বনকুসুম
আকাশ মস্ত নীল। যেন খুব করে কেউ রঙ গুলে ভিজিয়ে দিয়েছে। তাতে হালকা পলকা পাল তুলে ভাসছে হাসিমুখে সাদা সাদা মেঘ। কচি সবুজ রঙে জুড়ে আছে পুরো প্রান্তর, খুব দূরে গিয়ে ছুঁতে চেয়েছে সে দিগন্তরেখা। চুপ করে বসে রঙগুলো দেখি। তোমাকে বলেছিলাম এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়! তোমার চোখ বলছে তোমার ভালো লাগছে। বিকেলের পড়ন্ত রোদের লালচে আভা তোমার চুলে এসে বসেছে চুপ করে। বুকে মাদল বেজে ওঠে। ভিমপলশ্রীর কোমল নিখাদ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শাড়ির আঁচলে রাধা-কৃষ্ণের চিত্রবুনোট। কপালে ছোটো কালো টিপ। বুঝে উঠতে পারি না কে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বহু শতাব্দীর ওপারে। স্থিরচোখে চেয়ে থাকতে দেখি কানপাশা কথা বলে ওঠে। ঝিকমিক ঝিকমিক করে বলতে চায় নিতু পিসির কথা। ও পিসি তোমার প্রেমিক তোমায় রথে চাপিয়ে কোথায় নিয়ে গেছিলো গো? সেই যাকে তুমি এত ভালোবাসলে সে তোমায় ফেলে হারিয়ে গেল কোথায়! এরকম, ঠিক এরকম এক ঘাসেডোবা মাঠে নিতু পিসি তুমি একা পড়ে আছো। তোমার ডান হাতের মুঠোয় সিঁদুর কৌটো, কানে ঝিকমিক কানপাশা। তুমি ঘুমিয়ে আছো আর সন্ধ্যাতারা তোমায় তখন পাহারা দিচ্ছে। মনটা কেমন ফাঁকা হয়ে যায়।
ঘন হয়ে আসি তোমার দিকে, হাতদুটো দুহাতে তুলে নিতে নিতে বলি:
বনকুসুম তোমাকে মরতে দেবো না আমি।
কিছু না বুঝে কী বিস্ময় দুচোখে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। দূর থেকে নেমে আসা সন্ধ্যাছায়া থমকে দাঁড়িয়ে যায় তোমার অপ্রতিম সৌন্দর্যের কাছে।
You must be logged in to post a comment Login