মহাদেব সাহা

গ্রামের এক বালিকা বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পড়াশুনা৷ যদিও নামে সেটি ছিল বালিকা বিদ্যালয় কিন্তু সেখানে ছেলে-মেয়ে সকলেই একসাথে পড়াশোনা করত৷ এখান থেকে প্রাইমারি ধাপটি পাশ করে ভর্তি হন গ্রামেরই উচ্চবিদ্যালয়ে৷ পরে চলে আসেন বগুড়ার ধুনট উচ্চবিদ্যালয়ে৷ সেখানে বন্ধুদের সাথে মিলে বের করতেন দেয়াল পত্রিকা ৷ এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ছিল প্রচুর বই ৷ এসব বইয়ের মধ্য দিয়েই তিনি গড়ে তোলেন পাঠাভ্যাস৷ তখন থেকেই আলাদা করে পড়তেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর জীবনানন্দ দাশের কবিতা৷ বাড়ির সকলের ও বন্ধুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অংকের খাতা ভরে তুলতেন কবিতা দিয়ে৷ বিদ্যালয় ছুটির পর বন্ধুরা যখন মাঠে খেলতে যেত, তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন নদীর তীরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে৷

সকলের চোখের আড়ালে কবিতা দিয়ে অংকের খাতা ভরে তোলা এই ছেলেটিই হচ্ছেন আমাদের প্রধান প্রিয় কবিদের একজন৷ নাম মহাদেব সাহা৷ গত চার দশকে তাঁর হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা কবিতা৷ কিন্তু এখনো তিনি তাকিয়ে আছেন নতুনতর সৃষ্টি সুখের উল্লাসের দিকে৷ এই কবির কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে আমাদের চিরপরিচিত জীবনেরই ক্লেদ-যন্ত্রণা আর সুখের অনুসঙ্গগুলি৷ বাংলা কবিতার আবেগময় রূপটিকে মহাদেব সাহা সজীব ও জনপ্রিয় করে তুলেছেন তাঁর নিজস্ব বৈচিত্র্য দিয়ে৷ যে কারণেই পাঠক বারবার ফিরে আসে তাঁর কবিতার কাছে দ্রোহ বা প্রকৃতি কিংবা ভালবাসার ছোঁয়া পেতে৷

বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই নিজের ভিতরে অনুভব করলেন কবিতা যেন তাঁর বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ আর সবার মতো তিনি নন৷ কিছুটা মগ্ন৷ কিছুটা অন্যরকম৷ এরইমধ্যে ১৯৬০ সালে ধুনট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন৷ স্কুলের পাঠ শেষ করে চলে আসেন ঢাকায়৷ ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে৷ কিন্তু কঠিন টাইফয়েডে অক্রান্ত হয়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে পড়া শেষ না করেই চলে যান বগুড়ায়৷ বগুড়া তখন শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সমঝদার শহর৷ এ ছোট জেলা শহরটি তখন সাহিত্যের প্রতি খুবই আগ্রহী৷ কিছু তরুণ কবিতাপ্রেমী ছিল এর নেপথ্যে৷ মহাদেব সাহাও ভিড়ে গেলেন সেই দলে৷ বগুড়াতে থাকাকালীন সময়েই সাহিত্য আর পত্র-পত্রিকার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ তৈরি হয় মহাদেব সাহার ৷ তখন অধ্যাপক মহসীন আলী দেওয়ান বের করেন ‘বগরা বুলেটিন’৷ শিল্প-সাহিত্যে আগ্রহী এই মানুষটি একটি সাহিত্য পত্রিকাও বের করতেন৷ কবি আতাউর রহমান তখন বগুড়ায়৷ ফলে জমে উঠতে বিশেষ সময় লাগল না তাঁর৷ বগুড়া ‘বেনীপুর বুক হাউস’ তখন শহরের সকল সাহিত্যামোদীদের ঠিকানা৷ বগুড়ার এসব সাহিত্যমোদীদের সাথে আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি চলত তাঁর পড়াশুনা৷ তিনি বগুড়া কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং সেখান থেকেই বাংলায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷

বগুড়া কলেজে পড়ার সময় সব আধুনিক ও প্রগতিশীল তরুণরা মিলে বের করে ফেললেন লিটল ম্যাগাজিন ‘বিপ্রতীক’৷ সেসময় ‘বিপ্রতীক’ ঢাকায়ও যথেষ্ট আলোড়ন তোলে৷ বেনীপুর বুক হাউসে তখন নতুন নতুন সব পত্রিকা আর বই যেত৷ একদিন মহাদেব সাহার হাতে পড়ে ‘কন্ঠস্বর’ নামে একটি পত্রিকা৷ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ৷ ‘কন্ঠস্বর’ তখন অন্যরকম এক পত্রিকা৷ এটি যেন চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায় তরুণ কবিতাপ্রেমীদের৷ ‘কন্ঠস্বর’-এর ঘোষণাটি ছিল যেমন ধারালো তেমনি যুগোত্তীর্ণ৷ অভিভূত হয়ে যান মহাদেব সাহা৷ যেন নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান পত্রিকার জীবন দর্শনে :-

“যারা সাহিত্যের স্বনিষ্ঠ প্রেমিক, যারা শিল্পে উন্মোচিত, সত্‍, অকপট, রক্তাক্ত, শব্দতাড়িত, যন্ত্রণাকাতর, যারা উন্মাদ, অপচয়ী, বিকারগ্রস্ত, অসন্তুষ্ট, বিবরবাসী; যারা তরুণ, প্রতিভাবান, অপ্রতিষ্ঠিত, শ্রদ্ধাশীল, অনুপ্রাণিত; যারা পঙ্গু, অহংকারী, যৌনতাপিষ্ট- ‘কন্ঠস্বর’ তাদেরই পত্রিকা৷”

একদিকে ‘কন্ঠস্বর’-এর রৌদ্র-তাপিত ঘোষণা অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল-অস্থির রাজনীতি৷ লাঙ্গলের ফলা ফেলে কৃষক বুকে তুলে নিয়েছে স্বায়ত্তশাসনের শপথ৷ কল-কারখানার শ্রমিক চলে এসেছে রাজপথে৷ দেশ হাঁটছে স্বাধীনতার পথে ধীরে ধীরে৷ এরই মধ্যে মহাদেব সাহা এসে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলায় এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৯ সালে ইংরেজি বিভাগে পুণরায় ভর্তি হন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই পদ্মা নদী৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সবকিছু ভুলে ডুবে যান মতিহারের অপার প্রকৃতির রাজ্যে৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তখন সত্যিকার অর্থেই সাহিত্যের তীর্থভূমি৷ কবি ও সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নুরউল ইসলামের সম্পাদনায় বের হয় ‘পূর্বমেঘ’-এর মতো বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা৷ লোক গবেষক কবি মযহারুল ইসলাম বের করেন ‘উত্তর অন্বেষা’৷ রাজশাহী থেকে বের হয় আরও তিনটি সাহিত্য পত্রিকা ‘সুনিকেত মল্লার’, ‘বনানী’ ও ‘একান্ত’৷ আর অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক মশাররফ হোসেন, হাসান আজিজুল হক, গোলাম মুরশিদ, সনত্‍ কুমার সাহা, আবদুল হাফিজ, আলী আনোয়ার সবাই মিলে যেন এক শিল্প-সাহিত্যের রাজত্ব তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ কবিতা লেখার কারণে সকলেরই স্নেহ পান মহাদেব সাহা৷ এমন পরিবেশে নিজেকে বুঁদ করে রাখেন কবিতা লেখায়৷ ঢাকার অনেক পত্রিকাতেই তখন নিয়মিত কবিতা ছাপা হচ্ছে তাঁর৷ বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ রেডিওর গীতিকার৷ তাদের উত্‍সাহে মহাদেব সাহা নিজেও গীতিকার হয়ে যান৷ সারাদিন ঘোরাঘুরি, রাতভর আড্ডা, তর্ক-বিতর্ক, শেষ রাতে হলে ফেরা৷ সব কিছুতেই নিজেকে লীন করে দেন মহাদেব সাহা৷ আবার গোপনে বুনে তোলেন নিজস্ব এক ঠিকানাও৷

এতোকিছুর মধ্যেও যেন ‘কন্ঠস্বর’ মোহবিষ্ট করে রাখে তাঁকে৷ সাহস করে একদিন সেখানে পাঠিয়ে দিলেন একটি কবিতা৷ অসম্ভব দ্রুততায় মহাদেব সাহার হলের ঠিকানায় একটি খসখসে হলুদ ঘাম এসে হাজির৷ ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন, আগামী সংখ্যাতেই কবিতাটি ছাপা হচ্ছে৷ চিঠি পেয়ে সে কী আনন্দ আর উত্তেজনা৷ মনে মনে অনুভব করেন ‘কন্ঠস্বর’-এর অস্থির উদ্দীপ্ত প্রবল জীবনের সঙ্গে মিলতে হবে৷ ভেতরে ভেতরে ঢাকা আসার উত্তেজনা ও স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেটি ছিলো সত্যিকার অর্থেই কবিতা নিয়ে মেতে ওঠা এক অজ্ঞাত তরুণের ঢাকা আসার প্রস্তুতিপর্ব৷

কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় এক কালজয়ী ঘটনা, আবার প্রিয় মুখ হারানোর কষ্টও৷ আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের শাসক৷ পশ্চিম পাকিস্তানে থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করেন মৌলিক গণতন্ত্রের নামে৷ এ দেশে তার চেলা মোনায়েম খাঁ আর নূরুল আমীন৷ পূর্ব বাংলায় তখন গোটা দেশ উত্তাল বিক্ষোভ-মিছিল-মিটিংয়ে৷ প্রায় প্রতিদিন টানটান উত্তেজনা৷ উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও৷ সময়টা ‘৬৯-র ১৮ ফেব্রুয়ারি৷ আর্মি, পুলিশ, ইপিআর ঘিরে ফেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট বন্ধ৷ অগ্নিশিখার মতো জ্বলজ্বলে সবার চোখ৷ ১৪৪ ধারা ভেঙে বেরিয়ে গেল ছাত্র-ছাত্রীরা৷ ড. জোহা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর৷ তিনি এসেছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁচাতে৷ কিন্তু নিজেই বুক পেতে নিলেন ঘাতকের গুলি৷ মহাদেব সাহা তখন মাত্র কয়েক গজ দূরে৷ তিনি ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী৷ শোকে পাথর হয়ে গেলেন তিনি৷ আইয়ূব শাহীর পতন হল বটে কিন্তু দেশ চলল আরও অনিশ্চয়তার পথে৷

৬৯’-র জুন মাসে ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উদ্যোগ নেন তরুণ কবি-লেখকদের নিয়ে প্রথম সাহিত্য উত্‍সব করার৷ সম্মেলন হবে ঢাকার তোপখানা রোডে পাকিস্তান কাউন্সিল মিলনায়তনে৷ সভাপতি মুনীর চৌধুরী৷ সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পড়ার জন্য মহাদেব সাহাকে অনুরোধ করেন ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক৷ একটু অবাকই হন মহাদেব সাহা৷ কারণ তখন একমাত্র মহাদেব সাহা ছাড়া ষাটের লেখকেরা প্রায় সারবেঁধে দাঁড়িয়ে গেছেন ততদিনে৷ রাজশাহী থেকে সেদিন মহাদেব সাহা ছিলেন শেষ বাসের যাত্রী৷ অধ্যাপক আবদুল হাফিজও প্রবন্ধ পড়বেন সম্মেলনে৷ তাই আব্দুল হাফিজ আর মহাদেব সাহা দুজনই সম্মেলনে যোগ দিতে এলেন ঢাকায়৷ উঠলেন আবু সায়ীদেরই গ্রিন রোডের ছোট্ট দুই রুমের বাসায়৷ এই আসাটাই যেন মহাদেব সাহাকে সত্যিকার অর্থে ঢাকা চিনিয়ে দিল৷ সম্মেলনে নতুন লেখকদের সঙ্গে পরিচয় যেমন হল, প্রবন্ধ পড়ে কিছু প্রশংসা আর মফস্বলী বলে কিছু বিদ্রূপ ও তীক্ষ্ণ অট্টহাসিও জুটল৷ কিন্তু এরই মধ্যে যা বোঝার বুঝে গেলেন মহাদেব সাহা৷ ঢাকা যেন চোরাগুপ্তা টানে টানছে তাঁকে৷ এখানে পাড়ি না জমালে যেন কবিতার বিকাশ নেই৷ এক অন্ধ মোহ সারাক্ষণ লেগে থাকে তাঁর পিছু৷ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন৷ ঢাকায়ই আসবেন৷ এদিকে রাজশাহীতে বাকি রইল গবেষণা আর শিক্ষা-দীক্ষার যত উপাচার৷

যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহাদেব সাহাকে দিয়েছিল গভীর অনুভূতির দ্যোতনা সেই প্রিয় মতিহার ছেড়ে আসতে হলো কবিতারই কারণে৷ পড়ে রইল প্রমত্তা পদ্মা৷ কবি উঠে পড়লেন কবিতার ভেলায়৷ মহাদেব সাহার নিজের ভাষায়- ‘গার্ড বাঁশি বাজালেন৷ পেছনের পড়ে রইল রাজশাহী, মতিহার, কাজলা, উন্মুক্ত উথাল পদ্মা, আমি তাকিয়ে আছি অনন্তের দিকে৷ আর সঙ্গে নিয়ে চলেছি বহু আনন্দ-বেদনা, ভালবাসার স্মৃতি৷ সবার জীবনে যেমন আমার জীবনেও তেমনি সেই উদ্দীপ্ত মুখর দিবারাত্রির কলধ্বনি নীরবে বহে চলেছিল মনে৷ আমি রাজশাহী ছেড়ে ঢাকা যাচ্ছি, সে ছিলো অতল জলের আহ্বান, কবিতাময় দিনরাত্রির স্বপ্ন৷’

ষাটের দশকে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় কিছুকাল পরিচয় ছিল ঢাকার সঙ্গে৷ কিন্তু সে যাত্রা আর এবারের যাত্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক৷ কবিতার জন্য যাত্রা৷ তবে অন্যদের চাইতে মহাদেব সাহাকে একটু ভাগ্যবানই বলতে হবে৷ অন্যদের মতো তাঁকে একেবারে খালি হাতে ঢাকায় আসতে হয়নি৷ পায়ের নিচে মাটি আছে একটু৷ মানে একটা চাকরি পাওয়া গেছে৷ সেটাও নাটকীয়৷ কোন ইন্টারভিউ নেই, ধরাধরি নেই, বলাবলি নেই৷ এক দরখাস্তেই চাকরি হয়ে গেল৷ ১৯৬৯-এর জুলাই মাসে দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন তিনি৷

১৯৭৩ সালে ঢাকায় দেখা হয় কুমিল্লার মেয়ে নীলা সাহার সাথে৷ বারদুয়েকের দেখাশোনায় নিজেদের একটু জানাশোনাও হয়৷ ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে নিজেদের পছন্দে দুজন বিয়ে করে ফেলেন৷ তাদের দুই পুত্র সন্তান তীর্থ ও সৌধ৷

১৯৭৫ সালের জুন মাসে ‘পূর্বদেশ’ বন্ধ হয়ে যায়৷ টানা পাঁচ বছর বেকার৷ এরপর ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কলাম লিখতেন সংবাদ-এ৷ সারথি নামে৷ প্রথমদিকে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে পরে একটি করে সেই কলাম লেখার কাজ চালিয়ে যান৷ এসময় নানা অনিয়মে শরীরে জেঁকে বসে অসুস্থতা৷ যেন এক চরম দুঃসময়ের কাল৷ নানা ঘাটের পানি খেয়ে নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আবার ১৯৮০ সালে চাকরি হয় ইত্তেফাকে৷ সে চাকরি প্রায় ৩০ বছরের৷ বর্তমানে মহাদেব সাহা অনেকটাই গৃহী-সন্ন্যাসী৷ সকল কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নি:সঙ্গ সময় কাটাতেই বেশী পছন্দ করেন৷ এখন যার একমাত্র আশ্রয় পরমপ্রিয়া কবিতার কাছে৷

তাঁর বাবা গদাধর সাহা বৃটিশ আমলে এন্ট্রাস পরীক্ষার সময় কলকাতায় গিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সাথে৷ তখন স্বদেশী আন্দোলনের যুগ৷ লেখাপড়া আর বিশেষ এগোয় নি৷ একসময় পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে গদাধর সাহাকে ফিরে আসতে হয় গ্রামের বাড়িতে৷ কিন্তু এব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই উদাসীন৷ তাঁর মন পড়ে থাকত নাটক আর যাত্রার দিকে৷ যাত্রার বিবেক হিসাবে তাঁর গানের গলা ছিল খুবই চমত্‍কার৷ মা বিরাজমোহিনী স্কুল পাশ করা৷ গৃহিনী৷ কিন্তু সমস্ত রামায়ন আর মহাভারতটায় ছিলো তাঁর ঠোঁটের আগায়৷ প্রতিদিন বিকেলেই রামায়ন-মহাভারত পাঠের আসর বসত মাহাদেব সাহাদের বাড়ির আঙ্গিনায়৷ পাড়ার মহিলারাই হতো সে আসরের শ্রোতা৷ বিরাজমোহিনীর গানের গলাটিও ছিল ভারী সুন্দর৷ তিনি নিজে গান লিখে সুর করে শুনাতেন৷ কবিতাও লিখতেন৷ বৃহত্তর পাবনা জেলার ধানঘড়া গ্রামের এমন উদার আর সংস্কৃতিমনা পরিবারে ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট মহাদেব সাহা জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতামাতার একমাত্র সন্তান তিনি৷ সেই আমলেই তাঁর বাবা কলকাতা থেকে ডাকযোগে আনাতেন ‘লোকসেবক’, ইংরেজী অর্ধ সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’, ‘মাসিক বসুমতি’ ইত্যাদি পত্রিকা৷ মহাদেব সাহার পরিবারটি পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই ছিল ছোটখাট ভূস্বামী৷

সাহিত্যের পালাবদলে বাংলা কবিতার শ্বাশত রূপটিকে মহাদেব সাহা স্বব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন তাঁর ৫৯টি কাব্যগ্রন্থে৷ এই প্রধান কবি গ্রন্থাগারে প্রথম সূচিবদ্ধ হন ১৯৭২-এ৷ ‘এই গৃহ এই সন্ন্যাস’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে৷ শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কবিতার বই ছাড়াও লিখেছেন ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী, সমালোচনাসহ নানা ধরনের রচনাও৷ সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮১৷

স্বাধীন বাংলার প্রসব বেদনায় তখন কাতর পূর্ব পাকিস্তান৷ রাজপথে তখন গনগনে আগুন৷ ছাত্র-যুবক-নারী-পেশাজীবী সবার মুখেই তখন ‘জয় বাংলা’৷ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, ৬৯’এর ৬দফা, ছাত্রদের ১১দফা এসবেই তখন বাংলা মগ্ন৷ মগ্ন কবিতাও৷ সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘কন্ঠস্বর’, ‘সংবাদের’ সাময়িকী এসব আড্ডায় খুব অনায়াসেই ঢুকে গেলেন মহাদেব সাহা৷ নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, হুমায়ুন কবির, হুমায়ুন আজাদ, রফিক আজাদ বন্ধু হয়ে গেলেন৷ ঢাকার সদরঘাট, রমনা পার্ক, রমনা রেস্তোরার মতন নির্জনতম স্থানগুলোতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা জমান৷ হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ- এদেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন মহাদেব সাহা৷ বন্ধুদের অনেকের সাথে জীবনাচরণে পার্থক্য থাকলেও আদর্শের কারণে একে অপরের যেন হরিহর আত্মা৷ বন্ধুতা, আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, চাকরি সব মিলিয়ে যেন নিজের ভেতরে কবিতার ফল্গুধারা বয়ে যায়৷ সেই টান আজো অনবরত মহাদেব সাহাকে নিমজ্জিত করে রেখেছে কবিতার গহিন অতলে৷

এর মধ্যেই আসে একাত্তরের কালো রাত্রি, ২৫ মার্চ৷ তখন থাকতেন ১১৩নং আজিমপুর রোডের একটি বাসায়৷ মেসবাড়ি৷ সারারাত নিজের ঘরে বসে প্রত্যক্ষ করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর বর্বরতা৷ ২৬ মার্চ প্রথমে বেরিয়েই চলে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ বন্ধু কবি আবুল হাসান তখন সেখানে ভর্তি৷ সেখানেই দেখেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে৷ তখনও জীবন প্রদীপ নেভেনি তাঁর৷ রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ প্রত্যক্ষ করেন ঢাকা শহরের সমস্ত বর্বরতা৷ সমস্ত শহর জুড়ে তখন কারফিউ৷ এরমধ্যেই চেষ্টা করেন ঢাকা থেকে বের হবার কিন্তু পারেন নি৷ অবশেষে ২৭ মার্চে ঢাকা থেকে চলে যান নিজের গ্রামের বাড়িতে৷ সেখানে গিয়ে স্থানীয়ভাবে তরুণদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু সেই গ্রামে ২৫ এপ্রিল আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷ পরে জুন মাসের দিকে আসাম হয়ে পরিবারসহ চলে যান কলকাতায়৷ সেখানে গিয়ে যুক্ত হন ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা অফিসে, কাজ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও৷ স্ক্রীপ্ট লেখা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি কাজ করেন কলকাতায়৷ যুগান্তর, আনন্দবাজারসহ নানা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন৷ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত করার কাজ করতেন সেসময় মহাদেব সাহা৷

১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ে৷ ভারত থেকে কবি, সাংবাদিকদের একটি দল সেদিন সাতক্ষীরায় আসে সরেজমিন পরিদর্শনে৷ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের দলে সেদিন মহাদেব সাহাও ছিলেন৷ স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রথম স্পর্শ আজও শিহরণের মতো মনে হয় কবি মহাদেব সাহার কাছে৷ একে মনে করেন জীবনের দুর্লভ অক্ষয় স্মৃতি৷

স্বাধীনতার পরপরই মুখোমুখি হন দুঃসহ বেদনার৷ কবি বন্ধু হুমায়ুন কবির ১৯৭২ সালে আর আবুল হাসান ১৯৭৫ সালে চলে যান লোকান্তরে৷ দেশজুড়ে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা৷ প্রবল হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির হুঙ্কার৷ যেন স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার আগেই স্বপ্নগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়৷ আটকে যাচ্ছে নানা চোরাবালিতে৷ কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটে যায় নৃশংসতম ‘রক্তাক্ত আগস্ট’৷ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়৷ শুরু হয় স্বাধীন বাংলার পিছন দিকে হাঁটা৷ রাজপথে জলপাই রঙের গাড়ি নামে৷ নিরাপদ নয় তখন জেলখানাও৷ বাকস্বাধীনতা মানে বন্দুকের নল৷ দেশ ও জাতির গভীর ক্রান্তিকালে মহাদেব সাহার কবিতায় তখন উচ্চারিত হয় দ্রোহ আর প্রতিবাদ৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তখন কবিতা প্রকাশ করেন সংবাদ, সমকালসহ বিভিন্ন পত্রিকায়৷ বন্ধু, অভিভাবক আর আত্মীয়-স্বজনেরা এতো ক্ষুব্ধ হতে মানা করেন তাঁকে৷ কিন্তু কে ঠেকিয়ে রাখে ঘৃণার উদগার৷ ‘আরো একজন’, ‘আলস্য প্রহর’, ‘ভোরের প্রসঙ্গ’, ‘কফিন কাহিনী’, ‘দেশপ্রেম’ প্রভৃতি কবিতায় সেই স্বাক্ষরই রয়েছে৷

চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি শরীর
একজন বললো দেখো ভিতরে কী স্থির৷
মৃত নয়, দেহ নয়, দেশ শুয়ে আছে
সমসত্ম নদীর উত্‍স হৃদয়ের কাছে!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে রঙীন
হাতের আঙ্গুলগুলি আরক্ত করবী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি!

মহাদেব সাহার কবিতা যেন মানব-স্পর্শী সুখ-দুঃখ গাঁথার এক অবিরাম উপাখ্যান৷ তথাকথিত ‘শিল্পের জন্য শিল্প’র তরিকা থেকে তাঁর অবস্থান অনেক দূরে৷ যেন স্থিতধি, নিজের ভিতরে বুনে চলা সমাজেরই এক কথন নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা বেলা৷ আদর্শ তাঁর পিছু ছাড়েনি৷ ৮০’-র দশকে সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য হন৷ ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠন ও আন্দোলনেও পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা৷ যুক্ত হন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাথেও৷ কবিতার জন্য ১৯৮৩ সালে পুরষ্কার পান বাংলা একাডেমীর৷ পুরষ্কারের সমস্ত অর্থ তখন তুলে দেন কমিউনিস্ট পার্টির হাতে৷

সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, রাজনৈতিক মনস্কতা মহাদেব সাহাকে টেনে আনে মাটি আর মানুষের কাছাকাছি৷ তাঁর কবিতার শব্দনির্বাচন, ধ্বনি, চিত্রকল্প সবকিছুই যেন মৌমাছির মতো গুঞ্জরণ তোলে মানুষের উত্‍সবে৷ নিজেকে ও নিজের কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দেন অপরিহার্য সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই অংশ হিসেবে৷ বাংলা কবিতার মানবতারূপী এক বিশাল মহীরুহের একটি পাতা যেন মহাদেব সাহার কবিতা৷ চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার মতো যার স্থির বিশ্বাস ও আস্থা, ‘আমাদের কালে একজন কবির দায় থাকবে নির্জনতা এবং জনতা উভয়ের প্রতি৷’

মানুষের ভিড়ে মানুষ লুকিয়ে থাকে
গাছের আড়ালে গাছ,
আকাশ লুকায় ছোট্ট নদীর বাঁকে
জলের গভীরে মাছ;
পাতার আড়ালে লুকায় বনের ফুল
ফুলের আড়ালে কাঁটা,
মেঘের আড়ালে চাঁদের হুলস্থূল
সাগরে জোয়ার ভাটা৷

সংক্ষিপ্ত জীবনী

জন্ম : কবি মহাদেব সাহার জন্ম বাংলা ১৩৫১ সালের ২০ শ্রাবণ, ইংরেজি, ১৯৪৪ সনের ৫ আগস্ট বৃহত্তর পাবনা জেলার ধানঘড়া গ্রামে৷ পিতা গদাধর সাহা, মাতা বিরাজমোহিনী৷ পিতামাতার একমাত্র সন্তান৷

শিক্ষা : শিক্ষাজীবনের শুরু কালীতলা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে৷ ১৯৬১ সালে ধুনট হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন৷ ঢাকা কলেজে ১ বছর পড়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বগুড়া কলেজে গিয়ে পুনরায় ভর্তি হন৷ সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট, সেখান থেকেই বাংলায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷ ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৯ সালে ইংরেজি বিভাগে পুনরায় ভর্তি হন৷ কিন্তু পড়া শেষ করেন নি৷

পরিবার : স্ত্রী নীলা সাহা, দুইপুত্র তীর্থ সাহা ও সৌধ সাহা৷ দুই পুত্রবধূ যথাক্রমে তানিয়া ও মিতা৷

পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩), রেখাচিত্রম সন্মাণনা-কলকাতা (১৯৯৪), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৫), জেবুন্নেসা-মাহাবুব উল্লাহ পুরস্কার (১৯৯৪), বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার (১৯৯৭), একুশে পদক (২০০১), খালেদদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার (২০০২), কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার- কলকাতা (২০০৫), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৮)৷

ভ্রমণ : জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ৷

প্রকাশিত বইয়ের তালিকা :

কালানুক্রমে মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থ তালিকা-
এই গৃহ এই সন্ন্যাস (১৯৭২), মানব এসেছি কাছে (১৯৭৩), চাই বিষ অমরতা (১৯৭৫), কী সুন্দর অন্ধ (১৯৭৮), তোমার পায়ের শব্দ (১৯৮২), ধুলোমাটির মানুষ (১৯৮২), ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উলস্নাস (১৯৮৪), লাজুক লিরিক (১৯৮৪), আমি ছিন্নভিন্ন (১৯৮৬), মানুষ বড়ো ক্রন্দন জানে না (১৯৮৯), প্রথম পয়ার (১৯৯০), কোথা সেই প্রেম, কোথা সে বিদ্রোহ (১৯৯০), অস্তমিত কালের গৌরব (১৯৯২), আমূল বদলে দাও আমার জীবন (১৯৯৩), একা হয়ে যাও (১৯৯৩), যদুবংশ ধ্বংসের আগে (১৯৯৪), কোথায় যাই, কার কাছে যাই (১৯৯৪), সুন্দরের হাতে আজ হাতকড়া, গোলাপের বিরম্নদ্ধে হুলিয়া (১৯৯৫), এসো তুমি পুরাণের পাখি (১৯৯৫), বেঁচে আছি স্বপ্নমানুষ (১৯৯৫), বিষাদ ছুঁয়েছে আজ মন ভাল নেই (১৯৯৬), তোমার জন্য অন্তমিল (১৯৯৬) , আকাশের আদ্যোপান্ত (১৯৯৬), ভুলি নাই তোমাকে রুমাল (১৯৯৬), তুমিই অনন্ত উত্‍স (১৯৯৬), কেউ ভালবাসে না (১৯৯৭), কাকে এই মনের কথা বলি (১৯৯৭), অন্তহীন নৃত্যের মহড়া (১৯৯৭), একবার নিজের কাছে যাই (১৯৯৭), পাতার ঘোমটা পরা বাড়ি (১৯৯৭), মন কেন কাঁদে (১৯৯৮), এ বড়ো আনন্দ এ বড়ো বেদনা (১৯৯৮), স্বপ্নে আঁকি সুন্দরের মুখ (১৯৯৮), ভালোবাসি হে বিরহী বাঁশি (১৯৯৮), বহুদিন ভালোবাসাহীন (১৯৯৮), কে তুমি বিষন্ন ফুল (১৯৯৯), অপরূপ অশ্রুজল (১৯৯৯), কোনখানে কোনো একদিন (১৯৯৯), কেন সুন্দর ব্যথিত এতো (১৯৯৯), ভালোবেসে ছুঁয়েছি আকাশ (১৯৯৯), অনেক দিনের বিষাদ আছে মনে (২০০০) ৪২. সব দুঃখ ভুলে যাই প্রেমের গৌরবে (২০০০), ভালোবাসা, প্রিয় ঝড়াপাতা (২০০০), কেন মোহে, কেনবা বিরহে (২০০০), শূন্যতা আমার সঙ্গী (২০০০), আমার ভিতরে যতো অন্ধকার, আমার ভিতরে যতো আলো (২০০১), তবু স্বপ্ন দেখি (২০০১), সোনালী ডানার মেঘ (২০০১), পৃথিবী তোমাকে আমি ভালোবাসি (২০০২), কে পেয়েছে সব সুখ, সবটুকু মধু (২০০২), শুকনো পাতার স্বপ্নগাঁথা (২০০৩), দুঃসময়ের সঙ্গে হেঁটে যাই (২০০৩), দুঃখ কোন শেষ কথা নয় (২০০৪), ভালোবাসা কেন এতো আলো অন্ধকারময় (২০০৫), লাজুক লিরিক-২ (২০০৬), দূর বংশীধ্বনি (২০০৬), অর্ধেক ডুবেছি প্রেমে, অর্ধেক আধারে (২০০৭), কালো মেঘের ওপারে পূর্ণিমা (২০০৮), সন্ধ্যার লিরিক (২০০৮)

কবিতার সংকলন
মহাদেব সাহার রাজনৈতিক কবিতা (১৯৯১), মহাদেব সাহার প্রেমের কবিতা (১৯৯১), মহাদেব সাহার রাজনৈতিক কবিতা (১৯৯১), মহাদেব সাহার কাব্যসমগ্র ১ম খণ্ড (১৯৯৭), ২য় খন্ড (১৯৯৮), ৩য় খন্ড (২০০২), ৪র্থ খন্ড (২০০৬), মহাদেব সাহার শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮৯), প্রেম ও ভালবাসার কবিতা (২০০৫), নির্বাচিত ১০০ কবিতা (২০০৭), নির্বাচিত একশ-কলকাতা থেকে প্রকাশিত (২০০৭), প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা (২০০৮), মহাদেব সাহার কবিতার ইংরেজী সংকলন- অনুবাদ: ফাতেমা জহুরা হক (২০০৪)

প্রবন্ধের বই
৬৯. আনন্দের মৃত্যু নেই (১৯৮৪) ৭০. মহাদেব সাহার কলাম (১৯৯২) ৭১. কবিতার দেশ ও অন্যান্য ভাবনা (৯৬) ৭২. মহাদেব সাহার নির্বাচিত কলাম (২০০০)

শিশু ও কিশোরদের বই
৭৩. টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর (১৯৯৫) ৭৪. ছবি অাঁকা পাখির পাখা (১৯৯৭) ৭৫. আকাশে ওড়া মাটির ঘোড়া (২০০০) ৭৬. সরষে ফুলের নদী (২০০৫) ৭৭. আকাশে সোনার থালা (২০০৮) ৭৮. মহাদেব সাহার কিশোর কবিতা (২০০৮)৷

এছাড়াও মহাদেব সাহার অনেক কবিতা ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রুশ, হিন্দি, অসমীয়াসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে৷

সহায়ক গ্রন্থ

১. মহাদেব সাহার নির্বাচিত কবিতা
২. আমার কন্ঠস্বর- নির্মলেন্দু গুণ
৩. ভালবাসার সাম্পান- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
৪. সংবাদ সাময়িকী- ৭ আগষ্ট, ২০০৮
৫. সাপ্তাহিক- ঈদ সংখ্যা, ২০০৮
৬. মহাদেব সাহার সাক্ষাত্‍কার

লেখক : চন্দন সাহা রায়