ছোট গল্প: “ঘাম তত্ত্ব”
যুবকের চুলে ধুলা আর বালির সহাবস্থান। শরীরে পশমের ভাজে ভাজে বহুদিন সাবান না মাখার ফলে কালো ময়লার প্যারালাল আবরণ। সেমি লং পাঞ্জাবীর এখানে সেখানে প্রস্তর যুগের শিলালিপির মত বেমানান দাগ । জিন্স প্যান্টের গরিবি হাল অনেকাংশে পাঞ্জাবীতে ঢাকা পড়লেও যেটুকু দৃশ্যমান তা লোকের নজর কাড়তে অনন্য পারদর্শী । করুনা দেখায় কেউ কেউ। সাদা রঙের বার্মিজ জুতায় শীত কালের পুকুরে ভাসমান জবুথবু শ্যাওলার মত প্রলেপ পরে এক প্রথাবিরোধী রুপ ধারন করেছে। যুবক শেষ কবে গোসল করেছিল মনে নাই। গায়ে সাবান মাখেনা এক যুগ ধরে ।গায়ে পাউডার না মেখে কুড়ির অধিক গ্রীষ্ম পার করেছে সগৌরবে। শীতকালও গিয়েছে ক্রীম , লোশন অথবা ইভ সম্প্রদায়ের সাথে উত্তাপ ভাগাভাগির কোন ইতিহাস না লিখেই।
বৈরাগ্য সাধন যুবকের মজ্জায় উশখুশ করত অথচ যুবক এলিটিস্ট ঘরানার নাগরিক সমাজে স্বপ্ন ফেরি করে। কিন্তু উশখুশ বৈরাগ্য এলিটের প্রতাপে কয় দিন টেকে আর? ঘাম আর বেহায়া দুর্গন্ধ এলিটের সুগন্ধ সুলভ জীবনে এক উৎপাতের মত হাজির হয়। যুবকের দেহ নিসৃত ঘামের গন্ধ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। যাবতীয় অভিজাত সুগন্ধ বিলোপ পেয়ে শহর জুড়ে কেবল ঘামের গন্ধ।
তন্দ্রা ,নাওয়া-খাওয়া ভুলে নারী পুরুষের মাতমে ক্রমাগত দুলে উঠে আসমানী নাগরিক জীবন। মহামারী ব্যারাম শুরু হয় শহর জুড়ে। আরোগ্য নিকেতনে পীড়িত নারী পুরুষের দীর্ঘ সারি। করিরাজের দাওয়াইয়ের রসদ তলানিতে ঠেকেছে। নগর কর্তার দপ্তরে নালিশ আর প্রাণ বাঁচানোর আকুতি সংবলিত দরখাস্ত। সেক্রেটারিয়েটে নাইচুলা, পরচুলা আর কালো চশমা বাহিনীর সম্মিলিত খিল আটকানো মহাফেজ। ব্যারাম ছড়ানো ঘাম ঘাতককে জান তুচ্ছ করিয়া হইলেও কব্জা করার শপথ লইয়া পাইক বরকন্দাজ সহযোগে কালো বাহিনীর প্যারেড শুরু হয় শহরজুড়ে। এত হিম্মত কার দেখিয়া লইবে কালো চশমা । দুই দিন পরে শনিবারের উথালপাতাল সন্ধ্যাবেলায় ব্রেকিং নিউজ আছড়ে পড়ে দূরদর্শন যন্ত্র এবং অন্তর্জালে। ঘামপাপী কব্জা হইয়াছে। শহরের অভিজাত পাড়ার এক অট্টালিকার চিলেকোঠায় ঘাতকের আস্তানা । ঘাম তত্ত্বের বিবিধ পুস্তক সহযোগে কালো চশমা বাহিনী তাকে পাকড়াও করে ।
জনতার রোষ হইতে যুবককে বাঁচাইয়া কালো চশমা বাহিনী প্রভুদের দপ্তরের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঠেলেঠুলে গাড়িতে তোলার মুহুর্তে চ্যানেল চুয়াত্তরের উন্নতবক্ষা মুখে মাস্ক পরা সংবাদবনিক ত্রিফলা শৈলী যুবকের দিকে বুম বাড়িয়ে ধরে । জানতে চায় যুবকের ধৃত হওয়ার অনুভুতি ।
যুবকের লা জবাব – মাই ঘাম মাই প্লেজার!
ত্রিফলা মুখে মাস্কটা আরেকদফা পরখ করে।
হ্যা। ঠিকঠাক আছে। মুখ ও মুখোশ দুইই ।
[লেখক -জামাল হোসেন ।
উত্তরা ঢাকা বাংলাদেশ]
You must be logged in to post a comment Login