সম্পর্কঃ অণুগল্প


একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল।
এইমাত্র।
ঘুড়ির সূতা কেটে গেলে যেভাবে উদ্দেশ্যবিহীন বাতাসে ভেসে বেড়ায়, জীবনটা কি সেরকম হতে যাচ্ছে?
আকাশটা কি তখন আর ঘুড়ির নিজের থাকে? যার হাতে লাটাই সে যদিও মাটিতে, অনেক উপরে দিকবিহীন ঘুড়িকে কি সে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারে? একসময় মাটিতেই নেমে আসতে হয় ঘুড়িকে। কিন্তু একই জমিনে থেকেও সুতাহীন ঘুড্ডি লাটাই ধরা হাতের থেকে বিস্তর দূরে।
রিক্ত নিঃস্ব অবহেলিত দুঃসহ সময় পার করার অনুভূতি নিয়ে নিজের অফিসে বসে এসবই ভাবছিল রিতা।
সোহেল না বুঝেই সম্পর্কটাকে শেষ করে দিলো। একেবারেই যে বোঝেনি তাও না।রিতাই কি বোঝাতে ব্যর্থ হল। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নরনারী জীবনকে যার যার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখতে চাইলো। এ ক্ষেত্রে তাদের ভিতরের মিলগুলোর চাইতে অমিলগুলোই বেশী প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে।
ভালোবাসা কি?
বোধের অবোধ্য কিছু অনুভূতি!
জানালার বাইরের আকাশ সেই একইরকম নীল। সাদা মেঘগুলো পেজা তুলোর মত দৃষ্টিকে শীতল করছে। ফাল্গুনের ঝিরঝিরে বাতাস একই রকম বইছে। হলুদ পাতাগুলো ধীর গতিতে কেঁপে কেঁপে মাটির বুকে ভালোলাগার আকর্ষণে স্থির হতে চাইছে।
কেবলি রিতার হৃদয়েই ঝড়! ওলটপালট এক বাসন্তী হাওয়ায় এলোমেলো অনুভূতিগুলো দিকহীন নাবিকের মত বেদিশা।
জীবন এমন কেন?
অফিস লাগোয়া ইউক্যালিপটাস গাছটিতে নতুন সবুজ চকচকে পাতারা হলুদ বিবর্ণ পাতাদের হটিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে। গাছের সাথে পাতার নতুন সম্পর্ক। পুরনো কিছু সম্পর্ক চলে গেলেই গাছটি তো আর নিঃশেষ হয়ে যায় না। পাতায় পাতায় নতুন অনুভূতি… বেঁচে থাকার আনন্দে উদ্ভাসিত জীবন!
বুক ভরে বাইরের তাজা ফাল্গুনী নিঃশ্বাস দিয়ে হৃদয়ের কষ্টগুলোকে বের করে দিতে চেষ্টা করে। তারপরও সোহেল নামের এক যুবকের ফেলে যাওয়া ঝরা পাতা হয়ে থাকা একজন রিতার বুকের কোথায় যেন কিছু টক ঝাল মিষ্টি অনুভূতি থেকে থেকে দিগন্তব্যাপী পাক খেতে থাকে।
এটাই ভালোবাসা… বোধের বাইরে কিছু দুর্বোধ্য অনুভূতি। সম্পর্কের ভিতরে সম্পর্কহীন কিছু অনুভূতি!
You must be logged in to post a comment Login