শৈবাল

কবিতা : নীল পকেটের খসড়াগুলো (৩ … শেষ চিঠি )

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

১. রোদ বিক্রেতা …

এই জানালায় রোদের আসা যাওয়া নিয়মিত ছিল

এখন বহুতল ডেভোলাপগুলো ব্যারিকেড বেঁধে দিয়েছে ,

অঘ্রাত রোদগুলো চুপটি মেরেছে ইন্দ্রিয়হীন গলিখুঁজিতে ।

স্বভাব শহরে মেয়ে তুমিওতো বেশ আনকোরা

শুকনো ঋতুতে আপ্লুত রোদের ইচ্ছে নাও থাকতে পারে

যদি চাও আসতে পারো আমার মুঠোতে জমানো রোদ আছে

একমুঠো রোদ তোমার জন্য বিক্রি করবো এক আধুলিতে

আমি এই শহরের সবচেয়ে সুলভ রোদ বিক্রেতা …

২. … প্রিয়ংবদা

প্রশ্নেরা এড়িয়ে চলে আজকাল ঠিক
যেন তোর মতোই যাই যাই স্বভাব

শুনতে শুনতে বলা হয় না কিছুই
লুকানো কথাগুলো বুকে দম নেয় শেষে ,

খাম খুলতেই উড়ে যায় শুধু
দীর্ঘশ্বাস
যার কোন দাম নেই তোর কাছে ,

তুই তো আমার প্রিয় ফুলের নামই ভুলে যাস
আর তোর গাছে ফুল গুণতে ভুল করেই

আমার ভীষণ পাপ , ভালোবাসা কমে
ছটাকে ছটাক ! ভাবছি তোর কাছেই ,

শিখবো কথার হিসাব নিকাশ
কম বেশি প্রেম ঘৃণা যাই বা শিখাস

শুধু একটাই দাবী মিথ্যে শিখাস নে
বল সখী রাখবি তো ঐটুকো বিশ্বাস ।

৩. লেট নাইট ফিভার …

ছোট হতে হতে আর কতো ছোট করবে আমায়

যতটুকো ছোট একটুকরো চন্দনেই পুড়বে !

তাও কেন নানা কথায় সাড়ে তিন হাতে মাপবে ,

আমি যে বড়াতে পারি না দুপাশে শেঁকড় গজাচ্ছে ।

দোয়েলটা দুলছে ট্রাফিক আইল্যান্ডে পুলিশটা ছুটিতে

তুমি হয়তো পালাবে এই সুযোগে আমায় ছেড়ে

পুরোদস্তুর শহুরে তুমি , থাকবে কি আর ঐটুকুন রঙে !

তোমার ভিতরেই যে সবুজ আছে অরণ্য নিংড়ানো

ঐদাগ মুছবে কি ? জোড়া ডানাগুলো ভাঙবে কি ?

এইভাবে যাওয়া যায় না , শিঁকড় যে ভেতরেই থাকে জেনো !

” কেউ কাউকে মনে রাখে না ” আমার কবি বলেন

তুমি কি বিশ্বাস করো ? কবি কাউকে মনে রাখিনি !

আমি করি , কারণ কবি যে কারোর কেউ না …

তাই ভালোবাসে বিশ্বাস করে ছোট্ট হয় তোমার কাছে

শেষ রাতের জ্বরের মতো কোন বাজে অসুখের চিহ্নে …

জ্বালবে তোমায় … যতোবার ধুয়ে ফেলো সকাল স্নানে .

৪. স্বপ্ন ভীরু …

বিছানায় জমে হাঁটু জল
শুলে নাকটাও ডুবু তল
স্বপ্নেরাও নাকি বর্ণ অন্ধ
জরুরী ফুলকাগুলো বন্ধ
তুমি ঘুমের উপর রঙ আঁকো
খোদা আমায় জাগিয়ে রাখো

৫. রূদ্ধ শ্বাস রূদ্ধ জানালা …

বাতাস হলে ,গাছের পাতা নড়ে নদীর জল নড়ে
ছেলেটা নড়লে ,আলোর বিপরীতে ছায়াটা নড়ে ।

বৃষ্টি হলে ,এই শহর ভিজে ঐ শহর ভিজে
মেয়েটা কাঁদলে , চোখের জলে জানলা ভিজে ।

বাতাস হলে ,গাছের পাতা নড়ে নদীর জল নড়ে
ছেলেটার ফুসফুসে বাতাস ধরেনা

বাধ্যগত ছায়াটা আর নড়েনা ।
বৃষ্টি হলে ,এই শহর ভিজে ঐ শহর ভিজে

মেয়েটা হয়তো আর কাঁদেনা
দক্ষিনের জানলা খোলা হয়না ।

৬. জল বসন্ত জলে বসন্ত

গতবারের জ্বরটা লুকিয়ে রেখেছিলাম বেশ কয়দিন

তারপর , এক দুপুরে হঠাত্‍ নিঃশ্বাসে ছুটে এলো

ফুসফুস থেকে ছাড়া পেয়েই সিলিং ছুঁলো

তুমুল তানে একটা নুপূর বেজে উঠলো

পুরো ঘর তুই নেচে বেড়ালি …

রিনিঝিনি শব্দে আমি ভিজে ভেজা কাক

তবে জ্বরটা ভিজলো না একফোঁটাও

আমার শরীরে ছোপছোপ জলছাপ

সেই বারই আমার জলবসন্ত হয়েছিল

জ্বর নিভলো না তোর চুল নিংড়ানো জলে …

৭ শেষ চিঠি

আমার জমানো চিঠিগুলো ভারি হয় পোস্টবক্সে

তোর সামনে পড়লে ঝরে যায় মাথা নিচু করে

আমি বলি – পাঠাবো না আর ।

সাজ করে আনা , কড়ি আনা কথাগুলো

চিঠির পাতায় থাকে না আর চুপ করে

ডাকঅফিসে পোস্ট করার আগে ঠিকানা জিগ্যেস করে

আমি বলি – ভুলে গেছি

তামাদি শব্দরা পৌঁছে যায় লাশকাটা ঘরে ।

তাও খাম কিনি বিষের মতো নীল খাম

চিঠি পুরি খামে কাফনের মতো সাদা চিঠি

আমি বলি – তোর ঠিকানাটা কী

… যদি এটাই হয় শেষ চিঠি ।

[ পোস্ট ঘুড়িটা উড়িয়ে এর নিচে লেজ লাগানো আমার একটা বদ অভ্যেস , আমার কথাগুলো ব্যাকেটবন্দী করি আমার কবিতায় উড়াই খেয়ালেই , কিন্তু আজ এসে কেন যেন তেমন কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছি না । হুতুম … আমি আর লিখতে পারছি না ।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা … শৈবাল কায়েস ]

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


14 Responses to কবিতা : নীল পকেটের খসড়াগুলো (৩ … শেষ চিঠি )

You must be logged in to post a comment Login