তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

বেদনা

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সূর্যের মুখ দেখে না সজল চার বছর হল। ভাবতে পারেন ,এটা কেমন কথা একজন মানুষ চার বছর সূর্যের আলো দেখেনি ? আমার নিজের কাছে ও খটকা লেগেছিল প্রথম শুনে , একদিন বিকালে অফিস থেকে সোজা চলে যাই সজলের হোটেলে(মাতাম ইয়াসিরা তুরকিস)। তুর্কি রেস্টুরেন্ট , বেশ গোছালো আর চকচকে পরিস্কার। তুর্কি লোকেরা বেশ পরিস্কার , তাদের চামড়া অনেক সাদা , ভালমত খেয়াল করলে শিরা পর্যন্ত দেখা যায়। সেই হোটেলে কাজ করে সজল।
হোটেলের কিচেনে কাজ করে সজল । দেশ থেকে এসেছে চার বছর পার হয়ে গেলে ও দেশে যাবার সুযোগ হয়নি । ফজরের নামাজের পরপর তার ডিউটি চালু হয়। একটানা দুপুরের খাবার পর ছুটি মেলে ২ ঘন্টার জন্য । তবে সে সময় হোটেলের উপরে রেস্ট রুমে ক্লান্ত সজল শুয়ে থাকে। ঘুম থেকে উঠে আবার কিচেনে সব প্লেট পরিস্কার করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে খেয়াল থাকে না। এরপর আবার এক ঘন্টার ছুটি , এবার রাতের বিজলী বাতির আলোতে শহরে বেরোয় সজল। এদিকে সেদিকে ঘুরে ফিরে দেখে । আবার ফিরে যায় কাজে । তার পর রাত ১২টা পর্যন্ত একটানা কাজ । আবার ঘুমুতে যায় হোটেলের পাশের বাসায়। আধোঘুম আধোজাগরনে ফজরের আজান শুনে দেয় ছুট হোটেল অভিমুখে।
এতক্ষণ পর্যন্ত সজলের মুখ থেকে তার কাহীনি শুনলাম। শুনে আমি বুঝতে পারলাম সজল সত্যি দিনের আলো চোখে দেখে না। বলে রাখা ভাল সজল আমার মামাতো ভাই । তার বাবা ভীষন অসুস্থ তাকে দেশে পাঠানোর জন্য আমাকে আমার মা এবং মামা বার বার ফোন করছে । তাই আজ সজলের কাছে ছুটে এলাম । কিন্তু সজলের মালিক সজল কে ছুটি দিতে নারাজ । মালিক কে অনেক বুঝালাম কিন্তু মালিক বলছে কমপক্ষে এই বছর থাকতে হবে। আমি ভগ্ন হৃদয়ে সজলের হোটেল থেকে বাইরে বেরুলাম । সজল অনেক পীড়াপীড়ি করে ও কিছু খাওয়াতে পারল না। দুজনেই চোখে অশ্রু নিয়ে বিদায় নিলাম । সবে মাত্র সজলের হোটেল থেকে সামান্য দূরে টেক্সির জন্য অপেক্ষা করছি । এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠল । ফোন কানে নিতে মামার মুত্য সংবাদ শুনাল মা। বুক টা ধক করে উঠল । ভাবলাম সজলের কাছে যাব। কিন্তু গেলাম না , এই মুহতে  সজলের সামনে দাড়ানোর সাহস আমার নাই । কোন কিছু না ভেবে টেক্সিতে উঠে পড়লাম ।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


6 Responses to বেদনা

You must be logged in to post a comment Login