কবিতা : নীল পকেটের খসড়াগুলো ( ২ )
১. পিপাসু পোস্টবক্স …
বৃষ্টির চিঠিতে জানি আকাশের খবরটা
তার মন ভালো নেই , ভালো নেই আমারটা
ডাকপিয়নের বস্তায় যদি আরেকটা চিঠি থাকতো !
আবার আমার পোস্টবক্সে নেমে আসতো বৃষ্টি
ফিরে আসতো একটি দুইটি করে তোর সব চিঠি
ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতো আমার কবিতারা
এই খরা লাগা বুকের আরো একটা কবিতা
একটা নতুন চিঠি একটা সবুজ পাতা ।
২. প্রলেপ …
প্রতিদিন কতো চকচকে তুই আয়নায় বসে
আর আমি পুরু প্রলেপে জমছি সে বিম্বের পিছে
তোর অবহেলা আর আমার ভালোবাসা বাড়াছে সমানুপাতে
অতটুকো নোনা জল নেই ভেজাবো তোর বালিশে
তবু আমি ডুবে থাকি ঐটুকু জলে লবনের আস্বাদে
তোর কথা সব শুরুতেই শেষ আমার নিজের প্রতিধ্বনি
ভেবেই বসে থাকি হয়তো আমার ডাকে তুই ফিরবি
কখনো দাঁড়িয়েছিস কী আয়নার পিছে ?
তোর বিম্বে আমি আর তুই আমার অবহেলায় কাঁচে ।
৩. পতন …
আজো বিকেল মানে জানলা গ্রিলে মুঠি করা হাত ,
ঘামে ভিজানো মনের
এক ছুট !
উঁচু দেয়াল বাড়ি গ্লাস খুলে লাফিয়ে পড়া রোদ্দুর ,
আমি তাদের থামাতে পারি না চিত্কার করি শুধু
কানে শুনে না বারণ মানে না একেকটা অপমৃত্যু
বিকেল মানে নীল ডানার প্রজাপতি কী উড়াউড়ি !
ছুঁই একটু ? ছুঁতেই অদৃশ্য হয়ে যায় ,
আজো জানলা মানে গোলাপ ঠোঁটে একটা তিল ছুঁতেই
আদর পেতে ঠোঁট বাড়ায় আর
অদৃশ্য হয়ে যায় ।
আজো বিকেল মানে একলা একা থাকা ,
আমার
এই গ্রিল ছাড়া জানলা …
চিন্তা হয় , ভাবি কখন যে রোদগুলো লাফিয়ে পড়ে
কালছে পথ এর উপর , এর পরই শুনতে পাবে
পতনের ঝু .প . পু . স …
৪. পালাক্রমে …
এই ভাবে দুইফোঁটা জল
বৃষ্টি শেষের অনেক পর
ঝুলছিল শেষ পাতাটায়
বাতাস ঝরালো একফোঁটা
সিন্ডেরেলার জুতোর মতো
খসে পড়লো দেয়ালের ঘন্টায়
…
তোরও এক পায়ে নুপূর
বেজেছে সেই কবে কখন
এখন আমার একচোখে
একফোঁটা জল ঝুলছে
বাতাস বাতাস বলে
৫. পেনামব্রা …
আমি তো অনেক রাতে , ঘর খুলে গেছি
সেদ্ধ কুয়াশায় গন্ধ গোঁজা সকাল দেখছি
রোদ উদ্ধায়ী উদ্ধাস্ত্ত শীতে শরীর এলিয়ে
উষ্ণ কবিতা চাইছে কিছু কবিতা পাগল !
-গরম হাঁড়িতে কিছু বাসি শব্দ সেঁকে দাও ,
-ছি . ছি . শব্দ নাকি বাসি হয়
কবিতাও না কি খেতে হয় !
-না না ঠিক তা ন য়
তবে ছায়া লম্বা হয় আমার চেয়েও লম্বা হয়
ঝুল হয় আর লিকলিকে যখন
রোদ লাল হলুদ হয় ।
৬. বিষণ্ন অভিসার …
তোমার ছায়ায় আমি পুরুষ হয়ে দাঁড়াই
নক্ষত্রে প্রণয় লুকিয়ে রেখেছি অন্ধকারের খাঁজে
যতটুকো রাতে আমাদের আশ্রয় থাকে নিভাঁজে
ততটুকো রাতে আমি তোমার পূর্ণ পুরুষ
রাত কাটে লোকে দেখে একলা পূজারী নতজানু
জোড়া লাগাচ্ছে টুকরো ছায়া , জল্লাদ সূর্যের নিচে …
[প্রলাপ : মাদাম সাবাতিয়ে ছিলেন কবিতা পাগল কিংবা কবি পাগল লোক তাঁর বাড়িতে কবিতার আসর বসতো সেখানে ফ্রান্সের বিখ্যাত সব কবিরা ঐ সুন্দরীকে মডেল সাজিয়ে কবিতা লিখতো ছবি আঁকতো মূর্তি বানাতো , জা বাতিস্ত ফেঁস্যাঁজের একটি বিখ্যাত প্রস্তর মূর্তিও ইতিহাস , বিখ্যাত গোতিয়েও এক কবিতায় শুধু চুম্বন দিয়ে বসন পড়াতে চায় অভীষ্টাকে , আর বোদলেয়ার ছিল নিরব শ্রোতা নবীন কবি বাড়ি ফিরে ছদ্ধ নামে সাবাতিয়েকে কবিতা লিখে চিঠি পাঠাতো । তবে বোদেলারের ভিন্নতা এখানেই ছিল তিনি প্রেমিকাকে সান্নিধ্য না চেয়ে বরং পূজা করতেন , ভেনাস সরস্বতি ভেবে । আমার কবি বলেন
” প্রণয় নিষ্ঠা প্রতিভার লক্ষণ আর স্পর্শে ভেনাসও যে কোন নারী ।”
কবিগুরুর উবর্শীতেও তেমন টা দেখতে পাই যার কিশোরী কাল নেই কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই
” নহ মাতা নহ কন্যা নহ বধূ সুন্দরী রূপসী
হে নন্দন বাসিনী উর্বশী !
…
কোনকালে ছিলো না কি মুকুলিকা বালিকাবয়সী ,
হে অনন্ত যৌবনা উর্বশী !
…
স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী তুমি হে উষসী
হে ভুবনময়ী উবর্শী !
(উর্বশী । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
… তোর পায়ের কাছে থাকতে চাওয়া , পূজা কিংবা প্রণয় অথবা পাপ যদি হয় মার্জনা করিস , যতটুকো কাছে গিয়েছি ততটুকো পিছে এসে নতজানু হয়ে বলি কিঞ্চিত ভালোবাসাটুকু রাখিস ]
… শৈবাল কায়েস , ৫ ই ভাদ্র ১৪১৮ ।
17 Responses to কবিতা : নীল পকেটের খসড়াগুলো ( ২ )
You must be logged in to post a comment Login