অনিমেষ এর চিঠি : প্রথম খন্ড
আমাদের এসময়ের ব্যার্থ যুবক আনিমেষ এর কথা দিয়েই শুরু করা যাক।
ওর একটা ডায়েরীর পাতা থেকে লাইনটা তুলে দিলাম- দেবীকে উদ্দেশ্য করে লিখা প্রেমপত্রঃ
১৬-১১-২০০৫
“…আজ রাত কাটিয়ে দিবো তুমি আমি আর জোসনায় ।
জেগে উঠছে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার গুলো।
তবুও ব্যর্থতার রজনী ভালোবাসার কাছে পরাস্থ!”
রবি বাবু একটা ভীষন ভালোলাগা অনুবাদ করেছিলেন শেষের কবিতায়। John Donne এর একখানা কবিতার লাইন ছিলো সেটা- “For God Shake, hold Ur tongue and Let me Love”
“দোহাই তোদের একটুকূ চুপ কর,
ভালোবাসিবারে দে রে অবসর!!”
আনিমেষ আর দেবীর ভালোবাসা সময়ের বিবর্তনে ক্ষয় হয়ে হয়ে নাই হয়ে গেছে। আমি কিন্তু ওই ভালোবাসার মুহুর্তকে জীবনের ভুল বলে মানতে নারাজ।
অনিমেষ এর প্রথম চিঠিঃ
দেবী,
এখন রাত ১০টা বেজে ৪০। আজ সকাল ৯ টায় তোমার সাথে সবার অগোচরে দেখা করেছিলাম। সেখান থেকে চা বাগান। একসাথে প্রায় ঘন্টা তিনেক ছিলাম-সারা রাস্তা হাটলাম আমরা!
আজ তোমার সাথে এতো কথা হলো। তবুও কথা বলতে ইচ্ছে করছে- দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
না, ছবি দেখবো না। তোমার কাছে আমার ছবি নেই। তুমি যেমন আমায় কল্পনায় দেখ তেমনি করে তোমায় দেখছি-কথা বলছি।
আর হ্যা! sms এ যা লিখবার কথা-তাই ডায়েরীতে লিখে রাখছি। খামোখা ওই কর্পোরেট দলের কাছে টাকা গচ্চা না করে এই ভালো।
আজ বিকালে ৩ টা থেকে ৪ টা পয’ন্ত ঘুমালাম। উঠে যেই টিউশনিতে রওনা দিবো, ধ্রুব এসে জানালো ছাত্রী দুটো এবেলায় পড়বেনা।
অগত্যা মশারি টানায়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আর এলোনা।
সন্ধ্যাটা ভালোই কাটলো, ভালোই পড়িয়েছি- একারনেই হয়তো। এরপর, রাত ৯ টায় আরেক টিউশনির পালা। পাভেলের বাসায় গেলাম। এসএসসিতে অংক পরীক্ষাটা কেমন হলো জানতে গিয়েছিলাম। বেরুবার সময় মন ভালো হয়ে গেল। পাভেল এর পরীক্ষা ভালো হয়েছে। ছেলেটা এযাত্রায় পাশ করে ফেলবে বোধ করি।
জানো দেবী, পাভেলের মামাতো বোনকে পড়াবার অনুরোধ পেলাম। মনে হলো তুমি কি টিউশনিটা করাবে? কল করে জানাই। যদিও অভাগা আমার অর্থনৈতিক হালচাল ভালো না।
সে যাই হোক।
এরপর বাইরে বেরুতেই দেখি রাস্তায় কারেন্ট নাই। ঝড় এর ঠিক আগ মুহূর্তের বাতাস বইছে। সিলেট শহরে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কোন এক রোমান্টিক যুবক তাই হয়তো কারেন্ট দিয়েছে বন্ধ করে। মনটা আরো বেশি ভালো হয়ে গেলো। অর্থনৈতিক দৈনতা আর রোমান্টিজম মিলিয়ে ভাবলাম রিক্সা আজ না নিই। শেষমেশ হেটেই আসলাম।
সাগরদীঘিরপাড়ে ঢুকতেই দেখি গন্ধরাজের তীব্র সুগন্ধ! দুটো ফুল ছিড়লাম, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মেসে এলাম। বাজের কড়্ কড়্ আওয়াজ পড়ছিলো-জানো?
মনে পড়ে, এই পাগলা বেয়াড়া ছেলেটা কতদিনই না কষ্টে আর আনন্দে বষ্টিতে ভিজেছে আর চা বাগানে বসে জোকের কামড় খেয়ে দেদারসে কবিতা লিখেছে। রক্তে তার ভালোবাসা এতে বেড়েছে বৈ কমেনি।
এ কথা শুনে একদিন বিচলিত হয়ে তুমি বলেছিলে,”আপনার বউকে বলবো বৃষ্টির সময় আপনাকে বাসায় বেধে রাখতে।”
ভিজতে ভিজতে এটাই বারবার মনে পড়ছে।
9 Responses to অনিমেষ এর চিঠি : প্রথম খন্ড
You must be logged in to post a comment Login