আজিজুল

জাতীয় কবির মহাপ্রয়ান ও বিদ্রোহের সংজ্ঞা

জাতীয় কবির মহাপ্রয়ান ও বিদ্রোহের সংজ্ঞা
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আমাদের প্রবাসীরা বেশ কিছুবিষয়ে সমস্যায় পড়ে যাই। আজ ২৯শে আগষ্ট যেমন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এর মৃত্যুবাষি’কী , অথচ প্রবাসে এক এক স্থানে সময় পাথ’ক্যর কারনে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলামনা কখন লিখাটি পোষ্ট করা উচিত হবে।

যাহোক, বত’মান অবস্থার প্রেক্ষিতে বিদ্রোহী কবির স্মরনে কিছু কথা নিবেদন করতে চাই। সবাই লক্ষ্য করেছেন হয়তো, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামাতিরা কবি নজরুলকে নিয়ে বেশ টানাটানি করে। অথচ এই সব ধম’ধজাধারীরাই এককালে নজরুলকে কাফের ও মোনাফেক বলেছিলো । যে কবি হিন্দু মুসিলম বিদ্ধেষ এর বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন (কবিতাঃ “যদি আর বাশি না বাজে ” ) !  জীবদ্দশায় বাঙ্গালির মনে কোনদিন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে তুলনা করা হয়নি- যা এই ধম’ব্যবসায়ী জামাতি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা করেছে।

অথচ এই কবিই ছিলেন পাকিস্থানের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়ঃ

‘নবযুগ’ পত্রিকায় কবি তখন স্বাক্ষরযুক্ত সম্পাদকীয় লেখেন। এক সংখ্যায় লিখলেন ‘পাকিস্তান না ফাঁকিস্থান?’ আর যায় কোথায়, ভীমরুলের চাকে ঢিল ছোঁড়া ছাড়া আর কী? তরুণ এই পাকিস্তান আন্দোলনকারীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। …

যারা কবির স্নেহ নিয়ে কোলকাতায় দাপটের সাথে চলতেন, তারাই কবির জীবনের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়ালেন।

জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম

সে সময়ের লেখক মোহাম্মদ কাশেম তাঁর স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন সেই দুর্ঘটনার কথা। আক্রমণের পর ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি কবি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তার পিঠে সেই আঘাতের চিহ্ন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কবি বহন করছিলেন। বাংলাদেশে কবির ব্যক্তিগত সহকারী শফি চাকলাদার সেকথা অকপটে স্বীকার করেছেন। ছবি তুলে রেখেছেন, কিন্তু কাউকে দেননি। তাঁর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার জন্য সমিতি হলো, ‘নজরুল রোগ নিরাময় সমিতি’। সেখানেও ঢুকে গেল দু’একজন পাকিস্তানপন্থী। তারাই নিয়ন্ত্রণ করত তার চিকিৎসা, দেখাশোনা, অর্থ সংরক্ষণ। ওই সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন কবি জসীম উদদীন। তাদের দীর্ঘসূত্রিতায় রোগ ধীরে ধীরে নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে উঠলো। সুফি জুলফিকার হায়দার তাতে সহযোগিতা করলেন। লুম্বিনী হাসপাতালে শেকল দিয়ে বেঁধে, লোক-আড়ালে কবিকে নিঃশেষ করে দেয়া হলো।” [তথ্যসুত্রঃhttp://arts.bdnews24.com/?p=3029 ]

নজরুলের এক চিঠিতে পাওয়া যায়,

“আনেক বন্ধুরাই আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে…শেষ ক’মাস হলো আমি ভিখারির মতন ঘুরছি, অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী এ.কে. ফজলুল হকের কাছে গিয়েছিলাম দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা নিয়মিত… আমার প্রত্যাশায় গুড়োবালি।… এটাই হয়তো নিজ হাতে লেখা শেষ চিঠি…

আসলে এরা হয়তো আমার জানাযার জন্যেই অথ’সাহায্য দেবার প্রহসন করছে। তাই আমি পরিবারকে বলে দিয়েছি ভবিষ্যতে এদের কাছ থেকে কোন অথ’ চাইবেনা।

-নজরুল”

Source: Dr. Sushilkumar Gupta, Nazrul Choritmanosh (Calcutta: De’s Publishing, 1960), p. 106]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ানে বিদ্রোহী কবির কন্ঠে একখানা কবিতা আজ নিবেদন করলাম।

কবিতার নামঃ‘রবি হারা’

গানঃ খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে

যে কবি আজন্ম লড়াই করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধমে’র নিরিখে দেশ বিভক্তির বিরুদ্ধে, সে কবির অকালে ঝরে যাওয়া মেনে নেওয়া কষ্টকর।

আজ তাই বেশ ব্যথিত চিত্তেই তাকে স্মরন করছি। সেদিনের উগ্রবাদীদের বিষাক্ত ছোবল কবির দেহ ও মননে আঘাত না হলে তিনি হয়তো আরো কিছুকাল বেচে থাকতেন। তবুও কবি অমর আমার কাছে, আমাদের কাছে।।

“নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান- ক্ষয় নাই ওরে ক্ষয় নাই!!! “

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


9 Responses to জাতীয় কবির মহাপ্রয়ান ও বিদ্রোহের সংজ্ঞা

You must be logged in to post a comment Login