তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

স্কুল

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

//তৌহিদ উল্লাহ শাকিল//

হাবিব দৌড়াচ্ছে , মাঠের মাঝ দিয়ে । ডানে বায়ে তাকানোর সময় নাই। তা তার দৌড় দেখলেই বুঝা যায়। পেছনে এখন কেউ নেই সেদিকেও খেয়াল নেই ছেলেটার । গতকাল রাত ভর যাত্রা দেখে বাড়ী ফিরে তার বাবার সামনে পড়েছে । মনু মিয়া হাবিবের বাবা , সেই সকাল থেকে বাঁশের কঞ্চি হাতে নিয়ে বসে আছে । যেই ছেলেকে বাড়ীতে ঢুকতে দেখলেন অমনি হুঙ্কার দিয়ে লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলেন । বাবাকে দেখতে পেয়ে হাবিব সেই যে ভোঁ দৌড় দিয়েছে এখন ও থামে নাই।

আমি বাজার করে ফিরছি মাঠের মাঝ দিয়েই । নিজের বাজার নিজেকেই বয়ে আনতে হয় । রিক্সা কিংবা ভ্যানে চলার সামর্থ্য আমার নাই । স্থানীয় পাঠাগারের দারোয়ান আমি । বাবা মা সখ করে নাম রেখেছিলেন গদাধর কিন্তু এখন সবাই গদা দারোয়ান বলেই ডাকে। আমার ও গা সওয়া হয়ে গেছে । বয়স তো আর কম হল না । সেই ছোট বেলা থেকেই অবজ্ঞা আর অবহেলায় বড় হয়েছি । এই বয়সে এসে এটাই শিখেছি গরিব এবং ছোট জাতের মানুষের মানসন্মান বলে কিছু থাকে না । ইদানিং চাকুরীটা ও যায় যায় অবস্থা । একে তো হিন্দু তার উপর কোন জাত নেই , তাই আমাকে তেমন কেউ একটা দেখতে পারেনা । এতে ও আমার কোন দুঃখ নেই ।

কমলি , না আসলে ওর নাম কমলি নয় , আমি এই নামেই আমার স্ত্রী কে ডাকি । ওর আসল নাম হচ্ছে কমলা সুন্দরী। যদি ও সে দেখতে কালো এবং বেটে । মোটেও কমলার মত সুন্দর নয় । কমলি’র ও এই কূলে আমি ছাড়া কেউ নেই । কমলির বাপ ছিল জাতে জেলে মানে আমরা যাদের চ্যাড়াল বলি । বৃদ্ধ বয়সে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পথে পথে ঘুরছিল । এই সময় একদিন আমাদের বাড়ির সামনে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। আমি মাথায় পানি দিয়ে হুঁশ  ফিরিয়ে আনি । তারপর সকল বৃত্তান্ত শুনে নিজেই নিজের কথা বলি । বুড়ো জেলে যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল । আমাকে নিয়ে পরদিন নিজের বাড়ি গেল । এরপর কুষ্ঠি দেখে এক শুভক্ষণে কমলির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল । কমলি যেমন আমাকে পেয়ে খুশি আমি ও কমলিকে পেয়ে অনেক খুশি। যা বেতন পাই তাতে দুইজনের কোন মতে চলে যায় । ছেলে পুলে ভগবান দেয়নি তাতে ও কোন আপসোস নেই ।

হাবিব ছেলেটা ভাল । প্রতিদিন পাঠাগারে যায় । দৈনিক পত্রিকা পড়ে , এছাড়া নানা বিষয়ে লেখাপড়া করে । আমাকে বেশ সন্মান করে । আর সে কারনে ছেলেটার প্রতি আমার কেমন একটা মোহ লেগে গেছে । দৌড়াচ্ছে দেখে বললাম

কি হয়েছে , দৌড়াচ্ছ কেন ?

বাবা লাঠি নিয়ে আসছে ।

কই(কোথায়) ?আমি তো কাউরে দেখছি না ।

তখন হাবিব থামে । পেছনে ফিরে দেখে সত্যি কেউ নাই ।

দূর শালার  ! অযাথাই দৌড়ালাম। বলে হাঁপাতে লাগল।

নাও সন্দেশ খাও। বললাম আমি ।

না কাকা , গতকাল রাতে যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম । তাই বাবা বোধহয় রেগে আছে ।

একমাত্র এই ছেলেটা আমাকে কাকা বলে ডাকে । তখন আমি সব ভুলে যাই । আমার মনে হয় ঈশ! সবাই যদি আমায় এমন ভালোবাসত । হাবিবের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ে ।

চল কাকা তোমার বাড়ি যাই । বেলা পড়লে ফিরে আসব ।

আমি বলি – হ্যা বাবা চল ।

একটার পর একটা আকিজ বিড়ি টানছেন মনু মিয়া । গ্রামের বটগাছের নিচে বসে নিজেই আনমনে কথা বলছেন নিজের সাথে ।

“ ছেলেটা কেন অমন করে । আমাগো কত্ত শ্ত্রু। তোর কি দরকার বাপ যাত্রা দেখতে যাওয়ার । সেইখানে বেজন্মা মাইয়্যারা নাচে গায় । এসব দেখলে পাপ হয় । জানিস পোলা তোর দাদা মানে আমার বাপ কি কইত (বলত) । কইত এসব শয়তানের কাম । তোরে মাদ্রাসায় না পড়াইয়া স্কুলে পড়ানোই আমার বোকামী অইছেরে বাপ । আমি না হয় লাঠি নিয়া তোরে মারতে গেছি তাই বইল্যা কি বাড়ী ফিরবি না পোলা।

এদিকে আমার বউ মাইনে তোর মা কাইন্দা কাইট্টা অস্থির । অই পোলা কই গেছস ? বাড়ি ফিরা আয়” ।

আপন মনে বিড় বিড় করে কথা গুলো বলছে মনু মিয়া ।

এমন সময় মির্জা সাহেব কে আসতে দেখলেন । বিড়ি গুলো পায়ের নিছে দলাই মলাই করে উঠে দাঁড়ালেন মনু মিয়া ।

“কি ব্যাপার মনু মিয়া এই ভরদুপুরে এইহানে কি কর”।

“না কিছু না মির্জা সাব , এমনি বইয়া আছি”।

তা পোলার কোন খোজ খবর রাহ”।

“কেন কি অইছে”।

“কি আর অইব , তোমার পোলায় নাকি কি সংগঠন কইরাতাছে”।

“আমি তো জানিনা মির্জা সাব, কিয়ের সংগঠন”।

“ কিয়ের আবার রাস্তার পাশে গদার জমিটা ভরাট কইরা মেইল দিমু ভাবছি, তোমার পোলা নাকি বলছে অই খানে স্কুল বানাবো”।

“হুম স্কুল দিলেও তো ভালা”।

“কোনডা ভালা , কোনডা খারাপ তা কি তোমাগো কাছে শিইখতই অইব”।

“ না কি যেন কন মির্জা সাব”

“ শোন , এহন থেইক্কা তোমার পোলারে এসব ব্যাপারে নাক গলাইতে মানা কইরবা , না হইলে , সামনে খারাবি আছে কইলাম”।

“আমি অরে বুঝাবোনি , আন্নে চিন্তা কইরেন না”

ঈশ!কি মায়াভরা মুখ ছেলেটার দেখছ কমলি। হাবিব রে দেখে একটা সন্তানের জন্য আমার মনটা হাহাকার করে উঠে । আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে কমলি ঠিকই বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলে না । কমলির দুঃখ হলে চুপকরে থাকে এটা তার পুরানো স্বভাব ।

 দুইজনেই কয়দিনি বা আর বাঁচব । মির্জা সাহেবের চোখ পড়েছে জমিনটার উপর । বাপদাদার শেষ চিহ্ন কেউ লুটে ফুটে খাবে তা কি করে হয় । আমাদের জমিদার বাবু মৃত্যের পূর্বে পাঠাগার করে গেছেন বলে আজো সেখানে কত মানুশ আসে জ্ঞান আরোহন করে । আমি তো গরিব মানুষ আমি কি করতে পারুম । সেইটা নিয়া ভাবি । হাবিব বলেছে ম্যাজিস্টেট সাহেবের সাথে কথা বলে নাকি এখানে একটা স্কুল বানাবে । সেই থেকে হাবিব কে সবসময় তাগাদি দেই স্কুল বানানোর জন্য । জানিনা জমিটায় শেষ পর্যন্ত স্কুল হবে কিনা । মির্জার নজর খুব খারাপ । এছাড়া তার ভাড়াটে গুন্ডা ও আছে অনেক । কিন্তু তারমত অসহায়ের কে আছে একমাত্র ভগবান ছাড়া ।

আগামিকাল সরকারি লোক এসে জায়গাটা দেখে যাবে বলেছে হাবিব । তিন কিলোমিটারের মাঝে কোন স্কুল নেই । সরকার জায়গা না পাওয়াতে স্কুল করতে পারছে না । এবার বোধহয় স্কুল টা  হয়ে যাবে । গতকাল বিকালে পাশের গ্রামের মঞ্জু এসেছিল । মঞ্জু ঢাকাতে লেখাপড়া করে । বলেছে এই বছর কলেজ পাশ করলে হাবিবকে ঢাকায় নিয়ে যাবে পড়তে । মঞ্জু অভয় দিয়ে বলেছে । স্কুল এখানেই হবে গদা’দা । এমন ছেলেপুলে আছে বলেই হয়ত সাহস পাই । না হলে আমার মত জাত হীন কেউ কি মহৎ কোন কাজ করতে পারি ?

তবে ভয় লাগে ? মির্জা সাহেবের ভাড়া করা কিছু লোক রাত বিরাতে এসে শাসিয়ে দেয় । বলে স্কুল দিয়ে কি হবে ? এরচেয়ে মির্জা সাহেবকে লিখে দে । বিনিময়ে নাকি আমাকে বেশ কিছু টাকা ও দিবে । টাকার লোভ তো আমার নেই । এই জন্মে কমলি ছাড়া আর কেউ নেই । আমাদের মুখের অন্ন তো উনি জুটিয়ে দেন । এরচেয়ে বেশী কিছু আমার চাওয়ার নেই । শুধু চিন্তা বলতে কমলিকে নিয়ে হয় । তাই মাঝে মাঝে হাবিব কে বলি , আমার কিছু হয়ে গেলে অসহায় কমলিকে কিন্তু দেখিস কাকা।

আমি জানি হয়ত দেখবে ? হয়তো না । যখন আমি থাকব না তখন কি হল না হল তাতে আমার কি আসে যায় । অনেকে আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারে । তাতে কি ? আমি কি স্বার্থপর । আমি নিজে ও জানিনা । নিজের ছেলেপুলে নেই তাই বলে কি বেঁচে থাকব না । হাবিব বলেছে স্কুল হলে সরকারের কাছ থেকে কিছু টাকা দিবে । আমি টাকা দিয়ে কি করব? আমি বলেছি এগুলি কমলিকে দিয়ে দিস । কমলিকে আমি দামি একখান শাড়ী কিনে দিতে পারিনি । কিন্তু কমলির তাতে কোন অভিযোগ নেই । দুজনের বেশ চলছে । একের দুঃখ দিয়ে আমরা দুজন দুইজনকে দেখি তখন আর দুঃখ থাকে না ।

এই যে , রান্নার নাম করে কমলি হেঁসেলে গেছে । সেখানে কি করছে আমি জানি । সেখানে চুপচাপ বসে ভাবছে । ছেলেটাকে নিয়ে এসেছি তাকে খাওয়াতে হবে সেদিকে তার খেয়াল নেই । আমাকে যেতে হবে এরপর সব কাজ শুরু হবে । একজায়গায় বসে থাকলে ইদনিং পায়ে ঝিম ধরে যায়।

ধীরে ধীরে কমলির কাছে গিয়ে দেখি সে আজ বসে নেই , রান্না করছে । হয়ত ছেলেটাকে দেখে মনে হাহাকার হচ্ছে । এমন হয় । কিন্তু কিছুই কি করার আছে ।

ছনের ঘরের বারান্দায় তখন ও শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে হাবিব । সারারাত জেগে যাত্রা দেখেছে , এখন তো ঘুমাবেই । হিন্দু বলে গ্রামের অনেকে তাকে এড়িয়ে চলে । কিন্তু তার জায়গাটির জন্য কত জনে আসে তারকাছে । তখন আর জাতের বালাই থাকে না , ধর্মের বালাই থাকেনা । আসলে ধর্ম হচ্ছে জন্মের বাঁধন । যে যেখানে জন্মে সেখানের ধর্মই আকড়ে পড়ে থাকে । কদাচিৎ দুচারজন এই জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসে । আর নয়তো সকলেই বাপদাদার ধর্মেই বন্দী থাকে আমার মত ।

স্কুল মনে হয় এবার হয়ে যাবে । সরকারের লোক তাই বলে গেছে । কিছুদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে তদন্ত কারি দল এসে দেখে যাবে । এতদিনে আমি মনে শান্তি পাচ্ছি । আর কিছু না হোক এখানে ছেলেমেয়ে পড়বে । সকাল থেকে কোলাহল ময় হবে এলাকাটা । কমলি ছোট ছোট বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে রান্নার কথা ভুলে যাবে । আমি এসে তাগাধা দিব । স্কুলের জন্য জায়গাটা আমি বিনা পয়সায় দিয়ে দিব বলেছি । এরজন্য আমার এবং কমলির কোন কিছুর দরকার নাই । কমলি আমাকে বলেছে তার টাকার দরকার নেই । অশিক্ষিত একটা জেলের মেয়ে কিন্তু লোভ নেই । আমি নিজে ও বেশী শিক্ষিত নয় । নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি । এই যা ।

মির্জা সাহেব আজ সকালে এসে অনেক ধমক দামক দিয়ে গেলেন । হরেন্দ্র সেন কে দিয়ে পাঠাগারের চাকুরীটা থেকে আমাকে চাটাই করেছেন । এতে ও আমার কোন দুঃখ নেই । নিজের জন্য কোন ভাবনা নেই যা হয় , তা শুধু কমলির জন্য । কমলির প্রিয় রসমলাই । আজ ওর জন্য একসের কিনলাম । আস্তে আস্তে বাড়িতে যাচ্ছি । কমলিকে চাকুরীর কথা এখন বলা যাবে না ।

ওমা বাড়ির সামনে এত মানুষ কেন ? হাতের রসমালাইয়ের হাড়িটা হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল । সেদিকে দেখার সময় আমার নাই । ছুটলাম বাড়ির দিকে । কমলি …আমার কমলি ।

রান্নাঘরে আগুন লেগেছে , সেই আগুনে আমার কমলি শেষ । কেউ কেউ বলছে রান্নাঘরের দরজা নাকি বাহির থেকে আটকানো ছিল । সেই আগুনেই আমার কমলির চিতা হয়েছে । আমি আর ভাবতে পারছি না । চিৎকার করে কাদলাম । কিন্তু মনের দুঃখ সেতো কমল না । কমলির আধাপোড়া শরীর তখন উঠানে পড়ে আছে ।

শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে করতে রাত অনেক হয়ে গেল । গরিব বলে কেউ তেমন এগিয়ে এলনা । আর যারা এগিয়ে এল সকলেই আমার মত নিতান্তই অসহায় । রাতে ঘরে ফিরতে আমার মন সায় দিল না । হাটতে মুচি বাড়ির দিকে চলে গেলাম । সেখান থেক বাংলা মদ এক বোতলের পর এক বোতল গিলতে লাগলাম । গলা জ্বলে পেটে পড়ছে মদ তাতে কি , আমাকে মাতাল হতে হবে । সব ভুলতে হলে এছাড়া আমার আর কিছু করার নেই ।

ঘোষাই বাড়ির চন্দ্রনাথ গত সপ্তাহে ভারত কাশি গিয়েছে । যাবার সময় বলেছিলাম চন্দন কাঠ নিয়ে আসতে । কমলি বলত তার চিতায় যেন কাশির চন্দন কাঠ থাকে । আজ চন্দ্রনাথ চন্দন কাঠ দিয়ে গেল । মনটা বিষণ্ণতায় ভরে গেল ।

মির্জা সাহেব আবার এসেছেন । এখন প্রায় প্রতিদিন আসেন । বলেন গদা তোকে আরো কিছু বাড়িয়ে দেব এইখানে টিপসই দিয়ে দে । সম্ভবত দলিল । মির্জা অনেক কুটিল লোক । কিন্তু আমার পক্ষে দাড়াবার কেউ নাই । হাবিবকে তার বাবা বিদেশ পাথিয়ে দিয়েছে , সব টাকা নাকি মির্জা সাহেব দিয়েছে । টাকার কাছে আজকাল সব বিক্রী হয়ে যাচ্ছে , সততা , আদর্শ সব । শুধু আমার মত কিছু বেকুব আদর্শ কে পুঁজি করে বেঁচে থাকার ব্যারথ চেস্টা করছি ।

স্কুলের ব্যাপারে লোক গুলো অনেক দিন হয় আসছে না । ইদানিং আমার কেমন ভয় লাগে । রাতের বেলা মদ গিলে চূর হয়ে পড়ে থাকি ।

রাত মনে হয় দশটা বাজে । এই নিয়ে ছয় নাম্বার বোতল গিলছি । নেশা হয়না । মাথা ভনভন করে । এমন সময় কাউকে যেন আসতে দেখলাম । কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ একজন কাঁধে আঘাত করল বেশ জোরে শক্ত কিছু দিয়ে । জ্ঞান হারাইনি তখনো । দুইজনে আঙ্গুলের চাপ নিল কিসে যেন । বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু বলতে পারছি না । এরপর রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে ওরা আমায় আমার ঘরে নিয়ে এল । কমলি মরার পর আমি এই ঘরে একবারের জন্য ও আসিনি ।

এরপর আমার কিছু মনে নেই । চারদিকে আগুনের শিখা আমাকে গ্রাস করতে থাকে । আমার চিৎকার কেউ শুনতে পায়না । কারন আমার মুখ ও যে বাধা ছিল তাদের কারো রুমাল দিয়ে । চন্দন কাঠটি আমার পকেটেই ছিল । গরমের তাপ আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না । আমি বুঝতে পারছি , এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি , যে আমাকে পাঠিয়েছে  তার কাছে । আমি জানি তার কাছে কোন বাচবিচার নেই , কোন জাত ধর্ম নেই । তিনিই স্রষ্টা । এত কষ্টের মাঝে ও আমার মনে বেশ আনন্দ হচ্ছে । কারন আমি গতকাল দুপুরে জায়গাটা রেজেস্ট্রী করে স্কুলের নামে দিয়ে এসছি । আমি দেখতে পাচ্ছি একদল বাচ্চা ছেলেমেয়ের দল সেখানে খেলছে পড়ছে । আর আমার বাড়ির জায়গাটা হাবিবের নামে লিখে দিয়েছি । কারন সেই স্কুলের কথা ছেলেটাই আমাকে বলেছিল । কমলি যেন আমাকে ডাক দিল । আসছি কমলি …।আমি আসছি।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


11 Responses to স্কুল

You must be logged in to post a comment Login