আর পালিয়ে থাকা যায়? কতক্ষণ পালিয়ে থাকা সম্ভব? এ তো সৃষ্টির বিধান। কোন আকাশ কুসুম ব্যাপার নয়। মানব জনমের প্রথম সত্য। এক দিন রাতে নিশাত শিহাবের সাথে ওদের বাড়ি এসে দেখে নিরু শিহাবের ঘরে বসে পড়ছে। হারিকেনের আলোতে নিরুর মুখের দিকে চেয়ে দেখল আজ যেন ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে।

কি পড়ছ দেখি, ও ভূগোল! বুঝতে পার?

একটু চুপ থেকে বলল, না খুব কঠিন

কি বল! এ তো খুব সহজ বিষয়, দাও আমাকে দাও। এটা আমার খুব প্রিয় বিষয়।

বলেই দেরী না করে সামনে থেকে বইটা হাতে নিয়ে বুঝিয়ে দিল। ভূগোল বোঝার অজুহাতে আজ নিরু অতি কাছে থেকে নিশাতকে ভালো করে দেখার সুযোগ পেল। বিশ্বচরাচরে যত ঘটনা নিত্য ঘটে থাকে তার মধ্যে যা নিয়তির নির্দিষ্ট বিধান তা খণ্ডাবার কোন উপায় নেই। আজ নিশাতকে নিরুর কাছে আরও বেশি সুপুরুষ বলে মনে হলো। বোঝানো, কথা বলার ভঙ্গী, সবই যেন ভিন্ন। যা বলে তাই একে বারে অন্তরে গেঁথে যায়। আজকের মত ভূগোল শেষ করে নিশাত জিগ্যেস করল আর কোনটা?

জ্যামিতি।

দাও দেখি!

নিরু ঘর থেকে বের হয়ে ওর নিজের ঘর থেকে জ্যামিতি বই নিয়ে এলো। নিশাত ওটা নিয়ে যখন আলাপ করছে এমন সময় যুঁই এসে হাজির

কি রে তোর বৌ নাকি, এতো মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছিস যে?

যুঁইয়ের মুখে কিছুই আটকায় না, ছোট বোন সম্পর্কে যে এই মন্তব্য করতে পারে তাকে আর কি বলবে! নিশাত মনে মনে খুশী হলেও মুখে একটু অবাক হবার ভাণ করে কৃত্রিম একটা বকুনি দিল যুঁইকে।

তুই যে কি, ছোট বোনকে নিয়ে কেউ এমন কথা বলে?

ওদের বন্ধু বান্ধবীর এই কথার ফাঁকে লজ্জায় রাঙ্গা নিরু উঠে বের হয়ে গেল। তাই দেখে নিশাত আবার বলল

দেখলি, ওর পড়াটা দিলিতো মাটি করেনিজে কখনো একটু বসবি না আমি একটু দেখিয়ে দিচ্ছিলাম তাও দিলি শেষ করেএর পরে কি ও আর আমার কাছে বসবে ভেবেছিস?

না বসলে না বসবে তাতে তোর কি? একটু ভেবে বলল, আচ্ছা দাড়া আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিরুকে ধরে নিয়ে এসে যেখানে বসে ছিল ওখানে আবার বসিয়ে একটা মিষ্টি বকুনি দিয়ে নাক টেনে বলল এত লজ্জা কিসের? বসে কি পড়ছিলি পড়।

নিশাতকে বলল নে তোর ছাত্রীকে এনে দিলাম, কি পড়াচ্ছিলি পড়া।

কানে কানে বলল, দেখবি আবার আর কিছু পড়াতে যাবি না কিন্তু।

একটু থামবি নাকি আরও কিছু মুরুব্বি গিরি ফলাবি?

বলেই নিশাত নিরুর জ্যামিতি বই আর একটা খাতা নিয়ে যা পড়াচ্ছিল সেখানে থেকে আবার শুরু করল। কিছু ছবি এঁকে একের পর এক দেখিয়ে গেল, কি ভাবে কি লিখতে হয় মোটামুটি এক দিনে যতটা সম্ভব দেখিয়ে দিয়ে বলল

নাও এবার তুমি দেখ।

যুঁই, আমি আসি তাহলে, শিহাব তো এখন এলো না।

কাল আসবি?

শুনেই নিশাত সামনে বসা নিরুর দিকে তাকাল আর নিরুও নিশাতের দিকে। দুয়ে দুয়ে চার চোখের মিলন হলো। এক মুহূর্ত থেমে নিশাত যুঁইয়ের কথার প্রেক্ষিতে নিরুকে জিগ্যেস করল কি, কাল আসতে হবে? বলেই কোন জবাবের অপেক্ষা না করে বলল

হ্যাঁ আসতে পারিআজ যা দেখিয়ে দিলাম এগুলি তুমি ঠিক করে রেখ কাল আমি এর পরের গুলো দেখিয়ে দিবো।

এই ভাবে বেশ কয়েক দিন গেল। এর মধ্যেই নিশাত আর নিরুর মধ্যে বেশ সুন্দর একটা ভাব জমে উঠেছে। এখন দুই জনেই দুই জনের চোখের ভাষা বুঝতে শিখেছে, মান অভিমান করতে শিখেছে। এক দিন না এলে কৈফিয়ত চাইতে এবং দিতে শিখেছে। দুয়ে দুয়ে চার হয় জ্যামিতির ছলে তাও শিখতে শুরু করেছে।  নিশাত অনেক কিছু বলতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। যখনই বলবে ভেবেছে তখনই যেন মনে হতো কোথা থেকে একটা পাহাড় এসে ওর সামনে দাঁড়িয়েছে, এই পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ওর কথা কি নিরুর কানে পৌঁছাবে কোনদিন? কণ্ঠ থেমে যেত গলা দিয়ে স্বর বের হতো না।

কাল কেন এলেন না, আমি আজ পড়ব না।

না পড়লে লোকে তোমাকে মূর্খ বলবে আমার কি হবে?

বলুক মূর্খ তাতে আমার কিছু হবে না।

থাক হয়েছে আর পাকামি করতে হবে না এসো, এখন থেকে যে কয় দিন আছি আর এমন হবে না।

ওদিকে যুঁইয়ের অত্যাচার দিনে দিনে বেরেই চলেছে। নিশাতকে দেখলেই নিরুকে ডেকে বলে এই নিরু ওই দেখ কে এসেছে, যা বরণ করে নিয়ে আয়। আবার নিশাতকেও একই ভাবে বলছে আমি কি জানি তোর বৌকে জিগ্যেস কর কিংবা নে এটা খেয়ে দেখ তোর বৌ বানিয়েছে। এদিকে নিশাতদের যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে। নিশাতের বাবার ছুটি প্রায় শেষ। সামনে আর মাত্র পাঁচ ছয় দিন বাকী। তার পরেই আবার চলে যাবে নিশাতের বাবার কর্ম স্থল করাচী শহরে।

[চলবে। এতক্ষণ নিশাতের সাথে নিরুর চায়ের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login