স্বাগতম, হে সুদূরের পথিক
আমার এ চিঠি লিখে রেখে যাই তোমাদের জন্য
অনন্ত শতাব্দীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে, পথিক-
এ চিঠি পড়ে যদি পার আমায় করো ধন্য।
এ যুগের গান লিখে রেখে যাই পাখীর কূজনে উত্তর ফাল্গুনে,
জানি তুমি সেদিন জানবে না আমায়, রাখবে না মনে।
হেমন্তে বসন্তে জানিনা সেদিন
বইবে কি দখিনা বাতাস
গাইবে কিনা কোকিল, পাপিয়া
ফুটবে কিনা কুমুদ কুড়ি
লতায় পাতায় মঞ্জরীবে কি
সে দিনের সেই অরণ্য,
গ্রীষ্ম বর্ষা শরতের শিশির ভেজা ঘাস
বকুলের গন্ধে
উথলিয়া উঠবে কি কবির মন
যুগের বিবর্তনে সেদিন বইবে কি বৈশাখী ঝড়,
আষাঢ় গগণে মেঘের গর্জনে
হবে কিনা বিরহী উন্মন।
বড় সাধ জাগে পথিক-
তোমার দেখা যদি পেতাম সেদিন
কানে কানে শুধাইতাম কেমন আছ?
কেমন আছ আজ এই
নব শতাব্দীর প্রান্তে?
ঘুম থেকে জেগে উঠে
যান্ত্রিক কলরবে রোবটের কলতানে
বরণ করবে তুমি অনাগত সাল
আমার এ বারতা
রয়ে গেল তোমাদের জন্য।
পরাধীনতার ক্ষুধিত কারায়
বন্দী ছিল বিগত মানুষ
ফোটেনি আলো চোখে
দলিত হয়েছে কুসুমের গান
পাষাণে ভেঙ্গেছে শত প্রেম
তবুও করেছি বাসনা
রেখে যেতে কিছু সঞ্চয়
অন্তহীন আকাশ, কিছু বাতাস।
তরল অনলে ঝলসাবেনা রমনীর মুখ
বুলেটে ছিন্ন হবে না কোন পুরুষের বুক।
নারী পুরুষে পাশাপাশি সেদিন
বাধবে সুখের বাসর
ধরণীতে এসেছিল যারা
সাজাতে সোনালী আসর।
একই ধরনে বরনে গড়া
একই হাসি কান্না
আনন্দ বেদনা মোহ মায়া
উভয়েই যেন উভয়েরই ছায়া
কেহ নয় নারী কেহ পুরুষ
সকলেই হবে মানুষ
বিধাতার বাসনা সে দিন হবে পূর্ণ।
গ্রহান্তরে করবে তুমি মধুচন্দ্রিমা
পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে
কল্পনা যেখানে মিশেছে আধার
আলপনা আঁকা ওই সুদূরে
আমরা যেখানে দেখেছি অসীম শূন্য।
ক্ষেপনাস্ত্র, মিগ টুয়েন্টি নাইন,
হাইড্রোজেন, মিশাইল, টর্পেডো, মাইন-
চির বিদায় নিবে পৃথিবী থেকে
সাথে ক্ষমতা হিংসা লোভ।
এই পৃথিবী চেয়ে আছে
সেই অনাগত শতকের পানে
ওহে! সুদূরের পথিক,
জানি না কোন দিন পূরণ হবে কি না
আমার এ গহীন স্বপন।
(আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে রবি’দাকে অনুকরণ করার দুঃসাহস করেছিলাম। দাদা কি বলতেন তা শোনার ভাগ্য হবে না, আপনারাই বলুন।)
12 Responses to স্বাগতম, হে সুদূরের পথিক
You must be logged in to post a comment Login