অবিবেচক দেবনাথ

জ্যোৎস্নার আলোয় সমুদ্র স্নান

জ্যোৎস্নার আলোয় সমুদ্র স্নান
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

[ সমুদ্র ভ্রমন! সমুদ্র স্নান! সেতো আর নতুন কিছু নয়, সমুদ্রতটে ভ্রমণবিলাসী হাজার জন হয়। এদের মধ্যে তবু কেউ ব্যতিক্রম, আমার এ গল্পকাব্য তেমনি এক চয়ন।]

সমুদ্রবিহারে শৃঙ্খলহারা কপোত-কপোতি, ওরা প্রাণের টানে এই অদূর দূরে সমুদ্র মন্থণে, ভাবোল্লাসে।

হৃদয় উন্মদনায় এই জ্যোৎস্না ভরা রাতে, দুটি মনের কথা একসাথে নির্জন, নিরালায়। প্রাণের কথা চলে প্রাণে, বাতাসের শিহরিত সঞ্চালনে ধ্বনিত হয় শুধু প্রাণের অশেষে বলা কথাগুলো।

অনেক ইচ্ছে ছিলো জান!
তোমাকে নিয়ে সমুদ্র স্নানে নামব জ্যোৎস্না রাতে
এলিয়ে চুল হারাব নয়ণ, তোমার নয়ণ প্রাতেঃ।
হারিয়ে যাব চাঁদের গায়ে, আলোয় মুড়িয়ে দেহ
শুধু তুমি আমি একসাথে, রবে না আর কেহ।

প্রতিউত্তর আসে-

স্বপ্ন আমারও ছিলো! তোমার হাত ধরে
চলব জ্যোৎস্না রাতে, আলোর কৌঠরে
মাখব গায়ে জ্যোৎস্নার আলো, হব একাকার
গাইব হেমন্তের সুরে “এই রাত তোমার আমার”।

এই দেখ না-

এই সমুদ্র এত উত্তাল, এত ক্ষুদ্ধ উজানে
তবু; কেমনে সে এত টানে?

প্রতিধ্বনি ভাসে-

হয়ত বুঝে সে প্রাণের স্পন্দন, মনের রূপরেখা
রঙ্গিন স্বপ্নের ভাষা, প্রানের কল্পকথা।

আচ্ছা; আজ আমাদের স্বপ্ন হয়েছে সত্যি, কল্পনা আর নয় রাত্রি। এইক্ষন কেমন দোলা দিচ্ছে প্রাণে তোমার?

সে বলব? ক্ষনমুহূর্ত হাসি-

আমিতো কল্পনার ঘোরেই বোধ হয় আছি
আজও ভাবছি সব মিছামিছি
সত্যি আমি তোমার সাথে সমুদ্র স্নানে!
সেও আবার জ্যোৎস্না ভেজা রাতের টানে?

ভেবেছ! আমরা আজ মনের টানে এক তীরে হাত ধরে, সমুদ্রের বুকে গর্জন, আমাদের বসন্ত কাঁপন, যেন বইছে একসুরে। আজ আমার তাই আকাশের পানে হাত মেলে বলতে ইচ্ছে হয়, হৃদয়ের ভাষাদ্বয়।

ওগো রাত; কেন ঢেঁকে রাখলে এমন রাত আড়ালে?
এমন আত্নহারা সুখ ঢেঁকে কতকাল বিরহে কাঁদালে
আমিতো আর ছাড়িতে না পারি তোমায়
এই হিয়ায় চেয়ে দেখ, রহিছে তোমার ছায়ায়।

আমিও আজ কিছু প্রাণ খুলে বলতে চাই, কিন্তু বাঁধ সাধে কোন নিরাশায় আবার হারিয়ে যাই! সমুদ্রপানে এই জ্যোৎস্নার আলোয় স্নান হবে কি অজীবন? ভয়ে ধুরু-ধুরু বুক, কান পেতে শোন বলছে সেই কথণ।

ভয় কিসের ওগো অনন্যা-

আসলাম হাত ধরে হাতে
কথা দিলাম আজীবন রব সাথে
ছাড়লাম রক্তপ্রবাহ-আত্নীয়-জ্ঞাতি
শুধু তোমাতে জড়ালাম ওগো সাথী;
আজ সুখ-দুঃখ তোমাতে-আমাতে ভাগাভাগি
কেন এই সুখ বসনে ব্যাথায় মজ রাগী?

আচ্ছা ভাবতো, আমাদের নিয়ে এখন কি কান্ডই না হচ্ছে, হয়তো অহংকারে আচ্ছন্ন পরিবারগুলো খোঁজে মেতেছে। আমার দারূণ ভয় হয় সেজন্য, যদি কখনো খোঁজ পায় কেহ, এই বসন্ত ভূষণে গড়া সুখ হবে বিবর্ণ।

আচ্ছা বলোতো, কেন এই সুখে ভয়ের কালিমা ছড়াচ্ছ? এই আনন্দঘনতীথি কেন সজীবহীন করছ? শোন-

ছেড়ে এলাম বন্দর ছেড়ে অদূর দূরে
নীলসীমানার ওপাড় ছেড়ে এপাড়ে
রাত-দিনের আলোক-আঁধার ঢেঁকেছে
রাত ভুলেছে দিনের পথ, দিন রাতের আঁশে।
এই পথ চেনা এত সহজ কি বল?
এ’পথ ধরে যে দু’মন একাকার হল
দিন-রাতের পালাবদলে, প্রকৃতি দেখেছে সব
তবু সেযে; করবেনা কোন রব
কেননা এই পৃথিবী যে প্রেমে মহীয়ান্।

এই চলনা, চলনা সমুদ্রে নামি। সমুদ্রের জল গায়ে ছিটায়ে কাটাই যামিনী।

চল; সুরের লহরে নামি সমুদ্র স্নানে, এই আবেশিত জ্যোৎস্না রাতে, স্বরসংগীতে-

(গান)
ওগো রাতের পাখিরা আস
এই মোহনায় ঐ জোছনায়, সুর জোয়ারে ভাস,
হায় সমুদ্র স্নানে আস।

এখন আকাশ নীলা নেই
সুখের চাঁদর জড়ায়ে আকাশ, হৃদয়ে দোলা দেয়
সেই চাঁদরে জড়াই আদরে, প্রানের সুখে হাস,
হায় সমুদ্র স্নানে আস।

ঐদেখ সমুদ্র ঢেঁউয়ে হারায়, মন জান কি চলে সে ধারায়
অবুঝ প্রাণ প্রাণে হারায়, মন জোছনার সে ধারায়
কুঞ্জকানন রচ,
হায় সমুদ্র স্নানে আস।

আজি মন হারালো
তোমরা না জানলে তা কেবা জানলো
তোমরা না বললে তা কেবা বলবে, আহা কেবা ছড়াবে!
বোঝ না বন্ধুরা! আস,
হায় সমুদ্র স্নানে আস।

মনের অপলকিত সুরে হারিয়ে গেল দুটি প্রাণ। এক রঙ্গিন আবেশে, স্বপ্ন গড়া প্রদেশে।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


8 Responses to জ্যোৎস্নার আলোয় সমুদ্র স্নান

You must be logged in to post a comment Login