সহজ স্নায়ুবিজ্ঞান বা নিউরনবিজ্ঞান
আমার লেখা দ্বারা আমি কাউকে বা কোন কিছুকে ছোট , অবমাননা বা হেয় করতে চাই না । আমি কোন ধর্মীয় মতাদর্শ বা অন্য কোন মতাদর্শের মানুষকে আঘাত দেবার জন্য লিখি না । আমি সব ধর্মের , মতের ও পথের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল , সহনশীল ও সহানুভূতিশীল । যাঁদের আমার লেখা বা মতামত পছন্দ না , তাঁরা দয়া করে আমার লেখা এড়িয়ে যাবেন বা ডিলিট করবেন ; এই আশা-ই করি । আমি যা প্রকাশ করি তা একান্তই আমার নিজস্ব মত । ধন্যবাদ সবাইকে
পর্ব এক –
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে , আমি কোন মেডিক্যালের ছাত্র না ; আর শিক্ষক তো অনেক দূরের ব্যাপার ! যে বিষয়টা নিয়ে আমি লিখছি সে-বিষয় সম্পর্কে আমার লেখার কথা না ; যোগ্যতা বলেও না , আবার অধিকার বলেও না । তাহলে , প্রশ্ন আসে কেন আমি লিখছি ? আমি এই কারণে লিখছি যাতে করে সাধারণ মানুষ খুব সহজভাবে বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে পারে । আগেই বলে রাখি যে , এটি সাধারণ মানুষদের জন্য সাধারণ ভাষায় একজন সাধারণ মানুষের লেখা ; এটি কোনো বিশেষজ্ঞদের জন্য লেখা না । আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো যে , এই লেখা আমি লিখছি অনেকগুলো ইংরেজি বই , সাইট , জার্নাল , ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে যা রেফারেন্স হিসেবে লেখার শেষে দিব । তবে আমি কোন বই , জার্নাল , ম্যাগাজিন হুবুহু অনুবাদ করছি না বিধায় অনেক ক্ষেত্রে আমি আমার নিজের যুক্তিযুক্ত ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা , উদাহরণ , বিশ্লেষণ দেবার চেষ্টা করব । তাহলে , চলুন শুরু করি –
আমাদের মাথা নিয়ে যে গবেষণা , তথ্য , তত্ত্ব , পরীক্ষা , পর্যবেক্ষণ মানে যে বিজ্ঞান তৈরি হয়েছে তাই মাথাবিজ্ঞান বা মস্তিষ্কবিজ্ঞান । এটাকে আবার নিউরোবিজ্ঞানও বলা হয় । কেন বলা হয় ? একটা উদাহরণ দেই – ধরুন , আপনি চাল কিনতে গেছেন । আপনি দোকানদারকে তখন কী বলবেন ? আপনি বলবেন যে , আমাকে চাল দাও । দোকানদার কি তখন আপনাকে চাল দিয়ে দিবে ? না , দিবে না । সে জানতে চাইবে যে , আপনার কয় কেজি লাগবে মানে ( সে আপনি কী পরিণাম চাল কিনবেন তা জানতে চাচ্ছে ) ? মনে করুন যে , আপনি বললেন পাঁচ কেজি চাল লাগবে । দোকানদার পাঁচ কেজি চাল দিল । এখন দেখেন , এই যে আপনি পাঁচ কেজি চাল কিনলেন অসংখ্য চাল আছে । ধরুন সেখানে এক লক্ষ চাল আছে অর্থাৎ এই এক লক্ষ চাল আপনি কিনলেন যা হচ্ছে পাঁচ কেজি । তাহলে , আমরা বলতে পারি যে , এই পাঁচ কেজির ভিতর এক লক্ষ্য চাল আছে । এখন ধরুন এই পাঁচ কেজি হচ্ছে মাথা , আর এই যে এক লক্ষ চাল সেগুলো মাথার ভিতরে আছে ; আর ঐ মাথার ভিতরের এক একটি চালকেই বলা হচ্ছে এক একটি নিউরণ । চাল যেমন ছোট , নিউরনও তেমনি ছোট । আর এই নিউরন নিয়েই যে বিজ্ঞান তাকেই নিউরনবিজ্ঞান বা নিউরোবিজ্ঞান বলা হয় । স্নায়ু শব্দটা অনেক অনেক কঠিন কঠিন লাগে , তাই আমরা একে স্নায়ুবিজ্ঞান না বলে নিউরনবিজ্ঞান বা নিউরোবিজ্ঞান-ই বলি ।
আমাদের মাথার ওজন হচ্ছে ১ . ৩৬ কেজি এবং মাথার ভিতরে আছে এক হাজার কোটি নিউরন । ব্যাপারটা একবার কল্পনা করুন তো । মনে রাখবেন কল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস । আইন্সটাইন বলেছেন “জ্ঞানের থেকেও কল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস” । ধারণা থেকেই জ্ঞান আসে – অ্যারিস্টটল । যারা কল্পনা বা ধারণা করবেন না , সরাসরি পরীক্ষা করবেন ; তারা এক কাজ করুন দেড় কেজি ওজনের চালের বস্তা হাতে নিন আর এটাই ধরুন মাথার ওজন , আর একটি সাদা কাগজে এক হাজার কোটি বার একই বিন্দু বসান , প্রতিটি বিন্দুকে ধরুন একটি নিউরন ; তাহলেই বোঝতে পারবেন কত নিউরন আছে আমাদের মাথার ভিতরে !
নিচে নিউরনগুলোর একটা ছবি দেয়া হল –
চিত্র – ১
অনেকেই বিজ্ঞানকে মনে করেন রসকষহীন । কিন্তু আসলে কী তাই ? বিজ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় কারণ সে নিজেকে জানতে দেয় , বুঝতে দেয় , কল্পনা করতে শেখায় । এটা কি আনন্দের বিষয় নয় ? এই যে আপনার মাথার ওজন প্রায় দেড় কেজির মত , কখনো কি মনে হয়েছে আপনি প্রায় দেড় কেজি ওজনের কিছু বহন করছেন ? সাধারণভাবে মনে না হবারই কথা । মনে না হবার পিছনে আছে পদার্থবিজ্ঞান মানে ফিজিক্স ; এখানে ফিজিক্সের মেকানিক্স মানে বলবিদ্যা কাজ করে । আমরা সাধারণ মানুষ বিষয়টা সাধারণভাবেই বুঝতে চেষ্টা করি । ধরুন , আপনার ওজন ৬০ কেজি । এই যে ৬০ কেজি ওজন নিয়ে আপনি দিব্যি চলাফেরা করছেন , প্রেমিকার সাথে প্রেম করছেন , বউয়ের সাথে একটা ফাটাফাটি ফাইট দিচ্ছেন , কখনো কি মনে হয় আপনার এতো ওজন ! আবার চালে ফিরে যাচ্ছি । বাঙ্গালী তো , শুধু শুধু খাই খাই স্বভাব – কথাটা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর । অথচ দেখেন ৬০ কেজি ওজনের চালের বস্তা বহন করতে কি ওজন লাগেরে বাবা ! এখানে যারা আবার রোম্যান্টিক প্রেমিক বা স্বামী আছেন তারা আমার কথায় আপত্তি তুলতে পারেন । তারা বলতে পারেন যে , কই আমি রোমান্সের সময় তো ওকে তুলো মারলাম , কাঁধে তুললাম ; ওর ওজন তো প্রায় ৫০ কেজির উপরে কিন্তু আমার কাছে তো এতো ওজন মনে হল না । এখানে অনেক বিষয় কাজ করে । আপনি যখন আপনার প্রেমিকাকে রোমান্সের সময় তুলো মারলেন বা কাঁধে তুললেন তখন আপনার শরীরে কয়েক ধরনের হরমোন কাজ করে ; আর এই হরমোনগুলোর কাজের কারণেই আপনার প্রেমিকার ওজন আপনার কাছে হাল্কা মনে হয় – আইন্সটাইনের ভাষায় ( Theory of Relativity ) ও শরীরবিজ্ঞান ( Physiology ) ও যৌনবিজ্ঞানের ভাষায় ( Sexology ) । পরে যখন শরীরবিজ্ঞান ও যৌনবিজ্ঞান নিয়ে লিখব তখন ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করব । আপাতত এইটুকই । এই যে আমাদের শরীরের এতো ওজন কিন্তু আমরা সাধারণভাবে বুঝতে পারি না তার কারণ এই যে আপনি ৬০ কেজি ওজন ভূমিকে দিচ্ছেন , ভূমিও কিন্তু আপনাকে ৬০ কেজি ওজন দিচ্ছে ফলে কাটাকাটি হয়ে ভারসাম্য হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ আপনি একজনকে চড় মারলেন সেও আপনাকে চড় মারল – শেষ মামলা খতম । একে বইয়ের ভাষায় বা বলবিদ্যার ভাষায় বলে ‘বলের ভারসাম্য নীতি’ । এই যে আমাদের মাথার ওজন তা নিয়ে নেয় আমাদের কঙ্কাল , হাত , পা ইত্যাদি । ফলে , আমাদেরকে ওজনের ভারে আর নুইয়ে পড়তে হয় না । দেখলেন তো এক বিষয়ের মাঝে কত বিষয় ! মস্তিষ্কবিজ্ঞানের সাথে সাথে চলে আসল শরীরবিজ্ঞান , যৌনবিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞান , বলবিদ্যা । আসলে , দর্শন মতে , জ্ঞান অভিভাজ্য ও অসীম । এই যে এতো বিষয় ফিজিক্স , কেমিস্ট্রি , ম্যাথ , বায়োলজি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় আসলেই এক বিষয়-ই । আবার যাই চালে , আমরা চাল খাই । কিন্তু বাজারে বিভিন্ন রকম চাল আছে । যেমন – মালা , পাইজম , চিনিগুঁড়া , কাটারিভোগ , বাসমতি ইত্যাদি ইত্যাদি ; কিন্তু সবগুলো আসলে চাল-ই ; সবগুলোর মাঝেই সুগার , পানি ইত্যাদি উপাধান আছে । এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেই চালের উদাহরণটা খাটে । আহমেদ শরীফ একবার বলেছিলেন যে , জ্ঞানের স্পেশিয়ালাইজেশন হয় না – কথাটা পুরোপুরি সত্য । চলুন আবার মাথায় যাই , এবার আর মাথায় না , মাথার ভিতরে যাই । মাথার ভিতর সুরক্ষিত আছে স্কালের মাধমে । এই স্কালের কাজ হচ্ছে মাথার ভিতরে যাতে কোন প্রকার আঘাত না লাগে । আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যুটা জিলাটিনের তৈরি । চলুন , তাহলে জানি জিলাটিন জিনিসটা কী ? gelatine – A colourless or pale yellow water-soluble protein obtained by boiling collagen with water and evaporating the solution . It swells when water is added and dissolves in hot water to form a solution that sets to gel on cooling . ……….. . সংজ্ঞার্থ দেখে অনেকের ভয় ভয় লাগতে পারে কিন্তু আমরা সহজভাবে ব্যাপারটা বুঝব । সহজভাবে বললে বলা যায় যে , জিলাটিন হল এক ধরনের প্রোটিন , প্রায় জেলির মত তরল , যা দিয়ে আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যু তৈরি । এই যে মাথার ভিতরে এক হাজার কোটি নিউরন আছে । এই এতো এতো নিউরন কি শুকনো অবস্থায়-ই আছে ? কিন্তু , আমরা যে জানি , পানির অপর নাম জীবন । জীবন গঠনের জন্য পানি অবশ্যই লাগবে । তাহলেই , এক হাজার কোটি নিউরনের মাঝে মানে মাথার ভিতরে কি কোন পানি নাই ? হুম , পানি আছে , পানি থাকলে চলবে নাকি ? এক ধরনের তরল বা পানির মত পর্দাথ আছে যাকে বলা হয় ‘ সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( Cerebrospinal Fluid বা CSF )’ ।
নিচে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড কীভাবে আমাদের মাথা থেকে দেহে প্রবাহিত হয় তা দেখানো হল
চিত্র – ২
তাহলে এই যে , সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( Cerebrospinal Fluid বা CSF ) এর কাজ কী ? সহজভাবে আমরা বলতে পারি যে , এর কাজ হচ্ছে –
১ । মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে ।
২ । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে । আমরা এটাকে সহজ করি । আমাদের এটা মনে রাখলেই চলবে যে , আমাদের মাথার ভিতরে এক ধরনের তরল আছে যার কাজ হচ্ছে মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে রক্ষা করে । ব্যাস , এটুকু হলেই চলবে ।
আমরা প্রথমেই আমাদের মাথাকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করি । যথা : –
১ । মাথার সামনের ভাগ ( Forebrain )
২ । মাথার মাঝখানের ভাগ ( Midbrain )
৩ । মাথার শেষ ভাগ ( Hindbrain )
নিচে মাথার বিভিন্ন অংশ চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল –
চিত্র – ৩
এখন খুব সহজভাবে বলা যায় কোন অংশের কাজ কী কী ?
মাথার সামনের ভাগ – ব্যথা-বেদনা ও আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ ; আহার , নিদ্রা ও রোগের প্রকাশ ; স্মৃতি , মেধা ও যুক্তি প্রকাশের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে ।
মাথার মাঝখানের ভাগ – দেহের ভারসাম্য রক্ষা , বিভিন্ন পেশীর কাজে সমন্বয় করা , দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি ।
মাথার শেষ ভাগ – শ্বসন , হৃদস্পন্দন , রক্তচাপ , দেহভঙ্গি ও পেশীর সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি ।
এবার আমরা চট করে আমাদের মাথাকে সমান দুভাগ করে দেই । ফলে আমরা মাথার দুটো অংশকে পাব – একটি ডান পাশের মাথা , অপরটি বাম পাশের মাথা ; অর্থাৎ একটি ডানপন্থী , অপরটি বামপন্থী । এখন চলুন দেখি তাদের কাজ কী কী ?
আমরা সহজভাবে তাদের কাজগুলো বোঝার চেষ্টা করব । আমরা অনেকেই বলি বিশেষ করে রাজনীতিতে যে সে ডানপন্থী , আর ও বামপন্থী । আমরা কেন এ কথা বলি ? এই বিষয় নিয়ে মনে কি কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ বা সংশয় জেগেছে ? প্রশ্ন , সন্দেহ বা সংশয় যদি জাগে তাহলেই আপনি জ্ঞানী মানুষ । আবার দর্শন শাস্ত্রে চলে যাই । দর্শন মতে , যদি কোন বিষয় সম্পর্কে আপনার প্রশ্ন , সন্দেহ , সংশয় জাগে তাহলেই আপনি তখন জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন ; নতুবা নয় । সংশয় থেকেই জ্ঞানের উৎপত্তি – কথাটা বার্টান্ড রাসেলের । তাঁর আরো একটি কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ । সেটি হল – মূর্খরা সুন্দর প্রশ্ন করতে পারে না । বাংলাদেশের একজন খুব মৌলিক দার্শনিক , চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ ছিলেন । যার নাম সাইদুর রাহমান । তিনি বলতেন , “সংশয় থেকেই জ্ঞানের জন্ম হয়” । আরেকজন দার্শনিক ছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর । পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত বইয়ের নিবেদন অংশে আইয়ুব হোসেনের কথাটা স্মরণীয় – “মানব জীবন যদি জিজ্ঞাসাবিযুক্ত হয় , হয় প্রশ্নহীন তবে তো ক্রমান্বয়ে ভর করে অন্ধ আবিলতা ( মূর্খতা ) । যুক্তি-তর্ক ব্যতিরেক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ গ্রাস করে সমাজকে । মূর্খতায় , অন্ধ আবেগে পরিচালিত হয় তাবত সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আচরণ” ।
এই যে আমরা ডানপন্থী বামপন্থী বলি তার কারণ কী ? আসুন একটু বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখি ব্যাপারটাকে – আমরা ডানপন্থী মানুষ বললেই বুঝি এরকম মানুষকে যারা প্রচলিত সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিভিন্ন বিষয় মেনে নেয় বিনা প্রশ্নে , সংশয়ে ও জিজ্ঞাসায় । সমাজ , ধর্ম , প্রথা তাদেরকে যেভাবে চলতে , করতে ও মানতে বলে তারা সেভাবেই চলে , করে ও মানে । তারা সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির পক্ষেই যাত্রা করে । তারা সৃষ্টিশীল না , তারা অনেক অনুকরণশীল ; অর্থাৎ তাঁরা কোন কিছু তৈরি করতে পারে না , কিন্তু যেকোন কিছু মানতে পারে । অপর দিকে , যারা বামপন্থী তারা প্রচলিত সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিভিন্ন বিষয় মেনে নেয় না বিনা প্রশ্নে , সংশয়ে ও জিজ্ঞাসায় । সমাজ , ধর্ম , প্রথা তাদেরকে যেভাবে চলতে , করতে ও মানতে বলে তারা সেভাবেই চলে না , করে না ও মানে না । তারা সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিপক্ষেই যাত্রা করে । আর বিপক্ষেই যাত্রা করে বলে তাঁরা হয় সংগ্রামী , সাহসী , বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ । তারা তর্ক করতে পারে , যুক্তি দিতে পারে , ব্যাখ্যা করতে পারে , বিশ্লেষণ করতে পারে , চিন্তা করতে পারে । তারা সৃষ্টিশীল , অনুকরণশীল না । তারা প্রশ্ন করে , জবাব চায় , সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করে । তারা তাদের মত করে চলে , করে ও মানে । ফলে , তাঁরা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে না , কিন্তু যেকোন কিছু মানতে ও করতে পারে না । আর ডানপন্থীরা সমাজ , ধর্ম , প্রথার পক্ষে চলে বলেই তারা যুক্তিহীন , তর্কহীন , ভীরু , বুদ্ধিহীন মানুষ । তারা ব্যাখ্যা করে না , বিশ্লেষণ করে না , চিন্তা করে না । আমাদের মাথার ডান ও বাম অংশের কাজও প্রায় অনেকটা এই রকম ।
মাথার ডান অংশের কাজ – শিল্প ও সাহিত্যে মনোযোগ দেয়া , গানে সাড়া দেয়া , গভীরভাবে কোন কিছুকে দেখা , কোন কিছু গ্রহণ , সচেতন যুক্তিতর্ক বা বিচারবিশ্লেষণ ছাড়া কোন কিছু সম্পর্কে জ্ঞান , অবাস্তব কল্পনা , কোন কিছুর থ্রি ডি ইমেজ তৈরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মাথার বাম অংশের কাজ – চিন্তা করা ; বিশ্লেষণ করা ; লেখালেখি করা ; যুক্তি দেয়া ; বিজ্ঞান ও গনিতের কাজ করা ; ভাষা শেখা ; ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মজার ব্যাপার হল – মাথার ডান অংশ বাম হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে , আর মাথার বাম অংশ ডান হাতকে চালায় ।
নিচে একটি চিত্র দেয়া হল –
চিত্র – ৪
এই মাথার ডান ও বাম অংশ অনেকগুলো সুতার মত নিউরন ( নিউরন ফাইবার ) দ্বারা পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে । আর অনেকগুলো সুতার মত নিউরনকে বলে কর্পাস কলুসাম ।
নিচে একটি চিত্র দেয়া হল –
চিত্র – ৫
আমি যে ডানপন্থী ও বামপন্থীর কথাটা বললাম সেটা থেকে কিন্তু ডান ও বামপন্থী এই বিষয়গুলো রাজনীতিতে আসেনি ; এগুলো সম্পর্কে জানতে পড়তে হবে ইতিহাস , আরো সঠিকভাবে বললে রাজনৈতিক ইতিহাস , এবং আরো সঠিক ও যথাযথভাবে বললে বলা যায় যে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাস । আমি এ বিষয়ে লিখলে ব্যাপারগুলো আরো বিস্তারিত ও সহজভাবে লেখার চেষ্টা করব ।
লেখাটি কেমন হল মানে সহজ হল কিনা না তা আমাকে একটু দয়া করে জানাবেন । লেখাটি সহজ হলে আমি আরো দুটি বইয়ের অনুবাদ করব । একটি হল – A Universe from Nothing – L . Krauss ; আরেকটি হল – The Fabric of Cosmos – B . Greene .
ধন্যবাদ ।
আমি এসব বিষয়ের সাথে যুক্ত প্রায় নয় বছর ধরে । চাইলে আমি অনেক বই , ম্যাগাজিন , জার্নাল , ভিডিও ইত্যাদির রেফারেন্স দিতে পারি ; কিন্তু তা পাণ্ডিত্য দেখানো হবে বলে আর উল্লেখ করছি না । যে রেফারেন্সগুলো না দিলেই নয় শুধু সেগুলো উল্লেখ করছি ।
সহায়ক গ্রন্থ :
১ । Neuroscience for kids from youtube
২ । The mind and brain – BBC Documentary from youtube
৩ । Map of the human brain – the structural and functional relationship from you tube
৪ । EMT1-4-Overview of the human body and physiology
৫ । 7d brain structure and function
৬ । The Brain Documentary – on the abilities of human brain from you tube – BBC
৭ । Black Medical Dictionary
৮ । The British Medical Illustrated Dictionary
৯ । মন ও মানুষ – ডা . মো . তাজুল ইসলাম
১০ । মানব মনের গতি-প্রকৃতি – ডা . মোহিত কামাল
১১ । মানবমস্তিষ্ক – আব্দুল হাই – বাংলা একাডেমী ।
১২ । Fitzgerald , M . J . T ( 1996 ) . Neuroanatomy , basic and clinical .
১৩ । Athen’s Theory of everything from youtube .
১৪ । একটুখানি বিজ্ঞান – জাফর ইকবাল ।
১৫ । গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে বিভিন্ন ছবি নেয়া হয়েছে ।
শিক্ষার্থী , সমাজবিজ্ঞান বিভাগ , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , সিলেট ।
You must be logged in to post a comment Login