সকাল রয়

গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

(এক)

যদি পারতাম বন্দি করে রাখতে সেই সব দিনগুলোকে তাহলে হয়তো তাই করতাম।
আমার হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো আজকাল আমাকে বড্ড ডাকে; সেই ডাকার ধরনটাও অদ্ভুত। মাঝ রাতে ঘুমুতে যাই দুচোখ ছাপিয়ে ঘুমও আসে; ভাবি এই বুঝি জ্ঞানশূন্য সাগরে ডুবে গেলাম, কিন্তু না; তা আর হয়না। চোখের পাতার ঘোর অমাবস্যার যে আধার; তাতে আচমকা ভেসে উঠে পোড়া মুখীর মুখটা, হতচ্ছাড়ি জ্বালিয়ে রেখেছে আমায় শেষ প্রদীপের সলতের মতো। আমি টিপ-টিপ করে জ্বলছি।
জানিনা আর কত রাত এভাবে ঘুম শূণ্য করে রাখবে আমাকে। ওর হাসির শব্দে মনে হয় চারপাশটায় কলরব উঠে যায়। মাঝ রাতের আধারে আমায় ডাকে; কান্ত এই কান্ত এসোনা……. মাঝ রাত্তিরে কানামাছি খেলি।
কিছুতেই আমার কানামাছি খেলা হয় না; সেই সাথে ঘুমের সাগর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। বিতৃষ্ণা এসে ঠেকে জিবের ডগায়।
মাঝ রাতে বাইরে যে বেরুব সে উপায় টুকু পর্যন্ত নেই; র‌্যাকের পাশে পাহারাদার বসে আছে। এই অভাবনীয় ভয়ের রাতে আমাকে সঙ্গ দেয়। এমনটা হতো না; কিন্তু সেদিনের পর থেকে রিস্ক নেয়া যায় না;সেটুকু ভেবেই এই ব্যবস্থা।
আমার চিন্তা কিংবা চেতনার মাঝে অশরীরী কারও উপস্থিতিটা শুধু আমিই জানতাম; কিন্তু সেটা যখন দেয়াল থেকে বাগান ঘুড়ে কারো ঘরের আঙ্গিনায় গিয়ে দাড়াতে শিখলো; ঠিক তখনই সবাই আমাকে ঘিরে চোখ গোল করা দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগলো; আর সেই সাথে সাতসতেরো থেকে সাতপাঁচ বারোর গ্যাঁড়াকলে আমার দৈনন্দিন জীবন ভাজা হতে লাগলো।
এমনও হয় যে আমি খেতে যাবো কিন্তু ঘোর লাগা টোপে বসে রয়েছি; কিংবা কিছুটা আনমনা; এই রকম হলেই চারপাশ থেকে কথা ছুটে আসতো; এই কান্ত তোর হয়েছেটা কি; বল দেখি ?
-কান্ত’র আর কি হবে !! প্রেমে-ট্রেমে পড়েছে বোধহয়;
-তোমাদের যা-কথা; কান্ত পড়বে কারো প্রেমে; ওর মতো এমন রসহীন ঘাস কি কারো সবুজ বনের অবুঝ সাথী হতে পারে ?
এইরকম প্রশ্ন গুলো আমাকে বিদ্ধ করতে করতে ওদের কথার ফলা আজকাল ভোতা হয়ে গেছে। তরে ওরা ক্ষান্ত হয়নি; নতুন করে শুরু করে, আর ভেতরের টিপ টিপ করে বয়ে চলা বর্ষণ টাকে ঝড়ের আকারে ধারণ করাতে চায়; কিন্তু আমি এত সহজে সেই ঝড়কে আহবান করতে চাইনা।
বর্ষা শেষের এক রাতে আমি যে কাণ্ডটা করলাম তাতে ওরা শংকিত হয়ে গেলো; আমাকে কিছুতেই একা থাকতে দেবেনা। আমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হলো; তুমি কেন এমন করছো ?

(দুই)

আর একপা বাড়ালে হয়তো দেখতে আর হতো না আমাকে; আমি বট তলার শ্মশান ঘাটের যাত্রী হয়ে যেতাম। নিশুতি রাতে ঘুম সাগরে হতচ্ছাড়ি সুশি এসে আমাকে খুব করে ডেকে, হাত ধরে ছাদের উপরে নিয়ে এসে যে কাণ্ডটা ঘটালো তাতে লোক মুখের রহস্য কাহিনীর চরিত্র হয়ে গেলাম আমি।
অদৃশ্য সুশি হঠাৎ দৃশ্যমান হয়ে ছাদের উপর দুহাত তুলে ডেকে বললো কান্ত ভালবাসা কত লম্বা হতে পারে তা জানো তুমি ?
আমার সেই রসহীন উত্তর ;জানবো কি করে, কখনো মাপিনি তো !!
ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো; মাপ নি বেশ করেছ; এবার ছাদের উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়; যত দূরে গিয়ে পড়বে আমি বুঝে নেব ততখানি লম্বা তোমার ভালোবাসা !!
আমি ঝাপ দিতে গেলাম; ভালবাসার দুরত্ব দেখাতে……………
সেদিন মরেই যেতাম; কিন্তু পেছন থেকে রন্তু এসে ধরে ফেললো আমায়; তাই বেঁচে গেলাম। দেখাতে পারলাম না আসলে কতখানি ভালবাসতাম সুশি কে।

আজ মাসের পাঁচ তারিখ। আর্ট গ্যালারিতে আমার ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে; পুরো হল রুম জুড়ে মানুষের সমাগম; আমি গ্যালারির একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে; রন্তু এসে বললো কান্ত দা একজন তোমার ছবি কিনতে এসেছে।
আমি তখন কিছু একটা ভাবছিলাম; একটু আনমনা ছিলাম তাই নিষেধ করে বলতে ভুলে গেলাম যে, বলে দাও ছবি বিক্রি হবেনা।
নিচে গেলাম; যিনি নিতে এসেছেন তাকে তাড়িয়ে দেব এই ভেবে।
জলরঙ্গে আঁকা পেইন্টিং টার নাম “উদোম” যিনি কিনতে এসেছেন তাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম;কেননা তার বয়স চব্বিশ ছাড়িয়ে যায়নি; মনে হয় নতুন শাড়ি পড়া শিখেছে; আঁচল টানতে জানেনা। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা নেই কিন্তু দেখে আন্দাজ করা গেল চোখে লসিক করা। আমি কাছে গিয়ে দাড়ানোর পর তিনি বিস্ময় মাখা চোখে বললেন আপনিই কি ছবিটা একেছেন ?
আমি বললাম হ্যা। তার চোখ আর ঠোট উল্টানো দেখে বোঝা গেল তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না;
বললেন ভেবেছিলাম বয়স্ক গোছের লোক হবে কিন্তু এতো তরুন ভাবিনি; যাই হোক কত দাম চাইছেন ?
-সতের হাজার পাঁচশো তের টাকা।
-আমি সতের হাজার টাকা দিচ্ছি;
-না ,হবেনা; টাকা পুরোটাই দিতে হবে।
-কিছু কম রাখুন !!
-আমি পারছিনা।
মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো না; ব্যাগের ভেতর টাকা খুজলো; তারপর টাকাটা আমার সামনে মেলে ধরে বললো; এই নিন পুরোটাই আছে !!
আমি গুনে দেখলাম আট টাকা বেশি আছে; ফেরত দিতে চাইলাম কিন্তু পকেটে ভাংতি নেই;
-রেখে দিন পড়ে নিয়ে নেব;
-পড়ে আমাকে পাবেন কোথায় ?
-পেয়ে যাবো পৃথিবীটা খুব বড় নয়; চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়; বাকী থাকে শুধু মনের ইচ্ছেটা; ইচ্ছেটা যদি থাকে তো পুনরায় দেখা হয়।
আমি বললাম সহজ ভাবে বলুন; কাব্যিকতা পছন্দ করিনা। মেয়েটা হাসলো অদ্ভুত ওর দাঁতগুলো খুব সাদা।
মেয়েটার চলে যাওয়া দেখলাম; খানিক বাদে ভুলেও গেলাম। কিন্তু ওর রেখে যাওয়া কথাটা মুছে দিতে পারলাম না মন থেকে; “পৃথিবীটা খুব বড় নয় চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়; বাকী থাকে শুধু মনের ইচ্ছেটা; ইচ্ছেটা যদি থাকে তো পুনরায় দেখা হয়”
এই কথাটা আমাকে কেউ একজন এর আগে বলেছিল;
কে বলেছিল ? কেন বলেছিল; মনে করতে পারছিনা।

(তিন)

ভরদুপুরে ক্যামেরা কাধে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় হন্যে হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটেছি। একটা অটো কিংবা সি.এন.জি. কোনটাই পাইনি; দুপুর রোদে তৃষ্ণায় বুক জ্বলছে কি-করি;
সাউথ হিলসের কাছে আসতেই ফুলের দোকানের পাশেই একটা সি.এন.জি পেয়ে গেলাম। কাছে ঘেঁষতেই ড্রাইভার বলে উঠলো বাবু রিজার্ভ আছে যাওয়া যাবে না। আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললাম ক’জন নিয়ে যাবেন; ড্রাইভার বলল মানুষ একজন আর কিছু ফুল।
– তাহলে তো যাওয়াই যায়।
– না বাবু উনি আমাকে বলেই নিয়েছেন আগে;
– কোথায় উনি
– ওই তো ভেতরে ফুল কিনছে।
আমি বাইরে দাঁড়ালাম দেখি কে সে; আর যাওয়া যায় কি না।
এক তোড়া ফুল নিয়ে চোখে পড়ার মতন একটা মেয়ে সি.এন.জি তে উঠে বসলো। রোদের তাপে মাথা তখন আমার আই-টাই করছে। সাত চৌদ্দ না ভেবে গিয়ে বললাম যদি কিছু মনে না করেন, আমি কি; সি.এন.জি তে আপনার পাশে কিছুটা সময় যেতে পারি; এ রোদের দুপুরে সব খা খা করছে বাড়ি যেতে হবে তারাতারি।
মেয়েটি চোখ কঠিন করে বলল না যেতে পারেন না; আমি তো রিজার্ভ নিয়েছি;
-যেতে পারিনা বলে কি !! মুখের উপর না বলাতে আমার একটু খারাপ লাগল।
সি.এন.জি স্ট্রাট নিয়ে চলে গেল। কিছু মেয়েরা যে বড্ড বাজে রকমের মেজাজী হয় সেটা জানা ছিলোনা; আজ জানলাম।
রোদমাখা পথে পা রাখলাম; সকাল থেকে মেঘালয়ের পাহাড় ধরে দু’টো প্রজেক্টের কাজ শেষ করেছি। আজ বাইকটাও আনিনি সাড়াতে হবে তাই; কে জানতো ভর দুপুরে এমন হবে।
পকেট থেকে দেশলাইটা হাতে নিলাম, সিগারেট বের করতে যাবো অমনি সি.এন.জি র আওয়াজ।
আরেকটা সি.এন.জি এলো বোধহয় ;
-এই যে আসুন;
পেছন তাকাতেই দেখি সেই মেয়ে।
কি ভাগ্য আমার !!
সিগারেট পকেটে ফেলেই উঠে গেলাম। আমাকে না নিয়েই চলে গিয়েছিলেন আবার যে এলেন;
– একটু যেতেই মনে হলো এই দুপুরে আপনার কষ্ট হচ্ছে তাই নিতে এলাম; তবে কথা বলা চলবে না কিন্তু।
আমি চুপচাপ বসে গেলাম। সি.এন.জি চলছে মাঝারি স্পিডে পাহাড়ী পথে। মেয়েটার দু’পাশে অনেক ফুল আর ফুলের তোড়া; অনেকটা ফুলের বনে পরি’র মতো লাগছে ওকে। ভালো করে তাকাতে গিয়ে চোখে চোখ পড়ে গেল মাথা নিচু করে গেলাম।
আমার সিগারেট খাওয়া দরকার কিন্তু ওনি যদি বিরক্তি বোধ করে। এই জাতীয় মেয়েদের তো সিগারেটের গন্ধ্যে অ্যালার্জি থাকে। বাধ্য হয়ে ড্রাইভারের কাছে দেশলাই চাইলাম এইবার মেয়েটা মুখ খুললো;
-না জনাব এখন সিগারেট খাওয়া চলবে না; ওটার গন্ধ সহ্য হয় না আমার।
কি আর করা; থাকলাম ভজু হয়ে। কিন্তু সিগারেট যে আমায় খেতেই হবে ও নেশা বড্ড বাজে।
আধঘণ্টা কেটে যেতেই আমি লজ্জাকে চুপসে যওয়া টিস্যুর মতো রাস্তায় ফেলে দিয়ে সিগারেট জালিয়ে নিলাম।
-আপনি তো বড্ড বাজে লোক, না বলা স্বত্তেও কাজটা করলেন। আপনি নামুন তো।
আমি হাসলাম; মেয়েটা ততক্ষণে রেগে গেছে, মুখটা ভবানির মতো লাগছে। এই দুপুরে নেমে গেলে আমি রোদে পোড়া নিগ্রো হয়ে যাবো। মেয়েটা ভ্র-কুচকালো তারপর বললো; হলে হবেন; আরেকটা নিগার খুজে পেতে কষ্ট হবেনা আপনার। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল; মুখ ভর্তি ধোয়া ছেড়ে দিলাম। দু’মিনিট আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটার ভাব বদলালো।
– এবার ফেলুন;
সিগারেট আধ খাওয়ায় হয়নি ততক্ষণে; আমি ছুড়ে ফেলে দিলাম।

দু’পাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। দুরের মাঠে আজকাল রাখালও দেখা যায় না। গরু আপনা আপনি চড়ছে। ছেলেরা ঘুরি আর উড়ায় না; এ পথে কোম্পানি বসে গেছে, পাহাড়ের সাদামাটি কেটে তৈজসপত্র বানায়। আমি সাদা মাটির পাহাড়ের দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে ছিলাম; তাকিয়ে থাকা মনে মাঝে মাঝে কল্পনার অ্যানিমেশন শুরু হয়ে যায়।
আনমনা থেকে সৎবিত ফিরে পেলাম যখন দেখলাম সি.এন.জি থেমে আছে।
অসহ্য গরম !! কাঠ রূপালী রোদ্দুর রাস্তা আর বনাঞ্চল জুড়ে।
মেয়েটা বসে থেকে ঘেমে গিয়ে নেমে গেল সাথে পা ফেললাম আমিও।
গ্যাস নেবে বলেই থেমেছে সি.এন.জি।
শাড়ির আঁচল ভাজ করতে করতে ও বলল রোদ আজ কড়কড়ে।
– তাই মনে হচ্ছে
– রোদের ছেলে কে জানেন? কাব্যিক প্রশ্ন!! অমন রাগী মেয়ে আবার কবিতা জানে নাকি ?
-মুখ ঝাঁকিয়ে বললাম জানি না।
– রোদের ছেলে হলো পড়ন্ত বিকেল।
– তাই নাকি !!
– মনে হচ্ছে রোদের মা ক্ষেপেছে আজ। শরীর থেকে সব বেরিয়ে যাচ্ছে।
– মেয়েটি এবার আঁচল ছেড়ে দিয়ে হাতের কঙ্কন ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলল, আপনার কোনটা ভাল লাগে রোদ না বৃষ্টি। আমি মিথ্যে করে বললাম আমার রোদ ভাল লাগে।
– মেয়েটি বলল কেন ?
– রোদ না এলে সব কিছুতে গুমোট থেকে যায়। আর আধারটাকে ভালো লাগেনা বলেই তো রোদটাকে প্রিয় ভাবি।
– ও তাই; কাব্যিক সংলাপ।
– আপনিও কিন্তু কম না; রোদের যে ছেলে আছে সেটা তো জানতাম না। আজ শুনলাম।
– তাই নাকি; ওই যে দূর পাহাড়ের ঝরনা দেখছেন বলতে পারেন ওই ঝর্ণার প্রিয় বন্ধু কোনটা ?
– প্রিয় বন্ধু যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে স্রোতকে;
– নাহ্ ঝর্ণার প্রিয় বন্ধু প্রকৃতি। প্রকৃতির কোলে ঝরনার সৌন্দর্যই সেরা।
– হু বুঝলাম; আপনি কাব্যিক করে বলেন বলে ভালো লাগলো; নয়তো এগুলো আতলামু।
– তাই; তবে আপনি হলেন একটা ট্যা-ট্যা টাইপের লোক; বানিয়ে একটা মিথ্যে বললেন আমার সাথে।
আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে বুঝলেন ?
আর কোন কথা হলোনা ; সি, এন জি ততক্ষণে ষ্টার্ট নিয়েছে।
বাড়ি ফিরবার পথে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম এত বড় উপকার করলেন; আপনার নামটা তো জানা হলোনা।
ও বললো হাজার লোকের ভীড়ে কতজনকেই আর মনে রাখতে পারি বলুন; তাছাড়া আমাকে মনে না থাকলে কোন দোষ হবে না তাতে।
দোষ হবেনা জানি কিন্তু উপকারটা ফেরত দিতাম আরকি ?


(চার)

সুশির সাথে দ্বিতীয় বার দেখার তারিখটা আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিনা তবে এটুকু মনে আছে; গারো বাজারের শিবতলার পথে এক ভিখেরির থালায় পয়সা দেব বলে পকেট হাতড়াচ্ছিলাম; আচমকা ও পেছন থেকে ভিক্ষে থালায় পয়সা দিয়ে বলেছিলো; দরাজ দিলের একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে; দরাজ দিল না হলে ভিক্ষের পয়সাও পকেটে থাকেনা।
রিকসা করে যাচ্ছিল সেদিন; তাই আর ধরতে পারিনি ।
মেয়েটির নাম যে সুষ্মিতা বিনতে সুশি সেটা প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাছেই প্রথম জানতে পাই। নীল লেকের ফটোসেশনের মিশনেই তৃতীয়বারের মতো ওর সাথে দেখা হয় আমার। সেদিন একটা বালুচরি শাড়ী পড়ে এসেছিলো; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমাকে চিনতে পেরেও না চেনার ভান করে বাচ্চাদের ডাটা এন্ট্রি লিখছিল। আমি সামনে গিয়ে হ্যালো বলার পর ও বললো; আমি কি আপনাকে চিনি ?
আমি হাসি চাপা রাখতে পারছিলাম না; তাই বললাম আপনার নাম তো সুশি; তাই না। মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল; হ্যা তো; বলুন এখন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি ? নাকি আপনি আমার ডাটা নিতে এসেছেন ?
কিছু করতে হবেনা আপাতত পরিচিত হতে চাই। আমি আর আপনি মানুষ এটাই বড় পরিচয়। আমি হেসে বললাম কেন পরিচয় দিতে অসুবিধে আছে ?
আমি ব্যাস্ত হয়ে গেলাম কাজে তাই আর কথা বলা হলোনা সেদিন। নীল লেকের ফটোসেশনে সুশিরও ছবি তোলা হয়েছিলো। সেই ছবিটা দেখে আমি জলরঙে একটা ছবিও এঁকেছিলাম।
সেদিন দুপুরের পরে সাদা মাটির উপর বসে ডাটা এন্ট্রির টেবিল ছেড়ে সুশি হাওয়া লাগাচ্ছিল গায়ে। আমি ঠিক তারই পাশে ক্যামেরা রেখে ডাইরি লিখছিলাম। এরই মাঝে আমার ধোয়া ছাড়বার নেশা পেয়ে বসলো তাই ডাইরি রেখে উঠে গিয়েছিলাম; এসে দেখি ডাইরি নেই;
খোজা-খুজি করতে হলো অনেক। কিন্তু পেলাম না। সুশিও নেই যে ওকে জিজ্ঞেস করবো। শেষে টিম ম্যানেজমেন্ট অফিসার কে জিজ্ঞাসা করলাম সুশি কোথায় ? উনি ভ্র-বাকা করে বললো সুশি নিচে পানি আনতে গেছে।

বিকেলে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম আবারো ।
সন্ধ্যের দিকে তখনও আধারটা পুরো আসেনি; তবে আসবে আসবে করছে। সবাই হিলস ছেড়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে হাঁটছি তখন। পিছনে দেখা গেল সুশিকে; আমি পাশে গিয়ে বললাম আমার ডাইরিটা দেখেছেন ? ও চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বললো হ্যাঁ।
মনে মনে আমার একটু রাগ উঠে গেল; না বলে কেন এমনটা করলো। ও বললো বাতাসে ডাইরি পড়ে গিয়েছিলো তাই আমি নিয়ে গিয়েছিলাম; ভয় নেই পড়িনি।
কোম্পানীর মিনিবাসে করে সবাই যে যার আস্তানায় ফিরছিল; গারো বাজারে নামবার সময় সুশি বলে উঠলো লেখায় এতো বানান ভুল করেন কেন ?

(চলবে…………………….)

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


6 Responses to গল্প : চোখের আঙ্গিনায় চোখ পড়ে রয়

You must be logged in to post a comment Login