রিপন কুমার দে

স্যাটায়ার: ক্রোধ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

রিপন কুমার দে

১.
সাল ২০৩০। আজ আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। মাথার অল্প উপর দিয়ে অসংখ্য শুকুনের আনাগোনা আজ। এক ঝাক কাক-দের ভয়ার্ত চিৎকারে গা ছমছম পরিবেশ। দূর সীমানা থেকে কোন এক অজানা আর্তচিৎকার ভেসে আসছে করুন স্বরে। কেমন এক অচেনা গুমোট ভরা আঁধার চারপাশে।

২.
আজ জাতির ঘৃণা প্রকাশের দিন। তাই হয়তো প্রকৃতির এই অদ্ভূদ, অজানা আচরন। ছেলে-বুড়ো-যুবক সবার ক্ষোভ প্রকাশের এক কাঙ্খিত দিন আজ। সবাই আয়োজন করে দল বেধে আসছে যার যার নিজস্ব, অনেকদিনের লুক্কায়িত ঘৃনা প্রকাশ করতে। এ সুযোগ এতদিন পায় নি যে কেউ! অনেকগুলো মূর্তি সাজিয়ে রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। সবগুলো মূর্তি কালো কাপড় দিয়ে মুড়া, কাপড়ের নিচেই তাদের পরিচয়। বিশেষ কারনে ঢেকে রাখা হয়েছে সবগুলো মূর্তি। একে একে দেশের সকল সুযোগ্য নাগরিক মূর্তিগুলোর সামনে আসেছে, আর পর্দা উল্টিয়ে পরিচয় জেনে তাদের সবচেয়ে ঘৃনিত মূর্তিটির উপর থু-থু ছিটিয়ে তাদের নিজ নিজ ঘৃণার প্রকাশ করছে। শিশুরাও কাজটা খুব আনন্দ নিয়েই করছে। এ এক অন্যরকম উৎসবমুখোর গুমোট পরিবেশে ঘৃনা প্রকাশের আয়োজন। সবাই সবার এতদিনের সুপ্ত বিদ্বেষের বহি:প্রকাশ করতে পারছে আজ, তাও আবার সরকারী অনুমোদনে, এ যেন অনেকদিনের তীব্র বিষ্বাদ উগড়ে ফেলা।

৩.
মূর্তিগুলোর চারপাশে আবজর্নার স্তুপ। সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঘুপটিতে রাখা হয়েছে মূর্তিগুলো। সবাই নাকচাপা দিয়ে মূর্তিগুলোর পাশে আসছে আর সুপ্ত বিদ্বেষটি ঝেড়ে সরে যাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিন্তু এতগুলো মূর্তি থাকলেও একটি মূর্তির উপর সবাই থু-থু ছিটুচ্ছে। এমনকি শিশুরাও! এর কি কারন হতে পারে? এই একটি মূর্তিটির উপরই কেন সবার আক্রোশ থাকবে? নাকি অন্য কিছু? হতেও তো পারে এই একটির চারপাশেই কোন আবর্জনা নাই, রাখা হয়েছে সবচেয়ে পরিষ্কার স্থানে। কিন্তু না তো, সবগুলোর মত এই মূর্তিটির চারপাশেও তো নোংরা আর্বজনার স্তুপ, আর সেরকমই বিশ্রী দুর্গন্ধ! তাহলে আর কি কারন হতে পারে?

৪.
আকাশে এখনও শকুনেরা ছুটোছুটি করছে। আকাশ আরও ঘন কালো হয়ে আসছে। কাকেরা এখনও তাদের মত করে সহজাত চেঁচানো চেচিয়ে যাচ্ছে। এখনও দুরের কোন নগর থেকে এক অদ্ভুত আর্তচিৎকার ভেসে আসছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। হিমেল বাতাস দামাল বাতাসে পরিণত হচ্ছে। তীব্র বাতাসের ঝাপ্টা গায়ে লাগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে, যে অনুভূতি অপার্থিব, যে অনুভূতির আবরণে একই সাথে ভিন্নরকম নির্লিপ্ততা এবং এক অন্য আঙ্গিকের প্রতিশোধের নির্যাস মেশানো। বাতাসের তীব্র ছটায় ওই বিশেষ মূর্তিটির কালো আবরণটি একটু একটু করে সরে যাচ্ছে! আবরনটি ক্রমাগত সরে যাওয়াতে মূর্তিটির সত্যিকারের প্রতিরূপের নামফলকটি একটু একটু করে ভেসে উঠেছে চোখের সামনে। নামটি এখন স্পষ্টভাবে পড়াও যাচ্ছে! নামফলকটির চারপাশে কিছুটা শ্যাঁওলা জমে আছে। তারপরও পড়া যাচ্ছে ভালভাবে। একটু চোখ আগলিয়েই পড়া যায় যায় নামফলকটির লিখাটা। গোটা গোটা অক্ষরে নামফলকে লিখা: “মাওলানা গোলাম আযম – গণহত্যার ঘাতক”, যার উপর আজ সবার সুপ্ত ক্রোধ ঢেলে দেওয়া!

–রিপন কুমার দে
১০ এপ্রিল, ২০১০
[লেখাটি কানাডার একটি বাংলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


21 Responses to স্যাটায়ার: ক্রোধ

You must be logged in to post a comment Login