একজন সহযোগী যোদ্ধার জীবন-যাপন
‘দেশটা মীরজাফরের দেশ হইয়া গেছে। হেই সোনার বাংলা এখণ আর নাই। সরকার আমাগো অনেক দেয় কিন্তু মীরজাফরেরা হেইডা আমাগো না দিয়া তারা ভাগ কইরা খায়।’
ঈসমাইল ফকির একজন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সরাসরি বন্ধুক হাতে যুদ্ধ করেননি। কিন্তু যুদ্ধের সময় জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তাগাছা থানার জামঘরা গ্রামে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার ২০ দিন খাবার যোগিয়েছিলেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদেরর বিভিন্ন খবরা খবর আনা নেওয়ার কাজও করতেন। এজন্য রাজাকারদের হাতে ২ দুই বার ধরার পরেছেন। ১ম বার পাক বাহীনির গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রান বাঁচান এবং দ্বিতীয়বার মুক্তিযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে। যুদ্ধের সময় রাজাকারদের ভয়ে তিনি বাড়ীতে থাকতে পারেননি। জঙ্গলে জঙ্গলে থেকেছেন। কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখে মুখে আনন্দ ঢেউ খেলে যায়। কিন্তু পরক্ষনেই তা থেমে যায় বর্তমানে তার অবস্থা জানতে চাইলে। ঈসমাইল ফকিরের বয়স ৭০ বছর। সাদা সোনালী মিশ্রিত কাধ পর্যন্ত লম্বা চুল আর মুখে সাদা দাড়ি তার সাহসী চেহারাকে যতখানি ঢেকে দিয়েছে তার চেয়ে বেশী ঢেকে দিয়েছে দারিদ্রতা।তিনি এখন ময়মনসিংহের চরপড়া লাশকাটা গেইটের সাথে বসে বাশের দড়ি বিক্রি করেন। আগে তিনি নিজেই বসে বসে বানাতেন। কিন্তু এখন চোখে ভাল দেখতে পাননা বলে তিনজন কর্মচারী দিয়ে দড়ি তৈরী করান আর তিনি বিক্রি করেন। এসব দড়ি তৈরীর জন্য চুরখাই, সম্ভুগঞ্জ, রাজাথানা থেকে বাঁশ আনেন বলে তিনি জানান। কতদিন ধরে এ কাজ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ কাজের সাথে জড়িত বলে জানান। আরো বলেন, এখন আর আগের মত ব্যবসা হয়না। এখন দালান কোঠা হওয়ার পর ব্যবহার খুব কম তাই আয় কমে গেছে। আর সব কিছুর দাম বাড়াতে ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এসব দড়ির আবার রয়েছে বিভিন্ন প্রকার। সিলিঙের দড়ি, ঘরের বেড়া তৈরীর দড়ি। আবার সাধারণ দড়ি। একেটার গঠন একেক রকম। এগুলো হাত হিসেবে বিক্রি হয় এবং দড়ির প্রকার বুঝে দামও আলাদা। বেড়া তৈরীর দড়ি এক হাত সত্তর টাকা। সাধারণ দড়ি এক হাত তিরিশ টাকা। আবার সিলিঙের দড়ি, এক হাত দেড়শ টাকা, এরকম।দড়ি বিক্রির জন্য ইসমাইল ফকিরের কোন নির্দিষ্ট দোকান নেই, দোকান ভাড়া নিলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই তিনি বসেন রাস্তার ধারে। সরকারী জায়গায়। এজন্য প্রথম প্রথম অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এখন আর হয়না। বয়স্ক ভাতার কার্ড পাইনা, চেয়ারম্যানের কাছে গেলে কাগজ পত্র চায়। কাগজপত্র দিলে অন্য অজুহাত দেখায়। আবার টাকা দিয়ে কার্ড প্ওায়ার যোগ্য নয় এমন অনেকে কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রী, চার ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে এত বড় সংসার চালানো তার জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, “আমাগো সরকার ভালা, কিন্তু যারা এইসব কাজে দায়িত্ব নেয় তারা শুধু তারার স্বার্থডাই দেহে”। আর এজন্যই তারমত হাজারো ইসমাইল আজ ঠিকানাহীন, দায়গ্রস্ত আর অসহায়।
6 Responses to একজন সহযোগী যোদ্ধার জীবন-যাপন
You must be logged in to post a comment Login